4:12 am, Monday, 6 October 2025

দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ, একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে!

এম রাসেল সরকার

picsart 25 09 21 14 07 44 490

 

জাতীয়তাবাদ হলো এমন একটি আদর্শ ও রাজনৈতিক মতাদর্শ যা একটি নির্দিষ্ট জাতি বা জাতি-রাষ্ট্রের প্রতি গভীর আনুগত্য, নিষ্ঠা এবং একাত্মতার উপর জোর দেয়, যেখানে সেই জাতির স্বার্থ ও অস্তিত্বকে অন্যান্য দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। এই আদর্শটি একটি জাতির সংস্কৃতি রক্ষা, জাতীয় অর্জনসমূহে গর্ববোধ এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ বা স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামকে উৎসাহিত করে।

জাতীয়তাবাদের মূল বৈশিষ্ট্য:
জাতির কেন্দ্রীয়তা: এটি মানব সমাজের কেন্দ্রীয় অবস্থানে জাতিকে স্থাপন করে এবং অন্যান্য সামাজিক বা রাজনৈতিক আদর্শকে জাতিগত আদর্শের পরে স্থান দেয়।

একীকরণ: কিছু মতবাদ অনুসারে, ইসলামি জাতীয়তাবাদে জাতীয়তাবাদ এবং ইসলামবাদকে একত্রিত করে মুসলিমদের স্বার্থকে রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে নেওয়া হয়।

মুসলিম স্বার্থ: এই ধারণার লক্ষ্য হলো মুসলিমদের একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও সামাজিক গোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তোলা, যেখানে ইসলামের নীতিমালা মেনে চলা হবে।

দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ: কী বলে ইসলাম?

নিজের মাতৃভূমিকে মোহাব্বত করা! ভালোবাসা এটা একটি প্রাকৃতিক বিষয়! স্রষ্টাকর্তৃক একটি স্বাভাবিক মনোবৃত্তি।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম স্বীয় মাতৃভূমি মক্কাকে মোহাব্বত করতেন। যখন হিজরত করে মক্কা থেকে মদীনা রওনা হোন, তখন মক্কাকে উদ্দেশ্য করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
ما أطيبَكِ مِن بلدةٍ وأحَبَّك إليَّ، ولولا أنَّ قومي أخرَجوني منكِ ما سكَنْتُ غيرَكِ. (صحيح ابن حبان عن عبد الله بن عباس، الصفحة أو الرقم:)(৩৭০৯)
মক্কা! তুমি কতোইনা পবিত্র শহর। আমার প্রিয় শহর। আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা যদি আমাকে তাড়িয়ে না দিতো, তাহলে আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কোথাও থাকতাম না। [সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৩৭০৯)

মক্কা থেকে হিজরত করে যখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা নিজের বাসস্থান বানালেন। তখন মদীনার বিষয়ে দুআ করতেন:
اللَّهمَّ حبِّبْ إلينا المدينةَ كما حبَّبْتَ إلينا مكَّةَ وأشَد (صحيح ابن حبان عن عائشة، الصفحة أو الرقم: 5600)
হে আল্লাহ! আমার কাছে মক্কা যতোটা প্রিয় ছিল, এর চেয়ে বেশি প্রিয় আমার কাছে মদীনাকে বানিয়ে দাও। [সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬০০]

মদীনা নিজের দেশ বানানোর পর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনি মদীনার বাহির থেকে মদীনার দিকে ফিরে আসতেন। তখন নবীজী কী করতেন? এক হাদীসে আসছে:
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَدِمَ مِنْ سَفَرٍ، فَأَبْصَرَ دَرَجَاتِ المَدِينَةِ، أَوْضَعَ نَاقَتَهُ، وَإِنْ كَانَتْ دَابَّةً حَرَّكَهَا. قَالَ أَبُوعَبْدِاللَّهِ: زَادَ الحَارِثُ بْنُ عُمَيْرٍ، عَنْ حُمَيْدٍ: حَرَّكَهَا مِنْ حُبِّهَا.

হুমায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আনাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে যখন মদিনার উঁচু রাস্তাগুলো দেখতেন তখন তিনি তাঁর উটনীকে মদীনার মোহাব্বাতে দ্রুতগতিতে চালাতেন তার বাহন অন্য জানোয়ার হলে তিনি তাকে তাড়া দিতেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৮০২, ইফাবা-১৬৮৫]

উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন:
وَفِي الْحَدِيثِ دِلَالَةٌ عَلَى فَضْلِ الْمَدِينَةِ وَعَلَى مَشْرُوعِيَّة حب الوطن والحنين إِلَيْهِ
উক্ত হাদীস মদীনার ফযীলতের সাথে সাথে স্বীয় দেশকে মোহাব্বত করা ও তার প্রতি টান অনুভব করার বৈধতার প্রমাণও বহন করে। [ফাতহুল বারী-৩/৬২১, বর্ণনা নং-১৮০২]

উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনে বাত্তাল রহঃ লিখেন:
قوله: (من حبها) يعنى لأنها وطنه، وفيها أهله وولده الذين هم أحب الناس إليه، وقد جبل الله النفوس على حب الأوطان والحنين إليها، وفعل ذلك عليه السلام، وفيه أكرم الأسوة، وأمر أمته سرعة الرجوع إلى أهلهم عند انقضاء أسفارهم
মদীনার মোহাব্বতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সওয়ারী দ্রুতগামী করার কারণ হলো, কেননা, এটি তাঁর দেশ। এতে তার পরিবার পরিজনগণ ছিলেন। যারা লোকদের মাঝে তাঁর কাছে সর্বাধিক প্রিয় ছিল। স্বীয় দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং আন্তরিক টান অনুভব করা আল্লাহ তাআলা স্বভাবজাত বানিয়েছেন। যেমনটি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও করেছেন। যাতে আমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রয়োজনীয় সফর শেষ হবার পর স্বীয় পরিবারের কাছে দ্রুত ফিরে আসার আদেশ করেছেন। [শরহে সহীহ বুখারী লিইবনে বাত্তাল-৪/৪৫৩, বর্ণনা নং-২২৩]

সুতরাং বুঝা গেল যে, নিজের মাতৃভূমি বা স্বীয় দেশকে মোহাব্বত করা, ভালোবাসা, তার প্রতি আন্তরিক টান অনুভব করা এটা হারাম বা নাজায়েজ নয়। বরং এটি একটি বৈধ বিষয়। আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের একটি স্বভাবজতা আচরণ। এটাকে হারাম বলার কোন সুযোগ নেই।

জাতীয়তাবাদ:

স্বীয় জাতি বা গোষ্ঠি বা সম্প্রদায়ের প্রতি কট্টর মনোবৃত্তি লালন করার নামই মূলত জাতীয়তাবাদ। চাই তারা ভালো হোক বা মন্দ। সঠিক হোক বা ভুল, সর্বাবস্থায় স্বীয় জাতি, গোষ্ঠি ও সম্প্রদায়ের অন্ধ অনুকরণ ও প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টাকে মূলত জাতীয়তাবাদ বলা হয়। এটাকে কট্টর গোত্রপ্রীতি বা গোষ্টিপ্রীতি বললেও যথার্থ বলা হবে।

সঠিক ও হেদায়েতের উপর থাকা জাতির প্রতি কট্টর সমর্থনতো ঠিক আছে। কিন্তু শুধুমাত্র স্বীয় জাতির হবার কারণে তার প্রতি অন্যায় সাপোর্ট করার জাতীয়তা ‘জাহিলিয়্যাত’ বা বর্বরতা বলে হাদীসে ইরশাদ হয়েছে। তবে স্বীয় জাতির সঠিক ও ন্যায্য দাবীর স্বপক্ষে অবস্থান নেয়াতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।

সারসংক্ষেপ:
ইসলামের মূল আদর্শের সাথে জাতীয়তাবাদের প্রধান বৈপরীত্য হলো উম্মাহর ধারণা বনাম জাতি-রাষ্ট্রের ধারণা। ইসলামে দেশকে ভালোবাসা বা দেশের মানুষের জন্য কাজ করা।
দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ—এই দুইয়ের সমন্বয়েই একটি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয় এবং নিজেদের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করে, যা একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনের জন্য অপরিহার্য। জাতীয়তাবাদ হলো এমন একটি মতবাদ যা জাতিকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয় এবং মুসলিম উম্মাহর কে ঐক্যবদ্ধ করে।

সুতরাং, জাতীয়তাবাদকে আপনি কীভাবে গ্রহণ করবেন তা নির্ভর করবে আপনার অন্তর্নিহিত দর্শন ও লক্ষ্যের ওপর।

লেখক:
মোঃ রাসেল সরকার
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।

 

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 08:10:32 am, Sunday, 21 September 2025
120 Time View

দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ, একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে!

Update Time : 08:10:32 am, Sunday, 21 September 2025

 

জাতীয়তাবাদ হলো এমন একটি আদর্শ ও রাজনৈতিক মতাদর্শ যা একটি নির্দিষ্ট জাতি বা জাতি-রাষ্ট্রের প্রতি গভীর আনুগত্য, নিষ্ঠা এবং একাত্মতার উপর জোর দেয়, যেখানে সেই জাতির স্বার্থ ও অস্তিত্বকে অন্যান্য দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। এই আদর্শটি একটি জাতির সংস্কৃতি রক্ষা, জাতীয় অর্জনসমূহে গর্ববোধ এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ বা স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামকে উৎসাহিত করে।

জাতীয়তাবাদের মূল বৈশিষ্ট্য:
জাতির কেন্দ্রীয়তা: এটি মানব সমাজের কেন্দ্রীয় অবস্থানে জাতিকে স্থাপন করে এবং অন্যান্য সামাজিক বা রাজনৈতিক আদর্শকে জাতিগত আদর্শের পরে স্থান দেয়।

একীকরণ: কিছু মতবাদ অনুসারে, ইসলামি জাতীয়তাবাদে জাতীয়তাবাদ এবং ইসলামবাদকে একত্রিত করে মুসলিমদের স্বার্থকে রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে নেওয়া হয়।

মুসলিম স্বার্থ: এই ধারণার লক্ষ্য হলো মুসলিমদের একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও সামাজিক গোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তোলা, যেখানে ইসলামের নীতিমালা মেনে চলা হবে।

দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ: কী বলে ইসলাম?

নিজের মাতৃভূমিকে মোহাব্বত করা! ভালোবাসা এটা একটি প্রাকৃতিক বিষয়! স্রষ্টাকর্তৃক একটি স্বাভাবিক মনোবৃত্তি।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম স্বীয় মাতৃভূমি মক্কাকে মোহাব্বত করতেন। যখন হিজরত করে মক্কা থেকে মদীনা রওনা হোন, তখন মক্কাকে উদ্দেশ্য করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
ما أطيبَكِ مِن بلدةٍ وأحَبَّك إليَّ، ولولا أنَّ قومي أخرَجوني منكِ ما سكَنْتُ غيرَكِ. (صحيح ابن حبان عن عبد الله بن عباس، الصفحة أو الرقم:)(৩৭০৯)
মক্কা! তুমি কতোইনা পবিত্র শহর। আমার প্রিয় শহর। আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা যদি আমাকে তাড়িয়ে না দিতো, তাহলে আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কোথাও থাকতাম না। [সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৩৭০৯)

মক্কা থেকে হিজরত করে যখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা নিজের বাসস্থান বানালেন। তখন মদীনার বিষয়ে দুআ করতেন:
اللَّهمَّ حبِّبْ إلينا المدينةَ كما حبَّبْتَ إلينا مكَّةَ وأشَد (صحيح ابن حبان عن عائشة، الصفحة أو الرقم: 5600)
হে আল্লাহ! আমার কাছে মক্কা যতোটা প্রিয় ছিল, এর চেয়ে বেশি প্রিয় আমার কাছে মদীনাকে বানিয়ে দাও। [সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬০০]

মদীনা নিজের দেশ বানানোর পর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনি মদীনার বাহির থেকে মদীনার দিকে ফিরে আসতেন। তখন নবীজী কী করতেন? এক হাদীসে আসছে:
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَدِمَ مِنْ سَفَرٍ، فَأَبْصَرَ دَرَجَاتِ المَدِينَةِ، أَوْضَعَ نَاقَتَهُ، وَإِنْ كَانَتْ دَابَّةً حَرَّكَهَا. قَالَ أَبُوعَبْدِاللَّهِ: زَادَ الحَارِثُ بْنُ عُمَيْرٍ، عَنْ حُمَيْدٍ: حَرَّكَهَا مِنْ حُبِّهَا.

হুমায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আনাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে যখন মদিনার উঁচু রাস্তাগুলো দেখতেন তখন তিনি তাঁর উটনীকে মদীনার মোহাব্বাতে দ্রুতগতিতে চালাতেন তার বাহন অন্য জানোয়ার হলে তিনি তাকে তাড়া দিতেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৮০২, ইফাবা-১৬৮৫]

উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন:
وَفِي الْحَدِيثِ دِلَالَةٌ عَلَى فَضْلِ الْمَدِينَةِ وَعَلَى مَشْرُوعِيَّة حب الوطن والحنين إِلَيْهِ
উক্ত হাদীস মদীনার ফযীলতের সাথে সাথে স্বীয় দেশকে মোহাব্বত করা ও তার প্রতি টান অনুভব করার বৈধতার প্রমাণও বহন করে। [ফাতহুল বারী-৩/৬২১, বর্ণনা নং-১৮০২]

উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনে বাত্তাল রহঃ লিখেন:
قوله: (من حبها) يعنى لأنها وطنه، وفيها أهله وولده الذين هم أحب الناس إليه، وقد جبل الله النفوس على حب الأوطان والحنين إليها، وفعل ذلك عليه السلام، وفيه أكرم الأسوة، وأمر أمته سرعة الرجوع إلى أهلهم عند انقضاء أسفارهم
মদীনার মোহাব্বতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সওয়ারী দ্রুতগামী করার কারণ হলো, কেননা, এটি তাঁর দেশ। এতে তার পরিবার পরিজনগণ ছিলেন। যারা লোকদের মাঝে তাঁর কাছে সর্বাধিক প্রিয় ছিল। স্বীয় দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং আন্তরিক টান অনুভব করা আল্লাহ তাআলা স্বভাবজাত বানিয়েছেন। যেমনটি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও করেছেন। যাতে আমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রয়োজনীয় সফর শেষ হবার পর স্বীয় পরিবারের কাছে দ্রুত ফিরে আসার আদেশ করেছেন। [শরহে সহীহ বুখারী লিইবনে বাত্তাল-৪/৪৫৩, বর্ণনা নং-২২৩]

সুতরাং বুঝা গেল যে, নিজের মাতৃভূমি বা স্বীয় দেশকে মোহাব্বত করা, ভালোবাসা, তার প্রতি আন্তরিক টান অনুভব করা এটা হারাম বা নাজায়েজ নয়। বরং এটি একটি বৈধ বিষয়। আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের একটি স্বভাবজতা আচরণ। এটাকে হারাম বলার কোন সুযোগ নেই।

জাতীয়তাবাদ:

স্বীয় জাতি বা গোষ্ঠি বা সম্প্রদায়ের প্রতি কট্টর মনোবৃত্তি লালন করার নামই মূলত জাতীয়তাবাদ। চাই তারা ভালো হোক বা মন্দ। সঠিক হোক বা ভুল, সর্বাবস্থায় স্বীয় জাতি, গোষ্ঠি ও সম্প্রদায়ের অন্ধ অনুকরণ ও প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টাকে মূলত জাতীয়তাবাদ বলা হয়। এটাকে কট্টর গোত্রপ্রীতি বা গোষ্টিপ্রীতি বললেও যথার্থ বলা হবে।

সঠিক ও হেদায়েতের উপর থাকা জাতির প্রতি কট্টর সমর্থনতো ঠিক আছে। কিন্তু শুধুমাত্র স্বীয় জাতির হবার কারণে তার প্রতি অন্যায় সাপোর্ট করার জাতীয়তা ‘জাহিলিয়্যাত’ বা বর্বরতা বলে হাদীসে ইরশাদ হয়েছে। তবে স্বীয় জাতির সঠিক ও ন্যায্য দাবীর স্বপক্ষে অবস্থান নেয়াতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।

সারসংক্ষেপ:
ইসলামের মূল আদর্শের সাথে জাতীয়তাবাদের প্রধান বৈপরীত্য হলো উম্মাহর ধারণা বনাম জাতি-রাষ্ট্রের ধারণা। ইসলামে দেশকে ভালোবাসা বা দেশের মানুষের জন্য কাজ করা।
দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ—এই দুইয়ের সমন্বয়েই একটি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয় এবং নিজেদের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করে, যা একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনের জন্য অপরিহার্য। জাতীয়তাবাদ হলো এমন একটি মতবাদ যা জাতিকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয় এবং মুসলিম উম্মাহর কে ঐক্যবদ্ধ করে।

সুতরাং, জাতীয়তাবাদকে আপনি কীভাবে গ্রহণ করবেন তা নির্ভর করবে আপনার অন্তর্নিহিত দর্শন ও লক্ষ্যের ওপর।

লেখক:
মোঃ রাসেল সরকার
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।