12:14 pm, Sunday, 21 December 2025

এমদাদ বাহিনীর চাঁদাবাজিতে অস্থির কাপ্তান বাজার মুরগী ব্যবসায়ীরা

Picsart 25 12 04 09 31 22 613

 

স্টাফ রিপোর্টার:
ক্ষমতার পালাবদল হলেও চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য কমেনি রাজধানীর একমাত্র মুরগির পাইকারি বাজার কাপ্তানবাজারে। তবে বদল হয়েছে চাঁদাবাজের হাত। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পালিয়ে যাওয়া দখলদারদের শূন্যস্থান পূরণে নতুন চেহারার পাশাপাশি বেড়েছে চাঁদার হারও। অবৈধ চাঁদায় অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা।

‘মুরগিপট্টি খ্যাত’ এই পাইকারি বাজারের চাঁদাবাজি ও দখলদারির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগের নেতাদের হাতে। কাপ্তান বাজার এলাকার সড়ক দখল করে অবৈধ মুরগির বাজার বসিয়ে লাখ লাখ টাকা পকেটে তুলেছে তারা। প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা উঠত বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

সূত্র জানায়, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন যে গোষ্ঠী চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, তারা সড়কের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ৪০-৪৫টি ভিটা দখলে নিয়েছে। মোটা অঙ্কের বিনিময়ে নতুন লোকদের হাতে তুলে দিচ্ছে এসব ভিটা। নতুন করে বিপাকে পড়েছেন কাপ্তান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ীরা। নতুন নিয়ন্ত্রণে এখান থেকে প্রতিদিন ১২ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয় বলে সূত্র জানায়।

জানা যায়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর যৌথ বাহিনী উচ্ছেদ করে এই অবৈধ মুরগি বাজার। এরপর কয়েক দিন কাপ্তান বাজারে অবৈধ দোকান বসেনি। কিন্তু ১ নভেম্বর রাতে সড়ক দখলে নেয় নতুন চক্র। বসাতে থাকে দোকান। তবে পুরনো অনেককে বসতে দেওয়া হচ্ছে না। নতুন লোক বসিয়ে নতুন রেটে টাকা নিচ্ছে তারা।

এই মুরগির বাজার স্থানীয় বাসিন্দা ও পূর্ব-দক্ষিণ অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসা যাত্রীদের ভোগান্তির আরেক নাম। রাত ১১টার পর মুরগিবোঝাই শত শত ট্রাক-পিকআপে কাপ্তান বাজার, জয়কালী মন্দির, নবাবপুর ও গুলিস্তান ফ্লাইওভারে ওপরে যানজট লেগে যায়। স্থানীয় লোকজন রাতে নিরাপদে চলাচল করতে পারে না। জরুরি চিকিৎসার জন্য রোগী নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্সগুলো আটকে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

সরেজমিনে জানা যায়, প্রতিদিন রাত ১১টার পর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মুরগিভর্তি শত শত ট্রাক আসতে থাকে কাপ্তানবাজারে। মুরগিবাহী এসব ট্রাক কাপ্তান বাজার এলাকায় আসা মাত্র চাঁদাবাজরা গাড়ি থামিয়ে টাকা আদায় করে। আওয়ামী লীগের আমলে প্রতি গাড়ি ২ হাজার ৫০০ টাকা নিত। এখন তা বাড়িয়ে ২ হাজার ৮০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মুরগির ব্যবসায়ী জানান, আগে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজরা টাকা তুলত। তাদের হটিয়ে এখন নতুন করে এমদাদ বাহিনী চাঁদা তুলছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৩৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদ পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে কাপ্তান বাজার মুরগী মার্কেটের বৈধ ইজারাদার প্রতিষ্ঠান ঢাকা প্যাসিফিক লিমিটেডকে রাজস্ব আদায়ে বাঁধা প্রদানের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা এমদাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে। ১৯ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে ঢাকা প্যাসিফিক লিমিটেডকে রাজস্ব আদায়ের কার্যাদেশ প্রদান করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব আদায় করতে গেলে স্থানীয় বিএনপি’র এই নেতা তার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে রাজস্ব আদায়ে বাঁধা প্রদান করে এবং বাজারের একটি অংশের রাজস্ব নিজেরা আদায় করে নিচ্ছে।

রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে টানা তিন দিন মুরগি বেচাকেনা বন্ধ করে রাখেন এই বিএনপি নেতা এমদাদ। এতে বাজারে মুরগির সরবরাহ কমে যাওয়ায় খুচরা বাজারে মুরগীর দাম বেড়ে যায় এবং সরকার মোটা অংকের রাজস্ব হারায়।

সুত্র জানায়, কাপ্তান বাজার পোল্ট্রি মুরগী মার্কেটের একটি অংশ ফুটপাত দাবি করে বিএনপি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ দখলে রেখেছেন এমদাদ বাহিনী। এমদাদ তার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে প্রতিরাতেই মুরগী ব্যবসায়িদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বাজারের এই অংশের রাজস্ব আদায় করে আসছেন। বাজারের ওই অংশে বৈধ ইজারাদারকে রাজস্ব আদায় করতে দিচ্ছেনা। এতে সরকার ও ইজারাদার রাজস্ব হারাচ্ছে। এমন কি বর্তমান বৈধ ইজারাদারকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বাজারে ঢুকতে দিচ্ছেন না।

স্থানীয়রা জানায়, রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে একটি চক্র বিগত প্রায় ১ বছরের বেশী সময় এই পোল্ট্রি মার্কেটের রাজস্ব আদায় করে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে নির্ধারিত নিয়মে পরিশোধ না করে নিজেরাই ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন । এতে সিটি কর্পোরেশন চক্রটির কাছে কয়েক কোটি টাকা পাওনা হয়ে যায়। ফলে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ২৯ নভেম্বর-২০২৫ তারিখের আহ্বানকৃত দরপত্রের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয়ে ইজারার আদায়ের কার্যাদেশ গ্রহন করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা প্যাসিফিক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মার্কেটের নতুন ইজারাদার নিয়োগের বিষয়টি মাইকিং করে সকলকে জানিয়ে দেন। কিন্তু পূর্বের বকেয়া ইজারাদার, স্থানীয় চাঁদাবাজদের সাথে সিন্ডিকেট করে বর্তমান ইজারাদার যাতে রাজস্ব আদায় করতে না পারে সেজন্য পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মালিক সমিতির মাধ্যমে টানা তিন দিন মুরগী বেচাকেনা বন্ধ করে রাখেন। পাশাপাশি নতুন ইজারাদারকে প্রাননাশের হুমকি দেন।

এবিষয়ে মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ লাল মুরগি বেচাকেনায় বাধা সৃষ্টির কথা স্বীকার করে গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা ইজারাদারদের জন্য বেচাকেনা বন্ধ রেখেছি। তারা একজোট হলে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই বেচাকেনা শুরু করে দেব।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, বিএনপি’র ওয়ার্ড নেতা এমদাদ পাটোয়ারী দলীয় এক প্রভাবশালী নেতার সেল্টারে, ব্যবসায়িক সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারির যোগসাজসে পোল্ট্রি মার্কেট বন্ধ করে রেখে ছিলেন। চাহিদা মাফিক চাঁদা না দিলে তারা নতুন ইজারাদারের উপরে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ইজারা আদায়ের কার্যক্রম আবারো বন্ধ করে দিবেন। যেন জোড় যার মুল্লক তার। এই কারণে এমদাদ গ্রুপ বাজারের একটি অংশের রাজস্ব নিজেরাই আদায় করে নিচ্ছেন।

এদিকে সকল বিধি-নিয়ম মেনে দরপত্র আহবানের পর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ইজারাদার নিয়োগ দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে সিটি কর্পোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেটের মাইকিংয়ের মাধ্যমে। ঢাকা প্যাসিফিক লিমিটেডকে ইজারা আদায়ের কার্যাদেশ প্রদানের সাথে সাথেই মাইকিং করে নতুন ইজারাদার কর্তৃক রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে ঘোষণা দেন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

পোল্ট্রি মার্কেটের ইজারা প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শাখাওয়াত হোসেন বলেন, সকল নিয়ম-কানুন মেনে দরপত্রে অংশ নিয়ে ইজারা পেয়েছি। কিন্তু একটি চক্র রাজনৈতিক দলীয় পরিচয় দিয়ে আমাকে রাজস্ব আদায়ে বাঁধা সৃষ্টি করছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র ৩৯ নং ওয়ার্ড সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদ পাটোয়ারী রাজস্ব আদায়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, সিটি কর্পোরেশন যেখানে ইজারা দিয়েছে এখানে তারাই টাকা কালেকশন করবে। কিন্তু আমার সাংগঠনিক ৩৯ নং ওয়ার্ডে কোনরকম ইজারা চলবে না। তারা আমাদের বাড়ির সামনে এসে ইজারা আদায়ের চেষ্টা করছে এটা কি ঠিক!? আমি এগুলো উচ্ছেদের চেষ্টা করতেছি আর যে টাকা নেয়া হয় সেটা আমার পোলাপাইনের হক। এগুলো নিয়েই মহল্লার পোলাপানের সাথে গেঞ্জাম চলতেছে। এবিষয়ে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে.!!

বিস্তারিত আসছে ২য় পর্বের প্রতিবেদনে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 03:33:10 am, Thursday, 4 December 2025
108 Time View

এমদাদ বাহিনীর চাঁদাবাজিতে অস্থির কাপ্তান বাজার মুরগী ব্যবসায়ীরা

Update Time : 03:33:10 am, Thursday, 4 December 2025

 

স্টাফ রিপোর্টার:
ক্ষমতার পালাবদল হলেও চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য কমেনি রাজধানীর একমাত্র মুরগির পাইকারি বাজার কাপ্তানবাজারে। তবে বদল হয়েছে চাঁদাবাজের হাত। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পালিয়ে যাওয়া দখলদারদের শূন্যস্থান পূরণে নতুন চেহারার পাশাপাশি বেড়েছে চাঁদার হারও। অবৈধ চাঁদায় অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা।

‘মুরগিপট্টি খ্যাত’ এই পাইকারি বাজারের চাঁদাবাজি ও দখলদারির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগের নেতাদের হাতে। কাপ্তান বাজার এলাকার সড়ক দখল করে অবৈধ মুরগির বাজার বসিয়ে লাখ লাখ টাকা পকেটে তুলেছে তারা। প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা উঠত বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

সূত্র জানায়, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন যে গোষ্ঠী চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, তারা সড়কের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ৪০-৪৫টি ভিটা দখলে নিয়েছে। মোটা অঙ্কের বিনিময়ে নতুন লোকদের হাতে তুলে দিচ্ছে এসব ভিটা। নতুন করে বিপাকে পড়েছেন কাপ্তান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ীরা। নতুন নিয়ন্ত্রণে এখান থেকে প্রতিদিন ১২ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয় বলে সূত্র জানায়।

জানা যায়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর যৌথ বাহিনী উচ্ছেদ করে এই অবৈধ মুরগি বাজার। এরপর কয়েক দিন কাপ্তান বাজারে অবৈধ দোকান বসেনি। কিন্তু ১ নভেম্বর রাতে সড়ক দখলে নেয় নতুন চক্র। বসাতে থাকে দোকান। তবে পুরনো অনেককে বসতে দেওয়া হচ্ছে না। নতুন লোক বসিয়ে নতুন রেটে টাকা নিচ্ছে তারা।

এই মুরগির বাজার স্থানীয় বাসিন্দা ও পূর্ব-দক্ষিণ অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসা যাত্রীদের ভোগান্তির আরেক নাম। রাত ১১টার পর মুরগিবোঝাই শত শত ট্রাক-পিকআপে কাপ্তান বাজার, জয়কালী মন্দির, নবাবপুর ও গুলিস্তান ফ্লাইওভারে ওপরে যানজট লেগে যায়। স্থানীয় লোকজন রাতে নিরাপদে চলাচল করতে পারে না। জরুরি চিকিৎসার জন্য রোগী নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্সগুলো আটকে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

সরেজমিনে জানা যায়, প্রতিদিন রাত ১১টার পর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মুরগিভর্তি শত শত ট্রাক আসতে থাকে কাপ্তানবাজারে। মুরগিবাহী এসব ট্রাক কাপ্তান বাজার এলাকায় আসা মাত্র চাঁদাবাজরা গাড়ি থামিয়ে টাকা আদায় করে। আওয়ামী লীগের আমলে প্রতি গাড়ি ২ হাজার ৫০০ টাকা নিত। এখন তা বাড়িয়ে ২ হাজার ৮০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মুরগির ব্যবসায়ী জানান, আগে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজরা টাকা তুলত। তাদের হটিয়ে এখন নতুন করে এমদাদ বাহিনী চাঁদা তুলছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৩৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদ পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে কাপ্তান বাজার মুরগী মার্কেটের বৈধ ইজারাদার প্রতিষ্ঠান ঢাকা প্যাসিফিক লিমিটেডকে রাজস্ব আদায়ে বাঁধা প্রদানের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা এমদাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে। ১৯ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে ঢাকা প্যাসিফিক লিমিটেডকে রাজস্ব আদায়ের কার্যাদেশ প্রদান করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব আদায় করতে গেলে স্থানীয় বিএনপি’র এই নেতা তার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে রাজস্ব আদায়ে বাঁধা প্রদান করে এবং বাজারের একটি অংশের রাজস্ব নিজেরা আদায় করে নিচ্ছে।

রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে টানা তিন দিন মুরগি বেচাকেনা বন্ধ করে রাখেন এই বিএনপি নেতা এমদাদ। এতে বাজারে মুরগির সরবরাহ কমে যাওয়ায় খুচরা বাজারে মুরগীর দাম বেড়ে যায় এবং সরকার মোটা অংকের রাজস্ব হারায়।

সুত্র জানায়, কাপ্তান বাজার পোল্ট্রি মুরগী মার্কেটের একটি অংশ ফুটপাত দাবি করে বিএনপি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ দখলে রেখেছেন এমদাদ বাহিনী। এমদাদ তার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে প্রতিরাতেই মুরগী ব্যবসায়িদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বাজারের এই অংশের রাজস্ব আদায় করে আসছেন। বাজারের ওই অংশে বৈধ ইজারাদারকে রাজস্ব আদায় করতে দিচ্ছেনা। এতে সরকার ও ইজারাদার রাজস্ব হারাচ্ছে। এমন কি বর্তমান বৈধ ইজারাদারকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বাজারে ঢুকতে দিচ্ছেন না।

স্থানীয়রা জানায়, রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে একটি চক্র বিগত প্রায় ১ বছরের বেশী সময় এই পোল্ট্রি মার্কেটের রাজস্ব আদায় করে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে নির্ধারিত নিয়মে পরিশোধ না করে নিজেরাই ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন । এতে সিটি কর্পোরেশন চক্রটির কাছে কয়েক কোটি টাকা পাওনা হয়ে যায়। ফলে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ২৯ নভেম্বর-২০২৫ তারিখের আহ্বানকৃত দরপত্রের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয়ে ইজারার আদায়ের কার্যাদেশ গ্রহন করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা প্যাসিফিক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মার্কেটের নতুন ইজারাদার নিয়োগের বিষয়টি মাইকিং করে সকলকে জানিয়ে দেন। কিন্তু পূর্বের বকেয়া ইজারাদার, স্থানীয় চাঁদাবাজদের সাথে সিন্ডিকেট করে বর্তমান ইজারাদার যাতে রাজস্ব আদায় করতে না পারে সেজন্য পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মালিক সমিতির মাধ্যমে টানা তিন দিন মুরগী বেচাকেনা বন্ধ করে রাখেন। পাশাপাশি নতুন ইজারাদারকে প্রাননাশের হুমকি দেন।

এবিষয়ে মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ লাল মুরগি বেচাকেনায় বাধা সৃষ্টির কথা স্বীকার করে গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা ইজারাদারদের জন্য বেচাকেনা বন্ধ রেখেছি। তারা একজোট হলে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই বেচাকেনা শুরু করে দেব।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, বিএনপি’র ওয়ার্ড নেতা এমদাদ পাটোয়ারী দলীয় এক প্রভাবশালী নেতার সেল্টারে, ব্যবসায়িক সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারির যোগসাজসে পোল্ট্রি মার্কেট বন্ধ করে রেখে ছিলেন। চাহিদা মাফিক চাঁদা না দিলে তারা নতুন ইজারাদারের উপরে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ইজারা আদায়ের কার্যক্রম আবারো বন্ধ করে দিবেন। যেন জোড় যার মুল্লক তার। এই কারণে এমদাদ গ্রুপ বাজারের একটি অংশের রাজস্ব নিজেরাই আদায় করে নিচ্ছেন।

এদিকে সকল বিধি-নিয়ম মেনে দরপত্র আহবানের পর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ইজারাদার নিয়োগ দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে সিটি কর্পোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেটের মাইকিংয়ের মাধ্যমে। ঢাকা প্যাসিফিক লিমিটেডকে ইজারা আদায়ের কার্যাদেশ প্রদানের সাথে সাথেই মাইকিং করে নতুন ইজারাদার কর্তৃক রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে ঘোষণা দেন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

পোল্ট্রি মার্কেটের ইজারা প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শাখাওয়াত হোসেন বলেন, সকল নিয়ম-কানুন মেনে দরপত্রে অংশ নিয়ে ইজারা পেয়েছি। কিন্তু একটি চক্র রাজনৈতিক দলীয় পরিচয় দিয়ে আমাকে রাজস্ব আদায়ে বাঁধা সৃষ্টি করছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র ৩৯ নং ওয়ার্ড সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদ পাটোয়ারী রাজস্ব আদায়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, সিটি কর্পোরেশন যেখানে ইজারা দিয়েছে এখানে তারাই টাকা কালেকশন করবে। কিন্তু আমার সাংগঠনিক ৩৯ নং ওয়ার্ডে কোনরকম ইজারা চলবে না। তারা আমাদের বাড়ির সামনে এসে ইজারা আদায়ের চেষ্টা করছে এটা কি ঠিক!? আমি এগুলো উচ্ছেদের চেষ্টা করতেছি আর যে টাকা নেয়া হয় সেটা আমার পোলাপাইনের হক। এগুলো নিয়েই মহল্লার পোলাপানের সাথে গেঞ্জাম চলতেছে। এবিষয়ে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে.!!

বিস্তারিত আসছে ২য় পর্বের প্রতিবেদনে।