আওয়ামী নেতারা পলাতক থাকলেও, মাঠ নিয়ন্ত্রণে ছাত্রলীগ নেতা মাহবুর রহমান

“অন্য সাংবাদিক হলে দেখা করতাম- আপনি জামায়াতের সাংবাদিক দেখা করা যাবে না- সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহাবুব রহমান”
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা জেলা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতারা পলাতক থাকলেও বহাল তবিয়তে থেকে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মাহবুর রহমান।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন আহমেদের বিশেষ বাহিনীতে ক্যাডার হিসেবে যোগদান করেন তিনি।
গণ অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ যুবলীগ ছাত্রলীগ সকল নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে বা গ্রেফতার হলেও পালাতে হয়নি এ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহাবুর রহমান। তিনি অবিভক্ত ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক। আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের নির্দেশে এলাকায় চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ নানা অপকর্মের শত অভিযোগ থাকার সত্ত্বেও হয়নি তার বিরুদ্ধে কোন মামলা, হতে হয়নি গ্রেপ্তার। বর্তমানে আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে থাকলেও প্রকাশ্যে দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি।
কেন তার বিরুদ্ধে মামলা হবে!? “সোনার ডিম পাড়া হাঁস কি কেউ হারাতে চাইবে” জনমতের প্রশ্ন এর আসল রহস্য কোথায়?
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মুখ খুলতে শুরু করেছে ঢাকার কেরানীগঞ্জের নির্যাতিত সাধারণ মানুষ। দিনের পর দিন মারধর, নির্যাতন, জমি দখল করে নিলেও ৫ আগস্টের আগে শোষকদের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেনি কেরানীগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দারা। নিপীড়ন, নির্যাতন এতদিন মুখ বুজে সহ্য করলেও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর এখন বিচারের আশায় কিছুটা হলেও স্বস্তি পাচ্ছেন নির্যাতিতরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের ছিল এক ভয়ংকর বিশেষ বাহিনী। সেই বাহিনী দিয়ে তিনি সাধারণ মানুষের জমি দখলসহ সব ধরনের অপকর্ম চালাতেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে হয়েছেন টানা চারবার উপজেলা চেয়ারম্যান। তিনি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগেরও সভাপতি ছিলেন। উপজেলার বারোটি ইউনিয়নেই রয়েছে তার বিশেষ এক ভয়ংকর ক্যাডার বাহিনী। আর এই বিশেষ বাহিনীর নেতৃত্ব দিতেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহাবুর রহমান। কেরানীগঞ্জের কোন্ডা থেকে হযরতপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যেত এই বিশেষ বাহিনীর ক্যাডার নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলী নেতা মাহাবুর রহমান কে দিয়ে। কিন্তু নির্যাতন ও মামলার ভয়ে কেউ একটা শব্দ করারও সাহস করত না। বিগত ১৬ বছরের ক্ষমতায় বৈধ-অবৈধভাবে শাহীন আহমেদ তার বিশেষ বাহিনী দিয়ে কামিয়েছেন হাজার কোটি টাকা।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহাবুর রহমান আওয়ামী লীগের সময় উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কামিয়েছেন হাজার কোটি টাকা। সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সঙ্গেও রয়েছে তার সুসম্পর্ক। বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা পলাতক থাকলেও এই দুঃসময়ে বিপুর নির্দেশে মাঠ পর্যায়ে প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম। সূত্রে জানা যায় ১৫ বছর আগেও নিষিদ্ধ সংগঠন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহাবুর রহমানের উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই ছিল না। কিন্তু এই ১৫ বছরে তিনি হয়েছেন হাজার কোটি টাকার মালিক এবং বহাল তবিয়তে থেকে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধভাবে জমি দখল ও চাঁদাবাজি রাজত্ব। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জায়গা নিয়ে সেখানে নিজের আবাসন কিউট হাউজিং নির্মাণ করেন। উপজেলার কালিগঞ্জ গার্মেন্ট পল্লীর শুভাঢ্যা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম নুরু মিয়ার মার্কেট ২০২০ সালে দখল করার চেষ্টা করেন শাহীনের ক্যাডার বাহিনী। পরবর্তী সময়ে নুরু মিয়ার স্ত্রী-সন্তানরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সেটি রক্ষা করতে পারেন।
শাহীন চেয়ারম্যান বা শাহীন বাহিনীর নির্দেশে কেরানীগঞ্জের বোয়ালি, কাজিরগাঁও, দ্বীপপুর এবং সোনাকান্দা মৌজায় ইন্ডাস্ট্রি ও হাউজিং প্রকল্পের জন্য উর্বর ফসলি জমি চিহ্নিত করে বিক্রি ও রেজিঃ বন্ধ করে রাখতেন। এসব জমির মালিকরা কারো কাছে জমি বিক্রি করতে গেলে বা সন্তানদের নামে জমি লিখে দিতে গেলেও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের বিশেষ বাহিনীর ক্যাডার নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা মাহাবুর রহমান কে দিয়ে বাঁধা দিতো। একমাত্র চেয়ারম্যান ও তার সমর্থিত লোকজনের কাছেই জমি বিক্রি করতে বাধ্য করা হতো। উপজেলার কোন্ডা ইউনিয়নে রয়েছে কিংডম, নিউ ভিশন, সবুজছায়া ও ভেনাসসহ একাধিক আবাসান প্রকল্প। সবগুলোতেই শাহীন বাহিনীর হাত রয়েছে।
এ ছাড়া কেরানীগঞ্জে শাহীনের ছত্রছায়ায় ৩০টিরও বেশি হাউজিং গড়ে উঠেছে। যেখানে প্রতি শতাংশ জমির জন্য শাহীনকে ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হতো বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। চাঁদা না দিয়ে কেউ হাউজিং প্রকল্পে জমি ক্রয় ও ভবন নির্মাণ করতে পারত না এমনও অভিযোগ করেন অনেকেই। শাহীন বাহিনীর কেরানীগঞ্জে ৪টি ড্রেজার রয়েছে। জমি ভরাটের জন্য তার ড্রেজারের মাধ্যমে উচ্চ মূল্যে বালু ফেলতে বাধ্য এবং অন্য ড্রেজার মালিকদের কাছ থেকে প্রতি ফিট বালু ফেলার জন্য পঞ্চাশ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নিত তার বাহিনী।
শাহীন আহমেদ ভূমি দখল ও চাঁদাবাজির কর্মকান্ডগুলো পরিচালনা করতেন তার ভাই দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য শিপু আহমেদ, নিষিদ্ধ সংগঠন সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা এবং তার বিশেষ বাহিনীর ক্যাডার মাহাবুর রহমান, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের নেতা জসিম মাহমুদ, মধুসিটি হাবিবুর রহমান, তারানগর ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ফারুক, হযরতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন আয়নাল, আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুর রহমান, ঢাকা জেলা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মো. রাসেল মেম্বার, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মিরাজুর রহমান সুমন, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমাম হাসান, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ মাসুদ পাপ্পু, সরকারি ইস্পাহানী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শাহজালাল অপু।
বর্তমানে সবাই আত্মগোপনে থাকলেও আওয়ামী লীগের নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের চাঁদাবাজি দখল বাণিজ্য সহ এখন কার্যক্রমের দায়িত্ব পালন করছেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা এবং তার বিশেষ বাহিনীর ক্যাডার মাহাবুর রহমান।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এ সব এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর গাঢাকা দিয়েছে শাহীন আহমেদ ও তার সহযোগীরা কিন্তু অব্যাহত আছে তার বাহিনী। তারা বলেন, সাধারণ পরিবারের সদস্য হয়েও উন্নয়ন খাতের কোটি কোটি টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন চেয়ারম্যান শাহীন। জমি দখল, হাটবাজার ইজারা চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের দুর্নীতির অর্থ দিয়ে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন শাহীন।
স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ছত্রছায়ায় এখনো তার বিশেষ বাহিনীর ক্যাডার নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা মাহবুব রহমান কে দিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি দখল বাণিজ্যের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহাবুর রহমানের কাছে এসব তথ্য জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকের মুখোমুখি হতে পারবেন না। উপরের নির্দেশ সাংবাদিকদের সামনে যাওয়া যাবে না। অন্য সাংবাদিক হলে দেখা করতাম কিন্তু আমি জানি আপনি নাকি জামাতের সাংবাদিক। সবাই কে ম্যানেজ করেই এখন পযন্ত টিকে আছি। ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে ভাই বলছে সম্মান করার জন্য আপনার বিকাশ নাম্বার টা রেখে যান। আরও অনেক সাংবাদিক ভাইয়েরা আসে তাদের কে ভাই সন্মান করে। ক্ষুদে বার্তায় এসব কথা বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনসহ তার বাহিনীকে গ্রেপ্তার করে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে ন্যায়বিচার কার্যকরের দাবি ভুক্তভোগীদের। চলবে.!


















