খাদ্য গোডাউনে দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের স্বর্গরাজ্য পরিণত করেছে; জাহাঙ্গীর আলম

বিশেষ প্রতিনিধি:
প্রাদেশিক সরকার ১৯৪৩ সালে বাংলার দুর্ভিক্ষ মোকাবিলার জন্য তৎকালীন সরকার Bengal Rationing Order/1943 জারি করে এবং Bengal Civil Supplies Dept. হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।
যা মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীকালে স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয় অধীনস্থ প্রধান খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ঢাকা রেশনিং বিভাগ কর্তৃক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে পূর্বের প্রাতিষ্ঠানিক (Directorate General of Food) নামে পুনর্গঠন পূর্বক রূপ প্রদান করা হয়। যা গনতান্ত্রিক দেশের সরকারের প্রজাতন্ত্রের মৌলিক অধিকার জনগণের খাদ্য মজুত গড়ে তোলা, দেশের মানুষের নিরাপদ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কালোবাজারি চক্র দমন, পন্যের বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা এবং হত-দরিদ্র পরিবারকে সহযোগিতার লক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে চাল ও আটা বিক্রি র্কাযক্রম চালিয়ে থাকে।
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৬৫ তম সদস্য হিসেবে গত ইং- ১১/১০/২০২৩ তারিখ মো: জাহাঙ্গীর আলমকে প্রধান খাদ্য নিয়ন্ত্রকের (সিসিডিআর) দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পরই অফিস থেকে শুরু করে গোডাউন দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিলারদের অভিযোগ রয়েছে।
সূত্রে জানা যায় মো, জাহাঙ্গীর আলম দ্বায়িত্বরত ডিলারদের প্রতিনিধি নিয়োগ বাণিজ্য, ওএমএস রেশন কার্ড বাণিজ্য, ডিলারদের বিক্রয় কার্যক্রম বাণিজ্য, উৎকোচের বিনিময়ে কালোবাজারি চক্র দিয়ে একাধিক ডিলার পরিচালনার করা, নষ্ট ও খাবার অনুপযোগী আটা মিলারদের যোগসাজশে ওএমএস ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রি করতে বাধ্য করাসহ ডিলার নিয়োগ বাণিজ্যের মত বিভিন্ন অপকর্মের স্রষ্টা হিসেবে কাজ করেছে।
এ বিষয় আমাদের অনুসন্ধানী প্রতিনিধি মো, মৃদুল শাহারিয়ার পিয়াস তার সহযোগী মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান করলে দেখেন সরকার হত-দরিদ্রদের মাঝে স্বল্প দামে খোলা বাজারে চাল ও আটা বিক্রি করতে আসা ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা সারাদিন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো ক্রেতাদের পণ্য ক্রয় থেকে বঞ্চিত করা হয়। ওএমএস নীতিমালার নিয়ম অমান্য করে বিক্রয় স্থলে তদারকি কর্মকর্তাদের অনুপস্থিত দৃশ্যমান চিত্র। যার ফলে ডিলাররা দোকান ও ট্রাক সেলে হতদরিদ্রদের বঞ্চিত করে চাল ও আটা গোপনে নিজেদের পছন্দমত দোকানে বেশি দামে বিক্রি করে। অসংখ্য নারী ও পুরুষ ট্রাকের পেছনে প্রচন্ড রোদ ও গরমের মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে চাল ও আটা কিনতে না পেরে খালি হাতে ফিরে যায়। অন্যদিকে ট্রাক সেল সকাল ৯ ঘটিকার মধ্যে বিক্রয় স্থানে আসার কথা।
অথচ সকাল ১১ ঘটিকার আগে কোন ট্রাক বিক্রির স্থানে আসে না আর ভুল ক্রমে আগে আসলেও ১১ টার আগে বিক্রি শুরু করে না। তারপর ট্রাকে বসে ডিলার ও বিক্রেতারা ইচ্ছা করে অতি মন্থর গতিতে মালামাল মাপতে থাকে। যার উদ্দেশ্য হচ্ছে বিকেল ৫ টা বাজলে অবশিষ্ট চাল ও আটা নিয়ে স্থান ত্যাগ করা। এভাবে অনেক ট্রাক বিকেল ৫ টা বাজার সাথে সাথে অবশিষ্ট মালামাল নিয়ে নির্ধারিত স্থান ত্যাগ করে। আবার অনেক ট্রাক বিকেল ৪ ঘটিকার সাথে সাথে অবশিষ্ট চাল ও আটা নিয়ে চলে যায় ও নিজেদের পছন্দমত দোকানে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে।
ঢাকার আবদুল গণি রোডে অবস্থিত খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ বলেন, দোকান সেল/ট্রাক সেলের ক্ষেত্রে ডিলারদের কাছে যে পর্যন্ত মালামাল থাকবে সে পর্যন্ত বিক্রি করতে হবে। ডিলারদের এসব অনিয়মের সাথে ঢাকা রেশনিং প্রধান নিয়ন্ত্রক মো: জাহাঙ্গীর আলমের মদদে সমান তালে অফিস কর্মকর্তাদেরও যোগসাজেশ রয়েছে বলে একাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে জানা গেছে।
ডিলাররা ঢাকা রেশনিং এর কর্মকর্তাদের ও প্রধান নিয়ন্ত্রক মো: জাহাঙ্গীর আলমকে উৎকোচ প্রদান করেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিলাররা জানান। যার ফলে কর্মকর্তারা ডিলারদের অনিয়মকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। ডিলারদের রোস্টার প্রস্তাবের নাম অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রেও সহকারী নিয়ন্ত্রক সাব্বীর আহমেদ মুরাদকে টাকা দিতে হয় বলে খাদ্য মন্ত্রনালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ রয়েছে।
কোন ডিলার টাকা না দিলে রোস্টারে তার নাম থাকে না। ঢাকা মহানগরে চলমান ওএমএস কার্যক্রমে আটা সরবরাহের নিমিত্তে বেসরকারি ফ্লাওয়ার মিলের অনুকুলে গম বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এই বরাদ্দ প্রদান করেন প্রধান নিয়ন্ত্রক মো: জাহাঙ্গীর আলম। যেসব মিল মো: জাহাঙ্গীর আলমকে টাকা প্রদান করে সেসব মিল গম বরাদ্দ পায় এবং বেশি গম বরাদ্দ পায়। এ ব্যাপারে ডেমরার ইয়াছিন ফ্লাওয়ার মিল, নিপা ফ্লাওয়ার মিল, ইউসুফ ফ্লাওয়ার মিল, মামুন ফ্লাওয়ার মিল, হানিফিয়া ফ্লাওয়ার মিল, উজ্জল ফ্লাওয়ার মিল, ঢাকার খিলক্ষেতে হাদি ফ্লাওয়ার মিল সহ নারায়নগঞ্জের নিতাইগঞ্জে একাধিক মিলের সাথে মো: জাহাঙ্গীর আলমের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। আটা মিলারদের সূত্রে আরো তথ্য পাওয়া যায়, নামে বেনামে একাধিক আটার মিল পরিচালনা করছেন মিলার সোহাগ।
টাকার বিনিময়ে ঘুরেফিরে এসব মিলগুলোই গম বরাদ্দ পায় যা তদন্ত করলে প্রমাণিত হবে। এভাবে অনিয়ম দুর্নীতি করে প্রধান নিয়ন্ত্রক মো: জাহাঙ্গীর আলম প্রতি মাসে প্রায় ১২-১৫ লাখ টাকা আয় করেন বলে ধারণা করা যাচ্ছে। এই ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন ও খাদ্য মন্ত্রনালয়ে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তার অর্থ সম্পদের হিসাব নিলে তথ্যের সত্যতা পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। নতুন ডিলার নিয়োগের ক্ষেত্রেও সিসিডিআর মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে আমাদের প্রতিবেদকের কাছে অসংখ্য অভিযোগের তথ্য এসেছে এবং অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন পরবর্তী প্রতিবেদনে।
																			
																		
								                                        

















