3:37 pm, Tuesday, 9 September 2025

ভুয়া র‍্যাবের কবলে পড়ে প্রবাসীর ২১ লাখ টাকা লুট, ৭ দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি কেউ

screenshot 20250126 163850

 

এম রাসেল সরকার:
দুবাই থেকে দেশে ফিরে যাত্রীবাহী বাসযোগে কুমিল্লায় ফিরছিলেন প্রবাসী আবু হানিফ। পথে র‌্যাবের পোশাক পরা এবং ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাফ ও পিস্তল হাতে একটি দল ওই বাসে উঠে টানাহেঁচড়া করে প্রবাসী ও তার এক সঙ্গীকে নামিয়ে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরে তাদের হাত, পা ও চোখ বেধে মারধর করে প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে নগদ ২১ লাখ টাকা ও পাসপোর্ট মোবাইলসহ মালামাল রেখে মাইক্রো থেকে রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়।

গত ১৪ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানাধীন কেওঢালা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারী) ৭ দিনেও এ ঘটনায় জড়িত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

এদিকে র‌্যাব জানিয়েছে, র‌্যাবের পোশাক পরা হলেও দুষ্কৃতকারীরা র‌্যাবের কেউ নয়।

নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় দায়ের করা মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার আরাগ আনন্দপুর গ্রামের আবদুল লতিফের ছেলে আবু হানিফ ও তার বন্ধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের কামাল ভূঁইয়ার ছেলে রাজিব ভূঁইয়া দুবাই থেকে গত ১৪ জানুয়ারি ভোর ৪টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে পৌঁছান। এদিন তারা বিমান বন্দর থেকে বায়তুল মোকাররম এলাকায় গিয়ে কিছু ডলার বিক্রি করেন। পরে তারা দুপুর দেড়টার দিকে এশিয়া লাইন পরিবহনের একটি বাসে করে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।

সোমবার দুপুরে কুমিল্লা নগরীর রেইস কোর্স এলাকার নিজ বাসায় মামলার বাদী প্রবাসী আবু হানিফ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সমকালকে বলেন, আমাদের বাসটি বন্দর থানার কেওঢালা এলাকায় পৌঁছালে সাদা রঙের একটি হাইয়েজ গাড়ি (মাইক্রোবাস) এসে বাসের সামনে দাঁড়িয়ে গতিরোধ করে। এসময় র‌্যাবের পোশাক পরিহিত ৩/৪ জন ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাফ ও পিস্তল হাতে বাসে উঠে আমাদের (আবু হানিফ ও রাজিব) বিরুদ্ধে মামলা আছে বলে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে টানাহেচড়া করে সঙ্গে থাকা দুইটি ব্যাগসহ জোরপূর্বক বাস থেকে নামায়। এসময় আমরা চিৎকার করতে থাকি, যাত্রীরাও তাদের বাধা দেয়। এসময় গাড়ির স্টাফরা ঘটনার ভিডিও করে। কিন্তু তারা কারো বাধা কর্ণপাত না করে আমাদের নামিয়ে তাদের মাইক্রোতে তুলে হাত-পা ও চোখ বেধে মারধর করে। এ সময় তারা পায়ে গুলি করে। তারা আমাদের নিকট থাকা কিছু ডলারসহ ২১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, ৩টি পাসপোর্ট, ২টি মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান মালামাল লুটে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে বিকাল ৫টার দিকে ঢাকার ডেমরা এলাকায় নির্জন রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়। পরে বিষয়টি র‌্যাব ও থানা পুলিশকে জানানো হয়। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ১৬ জানুয়ারি বন্দর থানায় মামলা দায়ের করেন বলে জানান।

বাস চালক শাহীন কাদির বলেন, র‌্যাবের পোশাক থাকায় আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি এরা আসল না ভুয়া। বাস থেকে নামিয়ে দ্রুত গাড়িটি চলে যায়।

র‌্যাব-১১ নারায়ণগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৈয়দ সাদিকুল হক জানান, র‌্যাবের পোশাক পরিহিত যেসব দুর্বৃত্ত বাস থামিয়ে দুই প্রবাসীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে তুলে নিয়ে টাকাসহ মালামাল লুটে নিয়েছে তারা র‌্যাবের কেউ নন। ঘটনার সময় মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিও থেকে দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তারে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।

বন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, মহাসড়কে সংঘবদ্ধ গ্রুপ রয়েছে। তাদের একটি গ্রুপ যানবাহন ফলো করে, আরেক গ্রুপ অপারেশন (ঘটনা সংঘটিত) করে। ঘটনাস্থলের পাশে একটি ইউটার্ন আছে, ঘটনা করে তারা নিরাপদে শটকে পরে। ঘটনার পর সেখানে নিরাপত্তা তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও গত ৫ আগস্টের ঘটনায় ক্যামেরাগুলো বিনষ্ট হওয়ায় ওই দিনের ভিডিওচিত্র ধারণ করা নেই। আমরা ধারণ করা ভিডিও ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 10:43:58 am, Sunday, 26 January 2025
221 Time View

ভুয়া র‍্যাবের কবলে পড়ে প্রবাসীর ২১ লাখ টাকা লুট, ৭ দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি কেউ

Update Time : 10:43:58 am, Sunday, 26 January 2025

 

এম রাসেল সরকার:
দুবাই থেকে দেশে ফিরে যাত্রীবাহী বাসযোগে কুমিল্লায় ফিরছিলেন প্রবাসী আবু হানিফ। পথে র‌্যাবের পোশাক পরা এবং ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাফ ও পিস্তল হাতে একটি দল ওই বাসে উঠে টানাহেঁচড়া করে প্রবাসী ও তার এক সঙ্গীকে নামিয়ে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরে তাদের হাত, পা ও চোখ বেধে মারধর করে প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে নগদ ২১ লাখ টাকা ও পাসপোর্ট মোবাইলসহ মালামাল রেখে মাইক্রো থেকে রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়।

গত ১৪ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানাধীন কেওঢালা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারী) ৭ দিনেও এ ঘটনায় জড়িত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

এদিকে র‌্যাব জানিয়েছে, র‌্যাবের পোশাক পরা হলেও দুষ্কৃতকারীরা র‌্যাবের কেউ নয়।

নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় দায়ের করা মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার আরাগ আনন্দপুর গ্রামের আবদুল লতিফের ছেলে আবু হানিফ ও তার বন্ধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের কামাল ভূঁইয়ার ছেলে রাজিব ভূঁইয়া দুবাই থেকে গত ১৪ জানুয়ারি ভোর ৪টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে পৌঁছান। এদিন তারা বিমান বন্দর থেকে বায়তুল মোকাররম এলাকায় গিয়ে কিছু ডলার বিক্রি করেন। পরে তারা দুপুর দেড়টার দিকে এশিয়া লাইন পরিবহনের একটি বাসে করে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।

সোমবার দুপুরে কুমিল্লা নগরীর রেইস কোর্স এলাকার নিজ বাসায় মামলার বাদী প্রবাসী আবু হানিফ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সমকালকে বলেন, আমাদের বাসটি বন্দর থানার কেওঢালা এলাকায় পৌঁছালে সাদা রঙের একটি হাইয়েজ গাড়ি (মাইক্রোবাস) এসে বাসের সামনে দাঁড়িয়ে গতিরোধ করে। এসময় র‌্যাবের পোশাক পরিহিত ৩/৪ জন ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাফ ও পিস্তল হাতে বাসে উঠে আমাদের (আবু হানিফ ও রাজিব) বিরুদ্ধে মামলা আছে বলে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে টানাহেচড়া করে সঙ্গে থাকা দুইটি ব্যাগসহ জোরপূর্বক বাস থেকে নামায়। এসময় আমরা চিৎকার করতে থাকি, যাত্রীরাও তাদের বাধা দেয়। এসময় গাড়ির স্টাফরা ঘটনার ভিডিও করে। কিন্তু তারা কারো বাধা কর্ণপাত না করে আমাদের নামিয়ে তাদের মাইক্রোতে তুলে হাত-পা ও চোখ বেধে মারধর করে। এ সময় তারা পায়ে গুলি করে। তারা আমাদের নিকট থাকা কিছু ডলারসহ ২১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, ৩টি পাসপোর্ট, ২টি মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান মালামাল লুটে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে বিকাল ৫টার দিকে ঢাকার ডেমরা এলাকায় নির্জন রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়। পরে বিষয়টি র‌্যাব ও থানা পুলিশকে জানানো হয়। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ১৬ জানুয়ারি বন্দর থানায় মামলা দায়ের করেন বলে জানান।

বাস চালক শাহীন কাদির বলেন, র‌্যাবের পোশাক থাকায় আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি এরা আসল না ভুয়া। বাস থেকে নামিয়ে দ্রুত গাড়িটি চলে যায়।

র‌্যাব-১১ নারায়ণগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৈয়দ সাদিকুল হক জানান, র‌্যাবের পোশাক পরিহিত যেসব দুর্বৃত্ত বাস থামিয়ে দুই প্রবাসীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে তুলে নিয়ে টাকাসহ মালামাল লুটে নিয়েছে তারা র‌্যাবের কেউ নন। ঘটনার সময় মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিও থেকে দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তারে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।

বন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, মহাসড়কে সংঘবদ্ধ গ্রুপ রয়েছে। তাদের একটি গ্রুপ যানবাহন ফলো করে, আরেক গ্রুপ অপারেশন (ঘটনা সংঘটিত) করে। ঘটনাস্থলের পাশে একটি ইউটার্ন আছে, ঘটনা করে তারা নিরাপদে শটকে পরে। ঘটনার পর সেখানে নিরাপত্তা তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও গত ৫ আগস্টের ঘটনায় ক্যামেরাগুলো বিনষ্ট হওয়ায় ওই দিনের ভিডিওচিত্র ধারণ করা নেই। আমরা ধারণ করা ভিডিও ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।