6:55 pm, Wednesday, 5 November 2025

আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে মতিঝিলের চাঁদাবাজির এক বিশাল সাম্রাজ্য

দিগন্ত প্রতিদিন

Picsart 25 11 05 12 08 41 747

 

বিশেষ প্রতিনিধি:
রাজধানীর ফুটপাতগুলো এখন আর পথচারীদের চলাচলের রাস্তা নয়, তা পরিণত হয়েছে হকারদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ীসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রায় প্রতিটি সড়কের ফুটপাতজুড়ে বসে নানা পণ্যের দোকান। ফলে সাধারণ মানুষের হাঁটার জায়গা থাকছে না, তারা হাঁটছে সড়কপথে, যেখানে চলার কথা যানবাহন। এতে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট, দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা। এতে মানুষের গুরুত্বপূর্ণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।

এই দখলদারির পেছনে রয়েছে কিছু রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়া। তবে তাদের পরিচয় স্পষ্ট করতে আমাদের যেতে হবে গভীরে। প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলো হকারদের কাছ থেকে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। যার পরিমাণ এককালীন ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। শুধু আর্থিক সুবিধাই নয়, মিছিল মিটিং, সভা-সমাবেশেও তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে এ অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। আর এই দখলদারিত্ব নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ঘটেছে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও।

সচিবালয়ের পাশ ঘেঁষে যাওয়া তোপখানা রোড থেকে শুরু করে সব গুরুত্বপূর্ণ সড়কের কোনোটিতেই এখন আর ফুটপাত নেই। মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি দাপ্তরিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে শুরু করে গুলিস্তান, মতিঝিল ও পল্টনসহ রাজধানীর কোনো এলাকাই এখন হকারমুক্ত নয়। সকাল-বিকাল ফুটপাত দখল করে রাখেন তারা। কেউ জামাকাপড়, কেউ ফলমূল, কেউ মোবাইলের এক্সেসরিজ বা খেলনা, কেউবা কসমেটিক্স বিক্রি করে থাকেন।

পথচারী মিজানুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদীরা কী অবস্থা করে গেছে এবং কতটুকু সংস্কার হয়েছে তা বোঝার জন্য এই সড়কগুলোর দিকে তাকালেই হয়। এত গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো হকাররা দখলে নিয়েছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

মতিঝিল গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকার সড়কও রক্ষা পায়নি হকার ও দখলদারদের হাত থেকে। তা এখন পরিণত হয়েছে পিকনিক স্পটে। সড়কের ওপর বসানো হয়েছে সারি সারি দোকান। সাইকেল লেন, ফুটপাত ও পার্কিং জোনে বসানো হয়েছে চেয়ার-টেবিল। যে কারণে পথচারীরা হাঁটছেন মূল সড়কে, যেখানে চলাচল করার কথা যানবাহনের।

পথচারী ইকবাল হোসেন বলেন, এত সুন্দর সড়ক তৈরি করা হলো; এটিকেও দখলদার ও হকারদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি দায়িত্বরতরা। আমাদের ফুটপাতে হাঁটার জায়গা না পেয়ে নেমে আসতে হয় মূল সড়কে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

সচিবালয় দেশের প্রশাসনিক সদর দপ্তর। এই সদর দপ্তর ঘেঁষে যাওয়া সড়কটির নাম তোপখানা রোড। এই সড়কটির ফুটপাতেও রয়েছে বিভিন্ন দোকান। সড়কটি থেকে শুরু করে মতিঝিল হয়ে গুলিস্তান ও সদরঘাট পর্যন্ত প্রায় সবকটি সড়কের ফুটপাত হকারদের দখলে। সে সঙ্গে মূল সড়কের অংশও দখলে নিয়েছে তারা। যে কারণে সরকারি-বেসরকারি কাজে আসা বেশিরভাগ পথচারীর একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল সড়ক। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা। আর দুর্ঘটনার সম্ভাবনা তো রয়েছেই।

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় হকাররা বেপরোয়া। এতদিন আওয়ামী লীগ এ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল। বর্তমানে অন্যরা এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে।

হকাররা কীভাবে ফুটপাত দখলে নেয় এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে মুখ খুলতে চাচ্ছিলেন না অধিকাংশ হকার। তবে মতিঝিলে ফুটপাত দখলে নিয়ে জুতার দোকান দেওয়া কামাল হোসেন ও কামরুল বলেন, আমরা এখানে অনেক বছর ধরে ব্যবসা করে করে খাই। বসার সময় কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে বসেছি। এরপর আওয়ামী লীগ আমলে প্রতিদিন পুলিশকে ৭০ টাকা, সপ্তাহে ১০০ টাকা; আর বিদ্যুৎ বিল ৩০ টাকা দিতাম। আওয়ামী লীগের সময় মোটামুটি মিছিল-সমাবেশে সব দোকান থেকেই এক-দুজন করে যেতাম। এখনো আমরা যাই। আমগোরে বড় ভাইয়েরা দেখে রাখে। তারা ডাকলে এখনো যাই। এখন বিএনপির ভাইয়েরা ডাকলেও যাই। কারণ, আমরা তো ব্যবসা করেই খেতে হবে। আবার যদি জামায়াতও ক্ষমতায় আসে, তখনো আমাদের ডাকলে যাব।

পরিচয় আড়াল করে এই প্রতিবেদক দোকান নেওয়ার কথা জানালে মতিঝিল এলাকার দিলকুশা ফুটপাতে ব্যবসা করা এক তরুণের কাছে জানতে চাইলে সে বলে, এখানে কোনো জায়গা খালি নেই। এরপরও যদি কোনো খালি জায়গা পাওয়া যায়, তবে আমাগো বড় ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে আপনি দুইভাবেই নিতে পারেন। এখানে ফুটপাত ভাড়াও হয়, বিক্রিও হয়। ভাড়া নিলে অ্যাডভান্স দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাগবে। আর যদি কেনেন, তাহলে জায়গা বুঝে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা লাগবে। নিতে চাইলে রাজউক এর পিছনে দিলকুশা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা একটি অফিস আছে ওইখানে বড় ভাইয়েরা বসে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরদিন পরিচয় জানিয়ে যোগাযোগ করলে তিনি এসব নিয়ে প্রতিবেদন না করার অনুরোধ করেন।

যুবলীগ নেতার হাত বদলিয়ে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ এখন যুবদল নেতার হাতে;

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও রাজধানীর মতিঝিলের চাঁদাবাজি আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। সেনাবাহিনী মাঠে থাকার পরও তাদের তোয়াক্কা না করে ফ্রি-স্টাইলে চালিয়ে যাচ্ছে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। মতিঝিলের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে তাদের ওপর নেমে আসে পাশবিক নির্যাতন। এমন অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

মতিঝিলের আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণে কে?
আত্মগোপনে থেকে মতিঝিলের আন্ডারওয়ার্ল্ডে নিয়ন্ত্রণ করছে শীর্ষ চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম চৌধুরী নুরু। তার নামে রয়েছে হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে একাধিক মামলা।

এক সময় ছিলেন ফুটপাতের হকার, করতেন আওয়ামী লীগের যুব সংগঠন যুবলীগের রাজনীতি। তবে ৫ আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে ফেলেছেন নিজেকে এবং গ্রেপ্তারের ভয়ে চলে গেছেন আন্ডারগ্রাউন্ডে। চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়েছেন যুবদল নেতা মমিন বেপারীর হাতে। যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম চৌধুরী নুরু আওয়ামী সরকার ক্ষমতা থাকাকালীন মতিঝিলের ফুটপাতের দোকান থেকে বড় বড় অফিসসহ সর্বত্র ছিলো তার চাঁদাবাজির বিস্তার। এ ছাড়া মাদক ব্যবসা, গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, মানি এক্সচেঞ্জ, পানি, বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এলাকায় নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে গড়ে তুলে ছিলেন নুরু বাহিনী। তার নাম নুরুল ইসলাম চৌধুরী নুরু। মতিঝিল এলাকায় আতঙ্কের নাম। বিভিন্ন মামলার নথিপত্র এবং ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া যায় এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য।

আরও জানা গেছে, মতিঝিলে নুরুর চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ছিলেন ফুটপাতের ব্যবসায়ী ও রেস্তোরাঁ মালিকরা। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতেন। মতিঝিল এলাকা থেকে প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার চাঁদা তোলতেন নুরু। এ ছাড়া মতিঝিলের দিলকুশায় জমি দখল করে দোকান তুলে ভাড়া দিতেন, যা থেকে মাসে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা ভাড়া পেতেন তিনি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৯ নম্বর ওয়ার্ড (সাবেক ৩২ নম্বর) যুবলীগের সহসভাপতি ছিলেন নুরুল ইসলাম চৌধুরী নুরু। মূলত যুবলীগ নেতা ক্যাসিনোকাণ্ডের মূল মাস্টারমাইন্ড ইসমাইল হোসেন সম্রাটের হাত ধরেই নুরুর উত্থান।

ফুটপাতের দোকানে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দোকান ভেদে বাতিপ্রতি দিনে ৩০-৫০ টাকা নিতেন নুরু। এ ছাড়া ফুটপাতে দোকান বসাতে এককালীন তাকে দিতে হতো ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। মতিঝিলের রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে শত শত দোকান বসিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলতেন। দিলকুশায় অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ ছাড়াও ওয়াসার পানি ড্রামে করে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করতেন। সিটি করপোরেশনের নামে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য চাঁদা নেয় নুরুর বাহিনী। ঘণ্টা মেপে গাড়িভেদে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুবলীগের নেতা নুরুল ইসলাম চৌধুরী নুরুর ভাই আহমেদ ইসলাম পুতুলের মাধ্যমে ইয়াবার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। চাঁদা তোলা ও মতিঝিল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ১০ থেকে ১২ জনের একটি বাহিনী তৈরি করে ছিলেন। রাজউকের উত্তর পাশের গলিতে ‘দিলকুশা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নামে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে অফিস খুলেছে তারা। সব অপকর্ম নিয়ন্ত্রণ করা হয় এই অফিস থেকেই।

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে, এতে দলটির শীর্ষ নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দিয়েছেন। এরই সঙ্গে সঙ্গে মতিঝিলের ত্রাস যুবলীগ নেতা নুরু গ্রেপ্তারের ভয়ে চলে যায় আন্ডারগ্রাউন্ডে। আর এই চাঁদাবাজির সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেন যুবদল নেতা মমিন বেপারীর হাতে। আওয়ামী লীগের ক্ষমতা পতনের পর বিএনপির রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নিজে কে আড়ালে রেখে যুবদল নেতা মমিন বেপারীকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছে এই চাঁদাবাজির বিশাল সাম্রাজ্য।

বর্তমানে এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে, বিএনপির অঙ্গসংগঠন ৯নং ওয়ার্ড যুবদলের আহবায়ক মমিন বেপারী, সাবেক সদস্য সচিব ফজলুল হক ফজলু, মতিঝিল থানা যুবদলের সদস্য সচিব ফারুক মাহামুদ, মতিঝিল থানার যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রনি মোল্লা খোকন, ৯নং ওয়ার্ড যুবদলের সদস্য সচিব বিপ্লব হোসেন মিতুর বিরুদ্ধে মতিঝিল এলাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। কেউ প্রতিবাদ করলে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন তারা।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি জনগণের রাজনীতি করে। এখানে দুর্বৃত্তের কোনো স্থান নেই। দলের নাম ভাঙিয়ে যারাই অপকর্মের চেষ্টা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে এর মধ্যে বেশির ভাগই ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের দোসর। যারা বিএনপির রূপ ধারণ করে কৌশলে ষড়যন্ত্র করছে। যদি কেউ দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায় আমরা সঙ্গে সঙ্গে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, এ এলাকায় অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ এবং ফুটপাত উদ্ধারে ২০২৪-এর ৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডিএসসিসি মোট ৮৬টি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে। এতে মামলা, অর্থদণ্ড প্রদান ও গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। হকারদের দৌরাত্ম্য কেন দিন দিন বাড়ছে এর উত্তর নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটির সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা, কর্মসংস্থান, বিভিন্ন পেশার প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, অভ্যন্তরীণ অভিবাসন, দলীয় রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মতো স্পর্শকাতর বিষয়াবলি জড়িত। তবে অনিয়ন্ত্রিত হকার পরিকল্পিত নগরায়ণ ও নাগরিক সুবিধাদি নিশ্চিতকরণে বড় বাধা।

ইতোমধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে সৌন্দর্য বর্ধনের অংশ হিসেবে উভয় পাশের ফুটপাত ও খালি জায়গায় ফ্লাওয়ার বেড, নান্দনিক নকশার বসার বেঞ্চ, ফাউন্টেন অবকাঠামো, বৃক্ষরোপণসহ ল্যান্ডস্কেপিং বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা একটি নান্দনিক ও স্বস্তিদায়ক ফুটপাত উপহার দিতে পারব। তবে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে স্থানীয় নাগরিক সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা আরো বেশি প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, চাঁদাবাজদের কোনো দল নেই। চাঁদাবাজির ব্যাপারে আমরা সব সময় সজাগ। বিভিন্ন সময় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবু বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকেই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমাদের চোখ কান খুলা আছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) ফারুক হোসেন বলেন, ফুটপাতের স্থাপনা আমরা পর্যায়ক্রমে সরিয়ে দিচ্ছি। মানুষ যাতে চলাচলে বাধা না পায়, সে জন্য এই কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।

সিটি করপোরেশন পরিচালিত উচ্ছেদ অভিযানের পর ফুটপাত রক্ষায় পুলিশের পদক্ষেপ গ্রহণের প্রসঙ্গে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের আইনি কার্যক্রম অব্যাহত আছে যদি কেউ সুনির্দিষ্ট তথ্য লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।-চলবে.!

শহরের শীর্ষ চাঁদাবাজি! ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ (পর্ব-৩)

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 08:40:25 am, Wednesday, 5 November 2025
53 Time View

আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে মতিঝিলের চাঁদাবাজির এক বিশাল সাম্রাজ্য

Update Time : 08:40:25 am, Wednesday, 5 November 2025

 

বিশেষ প্রতিনিধি:
রাজধানীর ফুটপাতগুলো এখন আর পথচারীদের চলাচলের রাস্তা নয়, তা পরিণত হয়েছে হকারদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ীসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রায় প্রতিটি সড়কের ফুটপাতজুড়ে বসে নানা পণ্যের দোকান। ফলে সাধারণ মানুষের হাঁটার জায়গা থাকছে না, তারা হাঁটছে সড়কপথে, যেখানে চলার কথা যানবাহন। এতে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট, দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা। এতে মানুষের গুরুত্বপূর্ণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।

এই দখলদারির পেছনে রয়েছে কিছু রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়া। তবে তাদের পরিচয় স্পষ্ট করতে আমাদের যেতে হবে গভীরে। প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলো হকারদের কাছ থেকে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। যার পরিমাণ এককালীন ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। শুধু আর্থিক সুবিধাই নয়, মিছিল মিটিং, সভা-সমাবেশেও তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে এ অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। আর এই দখলদারিত্ব নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ঘটেছে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও।

সচিবালয়ের পাশ ঘেঁষে যাওয়া তোপখানা রোড থেকে শুরু করে সব গুরুত্বপূর্ণ সড়কের কোনোটিতেই এখন আর ফুটপাত নেই। মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি দাপ্তরিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে শুরু করে গুলিস্তান, মতিঝিল ও পল্টনসহ রাজধানীর কোনো এলাকাই এখন হকারমুক্ত নয়। সকাল-বিকাল ফুটপাত দখল করে রাখেন তারা। কেউ জামাকাপড়, কেউ ফলমূল, কেউ মোবাইলের এক্সেসরিজ বা খেলনা, কেউবা কসমেটিক্স বিক্রি করে থাকেন।

পথচারী মিজানুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদীরা কী অবস্থা করে গেছে এবং কতটুকু সংস্কার হয়েছে তা বোঝার জন্য এই সড়কগুলোর দিকে তাকালেই হয়। এত গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো হকাররা দখলে নিয়েছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

মতিঝিল গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকার সড়কও রক্ষা পায়নি হকার ও দখলদারদের হাত থেকে। তা এখন পরিণত হয়েছে পিকনিক স্পটে। সড়কের ওপর বসানো হয়েছে সারি সারি দোকান। সাইকেল লেন, ফুটপাত ও পার্কিং জোনে বসানো হয়েছে চেয়ার-টেবিল। যে কারণে পথচারীরা হাঁটছেন মূল সড়কে, যেখানে চলাচল করার কথা যানবাহনের।

পথচারী ইকবাল হোসেন বলেন, এত সুন্দর সড়ক তৈরি করা হলো; এটিকেও দখলদার ও হকারদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি দায়িত্বরতরা। আমাদের ফুটপাতে হাঁটার জায়গা না পেয়ে নেমে আসতে হয় মূল সড়কে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

সচিবালয় দেশের প্রশাসনিক সদর দপ্তর। এই সদর দপ্তর ঘেঁষে যাওয়া সড়কটির নাম তোপখানা রোড। এই সড়কটির ফুটপাতেও রয়েছে বিভিন্ন দোকান। সড়কটি থেকে শুরু করে মতিঝিল হয়ে গুলিস্তান ও সদরঘাট পর্যন্ত প্রায় সবকটি সড়কের ফুটপাত হকারদের দখলে। সে সঙ্গে মূল সড়কের অংশও দখলে নিয়েছে তারা। যে কারণে সরকারি-বেসরকারি কাজে আসা বেশিরভাগ পথচারীর একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল সড়ক। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা। আর দুর্ঘটনার সম্ভাবনা তো রয়েছেই।

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় হকাররা বেপরোয়া। এতদিন আওয়ামী লীগ এ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল। বর্তমানে অন্যরা এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে।

হকাররা কীভাবে ফুটপাত দখলে নেয় এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে মুখ খুলতে চাচ্ছিলেন না অধিকাংশ হকার। তবে মতিঝিলে ফুটপাত দখলে নিয়ে জুতার দোকান দেওয়া কামাল হোসেন ও কামরুল বলেন, আমরা এখানে অনেক বছর ধরে ব্যবসা করে করে খাই। বসার সময় কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে বসেছি। এরপর আওয়ামী লীগ আমলে প্রতিদিন পুলিশকে ৭০ টাকা, সপ্তাহে ১০০ টাকা; আর বিদ্যুৎ বিল ৩০ টাকা দিতাম। আওয়ামী লীগের সময় মোটামুটি মিছিল-সমাবেশে সব দোকান থেকেই এক-দুজন করে যেতাম। এখনো আমরা যাই। আমগোরে বড় ভাইয়েরা দেখে রাখে। তারা ডাকলে এখনো যাই। এখন বিএনপির ভাইয়েরা ডাকলেও যাই। কারণ, আমরা তো ব্যবসা করেই খেতে হবে। আবার যদি জামায়াতও ক্ষমতায় আসে, তখনো আমাদের ডাকলে যাব।

পরিচয় আড়াল করে এই প্রতিবেদক দোকান নেওয়ার কথা জানালে মতিঝিল এলাকার দিলকুশা ফুটপাতে ব্যবসা করা এক তরুণের কাছে জানতে চাইলে সে বলে, এখানে কোনো জায়গা খালি নেই। এরপরও যদি কোনো খালি জায়গা পাওয়া যায়, তবে আমাগো বড় ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে আপনি দুইভাবেই নিতে পারেন। এখানে ফুটপাত ভাড়াও হয়, বিক্রিও হয়। ভাড়া নিলে অ্যাডভান্স দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাগবে। আর যদি কেনেন, তাহলে জায়গা বুঝে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা লাগবে। নিতে চাইলে রাজউক এর পিছনে দিলকুশা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা একটি অফিস আছে ওইখানে বড় ভাইয়েরা বসে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরদিন পরিচয় জানিয়ে যোগাযোগ করলে তিনি এসব নিয়ে প্রতিবেদন না করার অনুরোধ করেন।

যুবলীগ নেতার হাত বদলিয়ে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ এখন যুবদল নেতার হাতে;

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও রাজধানীর মতিঝিলের চাঁদাবাজি আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। সেনাবাহিনী মাঠে থাকার পরও তাদের তোয়াক্কা না করে ফ্রি-স্টাইলে চালিয়ে যাচ্ছে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। মতিঝিলের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে তাদের ওপর নেমে আসে পাশবিক নির্যাতন। এমন অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

মতিঝিলের আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণে কে?
আত্মগোপনে থেকে মতিঝিলের আন্ডারওয়ার্ল্ডে নিয়ন্ত্রণ করছে শীর্ষ চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম চৌধুরী নুরু। তার নামে রয়েছে হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে একাধিক মামলা।

এক সময় ছিলেন ফুটপাতের হকার, করতেন আওয়ামী লীগের যুব সংগঠন যুবলীগের রাজনীতি। তবে ৫ আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে ফেলেছেন নিজেকে এবং গ্রেপ্তারের ভয়ে চলে গেছেন আন্ডারগ্রাউন্ডে। চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়েছেন যুবদল নেতা মমিন বেপারীর হাতে। যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম চৌধুরী নুরু আওয়ামী সরকার ক্ষমতা থাকাকালীন মতিঝিলের ফুটপাতের দোকান থেকে বড় বড় অফিসসহ সর্বত্র ছিলো তার চাঁদাবাজির বিস্তার। এ ছাড়া মাদক ব্যবসা, গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, মানি এক্সচেঞ্জ, পানি, বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এলাকায় নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে গড়ে তুলে ছিলেন নুরু বাহিনী। তার নাম নুরুল ইসলাম চৌধুরী নুরু। মতিঝিল এলাকায় আতঙ্কের নাম। বিভিন্ন মামলার নথিপত্র এবং ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া যায় এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য।

আরও জানা গেছে, মতিঝিলে নুরুর চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ছিলেন ফুটপাতের ব্যবসায়ী ও রেস্তোরাঁ মালিকরা। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতেন। মতিঝিল এলাকা থেকে প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার চাঁদা তোলতেন নুরু। এ ছাড়া মতিঝিলের দিলকুশায় জমি দখল করে দোকান তুলে ভাড়া দিতেন, যা থেকে মাসে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা ভাড়া পেতেন তিনি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৯ নম্বর ওয়ার্ড (সাবেক ৩২ নম্বর) যুবলীগের সহসভাপতি ছিলেন নুরুল ইসলাম চৌধুরী নুরু। মূলত যুবলীগ নেতা ক্যাসিনোকাণ্ডের মূল মাস্টারমাইন্ড ইসমাইল হোসেন সম্রাটের হাত ধরেই নুরুর উত্থান।

ফুটপাতের দোকানে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দোকান ভেদে বাতিপ্রতি দিনে ৩০-৫০ টাকা নিতেন নুরু। এ ছাড়া ফুটপাতে দোকান বসাতে এককালীন তাকে দিতে হতো ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। মতিঝিলের রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে শত শত দোকান বসিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলতেন। দিলকুশায় অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ ছাড়াও ওয়াসার পানি ড্রামে করে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করতেন। সিটি করপোরেশনের নামে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য চাঁদা নেয় নুরুর বাহিনী। ঘণ্টা মেপে গাড়িভেদে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুবলীগের নেতা নুরুল ইসলাম চৌধুরী নুরুর ভাই আহমেদ ইসলাম পুতুলের মাধ্যমে ইয়াবার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। চাঁদা তোলা ও মতিঝিল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ১০ থেকে ১২ জনের একটি বাহিনী তৈরি করে ছিলেন। রাজউকের উত্তর পাশের গলিতে ‘দিলকুশা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নামে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে অফিস খুলেছে তারা। সব অপকর্ম নিয়ন্ত্রণ করা হয় এই অফিস থেকেই।

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে, এতে দলটির শীর্ষ নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দিয়েছেন। এরই সঙ্গে সঙ্গে মতিঝিলের ত্রাস যুবলীগ নেতা নুরু গ্রেপ্তারের ভয়ে চলে যায় আন্ডারগ্রাউন্ডে। আর এই চাঁদাবাজির সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেন যুবদল নেতা মমিন বেপারীর হাতে। আওয়ামী লীগের ক্ষমতা পতনের পর বিএনপির রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নিজে কে আড়ালে রেখে যুবদল নেতা মমিন বেপারীকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছে এই চাঁদাবাজির বিশাল সাম্রাজ্য।

বর্তমানে এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে, বিএনপির অঙ্গসংগঠন ৯নং ওয়ার্ড যুবদলের আহবায়ক মমিন বেপারী, সাবেক সদস্য সচিব ফজলুল হক ফজলু, মতিঝিল থানা যুবদলের সদস্য সচিব ফারুক মাহামুদ, মতিঝিল থানার যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রনি মোল্লা খোকন, ৯নং ওয়ার্ড যুবদলের সদস্য সচিব বিপ্লব হোসেন মিতুর বিরুদ্ধে মতিঝিল এলাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। কেউ প্রতিবাদ করলে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন তারা।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি জনগণের রাজনীতি করে। এখানে দুর্বৃত্তের কোনো স্থান নেই। দলের নাম ভাঙিয়ে যারাই অপকর্মের চেষ্টা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে এর মধ্যে বেশির ভাগই ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের দোসর। যারা বিএনপির রূপ ধারণ করে কৌশলে ষড়যন্ত্র করছে। যদি কেউ দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায় আমরা সঙ্গে সঙ্গে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, এ এলাকায় অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ এবং ফুটপাত উদ্ধারে ২০২৪-এর ৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডিএসসিসি মোট ৮৬টি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে। এতে মামলা, অর্থদণ্ড প্রদান ও গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। হকারদের দৌরাত্ম্য কেন দিন দিন বাড়ছে এর উত্তর নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটির সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা, কর্মসংস্থান, বিভিন্ন পেশার প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, অভ্যন্তরীণ অভিবাসন, দলীয় রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মতো স্পর্শকাতর বিষয়াবলি জড়িত। তবে অনিয়ন্ত্রিত হকার পরিকল্পিত নগরায়ণ ও নাগরিক সুবিধাদি নিশ্চিতকরণে বড় বাধা।

ইতোমধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে সৌন্দর্য বর্ধনের অংশ হিসেবে উভয় পাশের ফুটপাত ও খালি জায়গায় ফ্লাওয়ার বেড, নান্দনিক নকশার বসার বেঞ্চ, ফাউন্টেন অবকাঠামো, বৃক্ষরোপণসহ ল্যান্ডস্কেপিং বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা একটি নান্দনিক ও স্বস্তিদায়ক ফুটপাত উপহার দিতে পারব। তবে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে স্থানীয় নাগরিক সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা আরো বেশি প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, চাঁদাবাজদের কোনো দল নেই। চাঁদাবাজির ব্যাপারে আমরা সব সময় সজাগ। বিভিন্ন সময় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবু বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকেই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমাদের চোখ কান খুলা আছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) ফারুক হোসেন বলেন, ফুটপাতের স্থাপনা আমরা পর্যায়ক্রমে সরিয়ে দিচ্ছি। মানুষ যাতে চলাচলে বাধা না পায়, সে জন্য এই কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।

সিটি করপোরেশন পরিচালিত উচ্ছেদ অভিযানের পর ফুটপাত রক্ষায় পুলিশের পদক্ষেপ গ্রহণের প্রসঙ্গে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের আইনি কার্যক্রম অব্যাহত আছে যদি কেউ সুনির্দিষ্ট তথ্য লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।-চলবে.!

শহরের শীর্ষ চাঁদাবাজি! ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ (পর্ব-৩)