1:02 am, Wednesday, 5 November 2025

একটি রঙিন খাম দিয়ে সাংবাদিক কেনা যায়, কিন্তু সাংবাদিকতা নয়- এম রাসেল সরকার

এম রাসেল সরকার

picsart 25 10 06 23 25 58 261

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের আলোচনায় বস্তুনিষ্ঠতা আর নিরপেক্ষতার আলোচনা সত্যিকার অর্থে এক কঠিন কাজ। জীবনভর রাজনৈতিকরা, আমলারা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলে এসেছেন, গণমাধ্যম ও সাংবাদিককে হতে হবে বস্তুনিষ্ঠ, পক্ষপাতহীন, ভারসাম্যপূর্ণ এবং তাদের সব কাজে থাকবে ন্যায্যতা। কিন্তু এসব পরিভাষার সাথে নিরপেক্ষতার সম্পর্ক সৃষ্টি করাটা বেশ কঠিন।

সাংবাদিকদের বলা হয় কলম সৈনিক! কলমটা তার অস্ত্র এবং সেটা দিয়েই  প্রতিনিয়ত তার যুদ্ধ। সশস্ত্র বাহিনী যেমন কোনও বিশেষ দলের না, দেশের জন্য লড়াই করে, দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। সাংবাদিকরাও একেকজন যোদ্ধা, তাদের হওয়ার কথা দেশের, নির্দিষ্ট কোনও দলের নয়। কিন্তু আমরা দলীয় হয়েছি বা হয়ে পড়ছি।

মানুষ গণমাধ্যমের ওপর দিন দিন আস্থা হারাচ্ছে। সম্প্রতি বিশ্বের ৪৬টি দেশের ওপর রয়টার্স এক জরিপ করেছে। ওই বার্ষিক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ১০ জনের মধ্যে তিন জনের ধারণা, গণমাধ্যমগুলো সমাজের চেয়ে তাদের বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক স্বার্থকে এগিয়ে রাখছে। এতে ১০ জনের মধ্যে ৩ জনের অভিযোগ, তারা যেসব সংবাদ দেখেন তা পক্ষপাতদুষ্ট। এছাড়া, শতকরা ১৬ ভাগ মানুষ মনে করেন, প্রচারিত খবরের তথ্য তাদের কোনও কাজে আসে না। তিন জনের অভিযোগ কিন্তু আমাদের দেশের না, আমাদের দেশে সংখ্যাটা ১০ জনেরও বেশি হবে নিশ্চিত। এ আস্থার জরিপে আমাদের অবস্থান ১৬৫ নম্বরে। আমাদের আগে ভারত, পাকিস্তানসহ আরও ১৬৪টি দেশ আছে। পক্ষপাতদুষ্ট শব্দটা আমাদের জন্য বোধকরি বেশি প্রযোজ্য। একটা সময় ছিল, যখন কোনও সাংবাদিক তার রাজনৈতিক পরিচয় কিংবা মত প্রকাশ করতো না। করলেই তিনি বা তারা গ্রহণযোগ্যতা হারাতেন। কারণ, মনেই করা হতো, তিনি যা বলছেন তা নির্দিষ্ট একটি দলের ভালোর জন্যই বলেছেন, তাতে সত্যতা নাও থাকতে পারে।

এখন সবাই তার পরিচয় আড়াল করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না, বরং এক ধরনের গর্ববোধের অবস্থা দেখতে পাই। অনেকেই  প্রমাণে ব্যস্ত তার রাজনৈতিক মত, কিংবা পরিচয় তুলে ধরতে। তারা সরাসরি বলতে চান আমরা বিশেষ ‘দলের সাংবাদিক’। মানুষের অনাস্থা আর সন্দেহের শুরু মূলত এখান থেকেই।

‘আমরা’ শব্দটা বললে সবার প্রতি অবিচার করা হয়। বলা হয়ে থাকে কিছু সংখ্যক সাংবাদিক এবং এই সাংবাদিকরা সর্বোচ্চ পদে থাকায়, তাদের চেহারাটাই সবসময় দেখা যায়। এসব কারণেই জনমনে ধারণা হয় যে সাংবাদিক মানেই দলীয়। বিষয়টা অনেক ক্ষেত্রে উল্টো। যাদের চেহারা দেখা যায় তাদের অনেকেই মালিক। একটি  প্রতিষ্ঠানের মালিক সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখবেন, এটি স্বাভাবিক, অস্বাভাবিকের কিছু নেই। অনেক ক্ষেত্রে কেউ কেউ তার কর্মী বাহিনীকে সেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতে ব্যবহার করবেন সেটিও স্বাভাবিক। বিষয়টা হচ্ছে, মালিকরা কিন্তু সবাইকে ব্যবহার করেন না। কিন্তু অনেকেই আছেন, যারা নিজ থেকেই ব্যবহৃত হতে চান। সমস্যা মূলত তাদের নিয়েই।

তারা এত উচ্চকণ্ঠ আর প্রকাশ্য যে জনগণ মনে করেন এরাই সাংবাদিক এবং সাংবাদিক মানেই দলীয়। কিন্তু তারা এসব করে দল বা দেশের জন্য এমন নয়, তারা সবাই ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্যই এসব করেন। এমন ‘দলীয় সাংবাদিক’ পাবেন না, যিনি পদ-পদবি কিংবা অর্থ উপার্জন করে রমরমা অবস্থায় নেই। তারা না থাকলে দলের কিছুই হয় না। দলকে টিকিয়ে রাখে মূলত কর্মী বাহিনী। রাজনৈতিক দলগুলো টিকে থাকে জনগণের ভালোবাসায়।

একজন সাংবাদিক ভালো কাজে সরকারের প্রশংসা করবেন, খারাপ যা তা তুলে ধরবেন, সেটাই হওয়ার কথা। কিন্তু আপনি যদি দেখেন বছরের পর বছর খারাপ কাজটির পক্ষেও তার যুক্তি থাকে কোনও বিশেষ দলের পক্ষে, তখন বুঝে নিতে হবে তিনি আসলে সেই দলীয় সৈনিকই। এই  সৈনিক দলের জন্য যত না করেন, তার চেয়ে বেশি করেন নিজের জন্য। তারা তোষামোদির বিনিময়ে কোটি টাকার কাজ, বিদেশ ভ্রমণ, বড় পদ আর ক্ষমতা সব নেন। তাহলে কেমন করে বলবেন যে সেই সাংবাদিক নিঃস্বার্থভাবে দলকে বা আদর্শকে ভালোবেসেই সেই দলের পক্ষে কথা বলেন? বলা হয়ে থাকে, যদি রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হতো স্বাভাবিক নিয়মে, তবে বেশিরভাগই এমন দলীয় রূপে প্রকাশ্য হতেন না। তারা সাংবাদিক থাকারই চেষ্টা করতেন।

এখন যেটা হয়েছে, আমরা সবাই জনসংযোগ কর্মকর্তার কাজ করছি। এই মন্ত্রী কী বলছেন, অন্যরা কী বলে, তাতেই আমাদের সাংবাদিকতা আটকে গেছে। তবু এর মধ্যেই অনেকে সাংবাদিকতা করে যাচ্ছেন। তা না হলে এত অপরাধের খবর আপনারা কোথায় পেতেন? সেটা সাংবাদিকরাই বের করেন। তারাই আসল সাংবাদিক। তো এমন সব সাংবাদিকদের জনগণ চেনেন। তবু ঢালাওভাবে সবার ওপরই অনাস্থা তৈরি হয়েছে। একসময় সাংবাদিকদের যে শ্রদ্ধার চোখে দেখা হতো, এখন অহরহ মিলছে কটু কথা।

সাংবাদিকরা, যারা ব্যক্তিগতভাবে ভীষণ লাভজনক অবস্থায় আছেন, তারা সাংবাদিকতা কোথায় গেলো সেসব নিয়ে মাথা ঘামান না। কারণ, সাংবাদিকতা তাদের কেবল ‘নেইমপ্লেট’। কিন্তু যারা আসলেই সাংবাদিক তারা প্রতি মুহূর্তে বোধ করেন সাংবাদিকতা হারিয়ে যাওয়ার কষ্ট, সম্মান আর আস্থা হারিয়ে যাওয়ার বেদনা। ধ্বংসস্তূপে বসে থেকে তারা আবার জেগে ওঠার স্বপ্ন দেখেন। এমন সাংবাদিকতার স্বপ্ন দেখেন, যা শুধুই কথা বলবে দেশ আর জনগণের।

স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিতে নির্দলীয় প্ল্যাটফর্মের দাবি.!

দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করতে নির্দলীয় প্ল্যাটফর্মের দাবি জানিয়েছেন সর্বস্তরের সাংবাদিকেরা। রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিমূলক সাংবাদিকতা ও করপোরেট মালিকদের স্বার্থরক্ষায় পেশাদার গণমাধ্যমকর্মীদের অধিকার ক্ষুণ্ন করার পাশাপাশি গণমাধ্যমকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এ সংকট কাটাতে গণমাধ্যমের সামষ্টিক চরিত্র পাল্টাতে হবে। সময় মুক্ত, স্বাধীন ও শক্তিশালী গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠায় একটি নির্দলীয় প্ল্যাটফর্ম তৈরির বিষয়ে একমত হতে হবে সর্বস্তরের সাংবাদিকেরা।

সাংবাদিকতার জগতে এখন তিনটি অভ্যুত্থান দরকার, ‘প্রথম করপোরেট ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে, দ্বিতীয়ত দলীয় সাংবাদিক ইউনিয়ন ও প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে, তৃতীয়ত নিজেদের লোভ ও পক্ষপাতের বিরুদ্ধে আমাদের অভ্যুত্থান দরকার। ’সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় সংকট করপোরেট মালিকানা। এই ব্যবস্থার পরিবর্তন না করতে পারলে গণমাধ্যমকর্মীদের অর্থনৈতিক মুক্তিসহ আমরা যে জনবান্ধব গণমাধ্যম দেখতে চাই সেটি কঠিন হয়ে পড়বে। দলমতের বাইরে পেশাদার সাংবাদিকদের নিয়ে একটি শক্তিশালী সংগঠন তৈরি করা খুবই প্রয়োজন।

লেখক: মোঃ রাসেল সরকার
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।
ইমেইল: Sheikhmdraselbd@gmail.com

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 05:40:24 pm, Monday, 6 October 2025
134 Time View

একটি রঙিন খাম দিয়ে সাংবাদিক কেনা যায়, কিন্তু সাংবাদিকতা নয়- এম রাসেল সরকার

Update Time : 05:40:24 pm, Monday, 6 October 2025

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের আলোচনায় বস্তুনিষ্ঠতা আর নিরপেক্ষতার আলোচনা সত্যিকার অর্থে এক কঠিন কাজ। জীবনভর রাজনৈতিকরা, আমলারা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলে এসেছেন, গণমাধ্যম ও সাংবাদিককে হতে হবে বস্তুনিষ্ঠ, পক্ষপাতহীন, ভারসাম্যপূর্ণ এবং তাদের সব কাজে থাকবে ন্যায্যতা। কিন্তু এসব পরিভাষার সাথে নিরপেক্ষতার সম্পর্ক সৃষ্টি করাটা বেশ কঠিন।

সাংবাদিকদের বলা হয় কলম সৈনিক! কলমটা তার অস্ত্র এবং সেটা দিয়েই  প্রতিনিয়ত তার যুদ্ধ। সশস্ত্র বাহিনী যেমন কোনও বিশেষ দলের না, দেশের জন্য লড়াই করে, দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। সাংবাদিকরাও একেকজন যোদ্ধা, তাদের হওয়ার কথা দেশের, নির্দিষ্ট কোনও দলের নয়। কিন্তু আমরা দলীয় হয়েছি বা হয়ে পড়ছি।

মানুষ গণমাধ্যমের ওপর দিন দিন আস্থা হারাচ্ছে। সম্প্রতি বিশ্বের ৪৬টি দেশের ওপর রয়টার্স এক জরিপ করেছে। ওই বার্ষিক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ১০ জনের মধ্যে তিন জনের ধারণা, গণমাধ্যমগুলো সমাজের চেয়ে তাদের বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক স্বার্থকে এগিয়ে রাখছে। এতে ১০ জনের মধ্যে ৩ জনের অভিযোগ, তারা যেসব সংবাদ দেখেন তা পক্ষপাতদুষ্ট। এছাড়া, শতকরা ১৬ ভাগ মানুষ মনে করেন, প্রচারিত খবরের তথ্য তাদের কোনও কাজে আসে না। তিন জনের অভিযোগ কিন্তু আমাদের দেশের না, আমাদের দেশে সংখ্যাটা ১০ জনেরও বেশি হবে নিশ্চিত। এ আস্থার জরিপে আমাদের অবস্থান ১৬৫ নম্বরে। আমাদের আগে ভারত, পাকিস্তানসহ আরও ১৬৪টি দেশ আছে। পক্ষপাতদুষ্ট শব্দটা আমাদের জন্য বোধকরি বেশি প্রযোজ্য। একটা সময় ছিল, যখন কোনও সাংবাদিক তার রাজনৈতিক পরিচয় কিংবা মত প্রকাশ করতো না। করলেই তিনি বা তারা গ্রহণযোগ্যতা হারাতেন। কারণ, মনেই করা হতো, তিনি যা বলছেন তা নির্দিষ্ট একটি দলের ভালোর জন্যই বলেছেন, তাতে সত্যতা নাও থাকতে পারে।

এখন সবাই তার পরিচয় আড়াল করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না, বরং এক ধরনের গর্ববোধের অবস্থা দেখতে পাই। অনেকেই  প্রমাণে ব্যস্ত তার রাজনৈতিক মত, কিংবা পরিচয় তুলে ধরতে। তারা সরাসরি বলতে চান আমরা বিশেষ ‘দলের সাংবাদিক’। মানুষের অনাস্থা আর সন্দেহের শুরু মূলত এখান থেকেই।

‘আমরা’ শব্দটা বললে সবার প্রতি অবিচার করা হয়। বলা হয়ে থাকে কিছু সংখ্যক সাংবাদিক এবং এই সাংবাদিকরা সর্বোচ্চ পদে থাকায়, তাদের চেহারাটাই সবসময় দেখা যায়। এসব কারণেই জনমনে ধারণা হয় যে সাংবাদিক মানেই দলীয়। বিষয়টা অনেক ক্ষেত্রে উল্টো। যাদের চেহারা দেখা যায় তাদের অনেকেই মালিক। একটি  প্রতিষ্ঠানের মালিক সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখবেন, এটি স্বাভাবিক, অস্বাভাবিকের কিছু নেই। অনেক ক্ষেত্রে কেউ কেউ তার কর্মী বাহিনীকে সেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতে ব্যবহার করবেন সেটিও স্বাভাবিক। বিষয়টা হচ্ছে, মালিকরা কিন্তু সবাইকে ব্যবহার করেন না। কিন্তু অনেকেই আছেন, যারা নিজ থেকেই ব্যবহৃত হতে চান। সমস্যা মূলত তাদের নিয়েই।

তারা এত উচ্চকণ্ঠ আর প্রকাশ্য যে জনগণ মনে করেন এরাই সাংবাদিক এবং সাংবাদিক মানেই দলীয়। কিন্তু তারা এসব করে দল বা দেশের জন্য এমন নয়, তারা সবাই ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্যই এসব করেন। এমন ‘দলীয় সাংবাদিক’ পাবেন না, যিনি পদ-পদবি কিংবা অর্থ উপার্জন করে রমরমা অবস্থায় নেই। তারা না থাকলে দলের কিছুই হয় না। দলকে টিকিয়ে রাখে মূলত কর্মী বাহিনী। রাজনৈতিক দলগুলো টিকে থাকে জনগণের ভালোবাসায়।

একজন সাংবাদিক ভালো কাজে সরকারের প্রশংসা করবেন, খারাপ যা তা তুলে ধরবেন, সেটাই হওয়ার কথা। কিন্তু আপনি যদি দেখেন বছরের পর বছর খারাপ কাজটির পক্ষেও তার যুক্তি থাকে কোনও বিশেষ দলের পক্ষে, তখন বুঝে নিতে হবে তিনি আসলে সেই দলীয় সৈনিকই। এই  সৈনিক দলের জন্য যত না করেন, তার চেয়ে বেশি করেন নিজের জন্য। তারা তোষামোদির বিনিময়ে কোটি টাকার কাজ, বিদেশ ভ্রমণ, বড় পদ আর ক্ষমতা সব নেন। তাহলে কেমন করে বলবেন যে সেই সাংবাদিক নিঃস্বার্থভাবে দলকে বা আদর্শকে ভালোবেসেই সেই দলের পক্ষে কথা বলেন? বলা হয়ে থাকে, যদি রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হতো স্বাভাবিক নিয়মে, তবে বেশিরভাগই এমন দলীয় রূপে প্রকাশ্য হতেন না। তারা সাংবাদিক থাকারই চেষ্টা করতেন।

এখন যেটা হয়েছে, আমরা সবাই জনসংযোগ কর্মকর্তার কাজ করছি। এই মন্ত্রী কী বলছেন, অন্যরা কী বলে, তাতেই আমাদের সাংবাদিকতা আটকে গেছে। তবু এর মধ্যেই অনেকে সাংবাদিকতা করে যাচ্ছেন। তা না হলে এত অপরাধের খবর আপনারা কোথায় পেতেন? সেটা সাংবাদিকরাই বের করেন। তারাই আসল সাংবাদিক। তো এমন সব সাংবাদিকদের জনগণ চেনেন। তবু ঢালাওভাবে সবার ওপরই অনাস্থা তৈরি হয়েছে। একসময় সাংবাদিকদের যে শ্রদ্ধার চোখে দেখা হতো, এখন অহরহ মিলছে কটু কথা।

সাংবাদিকরা, যারা ব্যক্তিগতভাবে ভীষণ লাভজনক অবস্থায় আছেন, তারা সাংবাদিকতা কোথায় গেলো সেসব নিয়ে মাথা ঘামান না। কারণ, সাংবাদিকতা তাদের কেবল ‘নেইমপ্লেট’। কিন্তু যারা আসলেই সাংবাদিক তারা প্রতি মুহূর্তে বোধ করেন সাংবাদিকতা হারিয়ে যাওয়ার কষ্ট, সম্মান আর আস্থা হারিয়ে যাওয়ার বেদনা। ধ্বংসস্তূপে বসে থেকে তারা আবার জেগে ওঠার স্বপ্ন দেখেন। এমন সাংবাদিকতার স্বপ্ন দেখেন, যা শুধুই কথা বলবে দেশ আর জনগণের।

স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিতে নির্দলীয় প্ল্যাটফর্মের দাবি.!

দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করতে নির্দলীয় প্ল্যাটফর্মের দাবি জানিয়েছেন সর্বস্তরের সাংবাদিকেরা। রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিমূলক সাংবাদিকতা ও করপোরেট মালিকদের স্বার্থরক্ষায় পেশাদার গণমাধ্যমকর্মীদের অধিকার ক্ষুণ্ন করার পাশাপাশি গণমাধ্যমকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এ সংকট কাটাতে গণমাধ্যমের সামষ্টিক চরিত্র পাল্টাতে হবে। সময় মুক্ত, স্বাধীন ও শক্তিশালী গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠায় একটি নির্দলীয় প্ল্যাটফর্ম তৈরির বিষয়ে একমত হতে হবে সর্বস্তরের সাংবাদিকেরা।

সাংবাদিকতার জগতে এখন তিনটি অভ্যুত্থান দরকার, ‘প্রথম করপোরেট ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে, দ্বিতীয়ত দলীয় সাংবাদিক ইউনিয়ন ও প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে, তৃতীয়ত নিজেদের লোভ ও পক্ষপাতের বিরুদ্ধে আমাদের অভ্যুত্থান দরকার। ’সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় সংকট করপোরেট মালিকানা। এই ব্যবস্থার পরিবর্তন না করতে পারলে গণমাধ্যমকর্মীদের অর্থনৈতিক মুক্তিসহ আমরা যে জনবান্ধব গণমাধ্যম দেখতে চাই সেটি কঠিন হয়ে পড়বে। দলমতের বাইরে পেশাদার সাংবাদিকদের নিয়ে একটি শক্তিশালী সংগঠন তৈরি করা খুবই প্রয়োজন।

লেখক: মোঃ রাসেল সরকার
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।
ইমেইল: Sheikhmdraselbd@gmail.com