আসসালামু আলাইকুম, আজ ১৪ অক্টোবর ২০২৫ আমার প্রিয় বাবা মুহম্মদ আলতাফ হোসেনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনে তাঁকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছি। আল্লাহতালার দরবারে দোয়া করি তিনি যেন আমার বাবাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বোচ্চ মাকাম দান করেন।
আমি সাধারণত অতীত নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। পুরনো কমিটি বা বিগত দিনের ঘটনাবলী নিয়ে বিতর্কে যেতে চাই না। তবু মনে হচ্ছে, আমাদের উদারতা ও নীরবতাকে কেউ কেউ দুর্বলতা ভেবে অনভিপ্রেত কাজকে উৎসাহিত করছে। তাই দায়িত্ববোধ থেকেই আজ কয়েকটি কথা রাখতে বাধ্য হচ্ছি।
আমার বাবা জাতীয় সাংবাদিক সংস্থাকে নিজের সন্তানের মতো লালন করেছেন। এই সংস্থাই ছিল তাঁর স্বপ্ন ও সাধনা। তিনি এটিকে রাষ্ট্রের একটি মূল্যবান সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। এ বিষয়ে আমাদের পরিবারের কারও কখনো কোনো দ্বিধা ছিল না—আজও নেই।
আজ সকালে নামাজ শেষে মোবাইলে দেখলাম, মুহাম্মাদ কামরুল চাচা ও কয়েকজন বাবার কবর জিয়ারত করছেন। তাদের এই শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে একটি ছোট বার্তা দিয়ে ছিলাম। দুঃখজনকভাবে বার্তাটি বেশিক্ষণ দৃশ্যমান ছিল না। কেন এমনটি হলো—সংস্থার সদস্যরা হয়তো বুঝতে পারবেন।
বাবা মারা যাওয়ার পর তাঁর রেখে যাওয়া আস্থা ও দায়িত্বের প্রতি সম্মান জানিয়ে, আমরা সংস্থার দায়িত্ব মুহাম্মাদ কামরুল চাচার ওপর অর্পণ করি। পরবর্তীতে তিনি মমিনুর রসিদ শাইন চাচাকে সভাপতি হিসেবে মনোনীত করেন। তাদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে মেনে নিয়েছি ও সাধুবাদ জানিয়েছি। বিভিন্ন সময় কিছু অনিয়মের অভিযোগ আমাদের কানে এলেও আমরা সেগুলোকে ভুলবোঝাবুঝি ভেবে গুরুত্ব দিইনি।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে কিছু বিষয় নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন পক্ষ থেকে জানানো অভিযোগ ও প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা পরিতাপের। সংক্ষেপে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করছি—এসবের প্রত্যেকটিরই যথাযথ অনুসন্ধান ও স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রয়োজন বলে মনে করি:
যথাযথ কারণ ও প্রক্রিয়া ছাড়াই অনেক অভিজ্ঞ ও পুরোনো সদস্যের সদস্যপদ বাতিলের অভিযোগ উঠেছে—যাঁরা দীর্ঘদিন বাবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন। দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে ব্যক্তিনামে সমান্তরাল সংগঠন গঠনের উদ্যোগ, সংস্থার অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া পেজ/ডিজিটাল সম্পদ ও অফিসিয়াল নাম পরিবর্তন করে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে—যা নীতিগতভাবে অত্যন্ত অগ্রহণযোগ্য।
আজ পর্যন্ত আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছ হিসাব ও নিয়মিত অডিটেড প্রতিবেদন সদস্যদের সামনে উপস্থাপিত হয়নি—সদস্যদের চাঁদার অর্থ আমানতস্বরূপ; তাই এ বিষয়ে জবাবদিহি অপরিহার্য। সংস্থার সদস্যদের নামে যথাযথ অনুমোদন ব্যতীত ইন্স্যুরেন্স পলিসি করা এবং কয়েকজনের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি অগ্রিম অর্থ নেওয়ার অভিযোগ এসেছে—যা নীতিমালাবিরোধী ও সদস্যদের জন্য বিভ্রান্তিকর।
বর্তমান সময়ে সংস্থার অনুষ্ঠানগুলোতে সদস্যদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সবার চোখে পড়ছে। একইসঙ্গে, বিগত মহাসচিবসহ কিছু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নতুন সংগঠন গঠনের প্রচেষ্টায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে—এমন মন্তব্য ও তথ্য আমরা বিভিন্ন দিক থেকে পেয়েছি। বাবা তাঁর জীবদ্দশায় আমার মাকে কার্যনির্বাহী ক্ষমতা অর্পণ করে গিয়েছিলেন। সেই ক্ষমতার বলেই আমরা পুরো কমিটি ভেঙে না দিয়ে সীমিত কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি—শুধু মাত্র তখনকার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ব্যক্তিগত মর্যাদা যেন অক্ষুণ্ণ থাকে, এই বিবেচনায়। কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া আমাদের জন্য কঠিন ছিল না; তবুও আমরা সংহতি ও সৌজন্য বজায় রেখেই এগিয়েছি।
দুঃখের বিষয়, আমাদের এই উদারতাকেই হয়তো কেউ কেউ ভুলভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন। সম্ভবত আমাদের পারিবারিক ভদ্রতা ও নীরবতাকে দুর্বলতা বলে ধরে নিয়ে সংস্থার স্বার্থবিরোধী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সংস্থার মূল লক্ষ্য ও মর্যাদা থেকে সরে গিয়ে একে বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহার করার যে অভিযোগ উঠেছে, তার বিচার আল্লাহতালার ওপর সোপর্দ করছি। অন্য সব অভিযোগেরও পরিণতি একদিন না একদিন স্পষ্ট হবে—এই বিশ্বাস রাখি।
পরিশেষে, আল্লাহতালার কাছে দোয়া করি—তিনি যেন আমাদের প্রিয় সংস্থাকে কল্যাণের পথে রাখেন, সংশ্লিষ্ট সবাইকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করেন, এবং আমাদের সকলকে ক্ষমা করে দেন।
লেখক:
মুহম্মদ মনজুর হোসেন।
যোগাযোগ: সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: রাসেল সরকার, অফিস: ৩৯/৩, মানিক নগর, পুকুর পাড়, মুগদা, ঢাকা - ১২০৩, ফোন: +৮৮০১৭২৬৯১৫৫২৪, +৮৮০১৯৭৬৯১৫৫২৪, ইমেইল: Sheikhmdraselbd@gmail.com, www.dailydigantapratidin.com
2025 © All rights reserved © দৈনিক দিগন্ত প্রতিদিন