স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর ডেমরাসহ আশপাশের এলাকায় ওপেন চলে অনলাইন জুয়া ও মাদকের রমরমা ব্যবসা। এতে বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়, বিশৃঙ্খলা ও চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধ।
অভিযোগ রয়েছে, গত বছর ৫ আগস্ট অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক ও অনলাইন জুয়ার আগ্রাসন। কোনো বাধা-বিপত্তি না থাকায় একই সঙ্গে বেপেরোয়া মাদকসেবী ও জুয়াড়িরা। সম্প্রতি মোবাইল লুডুর জুয়ার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। থেমে নেই অ্যাপভিত্তিক ক্রিকেট জুয়ার আগ্রাসনও। আর এসবে জড়িয়ে পড়েছে কিশোর, যুবক ও যুব মহিলাদের একটি বড় অংশ। অনেক বয়স্করাও মাদক সেবন ও ক্রিক্রেট জুয়ায় মেতেছে। বিপথে যাচ্ছে জুয়ায় অভ্যস্তরা, অর্থের জোগান দিতে জড়িয়ে পড়ছে চুরি-ছিনতাই ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে। এদিকে নগদ জুয়ার ভয়াবহ আসক্তি ছড়িয়ে পড়ছে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যেও।
সাধারণ বোর্ড গেমের মোড়কে ডিজিটাল জুয়া সমাজে নতুন ব্যাধি হিসাবে দেখা দিয়েছে। চায়ের দোকান, অটোরিকশা-সিএনজি গ্যারেজ, রাস্তার মোড়, বিপণিবিতান, বাজার, সেলুন কিংবা বাসাবাড়ির আড্ডায় অবাধে চলছে বাজি রেখে মোবাইল লুডু, বিট কয়েন, প্লেয়িং কার্ড, ক্রিকেট, ফুটবল ও অ্যাপভিত্তিক জুয়া। এসব খেলার ছলেই চলছে ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল, বিয়ার ও মদ বিক্রি। পাশাপাশি নেশাগ্রস্তদের প্রতিদিনকার মাদক সেবনের বিষয়টি তো রয়েছেই। প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখের সামনে এসব ঘটলেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
নদী ও সড়কপথে ডেমরায় আসছে মাদকদ্রব্য। শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীপথে পণ্যবাহী জাহাজ ও বাল্কহেডে আসা এসব মাদক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। ডেমরায় বর্তমানে ২০০ স্পটে ওপেন মাদক কেনাবেচা চলছে। পাড়া-মহল্লা ও অলিগলি সর্বত্র মাদকের ছড়াছড়ি। উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্য জড়িয়ে পড়েছে মাদক সেবনে। হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। মাদকসেবীদের হাতে মা-বাবা, পরিবারের লোকজন প্রায়ই লাঞ্ছিত হওয়ার পাশাপাশি খুনের শিকার হচ্ছেন।
সূত্র আরও জানায়, প্রতিটি গেমে বাজি শুরু হয় ২০ টাকায়, যা বেড়ে ১০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। এ সুযোগে অনেকেই মোবাইল ভাড়া দেওয়ার ব্যবসাও করছে। বাজির পরিমাণ যত বেশি, মোবাইল ভাড়াও তত বেশি-প্রতি খেলোয়াড়কে ভাড়া দিতে হচ্ছে ১০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। এদিকে ক্রিকেট, বিট কয়েন ও অনলাইন জুয়ায় বাজি আরও বেশি বলে অভিযোগ। অনেক দোকানদার দোকানের এক কোণা, গ্যারেজ মালিক গ্যারেজের জায়গা, সেলুন ও বিভিন্ন দোকানের সামনের জায়গা অনলাইন জুয়াড়িদের জন্য আলাদাভাবে বরাদ্দ রাখেন।
অভিযোগ রয়েছে, বাজিতে হেরে হতাশায় অনেকে চুরি-ছিনতাই, প্রতারণা বা অন্যান্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বাজির টাকা নিয়ে হাতাহাতি, মারামারির ঘটনা ঘটছে, ভেঙে যাচ্ছে সামাজিক বন্ধন, বাড়ছে অবক্ষয়, পারিবারিক অশান্তি। শিক্ষার্থীদের অনেকেই পকেটমানি কিংবা টিউশনের টাকা বাজিতে খরচ করছে। ফলে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমছে, নষ্ট হচ্ছে পারিবারিক বন্ধন ও মূল্যবোধ।
এ বিষয়ে ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমান বলেন, মাদকের বিষয়ে প্রায় প্রতিদিনই অভিযান চলছে, গ্রেফতারও হচ্ছে। তবে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টাকা দিয়ে গেম খেলা এক ধরনের অবৈধ জুয়া হলেও সহজে নজরে আসে না। এক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যরা সর্বত্র নজরদারি করছে। তবে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে শুধু পুলিশের পক্ষে সমাধান সম্ভব নয়। সামাজিক সংগঠনসহ পঞ্চায়েতভিত্তিক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
যোগাযোগ: সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: রাসেল সরকার, অফিস: ৩৯/৩, মানিক নগর, পুকুর পাড়, মুগদা, ঢাকা - ১২০৩, ফোন: +৮৮০১৭২৬৯১৫৫২৪, +৮৮০১৯৭৬৯১৫৫২৪, ইমেইল: Sheikhmdraselbd@gmail.com, www.dailydigantapratidin.com
2025 © All rights reserved © দৈনিক দিগন্ত প্রতিদিন