5:16 am, Sunday, 21 December 2025

যাত্রাবাড়ীতে নামে-বেনামে দৈনিক চাঁদা আদায় হয় কোটি টাকা

Extortion 20250322143801

বিশেষ প্রতিনিধি:
গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর শূন্যের ঘরে নেমে এসেছিল রাজধানীর ফুটপাতের চাঁদাবাজি। সুসময় টেকেনি বেশি দিন। আবারও চাঁদাবাজরা ফিরেছে পুরোনো চেহারায়। আগের চেয়ে বরং ফুটপাত-রাজপথে বেড়েছে হকার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়েছে চাঁদার অঙ্ক। কোথাও কোথাও এসেছে নতুন চাঁদাবাজ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলের নেতারা এসব চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। মধ্যম সারির নেতাদের ছত্রছায়া ও পুলিশের সহযোগিতায় এসব চাঁদাবাজি হচ্ছে। আবার কখনো নামে, কখনো বেনামে চাঁদাবাজি করেন নেতারা। বেশির ভাগ নেতাই বেনামে চাঁদাবাজি করেন। আর কখনও ঝামেলায় পড়লে পুলিশকে ব্যবহার করা হয় মীমাংসা জন্য।

ব্যস্ততম যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা ঘিরে অবৈধ বাজার, বাস ও লেগুনার স্ট্যান্ড বসিয়ে চলছে কোটি টাকার চাঁদাবাজি। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় লাইনম্যান নামের চাঁদাবাজরা এ বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ফুটপাথের ক্ষুদে ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকদের কাছ থেকে। যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অর্ধেকজুড়ে বসানো হয়েছে অবৈধ দোকান। এসব দোকান দিনের পর দিন চাঁদাবাজির মাধ্যমেই চলে।

দোকানগুলো রাস্তা দখল করে বসানোর কারণে নির্দিষ্ট কোনো ভাড়া নেই। তবে নির্দিষ্ট ভাড়া না থাকলেও আছে নির্ধারিত চাঁদা। দোকান মালিকদের নিকট থেকে উঠানো এসব চাঁদা যায় উপর মহল পর্যন্ত। চাঁদা দিয়ে দোকান খোলা রাখার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ এখন এই এলাকার সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাথের দোকান বসাতে চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হকারের ওপর চাঁদাবাজি করেন লাইনম্যানরা। লাইনম্যানদের সহযোগিতায় দৈনিক হারে টাকা আদায় করা হয়। কোনো ব্যবসায়ী টাকা দিতে অস্বীকার করলে তার দোকান বসাতে দেয়া হয় না। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা এদের প্রধান শক্তি। যারা গডফাদার হিসাবে পরিচিত। এছাড়া চাঁদার টাকা যায় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও চাঁদা আদায়ে সহযোগিদের হাতে।

কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় ওয়ার্ড নেতারা যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা ঘিরে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এবং তাদের সাথে রয়েছেন কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। যাদের ছত্রছায়ার তারা দীর্ঘদিন ধরে এই চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির সহযোগী সংগঠনের এক কর্মী বলেন, বেশির ভাগ নেতা বেনামে চাঁদা আদায় করেন। নিজের নামে চাঁদাবাজি করেন খুবই কম নেতা। কেউ যাতে তাদের ধরতে না পারে এবং যাতে ক্লিন ইমেজে থাকতে পারেন, এজন্য বেনামে চাঁদাবাজি করেন। এতে ব্যবহার করেন জুনিয়র কর্মীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানের বিবিরবাগিচার ১নম্বর গেট হতে পার্ক হয়ে মসজিদ পর্যন্ত, শহীদ ফারুক সড়কের মোড় হতে মসজিদ পর্যন্ত ও সামাদ সুপার মার্কেট হতে দোলাইরপার যাওয়ার রাস্তার অনেক অংশে গড়ে উঠেছে প্রায় সাতশ হকারের দোকান। আর কয়েকটি ছোট ছোট গ্রুপে চাঁদাবাজরা নিয়ন্ত্রণ করেছে এসব দোকান। তবে এই টাকা দিয়ে অনেককে ম্যানেজ করতে হয় বলে অনেকে জানান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার তিন পাশেই প্রধান সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর বাজার। ফলে চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে যানবাহন ও পথচারীদের। প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে প্রতিমাসে চাঁদাবাজির মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার প্রতিটি সড়কেই বসানো হয়েছে অবৈধ দোকান। ফ্লাইওভারের নিচে গড়ে উঠেছে লেগুনাস্ট্যান্ড। নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে চলে এসব লেগুনা। একই এলাকায় রয়েছে দক্ষিণ বঙ্গে চলাচলের বাসস্ট্যন্ড। ফুটপাথ চলে গেছে অবৈধ দোকান ও পরিবহন স্ট্যানের দখলে।

সাধারণ যাত্রীদের যেন কিছুই করার নেই।
চৌরাস্তার সামাদ সুপার মার্কেটের সামনে রাস্তার ওপর চৌকি বিছিয়ে বসেছে ছোটবড় প্রায় ১৭০টি দোকান। এখানে প্রতি দোকান হতে প্রতিদিন চাঁদা আদায় হয় একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা। এখানে প্রতি মাসে চাঁদা আদায় করা হয় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। এক পোশাক বিক্রেতা জানান, প্রতিদিন বিদ্যুৎসহ একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা চাঁদা দিতে হয়। না দিলে বসতে দিবে না।

যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা গিয়ে কয়েকজন ফুটপাথ ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পদ্মা সেতুগামী রাস্তায় একজন নেতা প্রতিদিন দোকান সাজানোর চৌকির সাইজ অনুযায়ী প্রতি দোকান থেকে ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা নেয়। তাদের ভাষায় লাইন খরচ আদায় করা হয়। এই লাইনে রাস্তার উভয় পাশে মিলিয়ে প্রায় চারশ দোকান বসে। অর্থাৎ যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার থেকে পদ্মা সেতুগামী রাস্তা থেকে প্রায় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা উঠানো হয়।

শহীদ ফারুক সড়কের বিশাল এলাকার প্রধান সড়ক ও ফুটপাথ দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর প্রায় ৫শ দোকান। শহীদ ফারুক স্বরণী রাস্তা একজন নেতা দোকানের সাইজ অনুযায়ী ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে প্রায় পাঁচশ দোকান থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা লাইন খরচ উঠানো হয়। সব চেয়ে ভয়ঙ্কর হচ্ছে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় ফ্লাইওভারের নিচে থেকে ডেমরাগামী রাস্তায় এই লাইনে সবচেয়ে বেশি ফলের দোকান। এখানে দোকান অনুযায়ী ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তুলে এক বিশাল নেতায়। যারা ভ্যানগাড়িতে ফল বিক্রি করে তারা ৫০০ টাকা এবং যারা দোকান বসিয়েছেন তারা ২০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। এই লাইনেও পাঁচশতাধিক দোকান বসে এবং ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা উঠানো হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, লেখালেখি করে কিছুই করতে পারবেন না এই টাকা শুধু লাইনম্যানরা খায় না। চাঁদার টাকা জায়গামতো যায়। জায়গামতো কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা এসি বাসায় থাকে পাজারো গাড়ি চালায় তারা। রসিকতা করে বললাম আমি যদি দোকান দিতে চাই কি পরিমাণ খরচ হবে? তিনি বলেন পাঁচ লাখেও পাইবেন না, এখন আর দোকান পাওয়া যায় না। জায়গার জন্য কত মানুষ লাইন দিয়ে ঘুরে।

সব মিলিয়ে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হয়। যা মাস শেষে তিন কোটি ছাড়িয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা হলো একটি ব্যস্ততম ও গুরুত্বর্পূর্ণ এলাকা। এ এলাকা দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে সিটি ও আন্তঃজেলার বাসসহ বিভিন্ন ছোটবড় হাজার হাজার যানবাহন ও পথচারী। ফলে প্রতিদিন প্রায় সময় লেগে থাকে যানজট। এরমধ্যে প্রধান সড়ক দখল করে গড়ে ওঠা বাজার চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

অন্যদিকে কিছু চাঁদাবাজদের ছত্রছায়ায় অবাধে চলছে এসব বাজার। এমনিতেই পরিবহনের জন্য ঝুঁকি নিয়ে হাটতে হয়, এরমধ্যে প্রায় অর্ধেক রাস্তাজুড়ে বাজার হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে যাত্রাবাড়ী এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, রাজধানীর এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবৈধ দোকানপাট গড়ে উঠা, রাস্তা দখল করে দোকান বসানোর কারণে আমরা বিড়ম্বনায় পরছি। প্রতিদিনই চলাচলে আমাদের অসুবিধা হয়। রাস্তার মোড় ও ফুটপাথের পাশ দিয়ে এসব দোকান বসানো হলেও আমরা কিছুই বলতে পারি না। কারণ এসব দোকান থেকে চাঁদা উঠায় এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। আমাদের কথা তারা ভাবে না। টাকার বিষয়টিই তাদের বেশি বিবেচনায়।

বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল হাসিম কবির বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পরও ফুটপাতে যে যার মতো করে নতুন দোকান বসাচ্ছে। আগের চেয়েও দোকানের সংখ্যা বেড়েছে। আর এতে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করছে আরেকটা পক্ষ।’

এসব বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবি বলেন, ‘আমাদের দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়মিতই অন্যান্য অভিযানের সঙ্গে ফুটপাত হকারমুক্ত করছে। ‘ফুটপাতের দোকানের এখন কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যে যার মতো করে দোকান বসাচ্ছে। আগে পুলিশের সঙ্গে মিলেমিশে চাঁদাবাজি করলেও এখন পুলিশও ভাগ পায় না। আমরা সড়ক, ফুটপাত দখলমুক্ত করছি। কিন্তু পুলিশের তেমন সহযোগিতা না পেলে কার্যকর করা যাচ্ছে না।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘ফুটপাতে একদিকে উচ্ছেদ করলে তারা আরেকদিকে দোকান বসায়। এ ক্ষেত্রে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদে পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সবার সমন্বয় প্রয়োজন। ফুটপাতে চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। করপোরেশন পুলিশের সহযোগিতা পাচ্ছে না, বিষয়টি ঠিক নয়। আমরা চাই, সড়ক পরিষ্কার রাখতে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ হোক-চলবে.!!

 

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 06:39:07 am, Thursday, 4 December 2025
145 Time View

যাত্রাবাড়ীতে নামে-বেনামে দৈনিক চাঁদা আদায় হয় কোটি টাকা

Update Time : 06:39:07 am, Thursday, 4 December 2025

বিশেষ প্রতিনিধি:
গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর শূন্যের ঘরে নেমে এসেছিল রাজধানীর ফুটপাতের চাঁদাবাজি। সুসময় টেকেনি বেশি দিন। আবারও চাঁদাবাজরা ফিরেছে পুরোনো চেহারায়। আগের চেয়ে বরং ফুটপাত-রাজপথে বেড়েছে হকার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়েছে চাঁদার অঙ্ক। কোথাও কোথাও এসেছে নতুন চাঁদাবাজ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলের নেতারা এসব চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। মধ্যম সারির নেতাদের ছত্রছায়া ও পুলিশের সহযোগিতায় এসব চাঁদাবাজি হচ্ছে। আবার কখনো নামে, কখনো বেনামে চাঁদাবাজি করেন নেতারা। বেশির ভাগ নেতাই বেনামে চাঁদাবাজি করেন। আর কখনও ঝামেলায় পড়লে পুলিশকে ব্যবহার করা হয় মীমাংসা জন্য।

ব্যস্ততম যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা ঘিরে অবৈধ বাজার, বাস ও লেগুনার স্ট্যান্ড বসিয়ে চলছে কোটি টাকার চাঁদাবাজি। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় লাইনম্যান নামের চাঁদাবাজরা এ বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ফুটপাথের ক্ষুদে ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকদের কাছ থেকে। যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অর্ধেকজুড়ে বসানো হয়েছে অবৈধ দোকান। এসব দোকান দিনের পর দিন চাঁদাবাজির মাধ্যমেই চলে।

দোকানগুলো রাস্তা দখল করে বসানোর কারণে নির্দিষ্ট কোনো ভাড়া নেই। তবে নির্দিষ্ট ভাড়া না থাকলেও আছে নির্ধারিত চাঁদা। দোকান মালিকদের নিকট থেকে উঠানো এসব চাঁদা যায় উপর মহল পর্যন্ত। চাঁদা দিয়ে দোকান খোলা রাখার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ এখন এই এলাকার সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাথের দোকান বসাতে চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হকারের ওপর চাঁদাবাজি করেন লাইনম্যানরা। লাইনম্যানদের সহযোগিতায় দৈনিক হারে টাকা আদায় করা হয়। কোনো ব্যবসায়ী টাকা দিতে অস্বীকার করলে তার দোকান বসাতে দেয়া হয় না। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা এদের প্রধান শক্তি। যারা গডফাদার হিসাবে পরিচিত। এছাড়া চাঁদার টাকা যায় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও চাঁদা আদায়ে সহযোগিদের হাতে।

কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় ওয়ার্ড নেতারা যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা ঘিরে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এবং তাদের সাথে রয়েছেন কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। যাদের ছত্রছায়ার তারা দীর্ঘদিন ধরে এই চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির সহযোগী সংগঠনের এক কর্মী বলেন, বেশির ভাগ নেতা বেনামে চাঁদা আদায় করেন। নিজের নামে চাঁদাবাজি করেন খুবই কম নেতা। কেউ যাতে তাদের ধরতে না পারে এবং যাতে ক্লিন ইমেজে থাকতে পারেন, এজন্য বেনামে চাঁদাবাজি করেন। এতে ব্যবহার করেন জুনিয়র কর্মীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানের বিবিরবাগিচার ১নম্বর গেট হতে পার্ক হয়ে মসজিদ পর্যন্ত, শহীদ ফারুক সড়কের মোড় হতে মসজিদ পর্যন্ত ও সামাদ সুপার মার্কেট হতে দোলাইরপার যাওয়ার রাস্তার অনেক অংশে গড়ে উঠেছে প্রায় সাতশ হকারের দোকান। আর কয়েকটি ছোট ছোট গ্রুপে চাঁদাবাজরা নিয়ন্ত্রণ করেছে এসব দোকান। তবে এই টাকা দিয়ে অনেককে ম্যানেজ করতে হয় বলে অনেকে জানান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার তিন পাশেই প্রধান সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর বাজার। ফলে চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে যানবাহন ও পথচারীদের। প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে প্রতিমাসে চাঁদাবাজির মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার প্রতিটি সড়কেই বসানো হয়েছে অবৈধ দোকান। ফ্লাইওভারের নিচে গড়ে উঠেছে লেগুনাস্ট্যান্ড। নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে চলে এসব লেগুনা। একই এলাকায় রয়েছে দক্ষিণ বঙ্গে চলাচলের বাসস্ট্যন্ড। ফুটপাথ চলে গেছে অবৈধ দোকান ও পরিবহন স্ট্যানের দখলে।

সাধারণ যাত্রীদের যেন কিছুই করার নেই।
চৌরাস্তার সামাদ সুপার মার্কেটের সামনে রাস্তার ওপর চৌকি বিছিয়ে বসেছে ছোটবড় প্রায় ১৭০টি দোকান। এখানে প্রতি দোকান হতে প্রতিদিন চাঁদা আদায় হয় একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা। এখানে প্রতি মাসে চাঁদা আদায় করা হয় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। এক পোশাক বিক্রেতা জানান, প্রতিদিন বিদ্যুৎসহ একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা চাঁদা দিতে হয়। না দিলে বসতে দিবে না।

যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা গিয়ে কয়েকজন ফুটপাথ ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পদ্মা সেতুগামী রাস্তায় একজন নেতা প্রতিদিন দোকান সাজানোর চৌকির সাইজ অনুযায়ী প্রতি দোকান থেকে ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা নেয়। তাদের ভাষায় লাইন খরচ আদায় করা হয়। এই লাইনে রাস্তার উভয় পাশে মিলিয়ে প্রায় চারশ দোকান বসে। অর্থাৎ যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার থেকে পদ্মা সেতুগামী রাস্তা থেকে প্রায় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা উঠানো হয়।

শহীদ ফারুক সড়কের বিশাল এলাকার প্রধান সড়ক ও ফুটপাথ দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর প্রায় ৫শ দোকান। শহীদ ফারুক স্বরণী রাস্তা একজন নেতা দোকানের সাইজ অনুযায়ী ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে প্রায় পাঁচশ দোকান থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা লাইন খরচ উঠানো হয়। সব চেয়ে ভয়ঙ্কর হচ্ছে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় ফ্লাইওভারের নিচে থেকে ডেমরাগামী রাস্তায় এই লাইনে সবচেয়ে বেশি ফলের দোকান। এখানে দোকান অনুযায়ী ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তুলে এক বিশাল নেতায়। যারা ভ্যানগাড়িতে ফল বিক্রি করে তারা ৫০০ টাকা এবং যারা দোকান বসিয়েছেন তারা ২০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। এই লাইনেও পাঁচশতাধিক দোকান বসে এবং ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা উঠানো হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, লেখালেখি করে কিছুই করতে পারবেন না এই টাকা শুধু লাইনম্যানরা খায় না। চাঁদার টাকা জায়গামতো যায়। জায়গামতো কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা এসি বাসায় থাকে পাজারো গাড়ি চালায় তারা। রসিকতা করে বললাম আমি যদি দোকান দিতে চাই কি পরিমাণ খরচ হবে? তিনি বলেন পাঁচ লাখেও পাইবেন না, এখন আর দোকান পাওয়া যায় না। জায়গার জন্য কত মানুষ লাইন দিয়ে ঘুরে।

সব মিলিয়ে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হয়। যা মাস শেষে তিন কোটি ছাড়িয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা হলো একটি ব্যস্ততম ও গুরুত্বর্পূর্ণ এলাকা। এ এলাকা দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে সিটি ও আন্তঃজেলার বাসসহ বিভিন্ন ছোটবড় হাজার হাজার যানবাহন ও পথচারী। ফলে প্রতিদিন প্রায় সময় লেগে থাকে যানজট। এরমধ্যে প্রধান সড়ক দখল করে গড়ে ওঠা বাজার চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

অন্যদিকে কিছু চাঁদাবাজদের ছত্রছায়ায় অবাধে চলছে এসব বাজার। এমনিতেই পরিবহনের জন্য ঝুঁকি নিয়ে হাটতে হয়, এরমধ্যে প্রায় অর্ধেক রাস্তাজুড়ে বাজার হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে যাত্রাবাড়ী এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, রাজধানীর এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবৈধ দোকানপাট গড়ে উঠা, রাস্তা দখল করে দোকান বসানোর কারণে আমরা বিড়ম্বনায় পরছি। প্রতিদিনই চলাচলে আমাদের অসুবিধা হয়। রাস্তার মোড় ও ফুটপাথের পাশ দিয়ে এসব দোকান বসানো হলেও আমরা কিছুই বলতে পারি না। কারণ এসব দোকান থেকে চাঁদা উঠায় এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। আমাদের কথা তারা ভাবে না। টাকার বিষয়টিই তাদের বেশি বিবেচনায়।

বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল হাসিম কবির বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পরও ফুটপাতে যে যার মতো করে নতুন দোকান বসাচ্ছে। আগের চেয়েও দোকানের সংখ্যা বেড়েছে। আর এতে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করছে আরেকটা পক্ষ।’

এসব বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবি বলেন, ‘আমাদের দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়মিতই অন্যান্য অভিযানের সঙ্গে ফুটপাত হকারমুক্ত করছে। ‘ফুটপাতের দোকানের এখন কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যে যার মতো করে দোকান বসাচ্ছে। আগে পুলিশের সঙ্গে মিলেমিশে চাঁদাবাজি করলেও এখন পুলিশও ভাগ পায় না। আমরা সড়ক, ফুটপাত দখলমুক্ত করছি। কিন্তু পুলিশের তেমন সহযোগিতা না পেলে কার্যকর করা যাচ্ছে না।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘ফুটপাতে একদিকে উচ্ছেদ করলে তারা আরেকদিকে দোকান বসায়। এ ক্ষেত্রে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদে পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সবার সমন্বয় প্রয়োজন। ফুটপাতে চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। করপোরেশন পুলিশের সহযোগিতা পাচ্ছে না, বিষয়টি ঠিক নয়। আমরা চাই, সড়ক পরিষ্কার রাখতে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ হোক-চলবে.!!