3:23 am, Wednesday, 10 September 2025

চাঁদপুরে আগুনে দগ্ধ হয়ে স্কুলে শিক্ষার্থীর মৃত্যু, ৮ শিক্ষক বরখাস্ত

168919 199

 

চাঁদপুর প্রতিনিধি:
চাঁদপুরের কচুয়ায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগুনে দগ্ধ হয়ে সামিয়া রহমান (৫) নামের এক শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় একই স্কুলের আট শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকরা হলেন উপজেলার তেতৈয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাহিদা আক্তার, ফারুক হোসেন, জসিম উদ্দিন, রোকেয়া আক্তার, সুমি আক্তার, কাজী শাকিরীন, ফয়েজুন নেছা ও ফাতেমা আক্তার। অন্যদিকে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুক হাসানের শাস্তির জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, ২১ জানুয়ারি দুপুরে ছুটির পর তেতৈয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে খেলছিল ওই বিদ্যালয়েরই প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া। এ সময় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে রাখা ময়লার স্তূপে আগুন লাগায় স্কুলটির কর্মচারী সুমন মজুমদার। এটি দেখতে পেয়ে সেখানে গিয়ে খেলার ছলে একটি প্লাস্টিকের বলপেনে আগুন ধরায় আরেক শিশু শিক্ষার্থী। দুষ্টুমির এক পর্যায়ে এ আগুন সামিয়ার পরনের কাপড়ে লাগলে দগ্ধ হয়। তার শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ আগুনে ঝলসে যায়।

ওই শিক্ষার্থীর চাচা মাহমুদুল হাসান বলেন, সামিয়ার শরীরে আগুন লাগার পরপর তার গায়ে পানি দেননি বা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেননি শিক্ষকরা। তারা কাপড় কাটার জন্য কাঁচি আনতে গিয়েছিলেন। এতে সে আরও বেশি দগ্ধ হয়। তাকে ওই অবস্থায় তার বড় বোন লামিয়ার মাধ্যমে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন তারা। ওই অবস্থায় সামিয়াকে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানী ঢাকার জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। ২৬ জানুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। স্কুলে দায়িত্বরত শিক্ষকদের অবহেলার খবর পেয়ে এডিপিও মোসাদ্দেক হোসেনকে প্রধান করে এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই তদন্ত টিম তাদের তদন্ত রিপোর্টে উক্ত শিক্ষকদের এই ঘটনায় চরম গাফিলতি পায়। এই শিক্ষকদের অবহেলা ছিল। এ কারণে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আট শিক্ষককে দায়িত্বে অবহেলার জন্য সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। শিশুটির শরীরে আগুন লাগলো অথচ উপস্থিত শিক্ষকরা আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করতে পারলেন না! এটি কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

তিনি জানান, প্রধান শিক্ষককে বরখাস্তের জন্য বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সুমন মজুমদার নামের এক কর্মচারীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ আরও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 06:53:44 am, Saturday, 1 February 2025
142 Time View

চাঁদপুরে আগুনে দগ্ধ হয়ে স্কুলে শিক্ষার্থীর মৃত্যু, ৮ শিক্ষক বরখাস্ত

Update Time : 06:53:44 am, Saturday, 1 February 2025

 

চাঁদপুর প্রতিনিধি:
চাঁদপুরের কচুয়ায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগুনে দগ্ধ হয়ে সামিয়া রহমান (৫) নামের এক শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় একই স্কুলের আট শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকরা হলেন উপজেলার তেতৈয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাহিদা আক্তার, ফারুক হোসেন, জসিম উদ্দিন, রোকেয়া আক্তার, সুমি আক্তার, কাজী শাকিরীন, ফয়েজুন নেছা ও ফাতেমা আক্তার। অন্যদিকে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুক হাসানের শাস্তির জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, ২১ জানুয়ারি দুপুরে ছুটির পর তেতৈয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে খেলছিল ওই বিদ্যালয়েরই প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া। এ সময় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে রাখা ময়লার স্তূপে আগুন লাগায় স্কুলটির কর্মচারী সুমন মজুমদার। এটি দেখতে পেয়ে সেখানে গিয়ে খেলার ছলে একটি প্লাস্টিকের বলপেনে আগুন ধরায় আরেক শিশু শিক্ষার্থী। দুষ্টুমির এক পর্যায়ে এ আগুন সামিয়ার পরনের কাপড়ে লাগলে দগ্ধ হয়। তার শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ আগুনে ঝলসে যায়।

ওই শিক্ষার্থীর চাচা মাহমুদুল হাসান বলেন, সামিয়ার শরীরে আগুন লাগার পরপর তার গায়ে পানি দেননি বা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেননি শিক্ষকরা। তারা কাপড় কাটার জন্য কাঁচি আনতে গিয়েছিলেন। এতে সে আরও বেশি দগ্ধ হয়। তাকে ওই অবস্থায় তার বড় বোন লামিয়ার মাধ্যমে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন তারা। ওই অবস্থায় সামিয়াকে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানী ঢাকার জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। ২৬ জানুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। স্কুলে দায়িত্বরত শিক্ষকদের অবহেলার খবর পেয়ে এডিপিও মোসাদ্দেক হোসেনকে প্রধান করে এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই তদন্ত টিম তাদের তদন্ত রিপোর্টে উক্ত শিক্ষকদের এই ঘটনায় চরম গাফিলতি পায়। এই শিক্ষকদের অবহেলা ছিল। এ কারণে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আট শিক্ষককে দায়িত্বে অবহেলার জন্য সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। শিশুটির শরীরে আগুন লাগলো অথচ উপস্থিত শিক্ষকরা আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করতে পারলেন না! এটি কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

তিনি জানান, প্রধান শিক্ষককে বরখাস্তের জন্য বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সুমন মজুমদার নামের এক কর্মচারীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ আরও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।