3:17 am, Wednesday, 10 September 2025

অপসাংবাদিকতার দাপটে নাজেহাল পেশাদার গণমাধ্যম!

picsart 25 06 03 10 57 43 818

 

গণমাধ্যম ডেস্ক:
সাংবাদিকতা এক সময় ছিল সমাজ বদলের একটি মহৎ হাতিয়ার। কলম ছিল প্রতিবাদের সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র। সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো মানেই ছিল সাংবাদিকতা- ভয়ডরহীন, অনুসন্ধানী, দায়িত্বশীল। অথচ আজকের বাস্তবতা এতটাই ভিন্ন, যেন আমরা এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডির মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছি। কলমের কালি মুছে গিয়ে, জায়গা করে নিয়েছে ইউটিউব সাবস্ক্রাইবার, টিকটক ফলোয়ার আর লাইভ ভিডিওর নাটক।

সংবাদপত্রকে সমাজের দর্পণ বলা হয়। এই দর্পণ তৈরি করেন সাংবাদিকরা। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সরকার এবং সব দলের পথনির্দেশনা তৈরি করে দেয় সংবাদপত্র। এর কারিগর হলো সাংবাদিক সমাজ। সাংবাদিক সমাজ আজ দ্বিধা বিভক্ত। অপসাংবাদিকদের ভিড়ে প্রকৃত সাংবাদিকদের মর্যাদার আজ ধুলায় ভুলুণ্ঠিত। কেন এমন হচ্ছে?

একজন সাংবাদিক দেশে ও সমাজের কল্যাণে নিবেদিত হবেন; সাংবাদিকতায় এটি স্বতঃসিদ্ধ। কিন্তু কী হচ্ছে দেশে? মহান পেশার আদর্শ উদ্দেশ্য উল্টে ফেলা হচ্ছে; সৎ সাংবাদিকদের বিতর্কিত করা হচ্ছে; নানা স্বার্থে সংবাদপত্রকে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। কারা করছে এসব? আজ কেন সাংবাদিকতা বাণিজ্যের ভিড়ে সংবাদপত্র এবং প্রকৃত সাংবাদিকরা অপসৃয়মাণ? কেন মর্যাদাসম্পন্ন পেশা, মর্যাদা হারাচ্ছে।

এডমন্ড বার্ক বলেছেন ‘পার্লামেন্টের তিনটি রাষ্ট্র রয়েছে। কিন্তু ঐ যে দূরে সাংবাদিকদের আসন সারি সেটি হচ্ছে পার্লামেন্টের চতুর্থ রাষ্ট্র এবং আগের তিনটি রাষ্ট্রের চেয়ে তা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ’!

এডমন্ড বার্কের সে উক্তি থেকে সংবাদপত্রের গুরুত্ব অনুধাবন করলে সহজেই বোঝা যায় যে, পার্লামেন্ট ও সংবাদপত্র হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা দু’টি ভিন্ন বিষয় হলেও পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক। সংবাদপত্র ছাড়া সাংবাদিকতা যেমন ভাবা যায় না, তেমনই সাংবাদিকতাকে বাদ দিয়ে সংবাদপত্রেরও অস্থিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন।

কেননা সাংবাদিকতা হচ্ছে ব্যক্তি এবং সংবাদপত্র হচ্ছে প্রতিষ্ঠান। সংবাদপত্রের জন্য কোনো ব্যক্তি যখন সংবাদ সংগ্রহকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে তখন তাকে বলে সাংবাদিক। আর তার পেশাকে বলা হয় সাংবাদিকতা।

সাংবাদিকতা হচ্ছে সেবামূলক একটি পেশা। পেশাটি খুবই সহজ বা আরামের বলে অনেকের কাছে প্রতীয়মাণ হলেও আদতে সাংবাদিকতা ব্যতিক্রমধর্মী পেশা, যা কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় অন্য সব পেশার চাইতে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

দুনিয়ার তাবৎ সমাজ ও অস্থিতিশীল রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে অনেক প্রতিকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয় দায়িত্ব পালনও করতে হয় বিচক্ষণতার সাথে। আধাত্মিক জ্ঞান, প্রতিভা বা মেধা না থাকলে প্রকৃত সাংবাদিক যেমন হওয়া যায় না, তেমনই সমাজ বা রাষ্ট্রও তাদের দ্বারা উপকৃত হতে পারেনা।

উন্নয়নশীল দুনিয়ায় ক্ষুধা-দারিদ্র্যতার কারণে সমাজ ও রাজনীতি অস্থিতিশীল থাকায় দুর্নীতি শক্ত শেকড়ে বিশাল বটবৃক্ষের ন্যায় ক্রমশ: বিস্তৃত হওয়ায় সৎ, বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার বিপরীতে পেশীশক্তিধারী অপসাংবাদিকদের দাপট-দৌরাত্ম্য এখন উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে; যা বাংলাদেশে এখন অপ্রতিরোধ্য!

চরম সত্যকথা! অর্থলোভী সাংবাদিক নামধারীরা অপসাংবাদিকতাসহ গুপ্তচরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার কারণেই মধ্যপ্রাচ্যসহ দুনিয়ার দেশে দেশে জঙ্গি সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা বৃদ্ধিসহ রক্তের হোলিখেলা চলছে- তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধলে এই অপসাংবাদিকদের কারণেই বাধতে পারে।

বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন যদি সাংবাদিকদের দুর্নীতির তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নিত- তাহলে দেশের ৬০% দুর্নীতি যেমন দ্রুত হ্রাস পেত তেমনই আরও ১৫ বছর আগেই মালয়েশিয়া বা দক্ষিণ কোরিয়ার মত উন্নত জাতিরাষ্ট্রে পরিণত হতো বাংলাদেশ।

ফার্স্টওয়ার্ল্ডে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে যতটা মর্যাদা দেয়া হয় থার্ডওয়ার্ল্ডে তা কল্পনাই করা যায় না! থার্ডওয়ার্ল্ডে ক্ষুধা-দারিদ্র্যতার কারণে সুশিক্ষা বঞ্চিত হওয়া ও অপসংস্কৃতিসহ নানা প্রতিকূলতার কারণে মূল জনগোষ্ঠির ৯০% নাগরিক অসচেতন বিধায় তাদের অনেকেই ভাগ্য বিধাতার ওপর নির্ভরশীল। যে ১০% নাগরিককে ‘সচেতন’ বলা হয়েছে তন্মধ্যে ৯৫% অর্থাৎ আমলা, পুলিশ আর বিচারক-সমাজপতিরাসহ রাজনৈতিক দুর্নীতির বিষবৃক্ষকে তারা সবাই সেবাযত্ন করে তার ক্রমবিস্তৃতি ঘটানোর প্রয়াস পাচ্ছে।

এতে করে মূল জনগোষ্ঠির ৯০% মানুষের রক্ত চুষে স্বীয় ভাগ্য পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে দুর্নীতিকে ওরা লালন সহ ফার্স্টওয়ার্ল্ডের মুনাফাখোরদের ইন্ধনে থার্ডওয়ার্ল্ডের রাজনীতিকে করে রাখছে অস্থিতিশীল। ফলে উন্নয়নশীল দুনিয়ায় অনেক কিছুই আর্থিক মানদণ্ডে তুলনা করা হয়- বিধায় সাংবাদিকতা পেশায় সৎভাবে অর্থ উপার্জনের স্বল্পতার কারণে অনেকের কাছে পেশাটি এক্কেবারে নগণ্য!

বিশেষ করে বাংলাদেশের অসাধু রাজনীতিবিদ আর আমলা-পুলিশ ও বিচারক-সমাজপতিদের কাছে সাংবাদিকতা পেশাটি অর্থের বিনিময়ে পাওয়া কতিপয় চাকর-চামচাদের মতই বর্তমানে গণ্য হচ্ছে!

বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির এযুগে শিক্ষা, সংস্কৃতির তথা জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পাশাপাশি সাংবাদিকতা পেশার মান বৃদ্ধি পেলেও মর্যাদাশীল বলতে যা বোঝায় তার স্বীকৃতি পাওয়া এখনো সম্ভব হচ্ছেনা। একজন সাংবাদিককে অনেকগুলো গুণের অধিকারী হতে হয়, তন্মধ্যে নিরহংকার, নির্লোভ ও অহিংসার মনোভাবসহ চরম ধৈর্য্য ও পরমত সহিষ্ণুতা তার মধ্যে থাকতে হবে।

কঠিন সাধনা ও অধ্যবসায়সহ সুকুমারগুণের অধিকারী না হলে- এ পেশায় বেশীদিন টিকে থাকাও সম্ভব নয়! পেশাগত দায়িত্ব পালনে ত্যাগ ও অবদানের তুলনায় বাংলাদেশে প্রাপ্তিটা এক্কেবারে নগণ্য হওয়ায় সামাজিকভাবে মর্যাদাশীল ভাবা না হলেও আত্মতৃপ্তিটা বড়কথা হওয়ায় অনেকে এ পেশাকে বেছে নিয়েছেন এবং এখানো নিতে চাচ্ছেন।

কিন্তু অপসাংবাদিকরা এ পেশাটিকে আজ মর্যাদা সম্পন্ন না করে ‘সাংঘাতিক’ বলে ভুক্তভোগি অনেকের কাছে তিরস্কারের পেশা হিসেবেও প্রমাণ করাচ্ছে। সৎভাবে সাহসী ভূমিকা নিয়ে বিবেকের দায়বোধে বা কর্তব্যের কঠোর শৃঙ্খলে আবদ্ধ থেকে সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিতরা দেশ ও জাতির কল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারলে জাতি তার মাধ্যমে লাভবান হতে পারে।

সংবাদপত্র জাতির দর্পণ- যদি প্রতিষ্ঠানটি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে পেশার স্বকীয়তা ও পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখতে পারে। যিনি বা যারা কর্তব্য পালনে নির্ভীক কেবলমাত্র তিনি বা তারাই পারবেন সমাজের অনাচার পাপাচার আর দুর্নীতি-দুর্বৃত্তপনার তথ্যচিত্র সার্চ করে বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যনির্ভর সংবাদ পরিবেশনে ভূমিকা রাখতে।

শুধু তাই নয় সমালোচনার বিপরীতে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে দেশ ও সমাজকে প্রগতির পথে এগিয়ে নেয়ার ভূমিকাও ‘জাতির বিবেক’ হিসেবে সাংবাদিকরা রাখতে পারেন।

দুনিয়ার বহু দেশে সাংবাদিকতা পেশাটি এখন প্রথম শ্রেণির মর্যাদা লাভ করলেও বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে সংবাদপত্রের ব্যাপক প্রসার ঘটার পরও রাজনৈতিক দুর্নীতির কারণে বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার বিপরীতে অপসাংবাদিকতার দাপট দৌরাত্ম্য অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে!

বিশেষ করে চামচামি, দালালি ও অনৈতিকভাবে অর্থলোভের কারণে এ পেশাটি এখনো প্রথম শ্রেণির মার্যাদা লাভ করতে পারছে না। তবে হ্যাঁ! বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতাসহ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা যেসব সংবাদপত্রের রয়েছে তারা ইতোমধ্যে প্রথম শ্রেণির মার্যাদা লাভে সক্ষম হয়েছে।

আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডিলাসো রুজভেল্ট সংবাদপত্র প্রসঙ্গে স্বীয় অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন ‘যদি কখনো সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কার্যকরভাবে খর্ব করা সম্ভব হয়, তবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শিক্ষার স্বাধীনতা, বক্তব্য রাখার স্বাধীনতা ইত্যাদি মৌলিক অধিকারও হয়ে পড়বে অর্থহীন’!

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মতই জনগণ ও সরকারের মধ্যে সংবাদপত্রের যোগসূত্র। রাজনীতিবিদ সাধারণত: তার নির্বাচনি এলাকার জনসাধারণের মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা রাখেন। কিন্তু সংবাদপত্রের ভূমিকা তাৎপর্যময় ও ব্যাপক। রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক কর্মতৎপরতার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন এবং এতদসংক্রান্ত অনেক খবরাখবর প্রচার করে সংবাদপত্র।

একে যদি গণতন্ত্রের মূল অভয়ব বলা যায় তাহলে তার প্রাণ বলা যেতে পারে সাংবাদিককেই। উপযুক্ত পরিবেশ ও নিরাপত্তা যে কোনো সৃজনশীল কাজের জন্য সার্বাগ্রে প্রয়োজন। নিরাপত্তাহীন বা প্রতিকূল পরিবেশে সৃজনশীল কোনো কাজ করাও সম্ভব নয়। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সংবাদপত্র লাভজনক শিল্প হিসেবে এখন গণ্য হচ্ছে। সংবাদপত্র যদি শিল্প হয় তা’হলে সৎ ও দায়িত্বশীল সংবাদকর্মীরা অবশ্যই তার শিল্পী। সৃজনশীলতা প্রকাশের পূর্বশর্ত হচ্ছে অনুকূল পরিবেশ- যা বাংলাদেশে তেমন একটা নেই।

আবার অর্থ ও পেশীশক্তির জোরে অনেক সময় সৃজনশীলতা পদদলিতও হয়। দুনিয়া সৃজনকর্তার সৃজনশীলতা ধ্বংস করার সাধ্য ক্ষমতা যেমন কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় একমাত্র স্রষ্টাই তা ধ্বংসের ক্ষমতা রাখেন।

ঠিক তেমনই কিছু সৃজনশীল মানুষও দুনিয়াতে জন্মাচ্ছেন- যাদের হত্যা করলেও তার সৃজনশীল কর্ম আর্থিক দৈন্যতার কারণে সাময়িকভাবে পদদলিত করা সম্ভব হলেও নির্মূল করা সম্ভব নয়! ‘আর্থিক দৈন্যতার কারণে কবি নজরুলকে তখনকার কতিপয় অপসাংবাদিক কারাগারে পাঠালে তিনি আরো তেজোদ্বীপ্ত হয়ে উঠেছিলেন বলেই তিনি বিদ্রোহী কবির খেতাব পেয়েছিলেন।

বাউল সম্রাট খেতাব পাওয়া শাহ্ আবদুল করিম তার গানের পাণ্ডুলিপির বানান শুদ্ধ-সম্পাদনার জন্য সাংবাদিক নামধারী অনেকের কাছে আকুতি জানিয়ে হিংসার বলি হতেও আমি দেখেছি। কিন্তু হিংসার বলি হয়ে সৃজনশীলতা সাময়িকভাবে পদদলিত করা সম্ভব হলেও নির্মূল করা যে অসম্ভব-তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ অ্যাকাডেমিক শিক্ষার সার্টিফিকেধারী না হয়েও জনপ্রিয় গান আর সূর মৃত্যুর পূর্বেই শাহ্ আবদুল করিমকে বাউল সম্রাট খেতাবসহ রাষ্ট্রীয় খেতাবও পাইয়ে দিয়েছে। এজন্য অনেক বড় মনের মানুষ জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক মরহুম হুমায়ূন আহমদ এর অবদান অনস্বীকার্য’। সৃজনশীল মেধা দেশ ও সমাজকে সমৃদ্ধ করার ভূমিকা রেখে ইতিহাসের জন্ম দেয়।

কিন্তু যারা এর অধিকারীদের হিংসা বা ঈর্ষা করে ইতিহাসকে রাজহাঁস বা পাতিহাঁস ভেবে নিজের মত করে নিতে চায়- তারা যত সম্পদশালী বা অর্থবলে দালাল চামচা পরিবেষ্ঠিত হোন না কেন একদিন না একদিন ইতিহাসে তিনি বা তারা আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন।

হিংসা প্রসঙ্গে মনোবিজ্ঞানী লর্ড আর্থার বলেছেন, ‘যারা নীতিতে বিশ্বাসী নয়-বিশ্বাসী একমাত্র স্বার্থে; তাদের উন্নতি হয় বটে- কিন্তু পতনও আসে অপ্রতিরোধ্য গতিতে’! বহুল প্রচারিত পত্রিকার মালিক-সংবাদকর্মীদের অহংকারী মনোভাবসহ দাপট দৌরাত্ম্যের কথা ভুক্তভোগীদের কাছে বলার অপেক্ষা রাখেনা- তবে সবাই যে এমন তাও কিন্তু নয়! ভালো মানুষ আর বড় মনের সাংবাদিকরা না থাকলে দেশ ও সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মালিকানায় বা পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত পত্রিকা কর্তৃপক্ষের বা কতিপয় দাপুটে সাংবাদিকের অহংকারী মনোভাব আর বিভিন্ন সময় অনেক বিপন্ন সম্মানীত মানুষদের অবজ্ঞা-অবহেলা করতে দেখে আসছি বিগত ৩৯ বছর যাবৎ- অনেককে অপমানিত বোধ করতে দেখে প্রায়ই আমার মন কাঁদত।

এমনকি তখন মনে পড়ে যেতো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের- ‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ যাদের করেছ অপমান, অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান’ কবিতার পদ্য পংক্তির কথা! সম্ভবত: রক্তের দামে কেনা বিপুল সম্ভাবনার এই দেশে সাধারণ মানুষের মৌলিক মানবাধিকার পদদলিত- ফলে দেশ ও সমাজ এখনও হতাশায় নিমজ্জিত।

অর্থের মোহে অপসাংবাদিকরা দেশব্যাপী অপরাধী চক্রের অপকর্মের বিরুদ্ধে বা বৃহত্তর কল্যাণে ভূমিকা না রেখে উল্টো তাদের সম্মানীত বলে ভিকটিমকে করছে সর্বস্বান্তসহ অপমান- নাজেহাল! এরই নাম কী সাংবাদিকতা? নো! অবশ্যই এটা অপসাংবাদিকতা! আর সৎ সাংবাদিকরা যদি ভূমিকা রাখে তাহলে তাকে কিভাবে নির্মূল করা যায় সে চেষ্টা চালানো হয়। দুনিয়ার অনেক দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকলেও সৎ সাংবাদিকের স্বাধীনতা আর মর্যাদা দূরের কথা নিরাপত্তাও তেমন নেই!

কোনো ভাল মানুষের নিরাপত্তা হচ্ছে তার মান সম্মান- মৃত্যু তো সৃষ্টিকর্তা দুনিয়াতে যেদিন পাঠিয়েছেন সেদিনই নির্ধারণ করে দিয়েছেন! তাই শুধু হত্যা-নির্যাতনের ভিকটিমের নিরাপত্তার কথা বলা ঠিক নয়। আমার এই অল্প বয়সে অনেক সিনিয়র সাংবাদিকসহ সম্ভ্রান্ত পরিবারের মানুষদের লাঞ্ছিত অপমানিত ও নাজেহাল হতে দেখেছি- এমনকি মৃত্যুর সময় গর্ভধারীনি মায়ের পাশে থাকার বদলে কারান্তরালে থাকতেও দেখেছি!

শুধু তাই নয়, মৃত্যুর পর প্যারোলে মুক্তি দিয়েও করা হয়েছে অমানবিক আচরণ। পরে তাকে নিয়ে অনেককে গর্ববোধ করতেও দেখেছি! …বড় বিচিত্রময় এদেশ- সত্যি সেল্যুকাস!

তাই বলা চলে উন্নয়নশীল দেশে রাজনৈতিক দুর্নীতি ও অর্থ-পেশীশক্তির দাপটে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিপরীতে অপসাংবাদিকতার দাপট-দৌরাত্ম্য এখন শুধু ব্যাপক আকারই ধারণ করছে না-অপ্রতিরোধ্যও হয়ে পড়েছে! ফলে বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজ নেতা, আমলা, বিচারক আর পুলিশ কর্মকর্তারা সৎ সাংবাদিকদের বলেন ‘ভুয়া’ আর অসৎ- অপসাংবাদিকদের করেন গুরুর মতো পদলেহন। ফলে উন্নত-সমৃদ্ধ হলেও- রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ দেশ ধাবিত হচ্ছে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের দিকে! একদা সাংবাদিকতা কোনো পেশা ছিলনা- ছিলো সৃজনশীল কিছু মানুষের কৌতুহলী নেশা।

কালের বিবর্তনে আর মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশে সাংবাদিকতা আজ হয়ে উঠেছে দুনিয়ার তাবৎ অন্ধকার দূরীকরণের প্রজ্জ্বলিত মশাল- যা তথ্য প্রযুক্তির এযুগে পরিণত হয়েছে লাভজনক শিল্প হিসেবে।

সৎ, বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার আদর্শে অটল থাকলে ফার্স্টওয়ার্ল্ডে এর কদর ও মুনাফা বেশী হলেও থার্ডওয়ার্ল্ডে কিন্তু রাজনৈতিক দুর্নীতির কারণে কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ অবস্থা! এহেন পরিস্থিতিতে স্বাধীনভাবে মত বা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের দায়িত্ব অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা পালন করতে পারে না।

ফলে হাজারো সংবাদপত্র আর ইলেকট্রনিক্স সংবাদ মাধ্যম দেশে বিদ্যমান থাকলেও- সচেতন মানুষরা কিন্তু পাচ্ছেন না বস্তুনিষ্ঠ বা তথ্যনির্ভর সংবাদ। বর্তমান জটিল সমাজ ব্যবস্থায় একজন সাংবাদিক তার চিন্তার স্বাধীনতাটুকুও অনেক সময় প্রয়োগ করতে পারেন না। কারণ এ ক্ষেত্রে তার সামনে চারটি প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়- আর তা হচ্ছে ১. মালিক ২. সরকার ৩. প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ এবং ৪. অপরাধীচক্র। এর যে কোনো একজনের বিরাগভাজন হলেই সমস্যা বা বিপদ।

কেননা এ ৪টি বাধার সৃষ্টিকারীদেরই অনেক সময় দেখা যায় পরস্পর পরস্পরের বন্ধু-সুহূদ! যার জন্য তৃণমূল পর্যায়েও সাংবাদিকরা গড়ে তুলতে বাধ্য হচ্ছেন সামাজিক সংগঠন বা প্রেস ক্লাব। দুনিয়ার দেশে দেশে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে সাংবাদিকদের সামাজিক সংগঠনসমূহ গড়ে উঠছে ক্ষুদ্র থেকে বৃহদাকারে কিন্তু দুর্ভাগ্য! রাজনৈতিক দুর্নীতির কারণে ‘জাতির বিবেক’ বলে খ্যাত সাংবাদিকদের সামাজিক সংগঠনগুলোও উন্নয়নশীল দেশে বহুধা বিভক্ত!

ফলে এক কাকের দুর্গতি দেখে হাজারো কাক কা-কা করে সহানুভূতি জানালেও এক সাংবাদিকের দুর্গতিতে আরেকজন দেয় বাহবা অথবা নানান যুক্তি- এমনকি অর্থ উপার্জনের সুযোগ থাকলে ডেমকেয়ার মনোভাবও দেখায় অনেকে! কিশোর কবি সুকান্তের ভাষায় ‘বন্ধু তোমার ছাড়ো উদ্বেগ সুতীক্ষ্ন কর চিত্ত, বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি জেনে নিক দুর্বৃত্ত! একদিন হয়তো কবির একথার বাস্তবতা আসতে পারে।

যে রাষ্ট্র ও সমাজ উন্নত, ন্যায়নীতির আদর্শ লালনকারী, দুর্নীতিমুক্ত ও পরমতসহিষ্ণু- সে সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রকৃত সৎ, নির্ভীক ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকরা শান্তিতে, সুন্দর ও ঝুঁকিমুক্তভাবে কাজসহ বসবাস করতে পারেন। কিন্তু যে সাংবাদিক পরমতসহিষ্ণু নয় কিছু টাকা হাতে পেয়ে অনুসন্ধিৎসু মনোভাব নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করে পরমায়েশি সংবাদ পরিবেশন করে, ভিন্নমতালম্বিকে শত্রু ভাবে সেখানে বিবেক আর মানবতা হয় পদদলিত, ন্যায় বিচারের বদলে পরিলক্ষিত হয় মানবতার আহাজারী! ফলে দেশ-জাতি হয় অভিশপ্ত, সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত- মদদ পায় জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদীরা আর সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তপনাও বৃদ্ধি পায় ব্যাপক আকারে।

সত্য প্রকাশে অনেক পত্রিকা কর্তৃপক্ষের অনীহা-অ্যলার্জি থাকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখা বহুল প্রচারিত পত্রিকায় ছাপা হবেনা জেনে- লেখতে জানা আমার মত নাছোড়বান্দা সাংবাদিক-কলামিস্টরা বেনামে লেখা পাঠালে অনেক সময় তা ছাপা হয়ে যায়।

যদি লেখাটি হঠাৎ আরেকটি পত্রিকায় স্বনামে হুবহু ছাপা হয়ে যায়- তাহলেই শুরু হয় বিতর্কের ঝড়, এমন মজার ঘটনা আমি নিজেও ঘটিয়েছি অনেকবার! বর্তমানে রাষ্ট্র ও সমাজ উন্নত হচ্ছে- ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার গ্রহণযোগ্যতা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রিন্ট মিডিয়ার গুরুত্ব হ্রাস পেতে পারে বলে এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়। অরুণপাতের তরুণদের মাঝে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেলে প্রিন্ট মিডিয়ার অস্থিত্ব একসময় হয়তো নাও থাকতে পারে। ফলে হলুদ বা অপসাংবাদিকতার দাপট-দৌরাত্ম্য কমে যেতে পারে!

তখন ১-২‘শ, বর্তমানে ৫‘শ বা ১হাজার টাকার বিকাশ-ফ্লেক্সিলোড দিয়ে কারো বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করা সাংবাদিকদের প্রতিদিন হাজার টাকা কামানোর পথও রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং সাধুবেশী সাংবাদিক বন্ধুরা সচেতন হোন।

লেখক:
মো: রাসেল সরকার
ন্যাশনাল জার্নালিস্ট ফোরাম-(এনজেএফ)।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 05:00:53 pm, Monday, 2 June 2025
215 Time View

অপসাংবাদিকতার দাপটে নাজেহাল পেশাদার গণমাধ্যম!

Update Time : 05:00:53 pm, Monday, 2 June 2025

 

গণমাধ্যম ডেস্ক:
সাংবাদিকতা এক সময় ছিল সমাজ বদলের একটি মহৎ হাতিয়ার। কলম ছিল প্রতিবাদের সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র। সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো মানেই ছিল সাংবাদিকতা- ভয়ডরহীন, অনুসন্ধানী, দায়িত্বশীল। অথচ আজকের বাস্তবতা এতটাই ভিন্ন, যেন আমরা এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডির মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছি। কলমের কালি মুছে গিয়ে, জায়গা করে নিয়েছে ইউটিউব সাবস্ক্রাইবার, টিকটক ফলোয়ার আর লাইভ ভিডিওর নাটক।

সংবাদপত্রকে সমাজের দর্পণ বলা হয়। এই দর্পণ তৈরি করেন সাংবাদিকরা। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সরকার এবং সব দলের পথনির্দেশনা তৈরি করে দেয় সংবাদপত্র। এর কারিগর হলো সাংবাদিক সমাজ। সাংবাদিক সমাজ আজ দ্বিধা বিভক্ত। অপসাংবাদিকদের ভিড়ে প্রকৃত সাংবাদিকদের মর্যাদার আজ ধুলায় ভুলুণ্ঠিত। কেন এমন হচ্ছে?

একজন সাংবাদিক দেশে ও সমাজের কল্যাণে নিবেদিত হবেন; সাংবাদিকতায় এটি স্বতঃসিদ্ধ। কিন্তু কী হচ্ছে দেশে? মহান পেশার আদর্শ উদ্দেশ্য উল্টে ফেলা হচ্ছে; সৎ সাংবাদিকদের বিতর্কিত করা হচ্ছে; নানা স্বার্থে সংবাদপত্রকে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। কারা করছে এসব? আজ কেন সাংবাদিকতা বাণিজ্যের ভিড়ে সংবাদপত্র এবং প্রকৃত সাংবাদিকরা অপসৃয়মাণ? কেন মর্যাদাসম্পন্ন পেশা, মর্যাদা হারাচ্ছে।

এডমন্ড বার্ক বলেছেন ‘পার্লামেন্টের তিনটি রাষ্ট্র রয়েছে। কিন্তু ঐ যে দূরে সাংবাদিকদের আসন সারি সেটি হচ্ছে পার্লামেন্টের চতুর্থ রাষ্ট্র এবং আগের তিনটি রাষ্ট্রের চেয়ে তা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ’!

এডমন্ড বার্কের সে উক্তি থেকে সংবাদপত্রের গুরুত্ব অনুধাবন করলে সহজেই বোঝা যায় যে, পার্লামেন্ট ও সংবাদপত্র হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা দু’টি ভিন্ন বিষয় হলেও পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক। সংবাদপত্র ছাড়া সাংবাদিকতা যেমন ভাবা যায় না, তেমনই সাংবাদিকতাকে বাদ দিয়ে সংবাদপত্রেরও অস্থিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন।

কেননা সাংবাদিকতা হচ্ছে ব্যক্তি এবং সংবাদপত্র হচ্ছে প্রতিষ্ঠান। সংবাদপত্রের জন্য কোনো ব্যক্তি যখন সংবাদ সংগ্রহকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে তখন তাকে বলে সাংবাদিক। আর তার পেশাকে বলা হয় সাংবাদিকতা।

সাংবাদিকতা হচ্ছে সেবামূলক একটি পেশা। পেশাটি খুবই সহজ বা আরামের বলে অনেকের কাছে প্রতীয়মাণ হলেও আদতে সাংবাদিকতা ব্যতিক্রমধর্মী পেশা, যা কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় অন্য সব পেশার চাইতে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

দুনিয়ার তাবৎ সমাজ ও অস্থিতিশীল রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে অনেক প্রতিকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয় দায়িত্ব পালনও করতে হয় বিচক্ষণতার সাথে। আধাত্মিক জ্ঞান, প্রতিভা বা মেধা না থাকলে প্রকৃত সাংবাদিক যেমন হওয়া যায় না, তেমনই সমাজ বা রাষ্ট্রও তাদের দ্বারা উপকৃত হতে পারেনা।

উন্নয়নশীল দুনিয়ায় ক্ষুধা-দারিদ্র্যতার কারণে সমাজ ও রাজনীতি অস্থিতিশীল থাকায় দুর্নীতি শক্ত শেকড়ে বিশাল বটবৃক্ষের ন্যায় ক্রমশ: বিস্তৃত হওয়ায় সৎ, বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার বিপরীতে পেশীশক্তিধারী অপসাংবাদিকদের দাপট-দৌরাত্ম্য এখন উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে; যা বাংলাদেশে এখন অপ্রতিরোধ্য!

চরম সত্যকথা! অর্থলোভী সাংবাদিক নামধারীরা অপসাংবাদিকতাসহ গুপ্তচরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার কারণেই মধ্যপ্রাচ্যসহ দুনিয়ার দেশে দেশে জঙ্গি সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা বৃদ্ধিসহ রক্তের হোলিখেলা চলছে- তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধলে এই অপসাংবাদিকদের কারণেই বাধতে পারে।

বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন যদি সাংবাদিকদের দুর্নীতির তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নিত- তাহলে দেশের ৬০% দুর্নীতি যেমন দ্রুত হ্রাস পেত তেমনই আরও ১৫ বছর আগেই মালয়েশিয়া বা দক্ষিণ কোরিয়ার মত উন্নত জাতিরাষ্ট্রে পরিণত হতো বাংলাদেশ।

ফার্স্টওয়ার্ল্ডে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে যতটা মর্যাদা দেয়া হয় থার্ডওয়ার্ল্ডে তা কল্পনাই করা যায় না! থার্ডওয়ার্ল্ডে ক্ষুধা-দারিদ্র্যতার কারণে সুশিক্ষা বঞ্চিত হওয়া ও অপসংস্কৃতিসহ নানা প্রতিকূলতার কারণে মূল জনগোষ্ঠির ৯০% নাগরিক অসচেতন বিধায় তাদের অনেকেই ভাগ্য বিধাতার ওপর নির্ভরশীল। যে ১০% নাগরিককে ‘সচেতন’ বলা হয়েছে তন্মধ্যে ৯৫% অর্থাৎ আমলা, পুলিশ আর বিচারক-সমাজপতিরাসহ রাজনৈতিক দুর্নীতির বিষবৃক্ষকে তারা সবাই সেবাযত্ন করে তার ক্রমবিস্তৃতি ঘটানোর প্রয়াস পাচ্ছে।

এতে করে মূল জনগোষ্ঠির ৯০% মানুষের রক্ত চুষে স্বীয় ভাগ্য পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে দুর্নীতিকে ওরা লালন সহ ফার্স্টওয়ার্ল্ডের মুনাফাখোরদের ইন্ধনে থার্ডওয়ার্ল্ডের রাজনীতিকে করে রাখছে অস্থিতিশীল। ফলে উন্নয়নশীল দুনিয়ায় অনেক কিছুই আর্থিক মানদণ্ডে তুলনা করা হয়- বিধায় সাংবাদিকতা পেশায় সৎভাবে অর্থ উপার্জনের স্বল্পতার কারণে অনেকের কাছে পেশাটি এক্কেবারে নগণ্য!

বিশেষ করে বাংলাদেশের অসাধু রাজনীতিবিদ আর আমলা-পুলিশ ও বিচারক-সমাজপতিদের কাছে সাংবাদিকতা পেশাটি অর্থের বিনিময়ে পাওয়া কতিপয় চাকর-চামচাদের মতই বর্তমানে গণ্য হচ্ছে!

বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির এযুগে শিক্ষা, সংস্কৃতির তথা জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পাশাপাশি সাংবাদিকতা পেশার মান বৃদ্ধি পেলেও মর্যাদাশীল বলতে যা বোঝায় তার স্বীকৃতি পাওয়া এখনো সম্ভব হচ্ছেনা। একজন সাংবাদিককে অনেকগুলো গুণের অধিকারী হতে হয়, তন্মধ্যে নিরহংকার, নির্লোভ ও অহিংসার মনোভাবসহ চরম ধৈর্য্য ও পরমত সহিষ্ণুতা তার মধ্যে থাকতে হবে।

কঠিন সাধনা ও অধ্যবসায়সহ সুকুমারগুণের অধিকারী না হলে- এ পেশায় বেশীদিন টিকে থাকাও সম্ভব নয়! পেশাগত দায়িত্ব পালনে ত্যাগ ও অবদানের তুলনায় বাংলাদেশে প্রাপ্তিটা এক্কেবারে নগণ্য হওয়ায় সামাজিকভাবে মর্যাদাশীল ভাবা না হলেও আত্মতৃপ্তিটা বড়কথা হওয়ায় অনেকে এ পেশাকে বেছে নিয়েছেন এবং এখানো নিতে চাচ্ছেন।

কিন্তু অপসাংবাদিকরা এ পেশাটিকে আজ মর্যাদা সম্পন্ন না করে ‘সাংঘাতিক’ বলে ভুক্তভোগি অনেকের কাছে তিরস্কারের পেশা হিসেবেও প্রমাণ করাচ্ছে। সৎভাবে সাহসী ভূমিকা নিয়ে বিবেকের দায়বোধে বা কর্তব্যের কঠোর শৃঙ্খলে আবদ্ধ থেকে সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিতরা দেশ ও জাতির কল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারলে জাতি তার মাধ্যমে লাভবান হতে পারে।

সংবাদপত্র জাতির দর্পণ- যদি প্রতিষ্ঠানটি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে পেশার স্বকীয়তা ও পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখতে পারে। যিনি বা যারা কর্তব্য পালনে নির্ভীক কেবলমাত্র তিনি বা তারাই পারবেন সমাজের অনাচার পাপাচার আর দুর্নীতি-দুর্বৃত্তপনার তথ্যচিত্র সার্চ করে বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যনির্ভর সংবাদ পরিবেশনে ভূমিকা রাখতে।

শুধু তাই নয় সমালোচনার বিপরীতে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে দেশ ও সমাজকে প্রগতির পথে এগিয়ে নেয়ার ভূমিকাও ‘জাতির বিবেক’ হিসেবে সাংবাদিকরা রাখতে পারেন।

দুনিয়ার বহু দেশে সাংবাদিকতা পেশাটি এখন প্রথম শ্রেণির মর্যাদা লাভ করলেও বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে সংবাদপত্রের ব্যাপক প্রসার ঘটার পরও রাজনৈতিক দুর্নীতির কারণে বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার বিপরীতে অপসাংবাদিকতার দাপট দৌরাত্ম্য অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে!

বিশেষ করে চামচামি, দালালি ও অনৈতিকভাবে অর্থলোভের কারণে এ পেশাটি এখনো প্রথম শ্রেণির মার্যাদা লাভ করতে পারছে না। তবে হ্যাঁ! বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতাসহ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা যেসব সংবাদপত্রের রয়েছে তারা ইতোমধ্যে প্রথম শ্রেণির মার্যাদা লাভে সক্ষম হয়েছে।

আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডিলাসো রুজভেল্ট সংবাদপত্র প্রসঙ্গে স্বীয় অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন ‘যদি কখনো সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কার্যকরভাবে খর্ব করা সম্ভব হয়, তবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শিক্ষার স্বাধীনতা, বক্তব্য রাখার স্বাধীনতা ইত্যাদি মৌলিক অধিকারও হয়ে পড়বে অর্থহীন’!

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মতই জনগণ ও সরকারের মধ্যে সংবাদপত্রের যোগসূত্র। রাজনীতিবিদ সাধারণত: তার নির্বাচনি এলাকার জনসাধারণের মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা রাখেন। কিন্তু সংবাদপত্রের ভূমিকা তাৎপর্যময় ও ব্যাপক। রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক কর্মতৎপরতার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন এবং এতদসংক্রান্ত অনেক খবরাখবর প্রচার করে সংবাদপত্র।

একে যদি গণতন্ত্রের মূল অভয়ব বলা যায় তাহলে তার প্রাণ বলা যেতে পারে সাংবাদিককেই। উপযুক্ত পরিবেশ ও নিরাপত্তা যে কোনো সৃজনশীল কাজের জন্য সার্বাগ্রে প্রয়োজন। নিরাপত্তাহীন বা প্রতিকূল পরিবেশে সৃজনশীল কোনো কাজ করাও সম্ভব নয়। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সংবাদপত্র লাভজনক শিল্প হিসেবে এখন গণ্য হচ্ছে। সংবাদপত্র যদি শিল্প হয় তা’হলে সৎ ও দায়িত্বশীল সংবাদকর্মীরা অবশ্যই তার শিল্পী। সৃজনশীলতা প্রকাশের পূর্বশর্ত হচ্ছে অনুকূল পরিবেশ- যা বাংলাদেশে তেমন একটা নেই।

আবার অর্থ ও পেশীশক্তির জোরে অনেক সময় সৃজনশীলতা পদদলিতও হয়। দুনিয়া সৃজনকর্তার সৃজনশীলতা ধ্বংস করার সাধ্য ক্ষমতা যেমন কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় একমাত্র স্রষ্টাই তা ধ্বংসের ক্ষমতা রাখেন।

ঠিক তেমনই কিছু সৃজনশীল মানুষও দুনিয়াতে জন্মাচ্ছেন- যাদের হত্যা করলেও তার সৃজনশীল কর্ম আর্থিক দৈন্যতার কারণে সাময়িকভাবে পদদলিত করা সম্ভব হলেও নির্মূল করা সম্ভব নয়! ‘আর্থিক দৈন্যতার কারণে কবি নজরুলকে তখনকার কতিপয় অপসাংবাদিক কারাগারে পাঠালে তিনি আরো তেজোদ্বীপ্ত হয়ে উঠেছিলেন বলেই তিনি বিদ্রোহী কবির খেতাব পেয়েছিলেন।

বাউল সম্রাট খেতাব পাওয়া শাহ্ আবদুল করিম তার গানের পাণ্ডুলিপির বানান শুদ্ধ-সম্পাদনার জন্য সাংবাদিক নামধারী অনেকের কাছে আকুতি জানিয়ে হিংসার বলি হতেও আমি দেখেছি। কিন্তু হিংসার বলি হয়ে সৃজনশীলতা সাময়িকভাবে পদদলিত করা সম্ভব হলেও নির্মূল করা যে অসম্ভব-তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ অ্যাকাডেমিক শিক্ষার সার্টিফিকেধারী না হয়েও জনপ্রিয় গান আর সূর মৃত্যুর পূর্বেই শাহ্ আবদুল করিমকে বাউল সম্রাট খেতাবসহ রাষ্ট্রীয় খেতাবও পাইয়ে দিয়েছে। এজন্য অনেক বড় মনের মানুষ জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক মরহুম হুমায়ূন আহমদ এর অবদান অনস্বীকার্য’। সৃজনশীল মেধা দেশ ও সমাজকে সমৃদ্ধ করার ভূমিকা রেখে ইতিহাসের জন্ম দেয়।

কিন্তু যারা এর অধিকারীদের হিংসা বা ঈর্ষা করে ইতিহাসকে রাজহাঁস বা পাতিহাঁস ভেবে নিজের মত করে নিতে চায়- তারা যত সম্পদশালী বা অর্থবলে দালাল চামচা পরিবেষ্ঠিত হোন না কেন একদিন না একদিন ইতিহাসে তিনি বা তারা আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন।

হিংসা প্রসঙ্গে মনোবিজ্ঞানী লর্ড আর্থার বলেছেন, ‘যারা নীতিতে বিশ্বাসী নয়-বিশ্বাসী একমাত্র স্বার্থে; তাদের উন্নতি হয় বটে- কিন্তু পতনও আসে অপ্রতিরোধ্য গতিতে’! বহুল প্রচারিত পত্রিকার মালিক-সংবাদকর্মীদের অহংকারী মনোভাবসহ দাপট দৌরাত্ম্যের কথা ভুক্তভোগীদের কাছে বলার অপেক্ষা রাখেনা- তবে সবাই যে এমন তাও কিন্তু নয়! ভালো মানুষ আর বড় মনের সাংবাদিকরা না থাকলে দেশ ও সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মালিকানায় বা পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত পত্রিকা কর্তৃপক্ষের বা কতিপয় দাপুটে সাংবাদিকের অহংকারী মনোভাব আর বিভিন্ন সময় অনেক বিপন্ন সম্মানীত মানুষদের অবজ্ঞা-অবহেলা করতে দেখে আসছি বিগত ৩৯ বছর যাবৎ- অনেককে অপমানিত বোধ করতে দেখে প্রায়ই আমার মন কাঁদত।

এমনকি তখন মনে পড়ে যেতো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের- ‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ যাদের করেছ অপমান, অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান’ কবিতার পদ্য পংক্তির কথা! সম্ভবত: রক্তের দামে কেনা বিপুল সম্ভাবনার এই দেশে সাধারণ মানুষের মৌলিক মানবাধিকার পদদলিত- ফলে দেশ ও সমাজ এখনও হতাশায় নিমজ্জিত।

অর্থের মোহে অপসাংবাদিকরা দেশব্যাপী অপরাধী চক্রের অপকর্মের বিরুদ্ধে বা বৃহত্তর কল্যাণে ভূমিকা না রেখে উল্টো তাদের সম্মানীত বলে ভিকটিমকে করছে সর্বস্বান্তসহ অপমান- নাজেহাল! এরই নাম কী সাংবাদিকতা? নো! অবশ্যই এটা অপসাংবাদিকতা! আর সৎ সাংবাদিকরা যদি ভূমিকা রাখে তাহলে তাকে কিভাবে নির্মূল করা যায় সে চেষ্টা চালানো হয়। দুনিয়ার অনেক দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকলেও সৎ সাংবাদিকের স্বাধীনতা আর মর্যাদা দূরের কথা নিরাপত্তাও তেমন নেই!

কোনো ভাল মানুষের নিরাপত্তা হচ্ছে তার মান সম্মান- মৃত্যু তো সৃষ্টিকর্তা দুনিয়াতে যেদিন পাঠিয়েছেন সেদিনই নির্ধারণ করে দিয়েছেন! তাই শুধু হত্যা-নির্যাতনের ভিকটিমের নিরাপত্তার কথা বলা ঠিক নয়। আমার এই অল্প বয়সে অনেক সিনিয়র সাংবাদিকসহ সম্ভ্রান্ত পরিবারের মানুষদের লাঞ্ছিত অপমানিত ও নাজেহাল হতে দেখেছি- এমনকি মৃত্যুর সময় গর্ভধারীনি মায়ের পাশে থাকার বদলে কারান্তরালে থাকতেও দেখেছি!

শুধু তাই নয়, মৃত্যুর পর প্যারোলে মুক্তি দিয়েও করা হয়েছে অমানবিক আচরণ। পরে তাকে নিয়ে অনেককে গর্ববোধ করতেও দেখেছি! …বড় বিচিত্রময় এদেশ- সত্যি সেল্যুকাস!

তাই বলা চলে উন্নয়নশীল দেশে রাজনৈতিক দুর্নীতি ও অর্থ-পেশীশক্তির দাপটে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিপরীতে অপসাংবাদিকতার দাপট-দৌরাত্ম্য এখন শুধু ব্যাপক আকারই ধারণ করছে না-অপ্রতিরোধ্যও হয়ে পড়েছে! ফলে বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজ নেতা, আমলা, বিচারক আর পুলিশ কর্মকর্তারা সৎ সাংবাদিকদের বলেন ‘ভুয়া’ আর অসৎ- অপসাংবাদিকদের করেন গুরুর মতো পদলেহন। ফলে উন্নত-সমৃদ্ধ হলেও- রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ দেশ ধাবিত হচ্ছে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের দিকে! একদা সাংবাদিকতা কোনো পেশা ছিলনা- ছিলো সৃজনশীল কিছু মানুষের কৌতুহলী নেশা।

কালের বিবর্তনে আর মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশে সাংবাদিকতা আজ হয়ে উঠেছে দুনিয়ার তাবৎ অন্ধকার দূরীকরণের প্রজ্জ্বলিত মশাল- যা তথ্য প্রযুক্তির এযুগে পরিণত হয়েছে লাভজনক শিল্প হিসেবে।

সৎ, বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার আদর্শে অটল থাকলে ফার্স্টওয়ার্ল্ডে এর কদর ও মুনাফা বেশী হলেও থার্ডওয়ার্ল্ডে কিন্তু রাজনৈতিক দুর্নীতির কারণে কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ অবস্থা! এহেন পরিস্থিতিতে স্বাধীনভাবে মত বা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের দায়িত্ব অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা পালন করতে পারে না।

ফলে হাজারো সংবাদপত্র আর ইলেকট্রনিক্স সংবাদ মাধ্যম দেশে বিদ্যমান থাকলেও- সচেতন মানুষরা কিন্তু পাচ্ছেন না বস্তুনিষ্ঠ বা তথ্যনির্ভর সংবাদ। বর্তমান জটিল সমাজ ব্যবস্থায় একজন সাংবাদিক তার চিন্তার স্বাধীনতাটুকুও অনেক সময় প্রয়োগ করতে পারেন না। কারণ এ ক্ষেত্রে তার সামনে চারটি প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়- আর তা হচ্ছে ১. মালিক ২. সরকার ৩. প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ এবং ৪. অপরাধীচক্র। এর যে কোনো একজনের বিরাগভাজন হলেই সমস্যা বা বিপদ।

কেননা এ ৪টি বাধার সৃষ্টিকারীদেরই অনেক সময় দেখা যায় পরস্পর পরস্পরের বন্ধু-সুহূদ! যার জন্য তৃণমূল পর্যায়েও সাংবাদিকরা গড়ে তুলতে বাধ্য হচ্ছেন সামাজিক সংগঠন বা প্রেস ক্লাব। দুনিয়ার দেশে দেশে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে সাংবাদিকদের সামাজিক সংগঠনসমূহ গড়ে উঠছে ক্ষুদ্র থেকে বৃহদাকারে কিন্তু দুর্ভাগ্য! রাজনৈতিক দুর্নীতির কারণে ‘জাতির বিবেক’ বলে খ্যাত সাংবাদিকদের সামাজিক সংগঠনগুলোও উন্নয়নশীল দেশে বহুধা বিভক্ত!

ফলে এক কাকের দুর্গতি দেখে হাজারো কাক কা-কা করে সহানুভূতি জানালেও এক সাংবাদিকের দুর্গতিতে আরেকজন দেয় বাহবা অথবা নানান যুক্তি- এমনকি অর্থ উপার্জনের সুযোগ থাকলে ডেমকেয়ার মনোভাবও দেখায় অনেকে! কিশোর কবি সুকান্তের ভাষায় ‘বন্ধু তোমার ছাড়ো উদ্বেগ সুতীক্ষ্ন কর চিত্ত, বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি জেনে নিক দুর্বৃত্ত! একদিন হয়তো কবির একথার বাস্তবতা আসতে পারে।

যে রাষ্ট্র ও সমাজ উন্নত, ন্যায়নীতির আদর্শ লালনকারী, দুর্নীতিমুক্ত ও পরমতসহিষ্ণু- সে সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রকৃত সৎ, নির্ভীক ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকরা শান্তিতে, সুন্দর ও ঝুঁকিমুক্তভাবে কাজসহ বসবাস করতে পারেন। কিন্তু যে সাংবাদিক পরমতসহিষ্ণু নয় কিছু টাকা হাতে পেয়ে অনুসন্ধিৎসু মনোভাব নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করে পরমায়েশি সংবাদ পরিবেশন করে, ভিন্নমতালম্বিকে শত্রু ভাবে সেখানে বিবেক আর মানবতা হয় পদদলিত, ন্যায় বিচারের বদলে পরিলক্ষিত হয় মানবতার আহাজারী! ফলে দেশ-জাতি হয় অভিশপ্ত, সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত- মদদ পায় জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদীরা আর সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তপনাও বৃদ্ধি পায় ব্যাপক আকারে।

সত্য প্রকাশে অনেক পত্রিকা কর্তৃপক্ষের অনীহা-অ্যলার্জি থাকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখা বহুল প্রচারিত পত্রিকায় ছাপা হবেনা জেনে- লেখতে জানা আমার মত নাছোড়বান্দা সাংবাদিক-কলামিস্টরা বেনামে লেখা পাঠালে অনেক সময় তা ছাপা হয়ে যায়।

যদি লেখাটি হঠাৎ আরেকটি পত্রিকায় স্বনামে হুবহু ছাপা হয়ে যায়- তাহলেই শুরু হয় বিতর্কের ঝড়, এমন মজার ঘটনা আমি নিজেও ঘটিয়েছি অনেকবার! বর্তমানে রাষ্ট্র ও সমাজ উন্নত হচ্ছে- ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার গ্রহণযোগ্যতা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রিন্ট মিডিয়ার গুরুত্ব হ্রাস পেতে পারে বলে এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়। অরুণপাতের তরুণদের মাঝে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেলে প্রিন্ট মিডিয়ার অস্থিত্ব একসময় হয়তো নাও থাকতে পারে। ফলে হলুদ বা অপসাংবাদিকতার দাপট-দৌরাত্ম্য কমে যেতে পারে!

তখন ১-২‘শ, বর্তমানে ৫‘শ বা ১হাজার টাকার বিকাশ-ফ্লেক্সিলোড দিয়ে কারো বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করা সাংবাদিকদের প্রতিদিন হাজার টাকা কামানোর পথও রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং সাধুবেশী সাংবাদিক বন্ধুরা সচেতন হোন।

লেখক:
মো: রাসেল সরকার
ন্যাশনাল জার্নালিস্ট ফোরাম-(এনজেএফ)।