10:05 pm, Tuesday, 9 September 2025

সুযোগ পেলেই পুরোনো চেহারায় ফিরছে পুলিশ

1738130940180

 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে পুলিশের আচরণ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনায় পুলিশের কিছু আগ্রাসী ভূমিকা জনমনে তৈরি হচ্ছে ক্ষোভ। বিশেষত, আদিবাসী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং এবতেদায়ি শিক্ষকদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে চড়াও হয় পুলিশ।

এ ঘটনার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে পুলিশকে নিয়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে পুলিশের এ আচরণকে অগণতান্ত্রিক এবং মানবাধিকারবিরোধী বলে অভিহিত করেন। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিশিষ্ট নাগরিকরাও পুলিশের এমন আচরণে নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

জনসাধারণের মতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশের এ ধরনের আগ্রাসী ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করছে রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দমন-পীড়ন পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে। সরকারের উচিত এ বিষয়ে স্বচ্ছ তদন্ত করা এবং দমনমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান দাবি জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার রক্ষায় সরকার এবং পুলিশের ভূমিকা আরো মানবিক ও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রফিকুল ইসলাম আইনি খোলা কাগজকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক পুলিশের এমন আচরণের নিন্দা জানিয়ে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।

আমরা মনে করি, কে কোন দাবি নিয়ে গেল, যৌক্তিক-অযৌক্তিক সেটা পরের বিষয়। কিন্তু আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ এভাবে লাটিচার্জ করতে পারে না। আমরা দেখছি পুলিশের আগের যে রূপ, সেটাতেই তারা ফিরে গেছে। আমরা ধারণা করছি, ৯০ হাজারের মতো পুলিশ যারা আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের কোটায় নিয়োগ পেয়েছে, ওই পুলিশ সদস্যরাই হয়তো উসকানি দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে।

পুলিশের পোশাক পরিবর্তন সমাধান নয়, চরিত্র পরিবর্তন প্রয়োজন মন্তব্য করে বৈষম্যবিরোধী এ ছাত্রনেতা বলেন, ‘পুলিশের যে কর্মকা- এতে আমরা উদ্বিগ্ন এবং এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’
এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে পুলিশ যে নির্মমতা ও গুলি চালিয়ে সাধারণ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে এগুলো বিচার করতে হবে। শুধু এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা বদলি করে এ শাস্তি হতে পারে না। আমাদের দাবি, অভিযুক্তদের অপসারণসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আওতায় আনতে হবে, এটাই আমোদের স্পষ্ট বার্তা।’

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় পুলিশের যে ভূমিকা ছিল, সে ভূমিকার জন্য চিহ্নিত পুলিশ সদস্যদের ধরা হয়েছে; বা তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে এমনটা জনসাধারণ দেখতে পায়নি। ফলে আমরা ধরে নিচ্ছি, ওই পুলিশ সদস্যরা শাস্তির আওতায় আসেননি।

সুতরাং গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশের আচরণে যে ধরনের পরিবর্তন আসা কথা বলা হচ্ছিল সেটাও হচ্ছে না। তাই বলা যায়, পুলিশ তার পুরোনো রূপেই ফিরে গেছে। আর আমি মনে করি, যারা সরকারে আছেন; তাদের দরকার ছিল পুলিশের ভেতর থেকে যারা অপরাধী তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা, কিন্তু সেটা হয়নি। এ সময় তিনি বলেন, ‘সরকার কোন আন্দোলনকে কীভাবে দমন করতে চাচ্ছে, সেটাও এর মাধ্যমে বোঝা যায়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 06:09:16 am, Wednesday, 29 January 2025
146 Time View

সুযোগ পেলেই পুরোনো চেহারায় ফিরছে পুলিশ

Update Time : 06:09:16 am, Wednesday, 29 January 2025

 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে পুলিশের আচরণ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনায় পুলিশের কিছু আগ্রাসী ভূমিকা জনমনে তৈরি হচ্ছে ক্ষোভ। বিশেষত, আদিবাসী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং এবতেদায়ি শিক্ষকদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে চড়াও হয় পুলিশ।

এ ঘটনার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে পুলিশকে নিয়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে পুলিশের এ আচরণকে অগণতান্ত্রিক এবং মানবাধিকারবিরোধী বলে অভিহিত করেন। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিশিষ্ট নাগরিকরাও পুলিশের এমন আচরণে নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

জনসাধারণের মতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশের এ ধরনের আগ্রাসী ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করছে রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দমন-পীড়ন পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে। সরকারের উচিত এ বিষয়ে স্বচ্ছ তদন্ত করা এবং দমনমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান দাবি জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার রক্ষায় সরকার এবং পুলিশের ভূমিকা আরো মানবিক ও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রফিকুল ইসলাম আইনি খোলা কাগজকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক পুলিশের এমন আচরণের নিন্দা জানিয়ে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।

আমরা মনে করি, কে কোন দাবি নিয়ে গেল, যৌক্তিক-অযৌক্তিক সেটা পরের বিষয়। কিন্তু আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ এভাবে লাটিচার্জ করতে পারে না। আমরা দেখছি পুলিশের আগের যে রূপ, সেটাতেই তারা ফিরে গেছে। আমরা ধারণা করছি, ৯০ হাজারের মতো পুলিশ যারা আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের কোটায় নিয়োগ পেয়েছে, ওই পুলিশ সদস্যরাই হয়তো উসকানি দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে।

পুলিশের পোশাক পরিবর্তন সমাধান নয়, চরিত্র পরিবর্তন প্রয়োজন মন্তব্য করে বৈষম্যবিরোধী এ ছাত্রনেতা বলেন, ‘পুলিশের যে কর্মকা- এতে আমরা উদ্বিগ্ন এবং এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’
এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে পুলিশ যে নির্মমতা ও গুলি চালিয়ে সাধারণ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে এগুলো বিচার করতে হবে। শুধু এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা বদলি করে এ শাস্তি হতে পারে না। আমাদের দাবি, অভিযুক্তদের অপসারণসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আওতায় আনতে হবে, এটাই আমোদের স্পষ্ট বার্তা।’

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় পুলিশের যে ভূমিকা ছিল, সে ভূমিকার জন্য চিহ্নিত পুলিশ সদস্যদের ধরা হয়েছে; বা তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে এমনটা জনসাধারণ দেখতে পায়নি। ফলে আমরা ধরে নিচ্ছি, ওই পুলিশ সদস্যরা শাস্তির আওতায় আসেননি।

সুতরাং গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশের আচরণে যে ধরনের পরিবর্তন আসা কথা বলা হচ্ছিল সেটাও হচ্ছে না। তাই বলা যায়, পুলিশ তার পুরোনো রূপেই ফিরে গেছে। আর আমি মনে করি, যারা সরকারে আছেন; তাদের দরকার ছিল পুলিশের ভেতর থেকে যারা অপরাধী তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা, কিন্তু সেটা হয়নি। এ সময় তিনি বলেন, ‘সরকার কোন আন্দোলনকে কীভাবে দমন করতে চাচ্ছে, সেটাও এর মাধ্যমে বোঝা যায়।