6:29 am, Saturday, 22 November 2025

মতিঝিলে সক্রিয় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনুসারী ফারুক বাহিনী: চলছে নীরব ভয়ংকর চাঁদাবাজি

Picsart 25 11 07 22 38 03 263

 

বিশেষ প্রতিনিধি:
রাজধানীতে আগের চেয়ে বরং ফুটপাত রাজপথে বেড়েছে হকার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়েছে চাঁদার অঙ্ক। কোথাও কোথাও এসেছে নতুন চাঁদাবাজ।

রাজধানীর অনেক এলাকায় আওয়ামী লীগের বদলে চাঁদাবাজের তালিকায় উঠেছে বিএনপি নেতাকর্মীর নাম। চাঁদাবাজির হোতা হিসেবে রাজধানীর দুয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামও সামনে আসছে। কোনো এলাকায় বদল হয়েছে লাইনম্যানের। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আগের চেয়ে অনেকটাই কম।

রাজধানীর ফুটপাত হকারমুক্ত করতে অতীতে কম চেষ্টা হয়নি। ২০১৬ সালের অক্টোবরে গুলিস্তানকে হকারমুক্ত করার অভিযানে নেমে নিজেই বিপাকে পড়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণের তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকন। তখন হকাররা উল্টো নগর ভবন ঘিরে হামলা চালান। এর পরই গতি হারায় হকার উচ্ছেদ কার্যক্রম। পরে ব্যারিস্টার তাপস মেয়র হলে রাস্তায় হকার ঠেকাতে লাল-হলুদ-সবুজ রঙে মার্কিং করে দেন। সেটাও কাজে দেয়নি। সর্বশেষ গণঅভ্যুত্থানের পর যৌথ বাহিনী কয়েক দিন ফুটপাত থেকে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করলেও এখন আবার রকমারি পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন হকাররা।

৫ আগস্টের পর তাদের নিয়ন্ত্রকরা পালিয়ে গেলে আগের লাইনম্যানরাই রাজনৈতিক খোলস পাল্টে দায়িত্ব পালন করছে।

রাজধানীর মতিঝিল ঢাকা শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত এবং দেশের অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব অপরিসীম। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, বীমা ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় সহ দেশের বৃহত্তম সংখ্যক কর্পোরেট সদর দফতর এবং বিভিন্ন সংবাদ ও মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় এই এলাকায় রয়েছে।

এই বাণিজ্যিক এলাকায় প্রায়শই বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অন্যান্য কারণে জনসমাগম ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে, যা ব্যবসায়িক আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

মতিঝিল বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র হওয়ায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। তারা জমি ও সম্পদ দখল, চাঁদাবাজি, এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে চায়। এই অপরাধীদের মধ্যে কারাগার থেকে জামিনে বের হওয়া এবং আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা অন্তর্ভুক্ত আছে।

একটি বিশেষ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল এলাকার অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বর্তমানে যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট এবং জিসান আহমেদ-এর মতো শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। যদিও তারা এখন পলাতক বা আটক অবস্থায় রয়েছে।

সাম্প্রতিক বিভিন্ন প্রতিবেদনে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে অপরাধীদের মধ্যে ক্ষমতা বদল এবং নতুন দলগুলোর উত্থানের তথ্য উঠে আসে। মতিঝিল এলাকার অপরাধ জগত একসময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদের একক আধিপত্যে ছিল। জিসান বর্তমানে দুবাইয়ে আটক আছেন বলে জানা যায়। অন্যদিকে সম্রাটও ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনিও দেশ ছাড়া।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র অনুযায়ী, অনেক শীর্ষ অপরাধী, যারা বর্তমানে জেলে আছেন অথবা বিদেশে পালিয়ে গেছেন, দেশে থাকা তাদের সহযোগীদের মাধ্যমে অপরাধমূলক কার্যক্রম, যেমন- চাঁদাবাজি ও জমি দখল, নিয়ন্ত্রণ করে চলেছেন। মতিঝিলসহ ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের পরিস্থিতি পরিবর্তনশীল এবং বিভিন্ন ছোট-বড় গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা চলছে।

৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর শূন্যের ঘরে নেমে এসেছিল রাজধানীর ফুটপাতের চাঁদাবাজি কিন্তু সূ-সময় টেকেনি বেশি দিন। আবারও চাঁদাবাজরা ফিরেছে পুরোনো চেহারায়। বিদেশে পালিয়ে থাকা আন্ডারওয়ার্ল্ড শীর্ষ সন্ত্রাসী সম্রাট তার অপরাধ জগতের সম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে মতিঝিল এলাকার ফারুক আহমেদ কে দিয়ে গড়ে তুলে নতুন এক বাহিনী যা “ফারুক বাহিনী নামে পরিচিত” তাকে অপরাধ জগতের সম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয় মতিঝিল থানা ৯ নম্বর ওয়ার্ড। আওয়ামী লীগ সরকার শাসনামলে এই স্থানের দায়িত্বে ছিলেন যুবলীগ এক নেতা সেই নেতাকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করে তাদের কার্যক্রম।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায় জানা যায়, রাজধানীর মতিঝিল ফুটপাত ও অফিস পাড়ায় চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত “ফারুক বাহিনী” নামে একটি চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বাহিনী মতিঝিল এলাকার ফুটপাত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে এবং এর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়।

অভিযোগ মতে, মতিঝিল থানা বিএনপির আহ্বায়ক ফারুক আহমেদের ইশারায় এই চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। এবং হকারদের ভয় দেখিয়ে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করেন। এই চাঁদাবাজি কার্যক্রম একটি সুনির্দিষ্ট চক্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যেখানে লাইনম্যানদের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে।

ভুক্তভোগীরা এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এই চাঁদাবাজির কারণে সাধারণ ব্যবসায়ী এবং পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে।

মতিঝিল: যুবলীগ দুই নেতা-ফেন্সি নাসির ও সম্রাটের চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য!?

মতিঝিল ব্যাংকপাড়ার ফুটপাত শীর্ষ সন্ত্রাসী নাসির উদ্দিন ওরফে ফেন্সি নাসির ও যুবলীগ নেতা আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সম্রাটের কবজায়। ২০২৩ সালে এ সন্ত্রাসী দেশে ফেরার পর থেকেই মতিঝিল ব্যাংকপাড়ার ফুটপাতের চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নেন। গণঅভ্যুত্থানের পর শুধু লাইনম্যানের বদল হয়েছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে আরামবাগ হয়ে পীর জঙ্গি মাজার পর্যন্ত ফুটপাত থেকে দোকান ভেদে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলেন সোহেল ও রতন। তাদের দু’জনকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন শ্রমিক দল এক নেতা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ওয়াসার পানির পাম্প পর্যন্ত দুই সারিতে ৫ শতাধিক দোকানের ১০০ থেকে ২০০ টাকা হারে প্রতিদিন চাঁদা তোলেন হকার্স লীগের সভাপতি হারুন ও আসিফের লোকজন। রূপালী ব্যাংক থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত সহস্রাধিক মাছ, মাংস আর সবজির দোকান থেকে টাকা তোলেন তাইজুল ইসলাম তাজু ও তাঁর ছেলে বাবলু। আগে নিজেদের আওয়ামী লীগ পরিচয় দিলেও এখন বিএনপি কর্মী পরিচয় দেন। পূবালী ব্যাংক থেকে বক চত্বর পর্যন্ত লাইনম্যানের দায়িত্বে নুরুল ইসলাম, মান্নান ও জুয়েল। শাপলা চত্বর থেকে সোনালী ব্যাংক-জনতা ব্যাংক-ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার দোকানের চাঁদা তোলেন মকবুল। আর এসব চাঁদাবাজদের কে নিয়ন্ত্রণ করেন আন্ডারওয়ার্ল্ড শীর্ষ সন্ত্রাসী ও যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের সহযোগী ফারুক আহমেদ ( মতিঝিলের ফারুক বাহিনী)।

পূবালী ব্যাংকের সামনের ফুটপাতের কাপড়ের দোকানদার পলাশ বলেন, ‘এখন ফুটপাতে দোকান দিতে অনেক কড়াকড়ি। লাইনম্যান নাই, আমরাই সব। পুলিশকেও ম্যানেজ করতে হয়। ডিএমপি কমিশনারের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোস্তাফিজের মাধ্যমে ফুটপাতে দোকান বসানোর অনুমতি নিয়েছি।’

তবে ডিএমপি কমিশনারের স্টাফ অফিসার জুয়েল ইমরান বলেন, ‘এই নামে ডিএমপি কমিশনারের অফিসে কেউ নেই। আর যে অভিযোগ, সেটাও সত্য নয়।’
তবে পাশের কয়েকজন কাপড় দোকানি বলেন, ‘মতিঝিলের ফুটপাতে নাসির ভাই সব। মাঝখানে শুধু লাইনম্যান বদল হয়েছে। তাঁর লোকজন প্রতি সপ্তাহে এসে টাকা তোলে। শাপলা চত্বরের আশপাশে হারুন, আসিফ, তাইজুলরা টাকা তোলে। তবে টাকার ভাগ পান নাসির।’

মতিঝিল ব্যাংকপাড়ায় তিন দিন ঘুরেও সন্ত্রাসী ফেন্সি নাসির ও সম্রাট কে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোন নম্বরেও যোগাযোগ করতে পারেনি।

কারা কী বলছেন!?

বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম বলেন, ‘ফুটপাত মানেই টাকার খেলা। যেখানেই হকার, সেখানেই আছে লাইনম্যান-চাঁদাবাজ। আর লাইনম্যানদের অধিকাংশই পুলিশের সোর্স। গণঅভ্যুত্থানের পরও এই ধারা পাল্টাইনি। লাইনম্যান আগের জনই আছেন, শুধু রাজনৈতিক শক্তির বদল হয়েছে।’ বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল হাসিম কবির বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পরও ফুটপাতে যে যার মতো করে নতুন দোকান বসাচ্ছে। আগের চেয়েও দোকানের সংখ্যা বেড়েছে। আর এতে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করছে আরেকটা পক্ষ।’

এসব বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবি বলেন, ‘আমাদের দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়মিতই অন্যান্য অভিযানের সঙ্গে ফুটপাত হকারমুক্ত করছে।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘ফুটপাতে একদিকে উচ্ছেদ করলে তারা আরেকদিকে দোকান বসায়। এ ক্ষেত্রে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদে পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সবার সমন্বয় প্রয়োজন। ফুটপাতে চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। করপোরেশন পুশলিশের সহযোগিতা পাচ্ছে না, বিষয়টি ঠিক নয়। আমরা চাই, সড়ক পরিষ্কার রাখতে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ হোক।

“শহরের শীর্ষ চাঁদাবাজি”
ধারাবাহিক প্রতিবেদনের (পর্ব-৪)

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 04:25:55 pm, Friday, 7 November 2025
80 Time View

মতিঝিলে সক্রিয় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনুসারী ফারুক বাহিনী: চলছে নীরব ভয়ংকর চাঁদাবাজি

Update Time : 04:25:55 pm, Friday, 7 November 2025

 

বিশেষ প্রতিনিধি:
রাজধানীতে আগের চেয়ে বরং ফুটপাত রাজপথে বেড়েছে হকার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়েছে চাঁদার অঙ্ক। কোথাও কোথাও এসেছে নতুন চাঁদাবাজ।

রাজধানীর অনেক এলাকায় আওয়ামী লীগের বদলে চাঁদাবাজের তালিকায় উঠেছে বিএনপি নেতাকর্মীর নাম। চাঁদাবাজির হোতা হিসেবে রাজধানীর দুয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামও সামনে আসছে। কোনো এলাকায় বদল হয়েছে লাইনম্যানের। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আগের চেয়ে অনেকটাই কম।

রাজধানীর ফুটপাত হকারমুক্ত করতে অতীতে কম চেষ্টা হয়নি। ২০১৬ সালের অক্টোবরে গুলিস্তানকে হকারমুক্ত করার অভিযানে নেমে নিজেই বিপাকে পড়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণের তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকন। তখন হকাররা উল্টো নগর ভবন ঘিরে হামলা চালান। এর পরই গতি হারায় হকার উচ্ছেদ কার্যক্রম। পরে ব্যারিস্টার তাপস মেয়র হলে রাস্তায় হকার ঠেকাতে লাল-হলুদ-সবুজ রঙে মার্কিং করে দেন। সেটাও কাজে দেয়নি। সর্বশেষ গণঅভ্যুত্থানের পর যৌথ বাহিনী কয়েক দিন ফুটপাত থেকে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করলেও এখন আবার রকমারি পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন হকাররা।

৫ আগস্টের পর তাদের নিয়ন্ত্রকরা পালিয়ে গেলে আগের লাইনম্যানরাই রাজনৈতিক খোলস পাল্টে দায়িত্ব পালন করছে।

রাজধানীর মতিঝিল ঢাকা শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত এবং দেশের অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব অপরিসীম। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, বীমা ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় সহ দেশের বৃহত্তম সংখ্যক কর্পোরেট সদর দফতর এবং বিভিন্ন সংবাদ ও মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় এই এলাকায় রয়েছে।

এই বাণিজ্যিক এলাকায় প্রায়শই বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অন্যান্য কারণে জনসমাগম ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে, যা ব্যবসায়িক আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

মতিঝিল বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র হওয়ায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। তারা জমি ও সম্পদ দখল, চাঁদাবাজি, এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে চায়। এই অপরাধীদের মধ্যে কারাগার থেকে জামিনে বের হওয়া এবং আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা অন্তর্ভুক্ত আছে।

একটি বিশেষ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল এলাকার অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বর্তমানে যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট এবং জিসান আহমেদ-এর মতো শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। যদিও তারা এখন পলাতক বা আটক অবস্থায় রয়েছে।

সাম্প্রতিক বিভিন্ন প্রতিবেদনে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে অপরাধীদের মধ্যে ক্ষমতা বদল এবং নতুন দলগুলোর উত্থানের তথ্য উঠে আসে। মতিঝিল এলাকার অপরাধ জগত একসময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদের একক আধিপত্যে ছিল। জিসান বর্তমানে দুবাইয়ে আটক আছেন বলে জানা যায়। অন্যদিকে সম্রাটও ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনিও দেশ ছাড়া।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র অনুযায়ী, অনেক শীর্ষ অপরাধী, যারা বর্তমানে জেলে আছেন অথবা বিদেশে পালিয়ে গেছেন, দেশে থাকা তাদের সহযোগীদের মাধ্যমে অপরাধমূলক কার্যক্রম, যেমন- চাঁদাবাজি ও জমি দখল, নিয়ন্ত্রণ করে চলেছেন। মতিঝিলসহ ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের পরিস্থিতি পরিবর্তনশীল এবং বিভিন্ন ছোট-বড় গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা চলছে।

৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর শূন্যের ঘরে নেমে এসেছিল রাজধানীর ফুটপাতের চাঁদাবাজি কিন্তু সূ-সময় টেকেনি বেশি দিন। আবারও চাঁদাবাজরা ফিরেছে পুরোনো চেহারায়। বিদেশে পালিয়ে থাকা আন্ডারওয়ার্ল্ড শীর্ষ সন্ত্রাসী সম্রাট তার অপরাধ জগতের সম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে মতিঝিল এলাকার ফারুক আহমেদ কে দিয়ে গড়ে তুলে নতুন এক বাহিনী যা “ফারুক বাহিনী নামে পরিচিত” তাকে অপরাধ জগতের সম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয় মতিঝিল থানা ৯ নম্বর ওয়ার্ড। আওয়ামী লীগ সরকার শাসনামলে এই স্থানের দায়িত্বে ছিলেন যুবলীগ এক নেতা সেই নেতাকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করে তাদের কার্যক্রম।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায় জানা যায়, রাজধানীর মতিঝিল ফুটপাত ও অফিস পাড়ায় চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত “ফারুক বাহিনী” নামে একটি চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বাহিনী মতিঝিল এলাকার ফুটপাত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে এবং এর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়।

অভিযোগ মতে, মতিঝিল থানা বিএনপির আহ্বায়ক ফারুক আহমেদের ইশারায় এই চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। এবং হকারদের ভয় দেখিয়ে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করেন। এই চাঁদাবাজি কার্যক্রম একটি সুনির্দিষ্ট চক্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যেখানে লাইনম্যানদের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে।

ভুক্তভোগীরা এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এই চাঁদাবাজির কারণে সাধারণ ব্যবসায়ী এবং পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে।

মতিঝিল: যুবলীগ দুই নেতা-ফেন্সি নাসির ও সম্রাটের চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য!?

মতিঝিল ব্যাংকপাড়ার ফুটপাত শীর্ষ সন্ত্রাসী নাসির উদ্দিন ওরফে ফেন্সি নাসির ও যুবলীগ নেতা আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সম্রাটের কবজায়। ২০২৩ সালে এ সন্ত্রাসী দেশে ফেরার পর থেকেই মতিঝিল ব্যাংকপাড়ার ফুটপাতের চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নেন। গণঅভ্যুত্থানের পর শুধু লাইনম্যানের বদল হয়েছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে আরামবাগ হয়ে পীর জঙ্গি মাজার পর্যন্ত ফুটপাত থেকে দোকান ভেদে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলেন সোহেল ও রতন। তাদের দু’জনকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন শ্রমিক দল এক নেতা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ওয়াসার পানির পাম্প পর্যন্ত দুই সারিতে ৫ শতাধিক দোকানের ১০০ থেকে ২০০ টাকা হারে প্রতিদিন চাঁদা তোলেন হকার্স লীগের সভাপতি হারুন ও আসিফের লোকজন। রূপালী ব্যাংক থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত সহস্রাধিক মাছ, মাংস আর সবজির দোকান থেকে টাকা তোলেন তাইজুল ইসলাম তাজু ও তাঁর ছেলে বাবলু। আগে নিজেদের আওয়ামী লীগ পরিচয় দিলেও এখন বিএনপি কর্মী পরিচয় দেন। পূবালী ব্যাংক থেকে বক চত্বর পর্যন্ত লাইনম্যানের দায়িত্বে নুরুল ইসলাম, মান্নান ও জুয়েল। শাপলা চত্বর থেকে সোনালী ব্যাংক-জনতা ব্যাংক-ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার দোকানের চাঁদা তোলেন মকবুল। আর এসব চাঁদাবাজদের কে নিয়ন্ত্রণ করেন আন্ডারওয়ার্ল্ড শীর্ষ সন্ত্রাসী ও যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের সহযোগী ফারুক আহমেদ ( মতিঝিলের ফারুক বাহিনী)।

পূবালী ব্যাংকের সামনের ফুটপাতের কাপড়ের দোকানদার পলাশ বলেন, ‘এখন ফুটপাতে দোকান দিতে অনেক কড়াকড়ি। লাইনম্যান নাই, আমরাই সব। পুলিশকেও ম্যানেজ করতে হয়। ডিএমপি কমিশনারের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোস্তাফিজের মাধ্যমে ফুটপাতে দোকান বসানোর অনুমতি নিয়েছি।’

তবে ডিএমপি কমিশনারের স্টাফ অফিসার জুয়েল ইমরান বলেন, ‘এই নামে ডিএমপি কমিশনারের অফিসে কেউ নেই। আর যে অভিযোগ, সেটাও সত্য নয়।’
তবে পাশের কয়েকজন কাপড় দোকানি বলেন, ‘মতিঝিলের ফুটপাতে নাসির ভাই সব। মাঝখানে শুধু লাইনম্যান বদল হয়েছে। তাঁর লোকজন প্রতি সপ্তাহে এসে টাকা তোলে। শাপলা চত্বরের আশপাশে হারুন, আসিফ, তাইজুলরা টাকা তোলে। তবে টাকার ভাগ পান নাসির।’

মতিঝিল ব্যাংকপাড়ায় তিন দিন ঘুরেও সন্ত্রাসী ফেন্সি নাসির ও সম্রাট কে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোন নম্বরেও যোগাযোগ করতে পারেনি।

কারা কী বলছেন!?

বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম বলেন, ‘ফুটপাত মানেই টাকার খেলা। যেখানেই হকার, সেখানেই আছে লাইনম্যান-চাঁদাবাজ। আর লাইনম্যানদের অধিকাংশই পুলিশের সোর্স। গণঅভ্যুত্থানের পরও এই ধারা পাল্টাইনি। লাইনম্যান আগের জনই আছেন, শুধু রাজনৈতিক শক্তির বদল হয়েছে।’ বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল হাসিম কবির বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পরও ফুটপাতে যে যার মতো করে নতুন দোকান বসাচ্ছে। আগের চেয়েও দোকানের সংখ্যা বেড়েছে। আর এতে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করছে আরেকটা পক্ষ।’

এসব বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবি বলেন, ‘আমাদের দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়মিতই অন্যান্য অভিযানের সঙ্গে ফুটপাত হকারমুক্ত করছে।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘ফুটপাতে একদিকে উচ্ছেদ করলে তারা আরেকদিকে দোকান বসায়। এ ক্ষেত্রে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদে পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সবার সমন্বয় প্রয়োজন। ফুটপাতে চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। করপোরেশন পুশলিশের সহযোগিতা পাচ্ছে না, বিষয়টি ঠিক নয়। আমরা চাই, সড়ক পরিষ্কার রাখতে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ হোক।

“শহরের শীর্ষ চাঁদাবাজি”
ধারাবাহিক প্রতিবেদনের (পর্ব-৪)