5:54 pm, Tuesday, 4 November 2025

গলাটিপে হত্যা করে আল্লাহর ভয়ে নামাজ পড়ে ক্ষমা চান খুনিরা

দিগন্ত প্রতিদিন

image 229813 1759853825

 

জেলা প্রতিনিধি:
নড়াইলে ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক আমিনুল বিশ্বাস ওরফে আলিফ হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান জেলা পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম।

নিহত কিশোর আলিফ (১৫) সদর উপজেলার ছোট মিতনা গ্রামের কিনায়েত বিশ্বাসের ছেলে। গ্রেপ্তার দুই আসামি হলেন- চাচড়া গ্রামের বাহারুল বিশ্বাসের ছেলে মিনারুল বিশ্বাস (২২) ও একই গ্রামের হাফিজুর মোল্যার ছেলে হৃদয় মোল্যা (২০)।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আলিফের ব্যাটারিচালিত ভ্যান ছিনিয়ে নিতে শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাতে বাড়ি থেকে কৌশলে ডেকে নেন মিনারুল ও হৃদয়। তারা ওই রাতে আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন স্থানে অটোভ্যানে ঘোরাফেরা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী কোমল পানীয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে আলিফকে পান করান তারা।

তিনি আরও বলেন, কিছু সময় পর আলিফের ঘুম ঘুম ভাব এলে হৃদয় ভ্যান চালিয়ে বাহিরগ্রাম বাজারে যান। সেখানে ভ্যানটি চার্জ দেওয়ার অজুহাতে সেটি হৃদয়ের মামার বাড়িতে রেখে আসে। পরে তিনজন হাঁটতে হাঁটতে দেবভোগ এলাকার নুড়িতলা বিল এলাকায় পৌঁছান।

এসপি বলেন, সেখানে আলিফ ঘুমিয়ে পড়লে হৃদয় তার পা চেপে ধরেন এবং মিনারুল গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে তারা আলিফের মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা নিয়ে মরদেহ পাশের পুকুরের কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রাখেন।

রবিউল ইসলাম বলেন, আলিফের নিখোঁজ ডায়েরির পর একাধিক দল মাঠে নামে। সন্দেহভাজন হিসেবে মিনারুলকে আটক করলে সে মরদেহের অবস্থান জানায়। তার দেওয়া তথ্যে বিক্রিত ভ্যানের ব্যাটারি শহরের মুচির পোল এলাকা থেকে এবং ভ্যানটি হৃদয়ের মামার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে হৃদয়কে গ্রেপ্তার করে নড়াইল গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার কাছ থেকে আলিফের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সুপার বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মারুফ হাসানের আদালতে আলিফ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত মিনারুল ও হৃদয় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অভিযুক্তরা জানান, সামান্য কিছু টাকার জন্য তারা আলিফকে হত্যা করে।

রবিউল আরও বলেন, হত্যার পর মরদেহ কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রেখে তারা হৃদয়ের মামার বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ফজরের আজানের পর আল্লাহর ভয় ও অনুশোচনায় তারা বাহিরপাড়া জামে মসজিদে নামাজ আদায় করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং সকালে স্থানীয় বাজারে চা-পান করেন। পরে মিনারুল নিজ এলাকায় ফিরে যান, হৃদয় পালিয়ে গোপালগঞ্জে চলে যান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) নূর-ই আলম সিদ্দিকী, নড়াইল সদর থানার ওসি মো. সাজেদুল ইসলামসহ জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাত ৮টার পর অটোভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন কিশোর আলিফ। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। দুদিন পর রোববার (৫ অক্টোবর) তার মা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

পরে আটক মিনারুলকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করলে তার দেখানো জায়গা থেকে দেবভোগ নুড়িতলা বিলের কচুরিপানার নিচ থেকে আলিফের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 05:10:05 pm, Tuesday, 7 October 2025
69 Time View

গলাটিপে হত্যা করে আল্লাহর ভয়ে নামাজ পড়ে ক্ষমা চান খুনিরা

Update Time : 05:10:05 pm, Tuesday, 7 October 2025

 

জেলা প্রতিনিধি:
নড়াইলে ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক আমিনুল বিশ্বাস ওরফে আলিফ হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান জেলা পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম।

নিহত কিশোর আলিফ (১৫) সদর উপজেলার ছোট মিতনা গ্রামের কিনায়েত বিশ্বাসের ছেলে। গ্রেপ্তার দুই আসামি হলেন- চাচড়া গ্রামের বাহারুল বিশ্বাসের ছেলে মিনারুল বিশ্বাস (২২) ও একই গ্রামের হাফিজুর মোল্যার ছেলে হৃদয় মোল্যা (২০)।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আলিফের ব্যাটারিচালিত ভ্যান ছিনিয়ে নিতে শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাতে বাড়ি থেকে কৌশলে ডেকে নেন মিনারুল ও হৃদয়। তারা ওই রাতে আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন স্থানে অটোভ্যানে ঘোরাফেরা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী কোমল পানীয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে আলিফকে পান করান তারা।

তিনি আরও বলেন, কিছু সময় পর আলিফের ঘুম ঘুম ভাব এলে হৃদয় ভ্যান চালিয়ে বাহিরগ্রাম বাজারে যান। সেখানে ভ্যানটি চার্জ দেওয়ার অজুহাতে সেটি হৃদয়ের মামার বাড়িতে রেখে আসে। পরে তিনজন হাঁটতে হাঁটতে দেবভোগ এলাকার নুড়িতলা বিল এলাকায় পৌঁছান।

এসপি বলেন, সেখানে আলিফ ঘুমিয়ে পড়লে হৃদয় তার পা চেপে ধরেন এবং মিনারুল গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে তারা আলিফের মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা নিয়ে মরদেহ পাশের পুকুরের কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রাখেন।

রবিউল ইসলাম বলেন, আলিফের নিখোঁজ ডায়েরির পর একাধিক দল মাঠে নামে। সন্দেহভাজন হিসেবে মিনারুলকে আটক করলে সে মরদেহের অবস্থান জানায়। তার দেওয়া তথ্যে বিক্রিত ভ্যানের ব্যাটারি শহরের মুচির পোল এলাকা থেকে এবং ভ্যানটি হৃদয়ের মামার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে হৃদয়কে গ্রেপ্তার করে নড়াইল গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার কাছ থেকে আলিফের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সুপার বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মারুফ হাসানের আদালতে আলিফ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত মিনারুল ও হৃদয় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অভিযুক্তরা জানান, সামান্য কিছু টাকার জন্য তারা আলিফকে হত্যা করে।

রবিউল আরও বলেন, হত্যার পর মরদেহ কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রেখে তারা হৃদয়ের মামার বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ফজরের আজানের পর আল্লাহর ভয় ও অনুশোচনায় তারা বাহিরপাড়া জামে মসজিদে নামাজ আদায় করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং সকালে স্থানীয় বাজারে চা-পান করেন। পরে মিনারুল নিজ এলাকায় ফিরে যান, হৃদয় পালিয়ে গোপালগঞ্জে চলে যান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) নূর-ই আলম সিদ্দিকী, নড়াইল সদর থানার ওসি মো. সাজেদুল ইসলামসহ জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাত ৮টার পর অটোভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন কিশোর আলিফ। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। দুদিন পর রোববার (৫ অক্টোবর) তার মা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

পরে আটক মিনারুলকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করলে তার দেখানো জায়গা থেকে দেবভোগ নুড়িতলা বিলের কচুরিপানার নিচ থেকে আলিফের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।