4:53 am, Saturday, 22 November 2025

নিয়ন্ত্রণহীন অপরাধ, অনিরাপত্তাহীনতার ঘেরা জালে সারাদেশ- এম রাসেল সরকার

Picsart 25 11 17 16 40 30 005

রাজনৈতিক দৃশ্যপটে যখন নির্বাচনের বৈধতা, সময় ও অংশগ্রহণ নিয়ে বিভক্তি তৈরি হয়, তখনই আন্তর্জাতিক মাফিয়া ও শীর্ষ অপরাধী নেটওয়ার্ক নিজেদের সুযোগ খুঁজে নেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু দুর্বলতা, নীতি নির্ধারণে অনিশ্চয়তা এবং প্রশাসনিক মনোযোগের ঘাটতি এই গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রমকে আরো সহজ করে দেয়। যখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আস্থা কমে তখন সমাজে সহিংসতা জন্ম নেয়।

বর্তমান সহিংসতার পেছনে রাজনৈতিক স্বার্থের পাশাপাশি রয়েছে অর্থনৈতিক স্বার্থের সংঘাতও। স্থানীয় পর্যায়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভূমি দখল ও অবৈধ বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গোষ্ঠীগত সংঘর্ষ ক্রমেই বাড়ছে। ২০২৫ সালের মে মাসে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআইবি) এক জরিপে উঠে এসেছে, রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা অপরাধচক্রগুলো বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকারও বেশি অবৈধ অর্থ লেনদেন করে, যার একটি বড় অংশ ব্যবহার হয় সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে।

সহিংসতার সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো -এর সামাজিক প্রভাব। মানুষ এখন অপরিচিত ব্যক্তিকে সন্দেহের চোখে দেখে, রাতে বের হতে ভয় পায়, এমনকি ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণে অনেকে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এর ফলে সমাজে পারস্পরিক আস্থা ও মানবিক বন্ধন ক্ষয়ে যাচ্ছে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, দীর্ঘস্থায়ী ভয়ের সংস্কৃতি একটি জাতির মানসিক স্বাস্থ্য, কর্মস্পৃহা ও উৎপাদনশীলতা ধ্বংস করে দেয়।

সাম্প্রদায়িক দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের সর্বস্থাণে দাবরিয়ে বেড়াচ্ছে আন্তর্জাতিক ডিজিটাল মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রিত একটি শক্তিশালী এজেন্ট। বিভিন্ন স্থানে পরিচয় দিচ্ছে তারা ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক এবং স্লোগান দিচ্ছে নতুন বাংলাদেশ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ। সূত্রে জানা যায় এই চক্রটি বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক সংগঠনের ছত্রছায়া তারা চলে না।

আন্তর্জাতিক মহল থেকে বর্তমানে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করে নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানা যায়। একটা মানুষকে সর্বস্বান্ত করতে না-কি একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস যথেষ্ট। বাংলাদেশের বর্তমান আইন শৃঙ্খলা বাহিনী না-কি তাদের পকেটে। বিএনপি, জামাত, এনসিপি সহ দেশের রাজনৈতিক কোন সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে তারা গণনা ধরে না। তাদের সঙ্গে বেশি কথা বললে নাকি জায়গা মত নিয়ে রেখে দেবে আর পরিবার কাঁদ ফাঁও। এমনই ভুক্তভোগীর মুখে শোনা যায়। প্রশ্ন হলো আসলে তারা কারা!?

সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক পেক্ষাপট অঙ্গনে লক্ষ করলে দেখা যায় দেশের শীর্ষ স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ঘষাঘষির ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে সময় পার করে যাচ্ছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হায়দা লুটে নিচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক চক্র। এই চক্রের আতঙ্কে আছে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক শীর্ষ স্থানীয় নেতাকর্মী সহ সমাজের অর্থশীল ব্যক্তিরাও। তাদের হাত থেকে রায় পাচ্ছে না সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা এবং পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের অফিসাররাও।

এই আন্তর্জাতিক চক্রটি ভুক্তভোগীদের গোপন গুমর ফাঁস করে দিবে বলে বিভিন্ন জনকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে দাবি করছে মোটা অংকের অর্থ। তাদের রয়েছে ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিলিয়ন মিলিয়ন ফলোআপ ফেসবুক-পেইজ। তাদের টার্গেটে রয়েছে সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অর্থশীল ব্যক্তিবর্গ, ব্যাংকার, সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা, শীর্ষ স্থানীয় রাজনৈতিক চিন্তাবিদ। এই চক্রের সাথে চুক্তি সম্পূর্ণ না করলে নাকি মান সম্মান প্লাস্টিক। প্রথমে তারা যাকে টার্গেট করবে ওই ব্যক্তির গোপনীয় দুর্বলতা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে এরপরে ফোন দিবে ওই ব্যক্তিকে দাবি করবে মোটা অংকের অর্থ এসব না মিললে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিলিয়ন মিলিয়ন ফলোআপ ফেসবুক পেজ থেকে শুরু করবে স্ট্যাটাস। অনেকে সম্মানের ভয়ে তাদের যুক্তি অনুযায়ী সমঝোতা করতে বাধ্য হয়।

এই আন্তর্জাতিক চক্রের কয়েকজন সদস্যের প্রসঙ্গে জানা যায় তারা গণঅভ্যুত্থানের পূর্বে ফ্যাসিস্ট সরকার হাসিনার গদিরক্ষায় মাঠ পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে থাকলেও মুখোশ বদলিয়ে গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তীতে নতুন বাংলাদেশ ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়ে তারা নিজেকে জুলাই যোদ্ধা বা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের প্রধান নায়ক জাহির করে বিভিন্ন কৌশলে পুলিশ প্রশাসন এবং মামলার ভয়-ভিত্তি দেখিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ যুবলীগ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ দাবি এবং দখল করে নিচ্ছে জমিজমা।

এসব মুখোশ বদলানো ব্যক্তিদের প্রসঙ্গে জানতে বিএনপি, জামাত, এনসিপি, গণধিকার পরিষদ সহ বেশ কয়েকটি দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের তেমন কিছু সঠিক তথ্য পাওয়া যায় নাই।

গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার ঘেরা জালে পড়ে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সারাদেশের জনসাধারণের কাছে ঘৃণার পাত্র হয়ে আছে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিগত দিনের অমানবিক নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড। বর্তমান প্রেক্ষাপটে হাসিনা বিরোধী কেউই সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি করলেই মনে করি এই একটা দেশ প্রেমে পাওয়া গেছে তিনি সাহসী ব্যক্তি। কিন্তু আমরা তার পূর্বের আমলনামা যাচাই বাছাই করতে চাইনা। আর এই মুখোশ পাল্টানো ব্যক্তিগুলো বিভিন্ন কৌশলে মানুষের মন জয় করে চালিয়ে যায় তার অপকর্মের মূল কার্যক্রম। আর জন্ম নেয় সমাজে নির্ধারিত একটি অপরাধচক্র। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও শুরু হয়ে যায় আন্দোলন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এবং বাড়তে থাকে নতুন নতুন অপরাধ।

মূলত সচেতনতা বিষয় হল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সোশ্যাল মিডিয়ায় যেকোনো তথ্য যাচাই-বাছাই করে শেয়ার অথবা বিশ্বাস করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যদি কখনো দেখেন যে মিলিয়ন মিলিয়ন ফলোআপ আন্তর্জাতিকভাবে কোন ফেসবুক-পেইজ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে তাহলে ওই ফেসবুক পেইজ এর যেকোনো তথ্য অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে শেয়ার দিবেন। কারণ ফেসবুকে একটা ভুয়া তথ্য পোস্ট করা এবং সেই পোস্ট শেয়ার করা একই অপরাধ।

সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সোশ্যাল মিডিয়াতে আন্তর্জাতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত মিলিয়ন মিলিয়ন ফলোআপ করা কিছু ফেসবুক-পেজ নিজেদেরকে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ রাজনৈতিক চিন্তাবিদ সহ বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের একটি প্রতারক চক্রের এজেন্ট বাংলাদেশের বিভিন্ন সুনাম ব্যক্তিবর্গদের গোপনীয় তথ্য সংগ্রহ করে ব্যাংকিং ও ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার কোটি টাকা। কেউ তাদের চুক্তি অনুযায়ী রাজি না হলে ওই ভদ্রলোকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ভুয়া তথ্য দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি অপপ্রচার চালিয়ে যায়।

সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায় বিদেশ থেকে নিয়ন্ত্রিত মিলিয়ন মিলিয়ন ফেসবুক পেজ ফলোআপ থেকে দেশের সুনান্দান্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণহীন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দেশের উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক সেক্টরগুলো এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে আওয়ামী ট্যাগ লাগিয়ে মোটা অংকের অর্থ দাবি করে বলে সূত্রে জানা যায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সুরক্ষা পুলিশের পাশাপাশি আপনিও সচেতন হোন। এসব আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের ফেসবুক পেজ এড়িয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের উস্কানি বিভিন্ন রূপে আসতেও দেখা যেতে পারে। বিদেশ থেকে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া খবর ও ভুল তথ্য ছড়ানোর মধ্যমে সমাজে বিভেদ বা উত্তেজনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তারা পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য প্রচার করে থাকে। যেমন কোন এক দল থেকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ধর্ম বা সম্প্রদায়ক লক্ষ্য করে ঘৃণা বা বিদ্বেষ ছড়িয়ে যাচ্ছে। এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসছিল করার লক্ষ্যে একতরফা ও পক্ষপাতমূলক মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে তরুণদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করছেন।

এতে সারাদেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণহীনতার মাত্রা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব আন্তর্জাতিক উস্কানি দাতাদের ফাঁদে জড়িয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণহীনতায় তরুণ সমাজ। এসব আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের খপ্পরে পড়ে নির্ধারিত সময়ের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সারাদেশ অনিরাপত্তাহীন পরিণত হয়ে পড়েছে।

সাম্প্রদায়িক সময়ে সারাদেশের জনসাধারণের অনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। লক্ষ্যে অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি, চুরি, ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যেই ঘটে চলেছে। পাশাপাশি চলছে টার্গেট কিলিং, দখল আর চাঁদাবাজি। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এছাড়াও একের পর এক মব সৃষ্টির ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে সমাজের বিভিন্ন স্তরে। সঙ্গে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি ও ডাকাতির মতো ঘটনায় রীতিমতো ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন মানুষ। খোদ পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে দিনে গড়ে ১০/১৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটতে দেখা যাচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষের অভিযোগ, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। পুলিশের তৎপরতা না থাকাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে পথেঘাটে, পাড়া-মহল্লায় প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড। ছিনতাইয়ের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ভাই বাহিনী। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে শুধু নিশি রাতে নয়, দিনের আলোতেই মানুষকে কুপিয়ে জখম করে সর্বস্ব নিয়ে যাচ্ছে।

সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সাধারণ মানুষকে বারবার আশ্বস্ত করা হলেও রাজধানী সহ সারাদেশের পরিস্থিতি তেমন একটা ভালো যাচ্ছে না। প্রশ্ন উঠছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের আন্তরিকতা নিয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সঙ্গে জড়িত সরকারের বিভাগগুলো সমন্বিতভাবে কাজ না করার কারণেই এমনটা ঘটছ! সঙ্গে রয়েছে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র।

বিশেষ করে দেশে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও জননিরাপত্তা বিধানে এই সরকার খুব একটা সাফল্য দেখাতে পারেনি। এখনো এই সরকারের পেছনে জনগণের একটি বড় অংশের আস্থা থাকলেও নিস্তব্ধতার চাপায় পড়ে আছে সাধারণ মানুষ।

এই সরকারের নৈতিক শক্তি ২০২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থান সাধারণ কোনো অভ্যুত্থান নয়, প্রায় ২ হাজার পুরুষ, নারী, যুবক, কিশোর-কিশোরী ও শিশু আত্মাহুতি দিয়েছে। এদেরকে নির্বিচারে হত্যা করতে শেখ হাসিনার বর্বর সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাত কাঁপেনি। যারা আত্মাহুতি দিয়েছেন, তারা কেউ মৃত্যুভয়ে ভীত ছিলেন না। পুলিশের এক কর্মকর্তাই আওয়ামী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছে, স্যার একটা মারলে আরেকটা এগিয়ে আসে। মানুষের মনে যখন এমন সাহস জাগ্রত হয়, তখন সে হয়ে ওঠে মৃত্যুঞ্জয়ী।

ফ্যাসিস্ট খুনিরা তাদের হত্যাকাণ্ড জায়েজ করতে অদ্ভুত এক গল্প সাজানোর নাটকের সংলাপ বহুপাক্ষিকতার চেষ্টা চালাচ্ছে। সেই গল্প অনুযায়ী আওয়ামী দোসরা প্রচার করেছে, বিক্ষোভকারীদের এক ধরনের নেশাসংবলিত পানি পান করিয়েছে আন্দোলনের হোতারা। ফলে নেশাগ্রস্ত হয়ে বিক্ষোভকারীরা বুলেট মোকাবিলা করতেও পিছপা হয়নি। আওয়ামী খুনিরা আরও বলতে চায়, একটি মেটিকুলাস প্ল্যানের মধ্য দিয়ে অভ্যুত্থানটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। জনগণের আপসহীন অভ্যুত্থানের মুখে পরাজিত হয়ে এমন আষাঢ়ে গল্প ফাদাই আওয়ামী খুনিদের আত্মপ্রবঞ্চনার শেষ ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমানে।

সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে এমন এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা সত্ত্বেও সারা দেশে সহিংসতার আশঙ্কাজনক বিস্তার দেখা যাচ্ছে। রাজধানী থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর ও সিলেট পর্যন্ত কোথাও শান্তির নিশ্চয়তা নেই। প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতায় অগ্নিসংযোগ, বোমা বিস্ফোরণ, রাস্তায় গুলিবর্ষণ কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলার খবর যেন এক বিভীষিকাময় বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতি জনমনে এক গভীর আতঙ্ক সৃষ্টি করছে, যেন দেশটি অদৃশ্য এক শক্তির দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশের ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রায় ৮১২টি মামলা দায়ের হয়েছে। শুধুমাত্র ঢাকাতেই গত ছয় মাসে ৯৭টি বোমা বিস্ফোরণ ও ৪৩টি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এতে ১২৬ জন নিহত ও প্রায় ৭০০ জন আহত হয়েছেন। এসব পরিসংখ্যান শুধু কাগজে-কলমে সংখ্যা নয়, এর পেছনে রয়েছে শত শত পরিবারের আর্তনাদ, হারানো প্রিয়জনের শোক এবং নিরাপত্তাহীনতার গাঢ় ছায়া।

রাজধানীর ঢাকা শহর বর্তমানে এক কঠোর নিরাপত্তা জালে ঘেরা। প্রতিটি প্রবেশপথে চেকপোস্ট, সিসিটিভি মনিটরিং, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হলেও হামলা ঠেকানো যাচ্ছে না। জনাকীর্ণ এলাকায় কিংবা যানজটে আটকে থাকা গাড়ির ভেতর বোমা নিক্ষেপের ঘটনাগুলো প্রমাণ করছে দুর্বৃত্তরা রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বল জায়গাগুলো তাদের গভীর পর্যবেক্ষণে রয়েছে। সম্প্রতি মতিঝিল, ফার্মগেট ও শাহবাগ এলাকায় ঘটে যাওয়া হামলা শহরের সাধারণ নাগরিকদের আতঙ্কে ফেলে দিয়েছে।

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সাম্প্রতিক হামলার ধরন এ ঐতিহ্যকে নষ্ট করার এক গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়। ঢাকায় সেন্ট জোসেফ ও সেন্ট মেরি ক্যাথেড্রালের মতো গির্জায় হামলা, বরিশালে একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগ এবং কুমিল্লায় একটি আহমদিয়া উপাসনালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এসব ঘটনা শুধু ধর্মীয় ঘৃণার প্রকাশ নয়, বরং জাতিগত ঐক্য ও স্থিতিশীলতা ভাঙার এক পরিকল্পিত অপচেষ্টা চালাচ্ছে সংশ্লিষ্ট ফ্যাসিস্ট শক্তি।

সহিংসতা এখন শুধু রাজধানিতেই সিমাবদ্ধ নেই। চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় থেকে শুরু করে বগুড়ার সাতমাথা, সিলেটের আম্বরখানা, খুলনার রূপসা এবং বরিশালের নগরকেন্দ্র পর্যন্ত সংঘর্ষের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক জেলায় প্রশাসনিক ভবন ও সরকারি যানবাহন লক্ষ্য করে হামলা চালানো হচ্ছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বিআইডিএস-এর ২০২৫ সালের এপ্রিলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০২৪ সালের তুলনায় এ বছর রাজনৈতিক সহিংসতা ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

যুব সমাজের একটি বড় অংশ হতাশ ও দ্বিধাগ্রস্ত। বেকারত্ব, দারিদ্র্য, সামাজিক বৈষম্য ও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হয়ে তারা বিষাদ ও বিষণ্নতায় ভুগতে দেখা যাচ্ছে তাদের। এই হতাশা থেকে কিছু তরুণ গ্যাং কালচারে যুক্ত হওয়াসহ নানান অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে ফেলছে নিজে দেরকে। ২০২৫ সালের জুনে সিটিটিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গত দুই বছরে গ্রেফতার হওয়া নতুন চরমপন্থিদের ৬৫ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এটি ভয়াবহ উদ্বেগের যা আমাদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক।

সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের মামলাগুলোর বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা এবং মামলার জট অপরাধ দমনে একটি বড় বাধা। অপরাধ প্রমাণিত হতে বছরের পর বছর লেগে গেলে অপরাধীদের মনে আইনের প্রতি ভয় কমে যায়। ২০২৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালগুলোতে কয়েক হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হলে বিশেষ ট্রাইব্যুনালগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি, বিচারক ও প্রসিকিউটরদের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান এবং ফরেনসিক রিপোর্টিং প্রক্রিয়াকে দ্রুত করা অপরিহার্য।

অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সমাজে সুযোগের অভাব সহিংসতা ও অস্থিরতা সৃষ্টির মূল কারণ। ধনী-দরিদ্রের ক্রমবর্ধমান ব্যবধান, ন্যায্য মজুরির অভাব এবং সম্পদ বণ্টনে অসমতা যুব সমাজকে বিক্ষুব্ধ করে তুলছে। এই ক্ষোভকে উগ্রবাদী আন্তর্জাতিক মাফিয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো সহজে তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডায় ব্যবহার করছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় সরকারের উচিত হবে বৈষম্য হ্রাস, কর্মসংস্থানের সমসুযোগ সৃষ্টি করা এবং সুবিধাবঞ্চিত এলাকাগুলোতে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করা।

সরকারি সংস্থাগুলো একের পর এক অভিযান চালালেও স্থায়ী সমাধান দেখা যাচ্ছে না। পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো শত শত সন্দেহভাজনকে আটক করেছে, তবুও নতুন নতুন গোষ্ঠী আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, শুধুমাত্র শক্তি প্রয়োগে নয়, বরং গোড়ার সামাজিক কারণ চিহ্নিত করে তার সমাধান না করলে সহিংসতার মূলোৎপাটন সম্ভব নয়।

সহিংসতা মোকাবিলার নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণে রয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধুমাত্র আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই সহিংসতা দমন করা সম্ভব। কপ-৩০ বা অন্যান্য বৈশ্বিক মঞ্চে এ বিষয়গুলো দেশের ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলছে। বাহিনীর অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা ও নিরীক্ষা প্রক্রিয়া জোরদার করলে এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।

সহিংসতার পাশাপাশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে তথ্যযুদ্ধ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব, ভুয়া ভিডিও, ঘৃণামূলক পোস্ট মুহূর্তেই মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। একটি ছোট ঘটনা বড় রূপ নিচ্ছে, যা বাস্তব পরিস্থিতিকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলছে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক বছরে অনলাইনে প্রচারিত ভুয়া সংবাদ ও বিভ্রান্তিকর পোস্টের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪১ শতাংশ।

আধুনিক সহিংসতা প্রচারের প্রধান মাধ্যম হলো সাইবার স্পেস। আন্তর্জাতিক একটি চক্র এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপস ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে সদস্য সংগ্রহ, পরিকল্পনা তৈরি ও ঘৃণামূলক কনটেন্ট ছড়ায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সাইবার ফরেনসিক সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব থাকায় এই ভার্চুয়াল জগৎ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হচ্ছে। সরকারের উচিত হবে ডিজিটাল নজরদারির সক্ষমতা বাড়ানো, কিন্তু একই সঙ্গে নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার সুরক্ষিত রাখা। সাইবার স্পেসকে নিরাপদ না করতে পারলে সহিংসতা নির্মূল করা যাবে না।

শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতা, সহনশীলতা এবং বহু-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের চর্চার অভাবও সহিংসতা বাড়াতে সাহায্য করছে। ধর্মীয় বা রাজনৈতিক ভিন্নমতের প্রতি অসহনশীলতা যুব সমাজের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে পুনর্গঠন করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সমালোচনামূলক চিন্তা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি ও সহনশীলতার সংস্কৃতি তৈরি করাই পারে চরমপন্থাকে প্রতিহত করতে।

দেশে যখন রাজনৈতিক সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতা বেড়ে যায়, তখন তার প্রভাব আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পড়ে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দ্বিধাগ্রস্ত হন, পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে। ২০২৫ সালের বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সহিংসতার কারণে দেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রবাহ গত বছরের তুলনায় ১৮ শতাংশ কমেছে। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এক বিপজ্জনক ইশারা।

সহিংসতার ঘটনায় ভুক্তভোগী এবং প্রত্যক্ষদর্শীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে অপরাধীরা বারবার পার পেয়ে যায়। বাংলাদেশে সাক্ষী বা ভুক্তভোগী প্রায়শই অপরাধী বা তাদের প্রভাবশালীদের পক্ষ থেকে হুমকির সম্মুখীন হন, ফলে তারা আদালতে সাক্ষ্য দিতে সাহস পান না। এর ফলস্বরূপ, মামলার নিষ্পত্তির হার কমে আসে এবং অপরাধীরা উৎসাহিত হয়। সরকারকে অবশ্যই সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও তা কার্যকর করতে হবে এবং ভুক্তভোগীদের জন্য যথাযথ পুনর্বাসন ও মানসিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে।

বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক আস্থা, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করা। শুধু নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোরতা নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরে শান্তি ও সহনশীলতার সংস্কৃতি গড়ে তোলাই একমাত্র উপায়। শিক্ষা, গণমাধ্যম ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলোকে সহিংসতাবিরোধী সচেতনতায় ভূমিকা রাখতে হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে তরুণদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাড়াতে হবে, যাতে তারা বিভ্রান্তির পথে না যায়।

বাংলাদেশের মানুষ সহিংসতা নয়, শান্তি চায়। তারা চায় নিরাপদ রাস্তা, নিশ্চিত বিচার, এবং এমন এক সমাজ যেখানে ভিন্নমত থাকলেও সহনশীলতা বজায় থাকে। ইতিহাস সাক্ষী যে, এই জাতি বারবার সংকট থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে, স্বাধীনতা অর্জন করেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ জয়ে সক্ষমতা দেখিয়েছে। তাই এখন সময় এসেছে সহিংসতার রাজনীতি পরিহার করে ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তি ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার। জাতির এ সংকটময় মুহূর্তে একমাত্র গণতন্ত্র, মানবতা ও ন্যায়বোধই পারে বাংলাদেশকে আবারো আলোর পথে ফিরিয়ে নিতে।

বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিদেশ থেকে যারা উস্কানি দিচ্ছে তাদের থেকে সতর্ক থাকা এবং তাদের এড়িয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদের উস্কানিতে প্রভাবিত হয়ে দেশের তরুণ প্রজন্মের মানুষ বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। যা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য এক বিশাল হুমকিস্বরূপ।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, অপরাধীদের দৌরাত্ম্য যতটা বাড়ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা এর চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। যে কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। তিনি বলেন, কাগজে-কলমে পুলিশি তৎপরতা থাকলেও মূলত সক্রিয় নয় পুলিশ। এখনো আগের মতোই চলছে পুলিশি তৎপরতা। ঘুস বাণিজ্য, মামলায় হয়রানিসহ নানা অপতৎপরতার অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, পুলিশের দুর্বলতা কোথায় তা পুলিশকেই চিহ্নিত করে প্রকাশ করতে হবে। তারা যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারে, তাও জনগণকে জানিয়ে দিতে হবে।

লেখক :
এম রাসেল সরকার
সিনিয়র সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।
ই-মেইল: Sheikhmdraselbd@gmail.com

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 10:43:17 am, Monday, 17 November 2025
116 Time View

নিয়ন্ত্রণহীন অপরাধ, অনিরাপত্তাহীনতার ঘেরা জালে সারাদেশ- এম রাসেল সরকার

Update Time : 10:43:17 am, Monday, 17 November 2025

রাজনৈতিক দৃশ্যপটে যখন নির্বাচনের বৈধতা, সময় ও অংশগ্রহণ নিয়ে বিভক্তি তৈরি হয়, তখনই আন্তর্জাতিক মাফিয়া ও শীর্ষ অপরাধী নেটওয়ার্ক নিজেদের সুযোগ খুঁজে নেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু দুর্বলতা, নীতি নির্ধারণে অনিশ্চয়তা এবং প্রশাসনিক মনোযোগের ঘাটতি এই গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রমকে আরো সহজ করে দেয়। যখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আস্থা কমে তখন সমাজে সহিংসতা জন্ম নেয়।

বর্তমান সহিংসতার পেছনে রাজনৈতিক স্বার্থের পাশাপাশি রয়েছে অর্থনৈতিক স্বার্থের সংঘাতও। স্থানীয় পর্যায়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভূমি দখল ও অবৈধ বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গোষ্ঠীগত সংঘর্ষ ক্রমেই বাড়ছে। ২০২৫ সালের মে মাসে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআইবি) এক জরিপে উঠে এসেছে, রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা অপরাধচক্রগুলো বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকারও বেশি অবৈধ অর্থ লেনদেন করে, যার একটি বড় অংশ ব্যবহার হয় সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে।

সহিংসতার সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো -এর সামাজিক প্রভাব। মানুষ এখন অপরিচিত ব্যক্তিকে সন্দেহের চোখে দেখে, রাতে বের হতে ভয় পায়, এমনকি ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণে অনেকে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এর ফলে সমাজে পারস্পরিক আস্থা ও মানবিক বন্ধন ক্ষয়ে যাচ্ছে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, দীর্ঘস্থায়ী ভয়ের সংস্কৃতি একটি জাতির মানসিক স্বাস্থ্য, কর্মস্পৃহা ও উৎপাদনশীলতা ধ্বংস করে দেয়।

সাম্প্রদায়িক দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের সর্বস্থাণে দাবরিয়ে বেড়াচ্ছে আন্তর্জাতিক ডিজিটাল মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রিত একটি শক্তিশালী এজেন্ট। বিভিন্ন স্থানে পরিচয় দিচ্ছে তারা ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক এবং স্লোগান দিচ্ছে নতুন বাংলাদেশ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ। সূত্রে জানা যায় এই চক্রটি বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক সংগঠনের ছত্রছায়া তারা চলে না।

আন্তর্জাতিক মহল থেকে বর্তমানে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করে নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানা যায়। একটা মানুষকে সর্বস্বান্ত করতে না-কি একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস যথেষ্ট। বাংলাদেশের বর্তমান আইন শৃঙ্খলা বাহিনী না-কি তাদের পকেটে। বিএনপি, জামাত, এনসিপি সহ দেশের রাজনৈতিক কোন সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে তারা গণনা ধরে না। তাদের সঙ্গে বেশি কথা বললে নাকি জায়গা মত নিয়ে রেখে দেবে আর পরিবার কাঁদ ফাঁও। এমনই ভুক্তভোগীর মুখে শোনা যায়। প্রশ্ন হলো আসলে তারা কারা!?

সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক পেক্ষাপট অঙ্গনে লক্ষ করলে দেখা যায় দেশের শীর্ষ স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ঘষাঘষির ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে সময় পার করে যাচ্ছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হায়দা লুটে নিচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক চক্র। এই চক্রের আতঙ্কে আছে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক শীর্ষ স্থানীয় নেতাকর্মী সহ সমাজের অর্থশীল ব্যক্তিরাও। তাদের হাত থেকে রায় পাচ্ছে না সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা এবং পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের অফিসাররাও।

এই আন্তর্জাতিক চক্রটি ভুক্তভোগীদের গোপন গুমর ফাঁস করে দিবে বলে বিভিন্ন জনকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে দাবি করছে মোটা অংকের অর্থ। তাদের রয়েছে ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিলিয়ন মিলিয়ন ফলোআপ ফেসবুক-পেইজ। তাদের টার্গেটে রয়েছে সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অর্থশীল ব্যক্তিবর্গ, ব্যাংকার, সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা, শীর্ষ স্থানীয় রাজনৈতিক চিন্তাবিদ। এই চক্রের সাথে চুক্তি সম্পূর্ণ না করলে নাকি মান সম্মান প্লাস্টিক। প্রথমে তারা যাকে টার্গেট করবে ওই ব্যক্তির গোপনীয় দুর্বলতা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে এরপরে ফোন দিবে ওই ব্যক্তিকে দাবি করবে মোটা অংকের অর্থ এসব না মিললে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিলিয়ন মিলিয়ন ফলোআপ ফেসবুক পেজ থেকে শুরু করবে স্ট্যাটাস। অনেকে সম্মানের ভয়ে তাদের যুক্তি অনুযায়ী সমঝোতা করতে বাধ্য হয়।

এই আন্তর্জাতিক চক্রের কয়েকজন সদস্যের প্রসঙ্গে জানা যায় তারা গণঅভ্যুত্থানের পূর্বে ফ্যাসিস্ট সরকার হাসিনার গদিরক্ষায় মাঠ পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে থাকলেও মুখোশ বদলিয়ে গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তীতে নতুন বাংলাদেশ ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়ে তারা নিজেকে জুলাই যোদ্ধা বা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের প্রধান নায়ক জাহির করে বিভিন্ন কৌশলে পুলিশ প্রশাসন এবং মামলার ভয়-ভিত্তি দেখিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ যুবলীগ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ দাবি এবং দখল করে নিচ্ছে জমিজমা।

এসব মুখোশ বদলানো ব্যক্তিদের প্রসঙ্গে জানতে বিএনপি, জামাত, এনসিপি, গণধিকার পরিষদ সহ বেশ কয়েকটি দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের তেমন কিছু সঠিক তথ্য পাওয়া যায় নাই।

গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার ঘেরা জালে পড়ে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সারাদেশের জনসাধারণের কাছে ঘৃণার পাত্র হয়ে আছে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিগত দিনের অমানবিক নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড। বর্তমান প্রেক্ষাপটে হাসিনা বিরোধী কেউই সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি করলেই মনে করি এই একটা দেশ প্রেমে পাওয়া গেছে তিনি সাহসী ব্যক্তি। কিন্তু আমরা তার পূর্বের আমলনামা যাচাই বাছাই করতে চাইনা। আর এই মুখোশ পাল্টানো ব্যক্তিগুলো বিভিন্ন কৌশলে মানুষের মন জয় করে চালিয়ে যায় তার অপকর্মের মূল কার্যক্রম। আর জন্ম নেয় সমাজে নির্ধারিত একটি অপরাধচক্র। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও শুরু হয়ে যায় আন্দোলন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এবং বাড়তে থাকে নতুন নতুন অপরাধ।

মূলত সচেতনতা বিষয় হল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সোশ্যাল মিডিয়ায় যেকোনো তথ্য যাচাই-বাছাই করে শেয়ার অথবা বিশ্বাস করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যদি কখনো দেখেন যে মিলিয়ন মিলিয়ন ফলোআপ আন্তর্জাতিকভাবে কোন ফেসবুক-পেইজ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে তাহলে ওই ফেসবুক পেইজ এর যেকোনো তথ্য অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে শেয়ার দিবেন। কারণ ফেসবুকে একটা ভুয়া তথ্য পোস্ট করা এবং সেই পোস্ট শেয়ার করা একই অপরাধ।

সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সোশ্যাল মিডিয়াতে আন্তর্জাতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত মিলিয়ন মিলিয়ন ফলোআপ করা কিছু ফেসবুক-পেজ নিজেদেরকে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ রাজনৈতিক চিন্তাবিদ সহ বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের একটি প্রতারক চক্রের এজেন্ট বাংলাদেশের বিভিন্ন সুনাম ব্যক্তিবর্গদের গোপনীয় তথ্য সংগ্রহ করে ব্যাংকিং ও ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার কোটি টাকা। কেউ তাদের চুক্তি অনুযায়ী রাজি না হলে ওই ভদ্রলোকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ভুয়া তথ্য দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি অপপ্রচার চালিয়ে যায়।

সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায় বিদেশ থেকে নিয়ন্ত্রিত মিলিয়ন মিলিয়ন ফেসবুক পেজ ফলোআপ থেকে দেশের সুনান্দান্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণহীন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দেশের উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক সেক্টরগুলো এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে আওয়ামী ট্যাগ লাগিয়ে মোটা অংকের অর্থ দাবি করে বলে সূত্রে জানা যায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সুরক্ষা পুলিশের পাশাপাশি আপনিও সচেতন হোন। এসব আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের ফেসবুক পেজ এড়িয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের উস্কানি বিভিন্ন রূপে আসতেও দেখা যেতে পারে। বিদেশ থেকে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া খবর ও ভুল তথ্য ছড়ানোর মধ্যমে সমাজে বিভেদ বা উত্তেজনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তারা পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য প্রচার করে থাকে। যেমন কোন এক দল থেকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ধর্ম বা সম্প্রদায়ক লক্ষ্য করে ঘৃণা বা বিদ্বেষ ছড়িয়ে যাচ্ছে। এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসছিল করার লক্ষ্যে একতরফা ও পক্ষপাতমূলক মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে তরুণদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করছেন।

এতে সারাদেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণহীনতার মাত্রা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব আন্তর্জাতিক উস্কানি দাতাদের ফাঁদে জড়িয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণহীনতায় তরুণ সমাজ। এসব আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের খপ্পরে পড়ে নির্ধারিত সময়ের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সারাদেশ অনিরাপত্তাহীন পরিণত হয়ে পড়েছে।

সাম্প্রদায়িক সময়ে সারাদেশের জনসাধারণের অনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। লক্ষ্যে অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি, চুরি, ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যেই ঘটে চলেছে। পাশাপাশি চলছে টার্গেট কিলিং, দখল আর চাঁদাবাজি। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এছাড়াও একের পর এক মব সৃষ্টির ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে সমাজের বিভিন্ন স্তরে। সঙ্গে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি ও ডাকাতির মতো ঘটনায় রীতিমতো ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন মানুষ। খোদ পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে দিনে গড়ে ১০/১৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটতে দেখা যাচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষের অভিযোগ, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। পুলিশের তৎপরতা না থাকাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে পথেঘাটে, পাড়া-মহল্লায় প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড। ছিনতাইয়ের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ভাই বাহিনী। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে শুধু নিশি রাতে নয়, দিনের আলোতেই মানুষকে কুপিয়ে জখম করে সর্বস্ব নিয়ে যাচ্ছে।

সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সাধারণ মানুষকে বারবার আশ্বস্ত করা হলেও রাজধানী সহ সারাদেশের পরিস্থিতি তেমন একটা ভালো যাচ্ছে না। প্রশ্ন উঠছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের আন্তরিকতা নিয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সঙ্গে জড়িত সরকারের বিভাগগুলো সমন্বিতভাবে কাজ না করার কারণেই এমনটা ঘটছ! সঙ্গে রয়েছে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র।

বিশেষ করে দেশে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও জননিরাপত্তা বিধানে এই সরকার খুব একটা সাফল্য দেখাতে পারেনি। এখনো এই সরকারের পেছনে জনগণের একটি বড় অংশের আস্থা থাকলেও নিস্তব্ধতার চাপায় পড়ে আছে সাধারণ মানুষ।

এই সরকারের নৈতিক শক্তি ২০২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থান সাধারণ কোনো অভ্যুত্থান নয়, প্রায় ২ হাজার পুরুষ, নারী, যুবক, কিশোর-কিশোরী ও শিশু আত্মাহুতি দিয়েছে। এদেরকে নির্বিচারে হত্যা করতে শেখ হাসিনার বর্বর সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাত কাঁপেনি। যারা আত্মাহুতি দিয়েছেন, তারা কেউ মৃত্যুভয়ে ভীত ছিলেন না। পুলিশের এক কর্মকর্তাই আওয়ামী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছে, স্যার একটা মারলে আরেকটা এগিয়ে আসে। মানুষের মনে যখন এমন সাহস জাগ্রত হয়, তখন সে হয়ে ওঠে মৃত্যুঞ্জয়ী।

ফ্যাসিস্ট খুনিরা তাদের হত্যাকাণ্ড জায়েজ করতে অদ্ভুত এক গল্প সাজানোর নাটকের সংলাপ বহুপাক্ষিকতার চেষ্টা চালাচ্ছে। সেই গল্প অনুযায়ী আওয়ামী দোসরা প্রচার করেছে, বিক্ষোভকারীদের এক ধরনের নেশাসংবলিত পানি পান করিয়েছে আন্দোলনের হোতারা। ফলে নেশাগ্রস্ত হয়ে বিক্ষোভকারীরা বুলেট মোকাবিলা করতেও পিছপা হয়নি। আওয়ামী খুনিরা আরও বলতে চায়, একটি মেটিকুলাস প্ল্যানের মধ্য দিয়ে অভ্যুত্থানটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। জনগণের আপসহীন অভ্যুত্থানের মুখে পরাজিত হয়ে এমন আষাঢ়ে গল্প ফাদাই আওয়ামী খুনিদের আত্মপ্রবঞ্চনার শেষ ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমানে।

সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে এমন এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা সত্ত্বেও সারা দেশে সহিংসতার আশঙ্কাজনক বিস্তার দেখা যাচ্ছে। রাজধানী থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর ও সিলেট পর্যন্ত কোথাও শান্তির নিশ্চয়তা নেই। প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতায় অগ্নিসংযোগ, বোমা বিস্ফোরণ, রাস্তায় গুলিবর্ষণ কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলার খবর যেন এক বিভীষিকাময় বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতি জনমনে এক গভীর আতঙ্ক সৃষ্টি করছে, যেন দেশটি অদৃশ্য এক শক্তির দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশের ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রায় ৮১২টি মামলা দায়ের হয়েছে। শুধুমাত্র ঢাকাতেই গত ছয় মাসে ৯৭টি বোমা বিস্ফোরণ ও ৪৩টি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এতে ১২৬ জন নিহত ও প্রায় ৭০০ জন আহত হয়েছেন। এসব পরিসংখ্যান শুধু কাগজে-কলমে সংখ্যা নয়, এর পেছনে রয়েছে শত শত পরিবারের আর্তনাদ, হারানো প্রিয়জনের শোক এবং নিরাপত্তাহীনতার গাঢ় ছায়া।

রাজধানীর ঢাকা শহর বর্তমানে এক কঠোর নিরাপত্তা জালে ঘেরা। প্রতিটি প্রবেশপথে চেকপোস্ট, সিসিটিভি মনিটরিং, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হলেও হামলা ঠেকানো যাচ্ছে না। জনাকীর্ণ এলাকায় কিংবা যানজটে আটকে থাকা গাড়ির ভেতর বোমা নিক্ষেপের ঘটনাগুলো প্রমাণ করছে দুর্বৃত্তরা রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বল জায়গাগুলো তাদের গভীর পর্যবেক্ষণে রয়েছে। সম্প্রতি মতিঝিল, ফার্মগেট ও শাহবাগ এলাকায় ঘটে যাওয়া হামলা শহরের সাধারণ নাগরিকদের আতঙ্কে ফেলে দিয়েছে।

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সাম্প্রতিক হামলার ধরন এ ঐতিহ্যকে নষ্ট করার এক গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়। ঢাকায় সেন্ট জোসেফ ও সেন্ট মেরি ক্যাথেড্রালের মতো গির্জায় হামলা, বরিশালে একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগ এবং কুমিল্লায় একটি আহমদিয়া উপাসনালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এসব ঘটনা শুধু ধর্মীয় ঘৃণার প্রকাশ নয়, বরং জাতিগত ঐক্য ও স্থিতিশীলতা ভাঙার এক পরিকল্পিত অপচেষ্টা চালাচ্ছে সংশ্লিষ্ট ফ্যাসিস্ট শক্তি।

সহিংসতা এখন শুধু রাজধানিতেই সিমাবদ্ধ নেই। চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় থেকে শুরু করে বগুড়ার সাতমাথা, সিলেটের আম্বরখানা, খুলনার রূপসা এবং বরিশালের নগরকেন্দ্র পর্যন্ত সংঘর্ষের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক জেলায় প্রশাসনিক ভবন ও সরকারি যানবাহন লক্ষ্য করে হামলা চালানো হচ্ছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বিআইডিএস-এর ২০২৫ সালের এপ্রিলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০২৪ সালের তুলনায় এ বছর রাজনৈতিক সহিংসতা ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

যুব সমাজের একটি বড় অংশ হতাশ ও দ্বিধাগ্রস্ত। বেকারত্ব, দারিদ্র্য, সামাজিক বৈষম্য ও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হয়ে তারা বিষাদ ও বিষণ্নতায় ভুগতে দেখা যাচ্ছে তাদের। এই হতাশা থেকে কিছু তরুণ গ্যাং কালচারে যুক্ত হওয়াসহ নানান অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে ফেলছে নিজে দেরকে। ২০২৫ সালের জুনে সিটিটিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গত দুই বছরে গ্রেফতার হওয়া নতুন চরমপন্থিদের ৬৫ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এটি ভয়াবহ উদ্বেগের যা আমাদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক।

সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের মামলাগুলোর বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা এবং মামলার জট অপরাধ দমনে একটি বড় বাধা। অপরাধ প্রমাণিত হতে বছরের পর বছর লেগে গেলে অপরাধীদের মনে আইনের প্রতি ভয় কমে যায়। ২০২৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালগুলোতে কয়েক হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হলে বিশেষ ট্রাইব্যুনালগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি, বিচারক ও প্রসিকিউটরদের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান এবং ফরেনসিক রিপোর্টিং প্রক্রিয়াকে দ্রুত করা অপরিহার্য।

অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সমাজে সুযোগের অভাব সহিংসতা ও অস্থিরতা সৃষ্টির মূল কারণ। ধনী-দরিদ্রের ক্রমবর্ধমান ব্যবধান, ন্যায্য মজুরির অভাব এবং সম্পদ বণ্টনে অসমতা যুব সমাজকে বিক্ষুব্ধ করে তুলছে। এই ক্ষোভকে উগ্রবাদী আন্তর্জাতিক মাফিয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো সহজে তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডায় ব্যবহার করছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় সরকারের উচিত হবে বৈষম্য হ্রাস, কর্মসংস্থানের সমসুযোগ সৃষ্টি করা এবং সুবিধাবঞ্চিত এলাকাগুলোতে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করা।

সরকারি সংস্থাগুলো একের পর এক অভিযান চালালেও স্থায়ী সমাধান দেখা যাচ্ছে না। পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো শত শত সন্দেহভাজনকে আটক করেছে, তবুও নতুন নতুন গোষ্ঠী আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, শুধুমাত্র শক্তি প্রয়োগে নয়, বরং গোড়ার সামাজিক কারণ চিহ্নিত করে তার সমাধান না করলে সহিংসতার মূলোৎপাটন সম্ভব নয়।

সহিংসতা মোকাবিলার নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণে রয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধুমাত্র আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই সহিংসতা দমন করা সম্ভব। কপ-৩০ বা অন্যান্য বৈশ্বিক মঞ্চে এ বিষয়গুলো দেশের ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলছে। বাহিনীর অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা ও নিরীক্ষা প্রক্রিয়া জোরদার করলে এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।

সহিংসতার পাশাপাশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে তথ্যযুদ্ধ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব, ভুয়া ভিডিও, ঘৃণামূলক পোস্ট মুহূর্তেই মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। একটি ছোট ঘটনা বড় রূপ নিচ্ছে, যা বাস্তব পরিস্থিতিকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলছে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক বছরে অনলাইনে প্রচারিত ভুয়া সংবাদ ও বিভ্রান্তিকর পোস্টের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪১ শতাংশ।

আধুনিক সহিংসতা প্রচারের প্রধান মাধ্যম হলো সাইবার স্পেস। আন্তর্জাতিক একটি চক্র এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপস ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে সদস্য সংগ্রহ, পরিকল্পনা তৈরি ও ঘৃণামূলক কনটেন্ট ছড়ায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সাইবার ফরেনসিক সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব থাকায় এই ভার্চুয়াল জগৎ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হচ্ছে। সরকারের উচিত হবে ডিজিটাল নজরদারির সক্ষমতা বাড়ানো, কিন্তু একই সঙ্গে নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার সুরক্ষিত রাখা। সাইবার স্পেসকে নিরাপদ না করতে পারলে সহিংসতা নির্মূল করা যাবে না।

শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতা, সহনশীলতা এবং বহু-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের চর্চার অভাবও সহিংসতা বাড়াতে সাহায্য করছে। ধর্মীয় বা রাজনৈতিক ভিন্নমতের প্রতি অসহনশীলতা যুব সমাজের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে পুনর্গঠন করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সমালোচনামূলক চিন্তা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি ও সহনশীলতার সংস্কৃতি তৈরি করাই পারে চরমপন্থাকে প্রতিহত করতে।

দেশে যখন রাজনৈতিক সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতা বেড়ে যায়, তখন তার প্রভাব আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পড়ে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দ্বিধাগ্রস্ত হন, পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে। ২০২৫ সালের বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সহিংসতার কারণে দেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রবাহ গত বছরের তুলনায় ১৮ শতাংশ কমেছে। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এক বিপজ্জনক ইশারা।

সহিংসতার ঘটনায় ভুক্তভোগী এবং প্রত্যক্ষদর্শীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে অপরাধীরা বারবার পার পেয়ে যায়। বাংলাদেশে সাক্ষী বা ভুক্তভোগী প্রায়শই অপরাধী বা তাদের প্রভাবশালীদের পক্ষ থেকে হুমকির সম্মুখীন হন, ফলে তারা আদালতে সাক্ষ্য দিতে সাহস পান না। এর ফলস্বরূপ, মামলার নিষ্পত্তির হার কমে আসে এবং অপরাধীরা উৎসাহিত হয়। সরকারকে অবশ্যই সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও তা কার্যকর করতে হবে এবং ভুক্তভোগীদের জন্য যথাযথ পুনর্বাসন ও মানসিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে।

বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক আস্থা, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করা। শুধু নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোরতা নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরে শান্তি ও সহনশীলতার সংস্কৃতি গড়ে তোলাই একমাত্র উপায়। শিক্ষা, গণমাধ্যম ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলোকে সহিংসতাবিরোধী সচেতনতায় ভূমিকা রাখতে হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে তরুণদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাড়াতে হবে, যাতে তারা বিভ্রান্তির পথে না যায়।

বাংলাদেশের মানুষ সহিংসতা নয়, শান্তি চায়। তারা চায় নিরাপদ রাস্তা, নিশ্চিত বিচার, এবং এমন এক সমাজ যেখানে ভিন্নমত থাকলেও সহনশীলতা বজায় থাকে। ইতিহাস সাক্ষী যে, এই জাতি বারবার সংকট থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে, স্বাধীনতা অর্জন করেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ জয়ে সক্ষমতা দেখিয়েছে। তাই এখন সময় এসেছে সহিংসতার রাজনীতি পরিহার করে ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তি ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার। জাতির এ সংকটময় মুহূর্তে একমাত্র গণতন্ত্র, মানবতা ও ন্যায়বোধই পারে বাংলাদেশকে আবারো আলোর পথে ফিরিয়ে নিতে।

বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিদেশ থেকে যারা উস্কানি দিচ্ছে তাদের থেকে সতর্ক থাকা এবং তাদের এড়িয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদের উস্কানিতে প্রভাবিত হয়ে দেশের তরুণ প্রজন্মের মানুষ বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। যা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য এক বিশাল হুমকিস্বরূপ।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, অপরাধীদের দৌরাত্ম্য যতটা বাড়ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা এর চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। যে কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। তিনি বলেন, কাগজে-কলমে পুলিশি তৎপরতা থাকলেও মূলত সক্রিয় নয় পুলিশ। এখনো আগের মতোই চলছে পুলিশি তৎপরতা। ঘুস বাণিজ্য, মামলায় হয়রানিসহ নানা অপতৎপরতার অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, পুলিশের দুর্বলতা কোথায় তা পুলিশকেই চিহ্নিত করে প্রকাশ করতে হবে। তারা যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারে, তাও জনগণকে জানিয়ে দিতে হবে।

লেখক :
এম রাসেল সরকার
সিনিয়র সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।
ই-মেইল: Sheikhmdraselbd@gmail.com