3:17 am, Wednesday, 10 September 2025

প্রিয় শিক্ষকের বিদায়বেলায় শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত

image 159327 1738083182

 

বিশেষ প্রতিনিধি:
শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। প্রিয় শিক্ষকের বিদায়বেলায় সাবেক, বর্তমান শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৪নং খাড়খাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মন্টু চন্দ্র দেবনাথ।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে প্রধান শিক্ষকের অবসরগ্রহণ উপলক্ষে রাজকীয় বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিদ্যলয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সহকর্মী ও এলাকাবাসী।

জানা যায়, বদরপুর সরকারি প্রা. বিদ‌্যাল‌য়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে ১৯৯০ সা‌লে এ গুণী শিক্ষাগুরুর কর্ম জীবন শুরু হয়। তারপর বদলি হয়ে ২০০০ সালে লোহাগড়া সরকারি প্রা. বিদ্যালয়ে চলে আসেন সহকারী শিক্ষক হিসেবে। পরে তিনি পদন্নতী পেয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে উপাধীক সরকারি প্রা. বিদ্যালয়ে ২০০৩ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত ছিলেন এবং সর্বশেষ খাড়খাঁদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০৪ হতে আদ্যবদি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রায় দীর্ঘ ৩৪ বছর শিক্ষকতা করে মঙ্গলবার অবসরে ঘোষণা দেন মন্টু চন্দ্র দেবনাথ।

প্রিয় শিক্ষককে গাড়িতে উঠিয়ে ফুল দিয়ে বরণ করে স্কুলে নিয়ে আসেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। তারপর মঞ্চে উঠিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় শিক্ষাগুরুর ভালোবাসার স্মৃতিচারণ করেন প্রাক্তনরা।

অনুষ্ঠানে সাবেক শিক্ষার্থী নূরুল ইসলাম শাওন, তারেকসহ অন্যরা বলেন, তিনি আমাদের আলোর পথ দেখিয়েছেন। তার দেওয়া পথে আমরা অনেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি, স্যারের স্মৃতি ভোলার নয়। আমাদের হৃদ‌য়ের অন্তস্থলে স্থায়ী হয়ে থাকবেন। তিনি চিন্তায় ও মননে  ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। রাজনৈতিক বা আঞ্চলিক দলাদলির ঊর্ধ্বে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের অধিকারী। ওনার ঋণ শোধ করার মতো নয়। স্যারের নিরলস কর্মজীবনে সততা, ন্যায়পরায়ণতা, ত্যাগ ও আদর্শ আমাদের সমগ্র জীবনের দিশারি হয়ে থাকবে।

মন্টু চন্দ্র দেবনাথ স্যারের স্মতিচারন করতে গিয়ে বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মনির তপাদার বলেন, স্যারের শূন্যতা কখনই পূরণ হবার মতো নয়। তি‌নি অনেক ভালো শিক্ষক ছিলেন। স্যারকে আমরা আমাদের চাকরি জীবনের শুরু থেকেই দেখেছি তিনি কখনোই সময়ের অপব্যবহার করতেন না।  তিনি দক্ষতার সঙ্গে স্কুল পরিচালনা করতেন।

প্রিয় স্যারের প্রতি আবেগ অনুভূতির প্রকাশ করেন ছোট ছোট সোনামনিরাও। বিদ্যালয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আজকের পর থেকে স্যারকে আর স্কুলে দেখবো না। তিনি সবসময় আমাদের মনে থাকবেন, স্যারকে আমরা মিস করব। স্যারের প্রতি আমরা সকলে কৃতজ্ঞ। তিনি আমাদের আদর যত্ন করে পড়ালেখা করাতেন।

একজন শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীদের এমন শ্রদ্ধা-ভালোবাসা অনুকরণীয় থাকবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী ও বি‌শিষ্ট‌জনরা ।

প্রধান শিক্ষক মন্টু চন্দ্র দেবনাথ ব‌লেন, আমি ছাত্রছাত্রী‌দের নি‌য়েই সারাজীবন কাজ ক‌রে‌ছি। গত ১৪ জানুয়ারি আমি অবস‌রে চ‌লে ‌গে‌ছি। আমার প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যে বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে‌ছে  তা আমি জীবনভর ম‌নে রাখবো। চাক‌রি জীব‌নে এটিই আমার সব‌চে‌য়ে বড় প্রাপ্তি ও উপহার। এটি স্বরণীয় হ‌য়ে থাক‌বে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 08:38:54 pm, Tuesday, 28 January 2025
262 Time View

প্রিয় শিক্ষকের বিদায়বেলায় শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত

Update Time : 08:38:54 pm, Tuesday, 28 January 2025

 

বিশেষ প্রতিনিধি:
শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। প্রিয় শিক্ষকের বিদায়বেলায় সাবেক, বর্তমান শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৪নং খাড়খাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মন্টু চন্দ্র দেবনাথ।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে প্রধান শিক্ষকের অবসরগ্রহণ উপলক্ষে রাজকীয় বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিদ্যলয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সহকর্মী ও এলাকাবাসী।

জানা যায়, বদরপুর সরকারি প্রা. বিদ‌্যাল‌য়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে ১৯৯০ সা‌লে এ গুণী শিক্ষাগুরুর কর্ম জীবন শুরু হয়। তারপর বদলি হয়ে ২০০০ সালে লোহাগড়া সরকারি প্রা. বিদ্যালয়ে চলে আসেন সহকারী শিক্ষক হিসেবে। পরে তিনি পদন্নতী পেয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে উপাধীক সরকারি প্রা. বিদ্যালয়ে ২০০৩ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত ছিলেন এবং সর্বশেষ খাড়খাঁদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০৪ হতে আদ্যবদি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রায় দীর্ঘ ৩৪ বছর শিক্ষকতা করে মঙ্গলবার অবসরে ঘোষণা দেন মন্টু চন্দ্র দেবনাথ।

প্রিয় শিক্ষককে গাড়িতে উঠিয়ে ফুল দিয়ে বরণ করে স্কুলে নিয়ে আসেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। তারপর মঞ্চে উঠিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় শিক্ষাগুরুর ভালোবাসার স্মৃতিচারণ করেন প্রাক্তনরা।

অনুষ্ঠানে সাবেক শিক্ষার্থী নূরুল ইসলাম শাওন, তারেকসহ অন্যরা বলেন, তিনি আমাদের আলোর পথ দেখিয়েছেন। তার দেওয়া পথে আমরা অনেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি, স্যারের স্মৃতি ভোলার নয়। আমাদের হৃদ‌য়ের অন্তস্থলে স্থায়ী হয়ে থাকবেন। তিনি চিন্তায় ও মননে  ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। রাজনৈতিক বা আঞ্চলিক দলাদলির ঊর্ধ্বে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের অধিকারী। ওনার ঋণ শোধ করার মতো নয়। স্যারের নিরলস কর্মজীবনে সততা, ন্যায়পরায়ণতা, ত্যাগ ও আদর্শ আমাদের সমগ্র জীবনের দিশারি হয়ে থাকবে।

মন্টু চন্দ্র দেবনাথ স্যারের স্মতিচারন করতে গিয়ে বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মনির তপাদার বলেন, স্যারের শূন্যতা কখনই পূরণ হবার মতো নয়। তি‌নি অনেক ভালো শিক্ষক ছিলেন। স্যারকে আমরা আমাদের চাকরি জীবনের শুরু থেকেই দেখেছি তিনি কখনোই সময়ের অপব্যবহার করতেন না।  তিনি দক্ষতার সঙ্গে স্কুল পরিচালনা করতেন।

প্রিয় স্যারের প্রতি আবেগ অনুভূতির প্রকাশ করেন ছোট ছোট সোনামনিরাও। বিদ্যালয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আজকের পর থেকে স্যারকে আর স্কুলে দেখবো না। তিনি সবসময় আমাদের মনে থাকবেন, স্যারকে আমরা মিস করব। স্যারের প্রতি আমরা সকলে কৃতজ্ঞ। তিনি আমাদের আদর যত্ন করে পড়ালেখা করাতেন।

একজন শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীদের এমন শ্রদ্ধা-ভালোবাসা অনুকরণীয় থাকবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী ও বি‌শিষ্ট‌জনরা ।

প্রধান শিক্ষক মন্টু চন্দ্র দেবনাথ ব‌লেন, আমি ছাত্রছাত্রী‌দের নি‌য়েই সারাজীবন কাজ ক‌রে‌ছি। গত ১৪ জানুয়ারি আমি অবস‌রে চ‌লে ‌গে‌ছি। আমার প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যে বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে‌ছে  তা আমি জীবনভর ম‌নে রাখবো। চাক‌রি জীব‌নে এটিই আমার সব‌চে‌য়ে বড় প্রাপ্তি ও উপহার। এটি স্বরণীয় হ‌য়ে থাক‌বে।