বিশেষ প্রতিনিধি:
দেশের ট্রান্সপোর্ট ও স্টিল খাতের অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান এরশাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান এরশাদ আলী অভিযোগ করেছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তাকে একের পর এক মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়। তার গড়ে তোলা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো লুটপাট ও দখল করা হয়েছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তার ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান জ্যোতি, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন একযোগে তার ব্যবসা-বাণিজ্য দখল ও ধ্বংসে লিপ্ত ছিল। এ কাজে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কিছু কর্মকর্তাও সহযোগিতা করেছে।
শনিবার, (০১ নভেম্বর ২০২৫) রাজধানীর মগবাজারের একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ আলী জানান, আমাকে বিএনপির অর্থদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ৪২টি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। একের পর এক গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের মাধ্যমে আমার ব্যবসা ধ্বংস করা হয়েছে। কলাবাগানের নাসির ট্রেড সেন্টারে এরশাদ গ্রুপের প্রধান কার্যালয়, ধানমন্ডির বাসভবন, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের গুদাম ও স্টিল মিলসহ সবকিছু তারা দখল করে নেয়। আমার ১৩৭টি ট্রাক লুট করে নেয়া হয়েছে। সোনারগাঁয়ের জংদা রি-রোলিং মিলস্ ও ডেমরায় স্টিল মিল শামীম ওসমানের সহযোগী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসী আজিজুর রহমান আজিজ দখল করে নেয়। আজিজের নেতৃত্বে দুই কারখানা থেকে প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকার মেশিন ও মালামাল লুট করা হয়েছে। সে এখনও এলাকায় ক্যাডার বাহিনী চালায়। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ২০ বিঘা জমির মাটি লুট করে জলাশয়ে পরিণত করা হয়েছে।
সম্প্রতি দর্শনা সীমান্ত থেকে পালানোর সময় আটক হওয়া আজিজুর রহমান আজিজের বিরুদ্ধে হত্যা, গুম ও চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা রয়েছে উল্লেখ করে এরশাদ আলী বলেন, আমরা আদালতের কাছে দাবি করেছি, এই সন্ত্রাসীকে যেন জামিন দেয়া না হয়। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যাতে নিশ্চিত করা হয়। তিনি বলেন, আজিজ বাহিনীর লোকেরা এখনও এলাকায় মহড়া দিচ্ছে। আজিজের হাতে নির্যাতিতরা এখন মুখ খুলছে। আমরা চাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে এবং আমাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আদালত যেন তাকে জামিন না দেন। তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমি দেশবাসীর কাছে ন্যায়বিচার চাই। যারা আমার প্রতিষ্ঠানের লুটপাট ও দখলের সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
হয়রানির বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে আমাকে বারবার মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হতো। ২০১৭ সালে তিনবার আমাকে তুলে নিয়ে প্রতিবার ৫০ লাখ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। ডিবির তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার বাতেন ও ডিবি লালবাগের এডিসি মাহমুদা আফরোজ লাকীকে টাকা না দিলে হয়তো আজ বেঁচে থাকতাম না। দীর্ঘ কারাবাস ও নির্যাতনের কারণে শারীরিকভাবে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমার ৮০ শতাংশ কিডনি নষ্ট, ডায়াবেটিস ও লিভার সিরোসিসে ভুগছি।
ভুক্তভোগী এ ব্যবসায়ী বলেন, পৈত্রিক সূত্রে ১৯৯২ সালে ব্যবসার হাল ধরি। দেশের শীর্ষ ট্রান্সপোর্ট প্রতিষ্ঠান শাহ মখদুম ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা থেকে শুরু হয় যাত্রা। দুই শতাধিক ছোট-বড় ট্রাকের মাধ্যমে দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালামাল পরিবহন করতাম। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসা করে সুনাম অর্জন করেছি ও পুরস্কৃত হয়েছি। এভাবে ২০১০ সাল পর্যন্ত সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে বেশ কয়েকটি সিস্টার কনসার্নের মাধ্যমে ‘এরশাদ গ্রুপ’ দেশের শিল্পক্ষেত্রে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করে। গ্রুপের ১০-১২টি প্রতিষ্ঠানে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয় এবং দেশ-বিদেশ থেকে অনেক পুরস্কার অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি।
ভুক্তভোগী এ ব্যবসায়ীর হয়ে মামলা লড়ছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহম্মদ জিয়াউদ্দিন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এরশাদ গ্রুপের মামলা আমি পরিচালনা করেছি। তিনি বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। অনেক রাজনৈতিক মামলাতে ওনাকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। অনেক মামলা বিচারধীন অবস্থায় বিভিন্ন আদালতে আছে। তাকে হয়রানি করা পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছিল, সেগুলো বিচারাধীন আছে। বিশেষ করে যে আজিজ স্টিল মিলের সব মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় তিনি মুখ খুলতে পারেননি। নানা ধরনের হুমকি দিয়েছে, একাধিকবার মেরে ফেলার চেষ্টাও করেছিল। এখন যেন অন্তত তিনি আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পান সেই আশা। আদালত সব সময় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে আসছেন।
যোগাযোগ: সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: রাসেল সরকার, অফিস: ৩৯/৩, মানিক নগর, পুকুর পাড়, মুগদা, ঢাকা - ১২০৩, ফোন: +৮৮০১৭২৬৯১৫৫২৪, +৮৮০১৯৭৬৯১৫৫২৪, ইমেইল: Sheikhmdraselbd@gmail.com, www.dailydigantapratidin.com
2025 © All rights reserved © দৈনিক দিগন্ত প্রতিদিন