5:16 am, Sunday, 21 December 2025

মাদকাসক্ত পুলিশের কনস্টেবল ফ্ল্যাটে ঢুকে সাংবাদিককে উলঙ্গ করে নির্যাতন

Image 247658 1765237693

 

বরিশাল প্রতিনিধি:
বরিশালে ফ্ল্যাটে ঢুকে এশিয়ান টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধানকে হাতুড়ি পেটা করেছে এক পুলিশ সদস্য। সোমবার (০৮ ডিসেম্বর) রাতে নগরীর গোড়াচাঁদ দাশ রোডে আল জামিয়া মাদ্রাসা দ্বিতীয় তলায় ভাড়া বাসায় এই ঘটনা ঘটে।

গুরুতর আহত সাংবাদিক ফিরোজ মোস্তফাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল নাবিদ আনজুম বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের আমানতগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত।

আহত ফিরোজ মোস্তাফা জানান, পুলিশ সদস্য নাবিদ আনজুম তার পূর্ব পরিচিত। সেই সুবাধে বাসায় আসা যাওয়া ছিল নাবিদের। পুলিশে চাকরি করলেও সে মাদক সেবন এবং অনলাইন ক্যাসিনো চক্রের সাথে জড়িত ছিলো। হঠাৎ করে নাবিদের ই-মেইল আইডি হ্যাক হয়ে যায়। সেই দায় চাপানো হয় ফিরোজ মোস্তফার ওপর। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে শত্রুতার শুরু।

ফিরোজ বলেন, নাবিদ গোপনে আমার মোবাইল ফোন থেকে আমার এবং স্ত্রীর বিশেষ মুহূর্তের কিছু ছবি চুরি করে। সেই ছবি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমাকে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা করে। সবশেষ গত ২৫ অক্টোবর রাতে নাবিদ লোকজন নিয়ে ফ্ল্যাটে এসে আমাকে অকথ্যভাবে নির্যাতন করে। ওইদিন থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত আমার এবং আমার স্ত্রীর ছবি ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে আটকে রেখে আমাকে উলঙ্গ করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তীতে গত ২ নভেম্বর লোকলজ্জা ভেঙে ৯৯৯-এ কল দিয়ে সহযোগিতা চাই। পরে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে।

তিনি বলেন, উদ্ধারের পর থানায় গেলেও পুলিশ হওয়ায় নাবিদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি থানার ওসি। এ কারণে ৩ নভেম্বর বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেই। গত ১৩ নভেম্বর অভিযোগ তদন্ত করার জন্য পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে ডাকেন উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) আবুল কালাম আজাদ। কিন্তু সেখানে বসে পুনরায় হুমকি দেয় কনস্টেবল নাবিদ।

ফিরোজ অভিযোগ করেন, থানা পুলিশ মামলা না নিলেও কোতয়ালী মডেল থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সাঈদ পক্ষ নেয় নাবিদের। তিনি তদন্তের নামে ফিরোজকে থানায় ডেকে নিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে যান। এমনকি টানা দুইবার থানার সাবেক ওসি মিজানুর রহমান মিমাংশার কথা বলে ফিরোজকে ঘুরাতে থাকে। পরে কমিশনার বরাবর অভিযোগ দিলে তারা আরও ক্ষুব্ধ হয়।

এর ধারাবাহিকতায় সোমবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে কনস্টেবল নাবিদ গোড়াচাঁদ দাশ রোডের বাসায় ঢুকে ফিরোজ মোস্তফাকে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাথারি পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। একপর্যায় ফিরোজকে রুমের মধ্যে রেখে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যান কনস্টেবল নাবিদ। নিজেকে বাঁচাতে ফিরোজ ৯৯৯ এ ফোন করে সহযোগিতা চান। পরে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল মামুন উল ইসলাম বলেন, ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে ওই সাংবাদিককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে আমি এখানে নতুন এসেছি। তাদের মধ্যে পূর্বে কোনো বিরোধ ছিলো কিনা আমার জানা নেই। এই ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া যেই পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে কোনো আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সেই তার কর্মস্থলেই আছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 12:11:40 am, Tuesday, 9 December 2025
273 Time View

মাদকাসক্ত পুলিশের কনস্টেবল ফ্ল্যাটে ঢুকে সাংবাদিককে উলঙ্গ করে নির্যাতন

Update Time : 12:11:40 am, Tuesday, 9 December 2025

 

বরিশাল প্রতিনিধি:
বরিশালে ফ্ল্যাটে ঢুকে এশিয়ান টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধানকে হাতুড়ি পেটা করেছে এক পুলিশ সদস্য। সোমবার (০৮ ডিসেম্বর) রাতে নগরীর গোড়াচাঁদ দাশ রোডে আল জামিয়া মাদ্রাসা দ্বিতীয় তলায় ভাড়া বাসায় এই ঘটনা ঘটে।

গুরুতর আহত সাংবাদিক ফিরোজ মোস্তফাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল নাবিদ আনজুম বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের আমানতগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত।

আহত ফিরোজ মোস্তাফা জানান, পুলিশ সদস্য নাবিদ আনজুম তার পূর্ব পরিচিত। সেই সুবাধে বাসায় আসা যাওয়া ছিল নাবিদের। পুলিশে চাকরি করলেও সে মাদক সেবন এবং অনলাইন ক্যাসিনো চক্রের সাথে জড়িত ছিলো। হঠাৎ করে নাবিদের ই-মেইল আইডি হ্যাক হয়ে যায়। সেই দায় চাপানো হয় ফিরোজ মোস্তফার ওপর। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে শত্রুতার শুরু।

ফিরোজ বলেন, নাবিদ গোপনে আমার মোবাইল ফোন থেকে আমার এবং স্ত্রীর বিশেষ মুহূর্তের কিছু ছবি চুরি করে। সেই ছবি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমাকে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা করে। সবশেষ গত ২৫ অক্টোবর রাতে নাবিদ লোকজন নিয়ে ফ্ল্যাটে এসে আমাকে অকথ্যভাবে নির্যাতন করে। ওইদিন থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত আমার এবং আমার স্ত্রীর ছবি ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে আটকে রেখে আমাকে উলঙ্গ করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তীতে গত ২ নভেম্বর লোকলজ্জা ভেঙে ৯৯৯-এ কল দিয়ে সহযোগিতা চাই। পরে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে।

তিনি বলেন, উদ্ধারের পর থানায় গেলেও পুলিশ হওয়ায় নাবিদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি থানার ওসি। এ কারণে ৩ নভেম্বর বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেই। গত ১৩ নভেম্বর অভিযোগ তদন্ত করার জন্য পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে ডাকেন উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) আবুল কালাম আজাদ। কিন্তু সেখানে বসে পুনরায় হুমকি দেয় কনস্টেবল নাবিদ।

ফিরোজ অভিযোগ করেন, থানা পুলিশ মামলা না নিলেও কোতয়ালী মডেল থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সাঈদ পক্ষ নেয় নাবিদের। তিনি তদন্তের নামে ফিরোজকে থানায় ডেকে নিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে যান। এমনকি টানা দুইবার থানার সাবেক ওসি মিজানুর রহমান মিমাংশার কথা বলে ফিরোজকে ঘুরাতে থাকে। পরে কমিশনার বরাবর অভিযোগ দিলে তারা আরও ক্ষুব্ধ হয়।

এর ধারাবাহিকতায় সোমবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে কনস্টেবল নাবিদ গোড়াচাঁদ দাশ রোডের বাসায় ঢুকে ফিরোজ মোস্তফাকে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাথারি পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। একপর্যায় ফিরোজকে রুমের মধ্যে রেখে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যান কনস্টেবল নাবিদ। নিজেকে বাঁচাতে ফিরোজ ৯৯৯ এ ফোন করে সহযোগিতা চান। পরে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল মামুন উল ইসলাম বলেন, ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে ওই সাংবাদিককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে আমি এখানে নতুন এসেছি। তাদের মধ্যে পূর্বে কোনো বিরোধ ছিলো কিনা আমার জানা নেই। এই ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া যেই পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে কোনো আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সেই তার কর্মস্থলেই আছে।