3:56 am, Monday, 6 October 2025

দারুল উলূগম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট–তামজীদুল মাওলা কাসেমি

দিগন্ত প্রতিদিন

img 20180215 160909

 

দেওবন্দ!
একটি প্রতিষ্ঠান ই তার আসল পরিচয় নয়৷ দেওবন্দ একটি জাতি গোষ্ঠির সাথে সম্পর্কের কারণে বিশ্বমোড়লে তার পরিচয়৷ অস্তিত্বের প্রান্তি কিনারায় লড়ে যাওয়া স্বাধীনতা চেতনাকামী এক ঝাঁক আলেমের পদদলিত হওয়াই আজও লোক মুখে “দেওবন্দ”৷ বিশ্ব কে আরেকবার তাক লাগানো পরা শক্তির ভীদ কাঁপানো এক কাফেলার ত্যাগে ই দেওবন্দ৷

দেওবন্দ একটি ইতিহাস একটি সংগ্রাম একটি আন্দোলন৷ দেওবন্দ নামে মাত্র ভেষে উঠে হৃদয় কাবায় এক করুণ ও হৃদয় বিদারক সফল ইতিহাস৷ দেওবন্দী শুধু নির্দিষ্ট কোন জাতি গোষ্ঠির সাথে সীমিত না৷ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অপর নাম ই দেওবন্দী বা ক্বাসেমী৷ এক কথায় মুসলিম উম্মাহর অতন্দ্র প্রহরী ধর্মীয় রাহবার চির সুখের পথনির্দেশক সফলতার অগ্রনায়ক এক জন গোষ্ঠির সংক্ষিপ্ত নাম ওলামায়ে দেওবন্দ৷ উলামায়ে দেওবন্দের পূর্ণ পরিচয় ইতিহাস ও ঐতিহ্য পেতে হলে একটু পেছনে যেতে হবে৷ খুলে দেখতে হবে ইতিহাসের ঘুনেধরা নির্মম পাতাগুলো৷ বুকে সাহস আর মুখে বল নিয়ে জানতে হবে সঠিক ও সত্য ইতিহাসটুকু৷ তাহলে ই কাসেমী বা দেওবন্দীদের আসল পরিচয় সামনে আসবে৷

আসলে দেওবন্দ নামটি আজ থেকে ঠিক দেড়শ বছর আগে পুনঃজন্ম লাভ করে৷ ভারতবর্ষের সাহারনপুর জেলার অন্তরগত গত একটি উপশহর দেওবন্দ৷ একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে ই তার পরিচিতির সূচনা৷ ১২৮৩ হিঃ মোতাবিক ১৮৬৬ সালে ১৫ ই মহররম মোতাবিক পহেলা মে’ প্রতিষ্ঠিত হয় একটি মাদ্রাসা৷ এটাই তার মূলে৷ যা আজ দারুল উলুম দেওবন্দ নামে সারা বিশ্বের পরিচিত শব্দ৷

কিন্ত, আসল ব্যক্তিত্ব ও সার্বভৌমত্ব আরো অনেক পেছনে যা জানাও অবশ্যক৷ এতে ই আসল পরিচয় নিহিত৷ আসুন তা জেনে নিই…

১৯৪৭ সাল৷ এই ভারতবর্ষ (হিন্দুস্তান, পাকিস্তান,বাংলাদেশ) স্বাধীনতার মুখ দেখে৷ এর আগেও পরাধীনতার জিঞ্জিরে আবদ্ধ ছিল এই বারের ছগীর৷ কিন্তু ১৯৪৭ সালেই আবার পাকিস্তান স্বতন্ত্রভাবে ছিনিয়ে নেয় তাদের স্বাধীনতা সূর্য৷ আবার ১৯৭১ এর শেষ প্রান্তে পৌছে বাংলাদেশের ভাগ্য খুলে৷ পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে তালিকাভুক্ত হয় আরেকটি পতাকা৷ অর্জিত হয়একটি স্বাধীন দেশ৷ কিন্তু আজ তো সবাই স্বাধীনতার অগ্রনায়ক হিসাবে পরিচিত হতে চায়৷ মুক্তিযুদ্ধাদের তালিকায় নাম লিখাতে চায় অনেকে৷ তবে আসল স্বাধীনতার পয়গাম তো আরো অনেক পেছনে৷ আসুন তা খতিয়ে দেখি৷

সন ১৬০১ খ্রিষ্টাব্দে এ পাক ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম ইংরেজরা অনুপ্রবেশ করে৷ ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে বরতানিয়া থেকে ব্যবসার ছদ্ধবেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নামে এক প্রতারক চক্র আসে৷ তৎকালীন হিন্দুস্তানের হুকুমত ছিল বাদশাহ জাহাঙ্গীরের দখলে৷ সরলমনা জাহাঙ্গীর তাদের মায়াকান্নায় বেশি দিন টিকতে পারল না৷ ইংরেজ তাকে বুঝাতে লাগল এখানের মাল বরতানিয়ায় আমদানি রপ্তানি করে তার লভ্যাংশ হিন্দুস্তানের কল্যানে ব্যয় করবে৷ বাদশাহ জাহাঙ্গীর তাদের ফাঁদে পা দিয়ে হয়ে যায় আবদ্ধ৷ তাদেরকে দিয়ে দেয় অনেক সুযোগ সুবিধা৷ রাতারাতি একেক জন হয়ে যায় অডেল সম্পত্যির মালিক৷ বাদশাহ জাহাঙ্গীর হিন্দুস্তানের বর্গা ভিঘা জমিন তাদের নামে বরাদ্ধ করে দিতে লাগল৷ কিছু দিনের মধ্যে ই ইংরেজরা হয়ে গেলো নব্য জমিদারে পরিণত৷
যাক, কিছু দিনের মধ্যেই তারা এখন হিন্দুস্তানের শক্তিধর ব্যবসায়ী৷ ধনে জনে বিশাল শক্তির অধিকারী৷ একশ বছরের মাথায় তারা শাষন করতে লাগল ভারত বর্ষের বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চল৷ ১৭১৭ সালে মৌসুর প্রদেশ সহ বিভিন্ন এলাকায় তারা রাজত্ব করতে থাকে৷ ১৭৪০-র কথা তৎকালীন সময়ে তারা ভারতবর্ষের একাধিক প্রদেশে হুকুমত খাটায়৷

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস কে জানে! এ দিকে আরবী সন ১১১৪ হিঃ মোতাবিক ১৭০৩ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দুস্তানের ঐতিহ্যময় পুরানো শহর দিল্লীর অধিবাসী আঃ রহিমের ঔরষে জন্ম নেয় এক মহান পুরুষ৷ যাকে ইতিহাস শাহ অলিউল্লাহ নামে স্বরণ করে৷ যাকে হাদীসের জগতে মুসনিদুল হিন্দ নামে চিনে৷
যিনি ছিলেন এই উহমহাদেশে সর্ব প্রথম সিহাহ সিত্যাহ র দরস প্রদান কারী৷ ইলমের জগতে যার খিদমত অপরিসীম৷ যার দুরদর্শিতা সর্বজন স্বীকৃত৷ যিনি ছিলেন ইলমে হাদীসে ময়দানে শাহ ছাওয়ার৷ যার অপর্যাপ্ত খেদমতের কাছে মুসলিম উম্মাহ আজো ঋনী৷ তিনি শুধু ইলমের ময়দানে ই নয় বরং তিনি ছিলেন তাক্বওয়া তহারাতে তথা ইলমে বাতিনের ও ইমাম৷ হযরতের অনবদ্য অমরগ্রন্থ ইলম ও হিকমতের সমাহার “হুজ্জতুল্লাহিল বালিগাহ”৷ যার নজীর পূর্বে পরে বলকেহ আজো মিলে নি৷

তিনি উনত্রিশ বছর বয়সে ১১৪৩ হিঃ তে ইলমের টানে হিজায সফর করেন৷ মক্কা মদীনার শায়েখ মাশায়েখদের থেকে ইলমী তৃষ্ণা নিবারণ করেন৷ তাঁর তৃষিত হৃদয়কে ইলমী সুধা প্রশমিত করেন৷ সেখানে তিনি পূর্ন দুই বছর অবস্থান করে ইলম ও হিকমতে পূর্ণ পন্ডিত্ব অর্জন করেন৷ বিষেশ করে হারামাইনের মাশায়েখদের মধ্যে শায়েখ আবু তাহের মুহাঃ বিন ইবরাহীম কুরদী আল মাদানী রহঃর কাছে সিহাহ সিত্যাহর সব কটি কিতাব ই অধ্যায়ন করেন৷
অতপর স্ব-সনদে ১১৪৫ হিঃ তে দেশে ফিরেন৷ এবং মাদরাসায়ে রহিমিয়াতে দরসে তাদরীসের খেদমতে নিজেকে ধন্য করেন৷ তখনি তিনি বলেছেন হিন্দুস্তান তো ইংরেজদের কব্জায় যাওয়ার বেশী দেরী নাই৷ অদূরেই ভারতবর্ষের শাষন ক্ষমতা ইংরেজরা ছিনিয়ে নিবে ৷ ঠিক ই কিছু দিন পরে ই ইংরেজরা ঘোষনা দিলো “দেশ রাষ্ট্র প্রধানের, আইন আমাদের, হুকুমত কোম্পানির৷ তৎকালীন সময়ে শুধু দিল্লি শহরের দশ হাজারের অধিক মাদ্রাসা বন্দ করে দেয় তারা৷ এই হল শেষ পরিনাম৷

এরই ধারাবাহিকতায় ১৭৩৯ সালে এই মহাবীর শাহ ওলিউল্লাহর ঔরষে জন্ম নেয় এক মহা মানব ৷ যাকে ইতিহাস শাহ আঃ আজীজ বলে জানে৷ ১৭৬২ সালে তিনি রেখে যাওয়া পিতার মসনদে সমসীন হন৷ ১৭৬৩ সালে ইংরেজ চক্রান্তের গোড়ায় দুর্দর্শিতার দৃষ্টির দেন৷ তখনি তিনি সেই উপলব্ধিতে সফলও হন৷ দেখলেন ভারতবর্ষের অনেক এলাকা ইংরেজদের ক্ষমতায়৷ শাষন আর শোষনের স্ট্রীমরোলার দিয়ে ক্ষমতা দৃড় ও মজবুত করতে লাগল ইংরেজ৷
শাহ আঃআজীজ রহঃ তাঁর বিচক্ষনতায় ১৭৭২ সালে সর্বপ্রথম ইংরেজদের বিরুদ্ধে সাহসি ভূমিকা রাখেন৷ সারা দুনিয়াকে সত্যের আহবান জানিয়ে ও বিজয়ের ঝান্ডা নিয়ে মাঠে নামেন৷ তাঁর ঐতিহাসিক ফতোয়া ই আজ হিন্দুস্তানের স্বাধীনতার মহা উৎস৷ ধর্মীয় ফতোয়া ই আজকের আযাদীর মূল চেতনা৷ তিনিই নির্ভয়ে দ্বীপ্তকন্ঠে স্পষ্টভাষায় জিহাদ ফরজ হওয়ার ঘোষনা দেন৷

অপর দিকে হায়দার আলীর ঘরে জন্ম নেয় এক তারুন্যের গৌরব, সিপাহে ইসলামীর অহংকার৷ যিনি আজো সুলতান টিপু নামে খ্যাত ৷ অবশ্যই তাঁর পিতা ছিল ইংরেজী ফাওজের শামিল৷
যখন টিপু সুলতান আজীজী ফতোয়া আর আযাদী চেতনা নিয়ে মাঠে নামলেন৷ জানলেন মুসলমানের উপর জিহাদ ফরজে আইন হয়ে গেছে৷ তিনি ঐসময় মুসলমানদেরকে তবিয়ত ও শিষ্টাচারিতা শিক্ষা দীক্ষায় ছিলেন তরবিয়তি মুরুব্বী৷ তাই তিনি তাঁর তিনশ শিষ্য ও মুসসিম বাহিনী নিয়ে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়েন৷ এটা তো ১৭৯২ এর কথা ৷

মেরে দোস্ত!
এই সেই টিপু সুলতান যার তাকওয়া-তহারত পুরো দুনিয়া খ্যাত৷ যার কোন দিন এক সাথে ছয় ওয়াক্ত নামাজ কাযা হয় নি৷ যিনি ছিলেন ছাহিবে তরতীব বুযুর্গ৷ তাঁর বুঝুর্গীর কাহিনী কে না জানে! যখন তিনি নিজ শহরে নতুন মসজিদ নির্মান করে৷ ঘোষনা করে দিলেন যার জীবনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত পাছ ওয়াক্ত নামাজ ক্বাযা হয়নি এমন ব্যক্তি সর্ব প্রথম এ মসজিদের ইমামতি করবে৷ ভরা মজলিস পিন পতন নিরবতার ভূমিকায়৷ কেউ সাহস করতে সক্ষম হয়নি৷ তখন সুলতান টিপু ই নিজেকে আর গোপন করতে না পেরে নিজেই ইমামতি করেন৷ সেই কাহিনী কে না জানে৷
মেরে ইয়ার!!
আজ তো ইতিহাসে বিকৃত হয়ে ঘুনে ধরার পথে৷ ইতিহাস তো সুলতান টিপু কে চিনেও না মনে হয়৷ দুঃখ আর ভগ্ন হৃদয়ে বলতে হয় তিনি ই আযাদী আন্দোলনের মহান পুরুষ৷ তিনি ই তো স্বাধীনতার অগ্রদূত৷ অথচ যুগপৎ ইতিহাস !!?

তিনি কোন দিন দাড়িতে হাত লাগান নাই৷ দাড়ির সুন্নতের উপর ছিলেন সুন্নতের পূর্ন পাবন্দ৷ শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী রহঃ তাঁর মাকতুবাতে লিখেছেন: সুলতান টিপু ছিল একজন তাহাজ্জুদ গুজার তাঁর যুগের কুতুব৷ তিনি রাতকে ইবাদতে অতিবাহিত করতেন৷ সুলতান টিপুর ঐ চিঠি খুলে দেখ! যা তিনি সায়্যিদ আহমদ শহীদ রহঃ এর কাছে লিখেছেন৷ তিনি লিখেছেন ইংরেজ খতম করে আমি এ ভারতবর্ষে ইসলামী হুকুমত কায়েম করতে চাই৷

মেরে দােস্ত!
যখন ইংরেজ বেনিয়াদী আন্দোলন তাদের সফলতায় ব্যার্থতা অনুভব করতে লাগে৷ যখন জমিন তাদের জন্য সংকীর্ন হতে লাগল৷ শক্তি,সামর্থ জ্ঞান,বুদ্ধি হারিয়ে এখন নতুন চিন্তা শুরু করে৷ পলিটিক্যাল পদ্ধতি চ্যাঞ্জ করে নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করতে লাগল৷ ঘুরিয়ে দিল রনকৌশলের মোড়৷ তবে এ পদ্ধতি মুসলিম উম্মাহর জন্য নতুন নয়৷ মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশ পতন আর পরাজয়ের মূল কারণ এটাই বটে৷

আর তা হলো: মুসলিম নেতাদের কে লোভলালসার ফাঁদে বন্দি করা৷ যখনি মুসলিম নেতারা নারী বাড়ী আর গাড়ীর লোভে নেফাকী কে গ্রহন করে তখনি মুসলমানদের পরাজয় তাদের পদচুম্বন করে৷ ঠিক ঐ সময়ে ইংরেজদীর গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ হয় মুসলিম নেতা মীর সাদেক৷ গ্রহন করে নেয় মুসলিম শত্রুতা আর নেফাকী৷ মুসলমানদের গোপন ভেদ ফাঁশ করে শত্রুর কাছে৷

ইংরেজদের পা-চাটা গোলামে পরিনত হয় মীর সাদেক৷ তখনি পরাজয় আসতে লাগে৷ রাতারাতি মীর সাদেক হয়ে যায় নব্য জমিদারে পরিনত৷ নয়শ বিগা জমির মালিক হয়ে যায় মীর সাদেক৷ ইতিহাস তাকে বিশ্ব মুনাফিক হিসাবে চিনে ৷
আর তখনি মুসলমানদের মাঝে দুই গ্রুপ হয়ে যায়৷ একদল ইংরেজদের টাকায় খরিদকরা গোলাম৷ তাদের রক্ষনা বেক্ষনায় নিজেদেরকে শামিল করে৷ তারা মুসলিমদের সাথে গাদ্দারী করে ইংরেজদের সাথে হাত মিলায়৷ তাল মিলিয়ে চলে শত্রুর সাথে৷ অপর দিকে আরেক দল এখন ও সুলতান টিপু রহঃ এর মতাদর্শে বিশ্বাসি৷ আঃ আজীজ রহঃ এর ফতোয়ার উপর শিষাঢালা প্রাচীরের ন্যায় মুসলিম সৈনিক হিসাবে কাজ করে৷

মেরে পেয়ারা ভাইও!
কয়েক দিন না যেতেই ১৭৯৯ সালে সুলতান টিপুকে শহিদ করে দেয়া হয়৷ শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করে ধন্য হয় সুলতান টিপু ৷
অপর দিকে গাদ্দার ইংরেজরা ভাবতে থাকে পথের সবচেয়ে বড় বাধা দূর হলো বুঝি৷ এখন তো বিজয় আমাদের৷ জয়ের সুগম পথে এখন আর নেই কোন টিপুর মত মহান নেতা৷ এখনি সফলতার সুবর্ণ সুযোগ৷ আর মীর সাদিকও পেয়ে গেলো নয়শ বিগা জমিন ৷
তারপর নওয়াব সিরাজুদ্দৌলা মুসলিম নেতার ভূমিকায় মাঠে আসে৷ তিনি ই পলাশীর যুদ্ধের মহান নেতা ও বীর শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা৷ এই পলাশীর যুদ্ধ মোট বাইশ ঘন্টা অব্যহত থাকে৷ এদিকে ইংরেজরা নওয়াব সিরাজুদ্দৌলার সিপাহ সালার মীর জাফর কে অর্থের লোভ দেখিয়ে খরিদ করে নেয়৷ মুসলমানদের সাথে গাদ্দারি করা আরেক মুনাফিককে কাছে পেলো ইংরেজ৷ সে হলো অমিটন৷ এ দুজন কে তারা খরিদ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজে লাগায়৷ আজ পুরা জাতি এক নামে মীর জাফরকে মুনাফিক হিসাবেই চিনে৷
তবে আফছোছ হল সুলতান টিপুর ন্যায় নওয়াব সিরাজুদ্দৌলাও শহিদ হয়ে যায়৷

এই ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য যারা শহিদ হলেন তাঁদের আরেক জন যোগ হল৷ তিনি হলেন নওয়াব সিরাজুদ্দৌলা৷ আর গাদ্দারদেরও অন্তরভূক্ত হলো নতুন দুই মুনিফক৷ মীর্জাফর আর অমিটন৷

মেরে দোস্ত!
তারপর হিন্দুস্তানে কি হতে লাগলো! ভারতবর্ষের পাক ভুমিতে এখন দুই ফেরকা বাস করতে থাকে৷ একদল গাদ্দারদের জামাত দ্বিতীয় গ্রুপ ওফাদার আর নিপিড়িত মুসলিম বাহিনী৷

তারপর নওয়াব সিরাজুদ্দৌলার শাহাদাতের পর ১৮৪০ সালে হিন্দুস্তানের পাঞ্জাব শহর শাষন করে রাজা রঞ্জিত শিং৷ সেও মুসলমানদে উপর করতে থাকে অমানবিক আচরন আর পৈশাচিক নির্যাতন৷ জুলুমের স্ট্রীমরোলার চালায় মুসলিম পরিবারে উপর৷ মুসলমানদের ইবাদতখানা মসজিদ গুলোকে ঘোড়ার আস্তাবলে পরিনত করে৷ তার এই জুলুম সেতম বেরলৌ শহরেও পৌছে যায়৷

তৎকালিন সময়ে বেরলৌতে একজন আল্লাহর আবেদ বুজুর্গ দরবেশ ছিলেন৷ তিনি আর কেউ নয় তিনি হলেন সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলৌয়ী রহঃ৷
কে এই আহমদ বেরলৌয়ী!
তো বলতে চাই শাহ ওলিউল্লাহর চার ছেলে, শাহ আঃআজীজ ,শাহ আঃ কাদের,শাহ রফিউদ্দীন ,শাহ আঃ গনী৷ সবার বড় শাহ আঃআজীজ রহঃ৷ উক্ত চারো জনই ছিলেন মুফাসসিরে কোরআন৷ চারো ভাই ই মুহাদ্দীস ছিলেন৷ তাঁরা সবাই স্বযুগের কুতুব ছিলেন৷

মেরে দোস্ত! চার ছেলে ছিলো শাহ অলিউল্লাহ রহ: র৷ বড় ছেলের কৃতিত্ব তো সবাই জানে৷ যিনি জিহাদের ফতোয়া দিলেন৷ স্বাধীনতার মহান নায়ক৷ শাহ রফিউদ্দীন আর শাহ আঃ কাদের র. হিন্দুস্তানে সর্বপ্রথম কোরআন তরজুমা ও তাফছির লিখেন৷ আর শাহ আঃ গনী রহঃ এর বড় অবদান হলো তাঁর ঔরষেই জন্ম নেয় এক আল্লাহওয়া বুঝুর্গ৷ তিনি ই হলেন ইসমাইল শহিদ রহঃ৷ আর বুঝার বাকি রইল না ইসমাইল শহিদ রহঃ হলো শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দীসে দেহলবীর দৌহিত্র বা নাতি৷ আর শাহ আঃ আজীজ রহঃএর ভাতিজা৷

সেই সায়্যিদ আহমদ শহিদ রহঃ বেরলৌ থেকে সফর করে দিল্লী যান৷ তিনি শাহ আঃআজীজ রহঃ এর কাছে ইলম ও মারেফাত হাছিল করেন৷ তিনি হযরতের হাতে ও বয়াত গ্রহন করেন৷ অপরদিকে ইসমাইল শহিদ রহঃ ছিলেন সায়্যিদ আহমদ রহঃএর শিষ্য ও মুরিদ৷

যখন রাজা রঞ্জিত শিং এর জুলুম নির্যাতন দিন দিন বেড়েই চলছে৷ তখন সায়্যিদ আহমদ শহীদ রহঃ ১৮২৬ সনে সাড়ে সাতশত মুজাহিদ আর দশ হাজার মুসলিম বাহিনীর বিশাল কাফেলা নিয়ে পাঞ্জাব শহরের দিকে রওয়ানা করেন৷ এর আগে তাঁর কাছের শিষ্য ইসমাইল শহিদ রহঃ কে দূত হিসাবে রাজার কাছে পাঠান৷ শাহ ইসমাইল শহীদ রহঃ এসে শায়েখকে রিপোর্ট দিলেন৷ যে রাজা রঞ্জিত মুসলমানদেরকে দিন দিন নির্যাতন করেই চলছে৷ মুসলমানদের ইবাদতখানা মসজিদ গুলোকে ঘোড়ার আস্তাবলে পরিনত করছে৷ তারপর ১৮২৭ সায়্যিদ আহমদ রহঃ পাঞ্জাব গিয়ে পৌছেন৷ সেখানে গিয়ে শুরু করে দেন যুদ্ধ জিহাদ৷ চলতে থাকে তুমুল লড়াই৷ এক পর্যায়ে বিজয় হয় সেখানকার “পাশাওয়ার”এলাকা৷ বিজীত এলাকায় শাহ ইসমাইল ঘোষনা করে দিলেন আজ থেকে এই এলাকার আমিরুল মুমিনীন হলেন সায়্যিদ আহমদ রহঃ৷ আজ থেকে বিজীত অঞ্চলের সীমানায় চুরি ডাকাতি খুন খারাবী বন্দ৷ নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হল শরাব পান কেও৷
সময়ের পরিবর্তনে ক্রমাগত ভাবে বিজয় হতে থাকে একের পর এক অঞ্চল ও মহল্লা৷ সমাজে বইতে লাগল শান্তি সুখের হিমেল হাওয়া৷ দিন দিন বাড়তে লাগলো নব মুসলিম সহ শায়েখের মুরিদান৷ ঐ দিকে রাজা রঞ্জিত শিং-র মনে ভয়ে ভিতি ও প্রকম্পিতের ছোট্ট কুটিরে পরিনত৷লদিশামিশা না পেয়ে রাজা শায়খের খেদমতে দূত পাঠায়৷ রাজার দূত এখন শায়েখের দরবারে৷ বলতে লাগলো রাজার পয়গাম৷ আপনার বিজিত অঞ্চল আপনি শাষন করেন সেখানে রাজার কোন ক্ষমতা থাকবে না৷ রাজা তার অঞ্চল শাষন করবে আর তার হুকুমত ও থাকবে সীমিত৷ যুদ্ধ বন্দ রাখুন৷

কিন্তু ইতিহাস সাক্ষি, মুসলমান কোন দিন ক্ষণস্থায়ী ক্ষমতার জন্য জিহাদ করে না৷ তারা একমাত্র রেজায়ে এলাহী আর ই’লায়ে কালিমাতুল্লাহর জন্য নিজের জানের মায়া ছেড়ে আল্লাহর পথে উৎসর্গ হতে জানে৷ রাজার পয়গাম শুনে সায়্যিদ আহমদ শহীদ রহঃ বলল:
শুনো!

হে বেঈমানের দল! এখানে আমি কোন রাজত্ব করতে আসি নাই৷ আমার হুকুমত করার ও প্রয়োজন নাই৷ হুকুমত করার শাওকও আমার দিলে নাই৷ আমি আসছি স্রেফ একটা জ্বলন আর দরদ নিয়ে৷ তোমরা যখন নিরপরাধী মুসলমানদেরকে পাইকারী ভাবে হত্যা করতে দিধা সংকোচ করছো না৷ মুসলিম শিশু হত্যায় তোমাদের পাষান হৃদয়ও বুক কাঁপছে না৷ জুলুম আর নির্যাতনের সীমা ডিঙ্গিয়ে যখন ছাড়িয়ে গেছ তোমাদের হিংস্র পশুর অমানবিক জুলুম৷

তখনি আমি এসেছি রাসুলে আরাবীর নির্যাতিত উম্মাহর পাশে দাড়াতে৷ বঞ্চিত মানবতার পাশে দাড়াতে৷ আর জিহাদ নামীয় ফরজ বিধান কে আল্লার জমিনে পুনঃবাস্তবায়ন করতে৷
শুনে রাখ!

হে কাফেরের বাহিনী! যতদিন মুসলিম নির্যাতন বন্দ না হবে৷ না পাবে তাদের হারানো স্বাধীনতা৷ ততদিন আমি লড়েই যাব৷ আর আমার দেহে এক ফোটা রক্ত থাকা পর্যন্ত জিহাদ বন্দ হবে না৷ ইনশাআল্লাহ৷

বেঈমান কাফেরের সাথে কোন ধরনের লেয়াজু নেই৷ এ দেহে রক্ত থাকবে আর ইসলাম ও মুসলমান নির্যাতিত হবে না৷ হতে দিব না৷ দেয়া যাবে না৷

মেরে দোস্ত!
এই হল সায়্যিদ আহমদ শহীদ রহঃ যিনি কোন সাধারন আদমী নন৷ শাহ অলিউল্লাহর পর জমিন এত বড় মানুষ আরেকজন দেখে নাই৷ যার হাতে চল্লিশ হাজারেরও বেশি মানুষ মুসলমান হয়৷ যার হাতে ত্রিশ লাখ মুসলিম বয়াত গ্রহন করে৷ তাঁরই শাগরিদ ইসমাইল শহীদ রহঃ এর কালজয়ী কিতাব “তাক্বউয়াতুল ইমান” পড়ে সাড়ে তিন লাখ কাফের মুসলমান হয়৷

মেরে দোস্ত!
শায়েখ সায়্যিদ আহমদ বেরলৌয়ী রহঃ কোন সাধারন মানুষ না৷ কোন শারাবী তাঁকে দেখলে তাওবা করতে থাকে ৷ চোর তাঁর সোহবতে এসে হয়ে যায় পাক্কা মুসলমান৷

প্রিয় বন্ধু গন!
এই জিহাদে তিনি কখনো কখনো এক জায়গায় ছয় মাস আবার কোন স্থানে এক মাস অবস্থান করে৷ এভাবে তিনি জিহাদ করেই গেছেন৷ জিহাদ করতে করতে ১৮৩১ সনের পহেলা মে’ তিনি বালাকোট ময়দানে গিয়ে পৌছেন৷ কিন্ত ভাগ্যের নির্মম পরিহাস৷ সেখানেরও কিছু মুনাফিক দল রাজা রঞ্জিত শিং র বাহিনীর কাছে তাদের খবরাখবর পৌছে দেয়৷ এবং রাজার গোয়েন্দা হিসাবে কাজ করে৷ এদিকে মুসলিম সেনা মুজাহিদের বাহিনীতে জন্ম নেয় এক শ্রেনীর গাদ্দার পার্টি তাগুত৷ অবশেষে পাঁচ ই মে’ ১৮৩১ সনে তাহাজ্জুদের সময় সেজদা অবস্থায় সায়্যিদ আহমদ শহীদ রহঃ কে নির্মম ভাবে শহিদ করে দেয়া হয়৷
আজো সেই শহিদের লাশ বালাকোটে মাজার হয়ে আছে৷ স্মৃতির পাতা থেকে বিলিন হয়নি তার কুরবানি৷

অপর দিকে শাহ ইসমাইল শহিদ রহঃ লাগাতার লড়তে থাকেন৷ টানা সাড়ে চার দিন তুমুল লড়াই করে যখন জনৈক শিখ রাসুল সোঃ কে গালি দেয় ইসমাইল শহিদ রহঃ আর সহ্য করতে পারলেন না৷ কসম করে বললেন: “”খোদা কা কসম! মাই নেহি মরোঙ্গা যব তুজে নেহি মার ডালোঙ্গা””৷

সাড়ে চার দিন লড়াইয়ের পর যখন শত্রু তার দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে চিরতরে শহিদ করে দিলো৷ শরিরের এক অংশ এক জায়গা পড়ে রইল৷ কিন্তু তাঁর শপথ পুর্ণ হয়নি এখনো৷ তখনি ”ইন্না মিন ইবাদিল্লাহি লাও আক্বছামা আলাল্লাহি লা আবাররাহু ”র বাস্তব প্রতিফলন ঘটল৷ আর ইসমাইল শহিদ রহঃ এর অবিস্বরনীয় কারামত প্রকাশ পেলো৷ দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হওয়া সত্বেও ঐ শত্রুকে মেরে তাঁর শপথ পূর্ণ করলেন৷ আল্লাহু আকবর ৷!এমনি ছিলেন তিনি৷

বালাকোট বাজার থেকে এক মাইলের দূরত্বে অবস্থিত ইসমাইল শহীদ রহঃ র মাজার৷ মনে হয় আজো সেখান থেকে তাজা রক্তের গন্ধ পাওয়া যায়৷ ভেষে উঠে ওহুদ পাহাড়ের পূরানো স্মৃতি৷ সে বালাকোট পাহাড়ে প্রায় চারশ মুসলিম শহিদ হয়৷

এটাই সেই বালাকোট৷ ইতিহাস যাকে বালাকোট যুদ্ধ হিসাবে চিনে৷ আর এই মুজাহিদদের কে ই শুহাদায়ে বালাকোট বলা হয়৷ বেচে যাওয়া সামান্য কিছু মুসলিম পরাজয় বরণ করে ফিরে আসেন৷ তাঁদের সংখ্যা ছিল প্রায় একশ জনের মত৷ তাঁদের অন্যতম হলেন জাফর আহমদ থানেশ্বরী,বেলায়েত আলী ও মামলুক আলী এবং ইয়াহয়া আলী সহ (রহ:) প্রমূখ৷

বেঁচে যাওয়া মুসমানরা পরাজয়ের দুঃখ নিয়ে দিল্লিতে মশওয়ারায় বসেন৷ কিন্তু তাঁদের নেই শক্তি বল৷ না আছে জন শক্তি না আছে অর্থ শক্তি৷ অস্ত্র শস্ত্রও শুন্যের কেটায়৷ এমনি এক ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে পরামর্শে বসেন ক্ষুদ্র একটি জামাত৷ কিন্তু স্বাধীনতার চেতনায় ভরা হৃদয় এ কাফেলা কারো কাছে নতজানু করতে জানে না৷

কারো সামনে মাথা ঝুকায় না এঁরা৷ একে একে চৌদ্দ হাজার আলেম কে ফাসির কাষ্ঠে ঝুলানো হল তার পরও নত শির করেন নি৷ এভাবে চলতে থাকে দু-এক যুগ৷
১৮৫৬ সনে দিল্লিতে ভারতবর্ষের সমস্ত বড় বড় আলেম ওলামাদের মশওয়ারা হয়৷ তাদের অন্যতম হলেন৷ এমদাদুল্লাহ মুহাজেরী মক্কী, রশিদ আহমদ গংগুহী, কাসেম নানুতুবী এবং জাফর আহমদ থানেশ্বরী ও হাঃ জামেন শহীদ রহঃ সহ প্রমুখ আলেম ওলামারা৷
মশওয়ারায় কাসেম নানুতুবী রহ. বলেন:
ইংরেজ আমাদের মাথায় উঠে বসে আছে৷ দিন দিন ই তাদের নির্যাতন বেড়েই চলছে৷ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তাদের ক্ষমতা৷ এভাবে যদি চলতে থাকে ভারত বর্ষ সারা জীবন গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ থাকতে হবে৷ তাই যার যা আছে তা নিয়ে এদের বিরুদ্ধে জনমত ঐক্য হয়ে জিহাদ করতে হবে৷
মাঠে নামতে হবে আপন সম্বল নিয়ে৷ না হয় অদুর ভবিস্যতে হিন্দুস্তানের স্বাধীনতা খর্ব হবে, মুসলিম হবে নির্যাতিত৷ মানুষ হারাবে তাঁদের মানবতার জীবণ৷ উক্ত মজলিসে ই জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল৷ হযরত! আমাদের তো লোক সংখ্যাও কম আবার অস্ত্র স্বস্ত্রও না থাকার মত? কিভাবে লড়োব স্বশস্ত্র বাহিনীর মোকাবিলায়?
হযরত নানুতুবী রঃ বজ্র কন্ঠে স্পস্ট ভাষায় বলে দিলেন: স্বরণ করো সে সময়কে, “বদরের মুজাহিদরা কি আমাদের চেয়ে কম ছিল না! তাঁদের অস্ত্র কি ই বা ছিল! জিহাদ চলবেই চলবে৷ জিহাদ কোন দিন অস্ত্রের মুক্ষাপেক্ষি না৷ যার যা আছে রনটণক্ষেত্রে ঝাপিয়ে পড়ো৷
শুরু হয়ে গেলো জঙ্গে আযাদী৷ স্বাধীনতা আন্দোলন৷ হিন্দুস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুটি যুদ্ধ হয়৷ এক: ১৮৫৭তে আযাদী আন্দোলন৷ যার মহান নায়ক ছিলো মুহাজিরে মক্কী রঃ এর শাগরিদ ক্বাসেম নানুতুবী রহঃ৷ যে যুদ্ধে কাসেম নানুতুবী খোদ নিজেই আঘাত প্রাপ্ত হন৷ এবং আহত হন রশিদ আহমদ গংগুহী র. ও তাঁর শায়েখ মুহাজিরে মক্কী রহঃ সহ অনেকে৷ দুই: রেশমি রুমাল আন্দোলন যার মুলে আছেন নানুতুবী রহঃ এর শাগরিদ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী৷ যাকে মানুষ শাইখুল হিন্দ হিসাবে চিনে৷

কিন্তু আফছোছ এ আযাদী আন্দোলনেও বিজয় আসল না৷ এ জঙ্গে আযাদী দুটি স্পটে বিভক্ত ছিলো৷ এক ছিলো জাফর আহমদ থানেশ্বরী রহঃ এর নেতৃত্বে আম্বালাতে৷ আরেক ছিল শামেলীতে ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কীর নেতৃত্বে৷

কিন্তু ভাগ্যের লিখন কে পারে মুছাতে! অবশেষে পরাজয় ই পদ চুম্বন করল!
এভাবে চলতে থাকে জুলুম সেতম আর নির্যাতনের স্ট্রীম রোলার৷ ভিটেমাটি ছাড়া এই পবিত্র জামাত প্রতিনিয়ত ই শিকার হয় নির্যাতন আর লাঞ্চনার জীবনে৷ তবুও নত হন নি কোন তাগুতের কাছে৷ মাথা নত করে নি বেঈমান কাফেরের সামনে৷

বিজয়সূর্য ছিনিয়ে নেয় ইংরেজ৷ দিনদিন ই বাড়ছে ওলামাদের কষ্টের জীবন৷ বরতানীয়ার নেতা তখনকার অফিসার রিপোর্ট নিতে লাগলো৷ তাদের উযির ও মন্ত্রীসভাকে তলব করে জানতে চায় হিন্দুস্তানের অভ্যন্তরীণ অবস্থা৷ মন্ত্রীসভা ও তাদের দলীয় নেতারা যে যে রিপোর্ট দেয় তা বহুত বড় আজীব গরীব রিপোর্ট! তৎকালীন সময়ের বিজ্ঞ রাজনিতিবীদ ড. অলীম বলেন: সমস্ত উযীররা একটা ই রিপোর্ট দিলো৷ যে, হিন্দুস্তানের মুজাহিদ বাহিনী অনেক মজবুত৷ স্বাধীনতার চেতনায় তাঁরা উজ্জীবিত প্রান৷ এর মূল কারণ হল হিন্দুস্তানের মুজাহিদরা মুসসমান৷ এদের অন্তরে জিহাদী চেতনায় ভরপুর৷ এদের নেতৃত্বে আছে হিন্দুস্তানের মৌলভীরা৷ এরা জিহাদ কে নিজের জন্য গৌরব মনে করে৷ এদের তামান্না হলো শাহাদাত বরন করা৷ শাহাদাতের মৃত্যুকে এরা জীবনের মহা সফলতা মনে করে৷

এই জামাতের আলামত বলতে গিয়ে বলেন৷ এরা হলো মুখ ভরা লম্বা দাড়ী আর গায়ে লম্বা পাঞ্জাবী৷ হিন্দুস্তান কে দখল করতে হলে প্রথমে এদের অন্তরে জিহাদের ঘৃণা জন্মাতে হবে৷ আর ওলামাদের কে দুনিয়া থেকে চিরতরে মুছে দিতে হবে পৃথিহবীর মানচিত্র থেকে৷ তাদের নাম গন্ধ মিটিয়ে দিতে হবে দুনিয়ার বুক থেকে৷ তাহলে ই কিছু আশা করা যায়৷ আর না হয় ইংরেজ পরাজয় বরণ করতে বাধ্য৷ ভারতবর্ষ দখল করাও সম্ভব না৷

এর পরেই শুরু হয় জুলুম নির্যাত৷ ১৮৬১ সনে এক সাথে তিন লাখ কোরআন শরিফের কপি আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়৷ শুধু তা ই নয় চৌদ্দ হাজার আলেম ওলামাকে এক সাথে ফাসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়৷ দিল্লী থেকে খায়বারে গ্রান্ড ট্রাংক রোডের (জিটি রোড) পাশে এমন কোন গাছ ছিলো না যার সাথে আলেম ওলামাদের লাশ ঝুলানো ছিল না৷

ইতিহাসবীদ থিমসন বলেন: এমন কোন নির্যাতন নাই যা ভারতবর্ষের আলেম ওলামাদের উপর করা হয়নি৷ ইংরেজরা মৌলুভীদের লাশ কে শুকোরের চামড়া দিয়ে আবৃত করে রেখে ছিলো৷ তিনি আরো বলেন:জ্বলন্ত আগুনে গরম তৈল ফুটানো হত৷ আর সেখানে নিক্ষেপ করা হত তাজা জেন্ত আলেমদেরকে৷

একজনের সামনে আরেক জন কে ফুটন্ত তৈলে সরাসরি নিক্ষেপ করা হয়৷ তারপরও কেউ মাথা নত করে নি৷ ১৮৬৪ থেকে ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত ইতিহাসের নির্মম হতাযোজ্ঞ কাজ করে ইংরেজরা৷ আর ওলামায়ে হিন্দ হয় জুলুম নির্যতনের শিকার৷সেটাই ভারতবর্ষের সবচেয়ে বেশি শোক ও দুঃখের বছর ছিল৷

এর পর ভিটে মাটিহীন ওলামায়ে কিরাম দ্বীনে রক্ষার জন্য ১৮৬৬ দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা করে৷ দেওবন্দ এলাকায় সাহারনপুর জেলায়৷

দেওবন্দিরা কি আহলুস সুন্নাহ? তারা কি ইসলামের গন্ডির মধ্যে রয়েছে ?
২২৪৭৩ নং ফতোয়া

জবাবঃ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা’লার, দেওবন্দিরা মুসলিমদের অনেক গুলো দলের একটি। এই দলটি দারুল উলুম দেওবন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভারত) সাথে সম্পৃক্ত এবং সেই নামেই পরিচিত হয়। এটি একটি ফিকহি স্কুল যার শিকড় অনেক গভীরে। যারা এখান থেকে স্নাতক হয়ে বের হয় তারা এর প্রাতিষ্ঠানিক বৈশিষ্ট দ্বারা প্রভাবিত হয় বলে তাদের ‘দেওবন্দি’ বলে ডাকা হয়।
দেওবন্দ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয় এক দল ভারতীয় আলেমদের দ্বারা যখন ব্রিটিশ রা ১৮৫৭ সালে ভারতে ইসলামী জাগরণ কে রুখে দিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা হওয়াটা ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে পশ্চিমা আধুনিকতা এবং বস্তুবাদি সভ্যতার উথ্বানের বিরুদ্ধে একটি শক্ত প্রতিক্রিয়া, যার উদ্দেশ্যই ছিল ভারতীয় মুসলিমদের এমন বিপদ থেকে বাঁচানো; বিশেষ করে যখন বৃটিশরা ভারতের রাজধানী দিল্লিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং এর পুরো দখল নিয়ে নিয়েছিল। তৎকালীন উলামারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গিয়েছিলেন এই ভেবে যে ইসলামকে হয়ত বৃটিশরা পশ্চিমা শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে মিলিয়ে ফেলতে পারে এবং ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই শায়খ ইমদাদউল্লাহ আল মুহাজির আল মাক্কি এবং তাঁর ছাত্র শায়খ কাশিম আল নানুতুবী এবং তাঁদের সাথীরা মিলে একটি পরিকল্পনা করেন ইসলাম এবং ইসলামী শিক্ষাকে হেফাজত করার জন্য। ইসলামী স্কুল এবং ইসলামীক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করাকেই তাঁরা এর সমাধান মনে করলেন। মাদ্রাসা আল ইসলামীয়্যাহ আল আরাবিয়্যাহ ছিল তৎকালীন বৃটিশ শাসনকালে দেওবন্দে প্রতিষ্ঠিত ভারতের ইসলাম এবং শরিয়ার কেন্দ্রবিন্দু।
এই সুপরিচিত ইসলামী চিন্তাধারার প্রধান কর্ণধারগন হলেন,
১। মুহাম্মাদ কাশিম
২। রাশিদ আহমেদ গাঙ্গুহি
৩। হুসায়ন আহমাদ আল-মাদানি
৪। মুহাম্মাদ আনোয়ার শাহ কাশ্মিরি
৫। আবুল-হাসান আল-নদভী
৬। আল-মুহাদ্দিস হাবীব আল-রাহমান আল-আ’যমী
তাঁদের চিন্তাধারা এবং বিশ্বাস
মৌলিক বিশ্বাস (আকিদা) এর দিক থেকে তাঁরা ‘আবু মানসুর আল মাতুরীদি’ এর চিন্তাধারা/অভিমতের অনুসারী।
ইসলামী ফিকহ এবং খুটিনাটি বিষয়ে তাঁরা ইমাম আবু হানিফার অনুসারী।
তাঁরা আত্মশুদ্ধির অংশ হিসেবে সূফী তরিকা ‘নাকশেবন্দিয়া, চিশতিয়া, কাদেরিয়া, শাহারওয়ারদিয়া এর অনুসারী। দেওবন্দিদের চিন্তাধারা এবং মুলনীতি গুলোকে নিচের মত করে একত্রিত করা যায়,

ইসলামী শিক্ষা, ইসলামের শক্তি এবং রীতিনীতি কে সংরক্ষন করা।
ইসলাম প্রচার এবং ক্ষতিকর ফিকহি চিন্তাধারা প্রতিরোধের পাশাপাশি ক্ষতিকর ধর্মপ্রচারকদের প্রতিরোধ করা।
ইসলামী সংস্কৃতির প্রচার এবং ক্ষতিকর বৃটিশ সংস্কৃতির প্রতিরোধ
আরবী ভাষার প্রচারের প্রতি গুরুত্বের সাথে নজর দেয়া, কারন এটা ইসলামী শরিয়ার মুল উৎস থেকে জ্ঞান লাভ করার উপকারিতা দিবে
যুক্তি, আবেগ, জ্ঞান এবং আধ্যাত্মিকতাকে সমন্বয় করা।

(দেখুনঃ আল মাউজু’আ আল মুয়াসসারা ফিল আদয়ান ওয়াল মাযাহিব-১/৩০৮)
যেহেতু দেওবন্দিরা আকিদার ক্ষেত্রে ‘মাতুরীদি’ অভিমত অনুসরণ করে, আমাদের আগে ‘মাতুরীদি’ আকিদার সংজ্ঞা জানতে হবে।
এটা হলো একটা দার্শনিক দল (কালামী), যা ‘আবু মানসুর আল মাতুরীদি’র পর নামকরণ করা হয় তার নামের সাথে মিল রেখে। এটা যুক্তিবাদ এবং দার্শনিক প্রমানের উপর ভিত্তি করে গড়ে ঊঠেছে যেন তারা মুতাযিলা, জাহমিয়্যাহ এবং অন্যদের বিপরীতে একটি সতন্ত্র সত্য ইসলামী আকিদা প্রতিষ্ঠা করতে পারে। উৎসের দিক থেকে মাতুরীদিরা ইসলামের ভিত্তিকে দুটি ভাগে ভাগ করে।

১) ঐশী অথবা যৌক্তিকঃ এই বিষয় গুলো হলো সেগুলো, যা স্বাধীনভাবে যৌক্তিক কারন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। এর মধ্যে পড়ে তাওহিদ এবং আল্লাহ তা’লার গুন সংক্রান্ত।

২) আইনি বিষয় অথবা এমন বিষয়, যেগুলো কারন অনুসন্ধান দ্বারা দেখলে থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে, কিন্তু যৌক্তিক ভাবে কোনক্রমেই প্রমাণ করা যাবেনা যে তা আসলেই আছে। যেমনঃ নবুয়্যাত, কবরের আযাব, পরকালের বিষয়গুলো। এটা বলে রাখা ভালো যে, তাঁদের কেউ কেউ নবুয়্যাত কে যুক্তিকতার মানদণ্ডে আনা যেতে পারে বলে মনে করেন।

এটা পরিস্কার যে এই ধ্যান-ধারণা গুলো ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতে’র কর্মপদ্ধতির সাথে বৈপরিত্য রাখে। কারন ‘আহলুস সুন্নাহ’ এর নিকট কুরআন, সুন্নাহ এবং সাহাবিদের মতামতই চুড়ান্ত পথ নির্দেশক। এটা তাদের বেদআতের একটা বিশেষ দিক যে তাঁরা ধর্মের উৎস গুলোকে যুক্তি দিয়ে ভাগ করেছে প্রতিষ্ঠিত বর্ণনা গুলোর বিপরীতে, যা সেসব দার্শনিকদের মিথ্যা বিশ্বাস, যারা মনে করে ধর্মীয় বাণী (কুরআন আর হাদীস) স্বাভাবিক যুক্তির বিরুদ্ধে যায়। তাই তারা যুক্তি এবং প্রতিষ্ঠিত বর্ণনা গুলোর মধ্যে মধ্যস্ততা করার চেষ্টা চালায়। ফলশ্রুতিতে দেখা যায় তারা যুক্তি বা কিয়াস কে এমন সব যায়গায় নিয়ে আসতে থাকে যেখানে কিয়াসের কোন স্থান নেই। আর এতে করে তাঁরা এমন সব নিয়ম কানুন নিয়ে আসলো যা মুল শরিয়ার বিপরীতে অবস্থান করে, যা তাদের এই কথা বলতে অনুপ্রাণিত করে যে, ‘তারা এই বর্ণনার অর্থ বুঝতে পারেনি এবং আল্লাহই এটা ভালো জানেন’ অথবা ভুল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে।

আসলে ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত’ এর অভিমত হলো, সঠিক যুক্তি এবং সুপ্রমাণিত ইসলামী বর্ণনাগুলোর মধ্যে কোন বিরোধ নেই।

(দেখুনঃ আল মাউজু’আ আল মুয়াসসারা ফিল আদয়ান ওয়াল মাযাহিব আল-মুয়াসসিরা-১/৯৯)
মাতুরীদি আকিদার প্রতি ‘আহলুস সুন্নাহ’ এর দৃষ্টিভঙ্গী
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, এই উম্মাত ৭৩ টি ভাগে বিভক্ত হবে। যার প্রত্যেকটির সাথে প্রত্যেকটির বিস্তর মতপার্থক্য হবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যাখ্যা করেছেন, এই বিভক্তি থেকে বেঁচে যাওয়া দলটি হবে তাঁরা, যারা হুবুহু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের অনুসরণ করবে।
সন্দেহাতীত ভাবে তাঁরাই ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আ’ যারা একনিষ্ঠ ভাবে কুরআন এবং সুন্নাহের অনুসারী ‘ইলম’ এবং ‘আমল’ উভয় দিক থেকে, আর তাঁরাই মুক্তিপ্রাপ্ত দল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইলম এবং আমলের দিক দিয়ে যে মুলনীতি অনুসরন করেছেন, তাঁর সাহাবীরা যা অনুসরণ করেছেন, তাঁরা তারই অনুসারী।
এটা কোন ব্যক্তি বা দলের জন্য ‘আহলুস সুন্নাহ’ দাবী করার পক্ষে যথেষ্ট হতে পারেনা যখন তাঁরা সালাফদের কর্মনীতির বিরুদ্ধে চলে যায়। বিশেষ করে সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেঈদের বিরুদ্ধে। বরং এটা আবশ্যিক যে তাঁরা ইলম, আমল, মুয়ামালাত এবং আত্মশুদ্ধি সব ক্ষেত্রে তাঁদের কর্মপদ্ধতির উপরই অটল থাকবে।
মাতুরীদিরা হলো সেই দল, যাদের মতামতের মধ্যে সত্য আর মিথ্যার মিশ্রন রয়েছে। আর কিছু কিছু মতামত সরাসরি সুন্নাহের বিরুদ্ধে যায়। এটা জানা কথা যে, এরকম দল গুলোর সঠিক-বেঠিক হওয়া নির্ভর করবে তারা কতটুকু সুন্নাতের নিকটবর্তী বা কতটুকু সুন্নাত থকে দূরে তাঁর উপর ভিত্তি করে। আর যত বেশি সুন্নাতের নিকটবর্তী হবে, তত বেশি তাঁরা সত্যের নিকটবর্তী। আর যত বেশি তাঁরা সুন্নাত থেকে দূরে যাবে, তত বেশি তাঁরা সত্যের থেকে দূরে সরে যাবে। তাদের কেউ কেউ মৌলিক ইসলামী মূলনীতির ব্যপারে কিছু সুন্নাহের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে, আর তাদের কেউ কেউ তারচেয়েও কঠিন বিষয়ের সুন্নাহের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে। তাঁদের কেউ কেউ অন্য কিছু দলের সমালোচনা করে এবং তাদেরকে বাতিল বলে যে দলগুলো সুন্নাহ থেকে আরো বেশি বিচ্যুত হয়েছে। তাই মিথ্যার প্রতি তাঁদের সমালোচনা আর বাতিলিকরন আর তাঁদের থেকে সত্যের পক্ষে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, তার জন্য তাঁরা প্রশংসার দাবি রাখেন। কিন্তু তাঁরা খুব দ্রুত সত্যের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং কিছু বাতিল কে সঙ্গ দিয়েছেন। তাঁরা ছোট বিদআত কে উপেক্ষা করে তার চেয়ে বড় বিদআত কে সমালোচনা/খণ্ডন করে, এবং ছোট মিথ্যার বিপরীতে বড় মিথ্যার সমালোচনা/খণ্ডন করে। এই যুক্তিতে ‘আহলুল কালাম’ দার্শনিকরা ‘আহলুস সুন্নাহের’ মধ্যে থাকার দাবি করে।
(ইমাম ইবনে তাইমিয়্যার বক্তব্য থেকে নেয়া, আল ফাতাওয়া, ১/৩৪৮)

তাহলে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যার উত্তর দেয়া প্রয়োজন, তা হলো, তাদের ব্যাপারে আমাদের কর্তব্য কি হবে যারা মাতুরীদি এবং তাদের মতই আকিদা পোষণ করে, যেমন দেওবন্দি?
উত্তর নির্ভর করবে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি বিশেষে পার্থক্য এর উপর ভিত্তি করে।
যদি কেউ একগুঁয়ে ভাবে বিদআত প্রচার করে, তাহলে আমাদের অবশ্যই অন্যদেরকে তাঁর ব্যাপারে সাবধান করতে হবে এবং ব্যাখ্যা করে বুঝাতে হবে কোথায় তাদের ভুল রয়েছে এবং কোথায় তাদের পদস্খলন হয়েছে।
আর যদি এমন হয় যে, ব্যক্তি তার বিদআতের ব্যাপারে একগুঁয়ে নয় বরং বুঝা যায় যে সে সত্য অনুসন্ধানী, তখন আমাদের উচিত হবে তাকে উপদেশ দেয়া এবং সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে বলা তার ভুলের ব্যাপারে, হয়ত আল্লাহ্‌ তাকে হেদায়াতের পথে ফিরিয়ে আনবেন।
এই উপদেশ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, ‘দ্বীন হলো নসিহাত”। আমরা (সাহাবা) জিজ্ঞাস করলাম, “কার জন্য”। তিনি বললেন, “ আল্লাহ্‌ , তাঁর কিতাব, তাঁর রাসুল, মুসলিম নেতা এবং সকল মুসলিমের জন্য” – সহীহ মুসলিম ৫৫

অনুদিত
ফতোয়া (ইসলামকিউএ)
শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 04:36:42 pm, Saturday, 20 September 2025
161 Time View

দারুল উলূগম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট–তামজীদুল মাওলা কাসেমি

Update Time : 04:36:42 pm, Saturday, 20 September 2025

 

দেওবন্দ!
একটি প্রতিষ্ঠান ই তার আসল পরিচয় নয়৷ দেওবন্দ একটি জাতি গোষ্ঠির সাথে সম্পর্কের কারণে বিশ্বমোড়লে তার পরিচয়৷ অস্তিত্বের প্রান্তি কিনারায় লড়ে যাওয়া স্বাধীনতা চেতনাকামী এক ঝাঁক আলেমের পদদলিত হওয়াই আজও লোক মুখে “দেওবন্দ”৷ বিশ্ব কে আরেকবার তাক লাগানো পরা শক্তির ভীদ কাঁপানো এক কাফেলার ত্যাগে ই দেওবন্দ৷

দেওবন্দ একটি ইতিহাস একটি সংগ্রাম একটি আন্দোলন৷ দেওবন্দ নামে মাত্র ভেষে উঠে হৃদয় কাবায় এক করুণ ও হৃদয় বিদারক সফল ইতিহাস৷ দেওবন্দী শুধু নির্দিষ্ট কোন জাতি গোষ্ঠির সাথে সীমিত না৷ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অপর নাম ই দেওবন্দী বা ক্বাসেমী৷ এক কথায় মুসলিম উম্মাহর অতন্দ্র প্রহরী ধর্মীয় রাহবার চির সুখের পথনির্দেশক সফলতার অগ্রনায়ক এক জন গোষ্ঠির সংক্ষিপ্ত নাম ওলামায়ে দেওবন্দ৷ উলামায়ে দেওবন্দের পূর্ণ পরিচয় ইতিহাস ও ঐতিহ্য পেতে হলে একটু পেছনে যেতে হবে৷ খুলে দেখতে হবে ইতিহাসের ঘুনেধরা নির্মম পাতাগুলো৷ বুকে সাহস আর মুখে বল নিয়ে জানতে হবে সঠিক ও সত্য ইতিহাসটুকু৷ তাহলে ই কাসেমী বা দেওবন্দীদের আসল পরিচয় সামনে আসবে৷

আসলে দেওবন্দ নামটি আজ থেকে ঠিক দেড়শ বছর আগে পুনঃজন্ম লাভ করে৷ ভারতবর্ষের সাহারনপুর জেলার অন্তরগত গত একটি উপশহর দেওবন্দ৷ একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে ই তার পরিচিতির সূচনা৷ ১২৮৩ হিঃ মোতাবিক ১৮৬৬ সালে ১৫ ই মহররম মোতাবিক পহেলা মে’ প্রতিষ্ঠিত হয় একটি মাদ্রাসা৷ এটাই তার মূলে৷ যা আজ দারুল উলুম দেওবন্দ নামে সারা বিশ্বের পরিচিত শব্দ৷

কিন্ত, আসল ব্যক্তিত্ব ও সার্বভৌমত্ব আরো অনেক পেছনে যা জানাও অবশ্যক৷ এতে ই আসল পরিচয় নিহিত৷ আসুন তা জেনে নিই…

১৯৪৭ সাল৷ এই ভারতবর্ষ (হিন্দুস্তান, পাকিস্তান,বাংলাদেশ) স্বাধীনতার মুখ দেখে৷ এর আগেও পরাধীনতার জিঞ্জিরে আবদ্ধ ছিল এই বারের ছগীর৷ কিন্তু ১৯৪৭ সালেই আবার পাকিস্তান স্বতন্ত্রভাবে ছিনিয়ে নেয় তাদের স্বাধীনতা সূর্য৷ আবার ১৯৭১ এর শেষ প্রান্তে পৌছে বাংলাদেশের ভাগ্য খুলে৷ পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে তালিকাভুক্ত হয় আরেকটি পতাকা৷ অর্জিত হয়একটি স্বাধীন দেশ৷ কিন্তু আজ তো সবাই স্বাধীনতার অগ্রনায়ক হিসাবে পরিচিত হতে চায়৷ মুক্তিযুদ্ধাদের তালিকায় নাম লিখাতে চায় অনেকে৷ তবে আসল স্বাধীনতার পয়গাম তো আরো অনেক পেছনে৷ আসুন তা খতিয়ে দেখি৷

সন ১৬০১ খ্রিষ্টাব্দে এ পাক ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম ইংরেজরা অনুপ্রবেশ করে৷ ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে বরতানিয়া থেকে ব্যবসার ছদ্ধবেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নামে এক প্রতারক চক্র আসে৷ তৎকালীন হিন্দুস্তানের হুকুমত ছিল বাদশাহ জাহাঙ্গীরের দখলে৷ সরলমনা জাহাঙ্গীর তাদের মায়াকান্নায় বেশি দিন টিকতে পারল না৷ ইংরেজ তাকে বুঝাতে লাগল এখানের মাল বরতানিয়ায় আমদানি রপ্তানি করে তার লভ্যাংশ হিন্দুস্তানের কল্যানে ব্যয় করবে৷ বাদশাহ জাহাঙ্গীর তাদের ফাঁদে পা দিয়ে হয়ে যায় আবদ্ধ৷ তাদেরকে দিয়ে দেয় অনেক সুযোগ সুবিধা৷ রাতারাতি একেক জন হয়ে যায় অডেল সম্পত্যির মালিক৷ বাদশাহ জাহাঙ্গীর হিন্দুস্তানের বর্গা ভিঘা জমিন তাদের নামে বরাদ্ধ করে দিতে লাগল৷ কিছু দিনের মধ্যে ই ইংরেজরা হয়ে গেলো নব্য জমিদারে পরিণত৷
যাক, কিছু দিনের মধ্যেই তারা এখন হিন্দুস্তানের শক্তিধর ব্যবসায়ী৷ ধনে জনে বিশাল শক্তির অধিকারী৷ একশ বছরের মাথায় তারা শাষন করতে লাগল ভারত বর্ষের বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চল৷ ১৭১৭ সালে মৌসুর প্রদেশ সহ বিভিন্ন এলাকায় তারা রাজত্ব করতে থাকে৷ ১৭৪০-র কথা তৎকালীন সময়ে তারা ভারতবর্ষের একাধিক প্রদেশে হুকুমত খাটায়৷

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস কে জানে! এ দিকে আরবী সন ১১১৪ হিঃ মোতাবিক ১৭০৩ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দুস্তানের ঐতিহ্যময় পুরানো শহর দিল্লীর অধিবাসী আঃ রহিমের ঔরষে জন্ম নেয় এক মহান পুরুষ৷ যাকে ইতিহাস শাহ অলিউল্লাহ নামে স্বরণ করে৷ যাকে হাদীসের জগতে মুসনিদুল হিন্দ নামে চিনে৷
যিনি ছিলেন এই উহমহাদেশে সর্ব প্রথম সিহাহ সিত্যাহ র দরস প্রদান কারী৷ ইলমের জগতে যার খিদমত অপরিসীম৷ যার দুরদর্শিতা সর্বজন স্বীকৃত৷ যিনি ছিলেন ইলমে হাদীসে ময়দানে শাহ ছাওয়ার৷ যার অপর্যাপ্ত খেদমতের কাছে মুসলিম উম্মাহ আজো ঋনী৷ তিনি শুধু ইলমের ময়দানে ই নয় বরং তিনি ছিলেন তাক্বওয়া তহারাতে তথা ইলমে বাতিনের ও ইমাম৷ হযরতের অনবদ্য অমরগ্রন্থ ইলম ও হিকমতের সমাহার “হুজ্জতুল্লাহিল বালিগাহ”৷ যার নজীর পূর্বে পরে বলকেহ আজো মিলে নি৷

তিনি উনত্রিশ বছর বয়সে ১১৪৩ হিঃ তে ইলমের টানে হিজায সফর করেন৷ মক্কা মদীনার শায়েখ মাশায়েখদের থেকে ইলমী তৃষ্ণা নিবারণ করেন৷ তাঁর তৃষিত হৃদয়কে ইলমী সুধা প্রশমিত করেন৷ সেখানে তিনি পূর্ন দুই বছর অবস্থান করে ইলম ও হিকমতে পূর্ণ পন্ডিত্ব অর্জন করেন৷ বিষেশ করে হারামাইনের মাশায়েখদের মধ্যে শায়েখ আবু তাহের মুহাঃ বিন ইবরাহীম কুরদী আল মাদানী রহঃর কাছে সিহাহ সিত্যাহর সব কটি কিতাব ই অধ্যায়ন করেন৷
অতপর স্ব-সনদে ১১৪৫ হিঃ তে দেশে ফিরেন৷ এবং মাদরাসায়ে রহিমিয়াতে দরসে তাদরীসের খেদমতে নিজেকে ধন্য করেন৷ তখনি তিনি বলেছেন হিন্দুস্তান তো ইংরেজদের কব্জায় যাওয়ার বেশী দেরী নাই৷ অদূরেই ভারতবর্ষের শাষন ক্ষমতা ইংরেজরা ছিনিয়ে নিবে ৷ ঠিক ই কিছু দিন পরে ই ইংরেজরা ঘোষনা দিলো “দেশ রাষ্ট্র প্রধানের, আইন আমাদের, হুকুমত কোম্পানির৷ তৎকালীন সময়ে শুধু দিল্লি শহরের দশ হাজারের অধিক মাদ্রাসা বন্দ করে দেয় তারা৷ এই হল শেষ পরিনাম৷

এরই ধারাবাহিকতায় ১৭৩৯ সালে এই মহাবীর শাহ ওলিউল্লাহর ঔরষে জন্ম নেয় এক মহা মানব ৷ যাকে ইতিহাস শাহ আঃ আজীজ বলে জানে৷ ১৭৬২ সালে তিনি রেখে যাওয়া পিতার মসনদে সমসীন হন৷ ১৭৬৩ সালে ইংরেজ চক্রান্তের গোড়ায় দুর্দর্শিতার দৃষ্টির দেন৷ তখনি তিনি সেই উপলব্ধিতে সফলও হন৷ দেখলেন ভারতবর্ষের অনেক এলাকা ইংরেজদের ক্ষমতায়৷ শাষন আর শোষনের স্ট্রীমরোলার দিয়ে ক্ষমতা দৃড় ও মজবুত করতে লাগল ইংরেজ৷
শাহ আঃআজীজ রহঃ তাঁর বিচক্ষনতায় ১৭৭২ সালে সর্বপ্রথম ইংরেজদের বিরুদ্ধে সাহসি ভূমিকা রাখেন৷ সারা দুনিয়াকে সত্যের আহবান জানিয়ে ও বিজয়ের ঝান্ডা নিয়ে মাঠে নামেন৷ তাঁর ঐতিহাসিক ফতোয়া ই আজ হিন্দুস্তানের স্বাধীনতার মহা উৎস৷ ধর্মীয় ফতোয়া ই আজকের আযাদীর মূল চেতনা৷ তিনিই নির্ভয়ে দ্বীপ্তকন্ঠে স্পষ্টভাষায় জিহাদ ফরজ হওয়ার ঘোষনা দেন৷

অপর দিকে হায়দার আলীর ঘরে জন্ম নেয় এক তারুন্যের গৌরব, সিপাহে ইসলামীর অহংকার৷ যিনি আজো সুলতান টিপু নামে খ্যাত ৷ অবশ্যই তাঁর পিতা ছিল ইংরেজী ফাওজের শামিল৷
যখন টিপু সুলতান আজীজী ফতোয়া আর আযাদী চেতনা নিয়ে মাঠে নামলেন৷ জানলেন মুসলমানের উপর জিহাদ ফরজে আইন হয়ে গেছে৷ তিনি ঐসময় মুসলমানদেরকে তবিয়ত ও শিষ্টাচারিতা শিক্ষা দীক্ষায় ছিলেন তরবিয়তি মুরুব্বী৷ তাই তিনি তাঁর তিনশ শিষ্য ও মুসসিম বাহিনী নিয়ে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়েন৷ এটা তো ১৭৯২ এর কথা ৷

মেরে দোস্ত!
এই সেই টিপু সুলতান যার তাকওয়া-তহারত পুরো দুনিয়া খ্যাত৷ যার কোন দিন এক সাথে ছয় ওয়াক্ত নামাজ কাযা হয় নি৷ যিনি ছিলেন ছাহিবে তরতীব বুযুর্গ৷ তাঁর বুঝুর্গীর কাহিনী কে না জানে! যখন তিনি নিজ শহরে নতুন মসজিদ নির্মান করে৷ ঘোষনা করে দিলেন যার জীবনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত পাছ ওয়াক্ত নামাজ ক্বাযা হয়নি এমন ব্যক্তি সর্ব প্রথম এ মসজিদের ইমামতি করবে৷ ভরা মজলিস পিন পতন নিরবতার ভূমিকায়৷ কেউ সাহস করতে সক্ষম হয়নি৷ তখন সুলতান টিপু ই নিজেকে আর গোপন করতে না পেরে নিজেই ইমামতি করেন৷ সেই কাহিনী কে না জানে৷
মেরে ইয়ার!!
আজ তো ইতিহাসে বিকৃত হয়ে ঘুনে ধরার পথে৷ ইতিহাস তো সুলতান টিপু কে চিনেও না মনে হয়৷ দুঃখ আর ভগ্ন হৃদয়ে বলতে হয় তিনি ই আযাদী আন্দোলনের মহান পুরুষ৷ তিনি ই তো স্বাধীনতার অগ্রদূত৷ অথচ যুগপৎ ইতিহাস !!?

তিনি কোন দিন দাড়িতে হাত লাগান নাই৷ দাড়ির সুন্নতের উপর ছিলেন সুন্নতের পূর্ন পাবন্দ৷ শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী রহঃ তাঁর মাকতুবাতে লিখেছেন: সুলতান টিপু ছিল একজন তাহাজ্জুদ গুজার তাঁর যুগের কুতুব৷ তিনি রাতকে ইবাদতে অতিবাহিত করতেন৷ সুলতান টিপুর ঐ চিঠি খুলে দেখ! যা তিনি সায়্যিদ আহমদ শহীদ রহঃ এর কাছে লিখেছেন৷ তিনি লিখেছেন ইংরেজ খতম করে আমি এ ভারতবর্ষে ইসলামী হুকুমত কায়েম করতে চাই৷

মেরে দােস্ত!
যখন ইংরেজ বেনিয়াদী আন্দোলন তাদের সফলতায় ব্যার্থতা অনুভব করতে লাগে৷ যখন জমিন তাদের জন্য সংকীর্ন হতে লাগল৷ শক্তি,সামর্থ জ্ঞান,বুদ্ধি হারিয়ে এখন নতুন চিন্তা শুরু করে৷ পলিটিক্যাল পদ্ধতি চ্যাঞ্জ করে নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করতে লাগল৷ ঘুরিয়ে দিল রনকৌশলের মোড়৷ তবে এ পদ্ধতি মুসলিম উম্মাহর জন্য নতুন নয়৷ মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশ পতন আর পরাজয়ের মূল কারণ এটাই বটে৷

আর তা হলো: মুসলিম নেতাদের কে লোভলালসার ফাঁদে বন্দি করা৷ যখনি মুসলিম নেতারা নারী বাড়ী আর গাড়ীর লোভে নেফাকী কে গ্রহন করে তখনি মুসলমানদের পরাজয় তাদের পদচুম্বন করে৷ ঠিক ঐ সময়ে ইংরেজদীর গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ হয় মুসলিম নেতা মীর সাদেক৷ গ্রহন করে নেয় মুসলিম শত্রুতা আর নেফাকী৷ মুসলমানদের গোপন ভেদ ফাঁশ করে শত্রুর কাছে৷

ইংরেজদের পা-চাটা গোলামে পরিনত হয় মীর সাদেক৷ তখনি পরাজয় আসতে লাগে৷ রাতারাতি মীর সাদেক হয়ে যায় নব্য জমিদারে পরিনত৷ নয়শ বিগা জমির মালিক হয়ে যায় মীর সাদেক৷ ইতিহাস তাকে বিশ্ব মুনাফিক হিসাবে চিনে ৷
আর তখনি মুসলমানদের মাঝে দুই গ্রুপ হয়ে যায়৷ একদল ইংরেজদের টাকায় খরিদকরা গোলাম৷ তাদের রক্ষনা বেক্ষনায় নিজেদেরকে শামিল করে৷ তারা মুসলিমদের সাথে গাদ্দারী করে ইংরেজদের সাথে হাত মিলায়৷ তাল মিলিয়ে চলে শত্রুর সাথে৷ অপর দিকে আরেক দল এখন ও সুলতান টিপু রহঃ এর মতাদর্শে বিশ্বাসি৷ আঃ আজীজ রহঃ এর ফতোয়ার উপর শিষাঢালা প্রাচীরের ন্যায় মুসলিম সৈনিক হিসাবে কাজ করে৷

মেরে পেয়ারা ভাইও!
কয়েক দিন না যেতেই ১৭৯৯ সালে সুলতান টিপুকে শহিদ করে দেয়া হয়৷ শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করে ধন্য হয় সুলতান টিপু ৷
অপর দিকে গাদ্দার ইংরেজরা ভাবতে থাকে পথের সবচেয়ে বড় বাধা দূর হলো বুঝি৷ এখন তো বিজয় আমাদের৷ জয়ের সুগম পথে এখন আর নেই কোন টিপুর মত মহান নেতা৷ এখনি সফলতার সুবর্ণ সুযোগ৷ আর মীর সাদিকও পেয়ে গেলো নয়শ বিগা জমিন ৷
তারপর নওয়াব সিরাজুদ্দৌলা মুসলিম নেতার ভূমিকায় মাঠে আসে৷ তিনি ই পলাশীর যুদ্ধের মহান নেতা ও বীর শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা৷ এই পলাশীর যুদ্ধ মোট বাইশ ঘন্টা অব্যহত থাকে৷ এদিকে ইংরেজরা নওয়াব সিরাজুদ্দৌলার সিপাহ সালার মীর জাফর কে অর্থের লোভ দেখিয়ে খরিদ করে নেয়৷ মুসলমানদের সাথে গাদ্দারি করা আরেক মুনাফিককে কাছে পেলো ইংরেজ৷ সে হলো অমিটন৷ এ দুজন কে তারা খরিদ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজে লাগায়৷ আজ পুরা জাতি এক নামে মীর জাফরকে মুনাফিক হিসাবেই চিনে৷
তবে আফছোছ হল সুলতান টিপুর ন্যায় নওয়াব সিরাজুদ্দৌলাও শহিদ হয়ে যায়৷

এই ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য যারা শহিদ হলেন তাঁদের আরেক জন যোগ হল৷ তিনি হলেন নওয়াব সিরাজুদ্দৌলা৷ আর গাদ্দারদেরও অন্তরভূক্ত হলো নতুন দুই মুনিফক৷ মীর্জাফর আর অমিটন৷

মেরে দোস্ত!
তারপর হিন্দুস্তানে কি হতে লাগলো! ভারতবর্ষের পাক ভুমিতে এখন দুই ফেরকা বাস করতে থাকে৷ একদল গাদ্দারদের জামাত দ্বিতীয় গ্রুপ ওফাদার আর নিপিড়িত মুসলিম বাহিনী৷

তারপর নওয়াব সিরাজুদ্দৌলার শাহাদাতের পর ১৮৪০ সালে হিন্দুস্তানের পাঞ্জাব শহর শাষন করে রাজা রঞ্জিত শিং৷ সেও মুসলমানদে উপর করতে থাকে অমানবিক আচরন আর পৈশাচিক নির্যাতন৷ জুলুমের স্ট্রীমরোলার চালায় মুসলিম পরিবারে উপর৷ মুসলমানদের ইবাদতখানা মসজিদ গুলোকে ঘোড়ার আস্তাবলে পরিনত করে৷ তার এই জুলুম সেতম বেরলৌ শহরেও পৌছে যায়৷

তৎকালিন সময়ে বেরলৌতে একজন আল্লাহর আবেদ বুজুর্গ দরবেশ ছিলেন৷ তিনি আর কেউ নয় তিনি হলেন সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলৌয়ী রহঃ৷
কে এই আহমদ বেরলৌয়ী!
তো বলতে চাই শাহ ওলিউল্লাহর চার ছেলে, শাহ আঃআজীজ ,শাহ আঃ কাদের,শাহ রফিউদ্দীন ,শাহ আঃ গনী৷ সবার বড় শাহ আঃআজীজ রহঃ৷ উক্ত চারো জনই ছিলেন মুফাসসিরে কোরআন৷ চারো ভাই ই মুহাদ্দীস ছিলেন৷ তাঁরা সবাই স্বযুগের কুতুব ছিলেন৷

মেরে দোস্ত! চার ছেলে ছিলো শাহ অলিউল্লাহ রহ: র৷ বড় ছেলের কৃতিত্ব তো সবাই জানে৷ যিনি জিহাদের ফতোয়া দিলেন৷ স্বাধীনতার মহান নায়ক৷ শাহ রফিউদ্দীন আর শাহ আঃ কাদের র. হিন্দুস্তানে সর্বপ্রথম কোরআন তরজুমা ও তাফছির লিখেন৷ আর শাহ আঃ গনী রহঃ এর বড় অবদান হলো তাঁর ঔরষেই জন্ম নেয় এক আল্লাহওয়া বুঝুর্গ৷ তিনি ই হলেন ইসমাইল শহিদ রহঃ৷ আর বুঝার বাকি রইল না ইসমাইল শহিদ রহঃ হলো শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দীসে দেহলবীর দৌহিত্র বা নাতি৷ আর শাহ আঃ আজীজ রহঃএর ভাতিজা৷

সেই সায়্যিদ আহমদ শহিদ রহঃ বেরলৌ থেকে সফর করে দিল্লী যান৷ তিনি শাহ আঃআজীজ রহঃ এর কাছে ইলম ও মারেফাত হাছিল করেন৷ তিনি হযরতের হাতে ও বয়াত গ্রহন করেন৷ অপরদিকে ইসমাইল শহিদ রহঃ ছিলেন সায়্যিদ আহমদ রহঃএর শিষ্য ও মুরিদ৷

যখন রাজা রঞ্জিত শিং এর জুলুম নির্যাতন দিন দিন বেড়েই চলছে৷ তখন সায়্যিদ আহমদ শহীদ রহঃ ১৮২৬ সনে সাড়ে সাতশত মুজাহিদ আর দশ হাজার মুসলিম বাহিনীর বিশাল কাফেলা নিয়ে পাঞ্জাব শহরের দিকে রওয়ানা করেন৷ এর আগে তাঁর কাছের শিষ্য ইসমাইল শহিদ রহঃ কে দূত হিসাবে রাজার কাছে পাঠান৷ শাহ ইসমাইল শহীদ রহঃ এসে শায়েখকে রিপোর্ট দিলেন৷ যে রাজা রঞ্জিত মুসলমানদেরকে দিন দিন নির্যাতন করেই চলছে৷ মুসলমানদের ইবাদতখানা মসজিদ গুলোকে ঘোড়ার আস্তাবলে পরিনত করছে৷ তারপর ১৮২৭ সায়্যিদ আহমদ রহঃ পাঞ্জাব গিয়ে পৌছেন৷ সেখানে গিয়ে শুরু করে দেন যুদ্ধ জিহাদ৷ চলতে থাকে তুমুল লড়াই৷ এক পর্যায়ে বিজয় হয় সেখানকার “পাশাওয়ার”এলাকা৷ বিজীত এলাকায় শাহ ইসমাইল ঘোষনা করে দিলেন আজ থেকে এই এলাকার আমিরুল মুমিনীন হলেন সায়্যিদ আহমদ রহঃ৷ আজ থেকে বিজীত অঞ্চলের সীমানায় চুরি ডাকাতি খুন খারাবী বন্দ৷ নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হল শরাব পান কেও৷
সময়ের পরিবর্তনে ক্রমাগত ভাবে বিজয় হতে থাকে একের পর এক অঞ্চল ও মহল্লা৷ সমাজে বইতে লাগল শান্তি সুখের হিমেল হাওয়া৷ দিন দিন বাড়তে লাগলো নব মুসলিম সহ শায়েখের মুরিদান৷ ঐ দিকে রাজা রঞ্জিত শিং-র মনে ভয়ে ভিতি ও প্রকম্পিতের ছোট্ট কুটিরে পরিনত৷লদিশামিশা না পেয়ে রাজা শায়খের খেদমতে দূত পাঠায়৷ রাজার দূত এখন শায়েখের দরবারে৷ বলতে লাগলো রাজার পয়গাম৷ আপনার বিজিত অঞ্চল আপনি শাষন করেন সেখানে রাজার কোন ক্ষমতা থাকবে না৷ রাজা তার অঞ্চল শাষন করবে আর তার হুকুমত ও থাকবে সীমিত৷ যুদ্ধ বন্দ রাখুন৷

কিন্তু ইতিহাস সাক্ষি, মুসলমান কোন দিন ক্ষণস্থায়ী ক্ষমতার জন্য জিহাদ করে না৷ তারা একমাত্র রেজায়ে এলাহী আর ই’লায়ে কালিমাতুল্লাহর জন্য নিজের জানের মায়া ছেড়ে আল্লাহর পথে উৎসর্গ হতে জানে৷ রাজার পয়গাম শুনে সায়্যিদ আহমদ শহীদ রহঃ বলল:
শুনো!

হে বেঈমানের দল! এখানে আমি কোন রাজত্ব করতে আসি নাই৷ আমার হুকুমত করার ও প্রয়োজন নাই৷ হুকুমত করার শাওকও আমার দিলে নাই৷ আমি আসছি স্রেফ একটা জ্বলন আর দরদ নিয়ে৷ তোমরা যখন নিরপরাধী মুসলমানদেরকে পাইকারী ভাবে হত্যা করতে দিধা সংকোচ করছো না৷ মুসলিম শিশু হত্যায় তোমাদের পাষান হৃদয়ও বুক কাঁপছে না৷ জুলুম আর নির্যাতনের সীমা ডিঙ্গিয়ে যখন ছাড়িয়ে গেছ তোমাদের হিংস্র পশুর অমানবিক জুলুম৷

তখনি আমি এসেছি রাসুলে আরাবীর নির্যাতিত উম্মাহর পাশে দাড়াতে৷ বঞ্চিত মানবতার পাশে দাড়াতে৷ আর জিহাদ নামীয় ফরজ বিধান কে আল্লার জমিনে পুনঃবাস্তবায়ন করতে৷
শুনে রাখ!

হে কাফেরের বাহিনী! যতদিন মুসলিম নির্যাতন বন্দ না হবে৷ না পাবে তাদের হারানো স্বাধীনতা৷ ততদিন আমি লড়েই যাব৷ আর আমার দেহে এক ফোটা রক্ত থাকা পর্যন্ত জিহাদ বন্দ হবে না৷ ইনশাআল্লাহ৷

বেঈমান কাফেরের সাথে কোন ধরনের লেয়াজু নেই৷ এ দেহে রক্ত থাকবে আর ইসলাম ও মুসলমান নির্যাতিত হবে না৷ হতে দিব না৷ দেয়া যাবে না৷

মেরে দোস্ত!
এই হল সায়্যিদ আহমদ শহীদ রহঃ যিনি কোন সাধারন আদমী নন৷ শাহ অলিউল্লাহর পর জমিন এত বড় মানুষ আরেকজন দেখে নাই৷ যার হাতে চল্লিশ হাজারেরও বেশি মানুষ মুসলমান হয়৷ যার হাতে ত্রিশ লাখ মুসলিম বয়াত গ্রহন করে৷ তাঁরই শাগরিদ ইসমাইল শহীদ রহঃ এর কালজয়ী কিতাব “তাক্বউয়াতুল ইমান” পড়ে সাড়ে তিন লাখ কাফের মুসলমান হয়৷

মেরে দোস্ত!
শায়েখ সায়্যিদ আহমদ বেরলৌয়ী রহঃ কোন সাধারন মানুষ না৷ কোন শারাবী তাঁকে দেখলে তাওবা করতে থাকে ৷ চোর তাঁর সোহবতে এসে হয়ে যায় পাক্কা মুসলমান৷

প্রিয় বন্ধু গন!
এই জিহাদে তিনি কখনো কখনো এক জায়গায় ছয় মাস আবার কোন স্থানে এক মাস অবস্থান করে৷ এভাবে তিনি জিহাদ করেই গেছেন৷ জিহাদ করতে করতে ১৮৩১ সনের পহেলা মে’ তিনি বালাকোট ময়দানে গিয়ে পৌছেন৷ কিন্ত ভাগ্যের নির্মম পরিহাস৷ সেখানেরও কিছু মুনাফিক দল রাজা রঞ্জিত শিং র বাহিনীর কাছে তাদের খবরাখবর পৌছে দেয়৷ এবং রাজার গোয়েন্দা হিসাবে কাজ করে৷ এদিকে মুসলিম সেনা মুজাহিদের বাহিনীতে জন্ম নেয় এক শ্রেনীর গাদ্দার পার্টি তাগুত৷ অবশেষে পাঁচ ই মে’ ১৮৩১ সনে তাহাজ্জুদের সময় সেজদা অবস্থায় সায়্যিদ আহমদ শহীদ রহঃ কে নির্মম ভাবে শহিদ করে দেয়া হয়৷
আজো সেই শহিদের লাশ বালাকোটে মাজার হয়ে আছে৷ স্মৃতির পাতা থেকে বিলিন হয়নি তার কুরবানি৷

অপর দিকে শাহ ইসমাইল শহিদ রহঃ লাগাতার লড়তে থাকেন৷ টানা সাড়ে চার দিন তুমুল লড়াই করে যখন জনৈক শিখ রাসুল সোঃ কে গালি দেয় ইসমাইল শহিদ রহঃ আর সহ্য করতে পারলেন না৷ কসম করে বললেন: “”খোদা কা কসম! মাই নেহি মরোঙ্গা যব তুজে নেহি মার ডালোঙ্গা””৷

সাড়ে চার দিন লড়াইয়ের পর যখন শত্রু তার দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে চিরতরে শহিদ করে দিলো৷ শরিরের এক অংশ এক জায়গা পড়ে রইল৷ কিন্তু তাঁর শপথ পুর্ণ হয়নি এখনো৷ তখনি ”ইন্না মিন ইবাদিল্লাহি লাও আক্বছামা আলাল্লাহি লা আবাররাহু ”র বাস্তব প্রতিফলন ঘটল৷ আর ইসমাইল শহিদ রহঃ এর অবিস্বরনীয় কারামত প্রকাশ পেলো৷ দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হওয়া সত্বেও ঐ শত্রুকে মেরে তাঁর শপথ পূর্ণ করলেন৷ আল্লাহু আকবর ৷!এমনি ছিলেন তিনি৷

বালাকোট বাজার থেকে এক মাইলের দূরত্বে অবস্থিত ইসমাইল শহীদ রহঃ র মাজার৷ মনে হয় আজো সেখান থেকে তাজা রক্তের গন্ধ পাওয়া যায়৷ ভেষে উঠে ওহুদ পাহাড়ের পূরানো স্মৃতি৷ সে বালাকোট পাহাড়ে প্রায় চারশ মুসলিম শহিদ হয়৷

এটাই সেই বালাকোট৷ ইতিহাস যাকে বালাকোট যুদ্ধ হিসাবে চিনে৷ আর এই মুজাহিদদের কে ই শুহাদায়ে বালাকোট বলা হয়৷ বেচে যাওয়া সামান্য কিছু মুসলিম পরাজয় বরণ করে ফিরে আসেন৷ তাঁদের সংখ্যা ছিল প্রায় একশ জনের মত৷ তাঁদের অন্যতম হলেন জাফর আহমদ থানেশ্বরী,বেলায়েত আলী ও মামলুক আলী এবং ইয়াহয়া আলী সহ (রহ:) প্রমূখ৷

বেঁচে যাওয়া মুসমানরা পরাজয়ের দুঃখ নিয়ে দিল্লিতে মশওয়ারায় বসেন৷ কিন্তু তাঁদের নেই শক্তি বল৷ না আছে জন শক্তি না আছে অর্থ শক্তি৷ অস্ত্র শস্ত্রও শুন্যের কেটায়৷ এমনি এক ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে পরামর্শে বসেন ক্ষুদ্র একটি জামাত৷ কিন্তু স্বাধীনতার চেতনায় ভরা হৃদয় এ কাফেলা কারো কাছে নতজানু করতে জানে না৷

কারো সামনে মাথা ঝুকায় না এঁরা৷ একে একে চৌদ্দ হাজার আলেম কে ফাসির কাষ্ঠে ঝুলানো হল তার পরও নত শির করেন নি৷ এভাবে চলতে থাকে দু-এক যুগ৷
১৮৫৬ সনে দিল্লিতে ভারতবর্ষের সমস্ত বড় বড় আলেম ওলামাদের মশওয়ারা হয়৷ তাদের অন্যতম হলেন৷ এমদাদুল্লাহ মুহাজেরী মক্কী, রশিদ আহমদ গংগুহী, কাসেম নানুতুবী এবং জাফর আহমদ থানেশ্বরী ও হাঃ জামেন শহীদ রহঃ সহ প্রমুখ আলেম ওলামারা৷
মশওয়ারায় কাসেম নানুতুবী রহ. বলেন:
ইংরেজ আমাদের মাথায় উঠে বসে আছে৷ দিন দিন ই তাদের নির্যাতন বেড়েই চলছে৷ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তাদের ক্ষমতা৷ এভাবে যদি চলতে থাকে ভারত বর্ষ সারা জীবন গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ থাকতে হবে৷ তাই যার যা আছে তা নিয়ে এদের বিরুদ্ধে জনমত ঐক্য হয়ে জিহাদ করতে হবে৷
মাঠে নামতে হবে আপন সম্বল নিয়ে৷ না হয় অদুর ভবিস্যতে হিন্দুস্তানের স্বাধীনতা খর্ব হবে, মুসলিম হবে নির্যাতিত৷ মানুষ হারাবে তাঁদের মানবতার জীবণ৷ উক্ত মজলিসে ই জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল৷ হযরত! আমাদের তো লোক সংখ্যাও কম আবার অস্ত্র স্বস্ত্রও না থাকার মত? কিভাবে লড়োব স্বশস্ত্র বাহিনীর মোকাবিলায়?
হযরত নানুতুবী রঃ বজ্র কন্ঠে স্পস্ট ভাষায় বলে দিলেন: স্বরণ করো সে সময়কে, “বদরের মুজাহিদরা কি আমাদের চেয়ে কম ছিল না! তাঁদের অস্ত্র কি ই বা ছিল! জিহাদ চলবেই চলবে৷ জিহাদ কোন দিন অস্ত্রের মুক্ষাপেক্ষি না৷ যার যা আছে রনটণক্ষেত্রে ঝাপিয়ে পড়ো৷
শুরু হয়ে গেলো জঙ্গে আযাদী৷ স্বাধীনতা আন্দোলন৷ হিন্দুস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুটি যুদ্ধ হয়৷ এক: ১৮৫৭তে আযাদী আন্দোলন৷ যার মহান নায়ক ছিলো মুহাজিরে মক্কী রঃ এর শাগরিদ ক্বাসেম নানুতুবী রহঃ৷ যে যুদ্ধে কাসেম নানুতুবী খোদ নিজেই আঘাত প্রাপ্ত হন৷ এবং আহত হন রশিদ আহমদ গংগুহী র. ও তাঁর শায়েখ মুহাজিরে মক্কী রহঃ সহ অনেকে৷ দুই: রেশমি রুমাল আন্দোলন যার মুলে আছেন নানুতুবী রহঃ এর শাগরিদ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী৷ যাকে মানুষ শাইখুল হিন্দ হিসাবে চিনে৷

কিন্তু আফছোছ এ আযাদী আন্দোলনেও বিজয় আসল না৷ এ জঙ্গে আযাদী দুটি স্পটে বিভক্ত ছিলো৷ এক ছিলো জাফর আহমদ থানেশ্বরী রহঃ এর নেতৃত্বে আম্বালাতে৷ আরেক ছিল শামেলীতে ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কীর নেতৃত্বে৷

কিন্তু ভাগ্যের লিখন কে পারে মুছাতে! অবশেষে পরাজয় ই পদ চুম্বন করল!
এভাবে চলতে থাকে জুলুম সেতম আর নির্যাতনের স্ট্রীম রোলার৷ ভিটেমাটি ছাড়া এই পবিত্র জামাত প্রতিনিয়ত ই শিকার হয় নির্যাতন আর লাঞ্চনার জীবনে৷ তবুও নত হন নি কোন তাগুতের কাছে৷ মাথা নত করে নি বেঈমান কাফেরের সামনে৷

বিজয়সূর্য ছিনিয়ে নেয় ইংরেজ৷ দিনদিন ই বাড়ছে ওলামাদের কষ্টের জীবন৷ বরতানীয়ার নেতা তখনকার অফিসার রিপোর্ট নিতে লাগলো৷ তাদের উযির ও মন্ত্রীসভাকে তলব করে জানতে চায় হিন্দুস্তানের অভ্যন্তরীণ অবস্থা৷ মন্ত্রীসভা ও তাদের দলীয় নেতারা যে যে রিপোর্ট দেয় তা বহুত বড় আজীব গরীব রিপোর্ট! তৎকালীন সময়ের বিজ্ঞ রাজনিতিবীদ ড. অলীম বলেন: সমস্ত উযীররা একটা ই রিপোর্ট দিলো৷ যে, হিন্দুস্তানের মুজাহিদ বাহিনী অনেক মজবুত৷ স্বাধীনতার চেতনায় তাঁরা উজ্জীবিত প্রান৷ এর মূল কারণ হল হিন্দুস্তানের মুজাহিদরা মুসসমান৷ এদের অন্তরে জিহাদী চেতনায় ভরপুর৷ এদের নেতৃত্বে আছে হিন্দুস্তানের মৌলভীরা৷ এরা জিহাদ কে নিজের জন্য গৌরব মনে করে৷ এদের তামান্না হলো শাহাদাত বরন করা৷ শাহাদাতের মৃত্যুকে এরা জীবনের মহা সফলতা মনে করে৷

এই জামাতের আলামত বলতে গিয়ে বলেন৷ এরা হলো মুখ ভরা লম্বা দাড়ী আর গায়ে লম্বা পাঞ্জাবী৷ হিন্দুস্তান কে দখল করতে হলে প্রথমে এদের অন্তরে জিহাদের ঘৃণা জন্মাতে হবে৷ আর ওলামাদের কে দুনিয়া থেকে চিরতরে মুছে দিতে হবে পৃথিহবীর মানচিত্র থেকে৷ তাদের নাম গন্ধ মিটিয়ে দিতে হবে দুনিয়ার বুক থেকে৷ তাহলে ই কিছু আশা করা যায়৷ আর না হয় ইংরেজ পরাজয় বরণ করতে বাধ্য৷ ভারতবর্ষ দখল করাও সম্ভব না৷

এর পরেই শুরু হয় জুলুম নির্যাত৷ ১৮৬১ সনে এক সাথে তিন লাখ কোরআন শরিফের কপি আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়৷ শুধু তা ই নয় চৌদ্দ হাজার আলেম ওলামাকে এক সাথে ফাসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়৷ দিল্লী থেকে খায়বারে গ্রান্ড ট্রাংক রোডের (জিটি রোড) পাশে এমন কোন গাছ ছিলো না যার সাথে আলেম ওলামাদের লাশ ঝুলানো ছিল না৷

ইতিহাসবীদ থিমসন বলেন: এমন কোন নির্যাতন নাই যা ভারতবর্ষের আলেম ওলামাদের উপর করা হয়নি৷ ইংরেজরা মৌলুভীদের লাশ কে শুকোরের চামড়া দিয়ে আবৃত করে রেখে ছিলো৷ তিনি আরো বলেন:জ্বলন্ত আগুনে গরম তৈল ফুটানো হত৷ আর সেখানে নিক্ষেপ করা হত তাজা জেন্ত আলেমদেরকে৷

একজনের সামনে আরেক জন কে ফুটন্ত তৈলে সরাসরি নিক্ষেপ করা হয়৷ তারপরও কেউ মাথা নত করে নি৷ ১৮৬৪ থেকে ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত ইতিহাসের নির্মম হতাযোজ্ঞ কাজ করে ইংরেজরা৷ আর ওলামায়ে হিন্দ হয় জুলুম নির্যতনের শিকার৷সেটাই ভারতবর্ষের সবচেয়ে বেশি শোক ও দুঃখের বছর ছিল৷

এর পর ভিটে মাটিহীন ওলামায়ে কিরাম দ্বীনে রক্ষার জন্য ১৮৬৬ দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা করে৷ দেওবন্দ এলাকায় সাহারনপুর জেলায়৷

দেওবন্দিরা কি আহলুস সুন্নাহ? তারা কি ইসলামের গন্ডির মধ্যে রয়েছে ?
২২৪৭৩ নং ফতোয়া

জবাবঃ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা’লার, দেওবন্দিরা মুসলিমদের অনেক গুলো দলের একটি। এই দলটি দারুল উলুম দেওবন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভারত) সাথে সম্পৃক্ত এবং সেই নামেই পরিচিত হয়। এটি একটি ফিকহি স্কুল যার শিকড় অনেক গভীরে। যারা এখান থেকে স্নাতক হয়ে বের হয় তারা এর প্রাতিষ্ঠানিক বৈশিষ্ট দ্বারা প্রভাবিত হয় বলে তাদের ‘দেওবন্দি’ বলে ডাকা হয়।
দেওবন্দ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয় এক দল ভারতীয় আলেমদের দ্বারা যখন ব্রিটিশ রা ১৮৫৭ সালে ভারতে ইসলামী জাগরণ কে রুখে দিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা হওয়াটা ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে পশ্চিমা আধুনিকতা এবং বস্তুবাদি সভ্যতার উথ্বানের বিরুদ্ধে একটি শক্ত প্রতিক্রিয়া, যার উদ্দেশ্যই ছিল ভারতীয় মুসলিমদের এমন বিপদ থেকে বাঁচানো; বিশেষ করে যখন বৃটিশরা ভারতের রাজধানী দিল্লিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং এর পুরো দখল নিয়ে নিয়েছিল। তৎকালীন উলামারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গিয়েছিলেন এই ভেবে যে ইসলামকে হয়ত বৃটিশরা পশ্চিমা শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে মিলিয়ে ফেলতে পারে এবং ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই শায়খ ইমদাদউল্লাহ আল মুহাজির আল মাক্কি এবং তাঁর ছাত্র শায়খ কাশিম আল নানুতুবী এবং তাঁদের সাথীরা মিলে একটি পরিকল্পনা করেন ইসলাম এবং ইসলামী শিক্ষাকে হেফাজত করার জন্য। ইসলামী স্কুল এবং ইসলামীক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করাকেই তাঁরা এর সমাধান মনে করলেন। মাদ্রাসা আল ইসলামীয়্যাহ আল আরাবিয়্যাহ ছিল তৎকালীন বৃটিশ শাসনকালে দেওবন্দে প্রতিষ্ঠিত ভারতের ইসলাম এবং শরিয়ার কেন্দ্রবিন্দু।
এই সুপরিচিত ইসলামী চিন্তাধারার প্রধান কর্ণধারগন হলেন,
১। মুহাম্মাদ কাশিম
২। রাশিদ আহমেদ গাঙ্গুহি
৩। হুসায়ন আহমাদ আল-মাদানি
৪। মুহাম্মাদ আনোয়ার শাহ কাশ্মিরি
৫। আবুল-হাসান আল-নদভী
৬। আল-মুহাদ্দিস হাবীব আল-রাহমান আল-আ’যমী
তাঁদের চিন্তাধারা এবং বিশ্বাস
মৌলিক বিশ্বাস (আকিদা) এর দিক থেকে তাঁরা ‘আবু মানসুর আল মাতুরীদি’ এর চিন্তাধারা/অভিমতের অনুসারী।
ইসলামী ফিকহ এবং খুটিনাটি বিষয়ে তাঁরা ইমাম আবু হানিফার অনুসারী।
তাঁরা আত্মশুদ্ধির অংশ হিসেবে সূফী তরিকা ‘নাকশেবন্দিয়া, চিশতিয়া, কাদেরিয়া, শাহারওয়ারদিয়া এর অনুসারী। দেওবন্দিদের চিন্তাধারা এবং মুলনীতি গুলোকে নিচের মত করে একত্রিত করা যায়,

ইসলামী শিক্ষা, ইসলামের শক্তি এবং রীতিনীতি কে সংরক্ষন করা।
ইসলাম প্রচার এবং ক্ষতিকর ফিকহি চিন্তাধারা প্রতিরোধের পাশাপাশি ক্ষতিকর ধর্মপ্রচারকদের প্রতিরোধ করা।
ইসলামী সংস্কৃতির প্রচার এবং ক্ষতিকর বৃটিশ সংস্কৃতির প্রতিরোধ
আরবী ভাষার প্রচারের প্রতি গুরুত্বের সাথে নজর দেয়া, কারন এটা ইসলামী শরিয়ার মুল উৎস থেকে জ্ঞান লাভ করার উপকারিতা দিবে
যুক্তি, আবেগ, জ্ঞান এবং আধ্যাত্মিকতাকে সমন্বয় করা।

(দেখুনঃ আল মাউজু’আ আল মুয়াসসারা ফিল আদয়ান ওয়াল মাযাহিব-১/৩০৮)
যেহেতু দেওবন্দিরা আকিদার ক্ষেত্রে ‘মাতুরীদি’ অভিমত অনুসরণ করে, আমাদের আগে ‘মাতুরীদি’ আকিদার সংজ্ঞা জানতে হবে।
এটা হলো একটা দার্শনিক দল (কালামী), যা ‘আবু মানসুর আল মাতুরীদি’র পর নামকরণ করা হয় তার নামের সাথে মিল রেখে। এটা যুক্তিবাদ এবং দার্শনিক প্রমানের উপর ভিত্তি করে গড়ে ঊঠেছে যেন তারা মুতাযিলা, জাহমিয়্যাহ এবং অন্যদের বিপরীতে একটি সতন্ত্র সত্য ইসলামী আকিদা প্রতিষ্ঠা করতে পারে। উৎসের দিক থেকে মাতুরীদিরা ইসলামের ভিত্তিকে দুটি ভাগে ভাগ করে।

১) ঐশী অথবা যৌক্তিকঃ এই বিষয় গুলো হলো সেগুলো, যা স্বাধীনভাবে যৌক্তিক কারন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। এর মধ্যে পড়ে তাওহিদ এবং আল্লাহ তা’লার গুন সংক্রান্ত।

২) আইনি বিষয় অথবা এমন বিষয়, যেগুলো কারন অনুসন্ধান দ্বারা দেখলে থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে, কিন্তু যৌক্তিক ভাবে কোনক্রমেই প্রমাণ করা যাবেনা যে তা আসলেই আছে। যেমনঃ নবুয়্যাত, কবরের আযাব, পরকালের বিষয়গুলো। এটা বলে রাখা ভালো যে, তাঁদের কেউ কেউ নবুয়্যাত কে যুক্তিকতার মানদণ্ডে আনা যেতে পারে বলে মনে করেন।

এটা পরিস্কার যে এই ধ্যান-ধারণা গুলো ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতে’র কর্মপদ্ধতির সাথে বৈপরিত্য রাখে। কারন ‘আহলুস সুন্নাহ’ এর নিকট কুরআন, সুন্নাহ এবং সাহাবিদের মতামতই চুড়ান্ত পথ নির্দেশক। এটা তাদের বেদআতের একটা বিশেষ দিক যে তাঁরা ধর্মের উৎস গুলোকে যুক্তি দিয়ে ভাগ করেছে প্রতিষ্ঠিত বর্ণনা গুলোর বিপরীতে, যা সেসব দার্শনিকদের মিথ্যা বিশ্বাস, যারা মনে করে ধর্মীয় বাণী (কুরআন আর হাদীস) স্বাভাবিক যুক্তির বিরুদ্ধে যায়। তাই তারা যুক্তি এবং প্রতিষ্ঠিত বর্ণনা গুলোর মধ্যে মধ্যস্ততা করার চেষ্টা চালায়। ফলশ্রুতিতে দেখা যায় তারা যুক্তি বা কিয়াস কে এমন সব যায়গায় নিয়ে আসতে থাকে যেখানে কিয়াসের কোন স্থান নেই। আর এতে করে তাঁরা এমন সব নিয়ম কানুন নিয়ে আসলো যা মুল শরিয়ার বিপরীতে অবস্থান করে, যা তাদের এই কথা বলতে অনুপ্রাণিত করে যে, ‘তারা এই বর্ণনার অর্থ বুঝতে পারেনি এবং আল্লাহই এটা ভালো জানেন’ অথবা ভুল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে।

আসলে ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত’ এর অভিমত হলো, সঠিক যুক্তি এবং সুপ্রমাণিত ইসলামী বর্ণনাগুলোর মধ্যে কোন বিরোধ নেই।

(দেখুনঃ আল মাউজু’আ আল মুয়াসসারা ফিল আদয়ান ওয়াল মাযাহিব আল-মুয়াসসিরা-১/৯৯)
মাতুরীদি আকিদার প্রতি ‘আহলুস সুন্নাহ’ এর দৃষ্টিভঙ্গী
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, এই উম্মাত ৭৩ টি ভাগে বিভক্ত হবে। যার প্রত্যেকটির সাথে প্রত্যেকটির বিস্তর মতপার্থক্য হবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যাখ্যা করেছেন, এই বিভক্তি থেকে বেঁচে যাওয়া দলটি হবে তাঁরা, যারা হুবুহু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের অনুসরণ করবে।
সন্দেহাতীত ভাবে তাঁরাই ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আ’ যারা একনিষ্ঠ ভাবে কুরআন এবং সুন্নাহের অনুসারী ‘ইলম’ এবং ‘আমল’ উভয় দিক থেকে, আর তাঁরাই মুক্তিপ্রাপ্ত দল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইলম এবং আমলের দিক দিয়ে যে মুলনীতি অনুসরন করেছেন, তাঁর সাহাবীরা যা অনুসরণ করেছেন, তাঁরা তারই অনুসারী।
এটা কোন ব্যক্তি বা দলের জন্য ‘আহলুস সুন্নাহ’ দাবী করার পক্ষে যথেষ্ট হতে পারেনা যখন তাঁরা সালাফদের কর্মনীতির বিরুদ্ধে চলে যায়। বিশেষ করে সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেঈদের বিরুদ্ধে। বরং এটা আবশ্যিক যে তাঁরা ইলম, আমল, মুয়ামালাত এবং আত্মশুদ্ধি সব ক্ষেত্রে তাঁদের কর্মপদ্ধতির উপরই অটল থাকবে।
মাতুরীদিরা হলো সেই দল, যাদের মতামতের মধ্যে সত্য আর মিথ্যার মিশ্রন রয়েছে। আর কিছু কিছু মতামত সরাসরি সুন্নাহের বিরুদ্ধে যায়। এটা জানা কথা যে, এরকম দল গুলোর সঠিক-বেঠিক হওয়া নির্ভর করবে তারা কতটুকু সুন্নাতের নিকটবর্তী বা কতটুকু সুন্নাত থকে দূরে তাঁর উপর ভিত্তি করে। আর যত বেশি সুন্নাতের নিকটবর্তী হবে, তত বেশি তাঁরা সত্যের নিকটবর্তী। আর যত বেশি তাঁরা সুন্নাত থেকে দূরে যাবে, তত বেশি তাঁরা সত্যের থেকে দূরে সরে যাবে। তাদের কেউ কেউ মৌলিক ইসলামী মূলনীতির ব্যপারে কিছু সুন্নাহের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে, আর তাদের কেউ কেউ তারচেয়েও কঠিন বিষয়ের সুন্নাহের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে। তাঁদের কেউ কেউ অন্য কিছু দলের সমালোচনা করে এবং তাদেরকে বাতিল বলে যে দলগুলো সুন্নাহ থেকে আরো বেশি বিচ্যুত হয়েছে। তাই মিথ্যার প্রতি তাঁদের সমালোচনা আর বাতিলিকরন আর তাঁদের থেকে সত্যের পক্ষে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, তার জন্য তাঁরা প্রশংসার দাবি রাখেন। কিন্তু তাঁরা খুব দ্রুত সত্যের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং কিছু বাতিল কে সঙ্গ দিয়েছেন। তাঁরা ছোট বিদআত কে উপেক্ষা করে তার চেয়ে বড় বিদআত কে সমালোচনা/খণ্ডন করে, এবং ছোট মিথ্যার বিপরীতে বড় মিথ্যার সমালোচনা/খণ্ডন করে। এই যুক্তিতে ‘আহলুল কালাম’ দার্শনিকরা ‘আহলুস সুন্নাহের’ মধ্যে থাকার দাবি করে।
(ইমাম ইবনে তাইমিয়্যার বক্তব্য থেকে নেয়া, আল ফাতাওয়া, ১/৩৪৮)

তাহলে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যার উত্তর দেয়া প্রয়োজন, তা হলো, তাদের ব্যাপারে আমাদের কর্তব্য কি হবে যারা মাতুরীদি এবং তাদের মতই আকিদা পোষণ করে, যেমন দেওবন্দি?
উত্তর নির্ভর করবে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি বিশেষে পার্থক্য এর উপর ভিত্তি করে।
যদি কেউ একগুঁয়ে ভাবে বিদআত প্রচার করে, তাহলে আমাদের অবশ্যই অন্যদেরকে তাঁর ব্যাপারে সাবধান করতে হবে এবং ব্যাখ্যা করে বুঝাতে হবে কোথায় তাদের ভুল রয়েছে এবং কোথায় তাদের পদস্খলন হয়েছে।
আর যদি এমন হয় যে, ব্যক্তি তার বিদআতের ব্যাপারে একগুঁয়ে নয় বরং বুঝা যায় যে সে সত্য অনুসন্ধানী, তখন আমাদের উচিত হবে তাকে উপদেশ দেয়া এবং সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে বলা তার ভুলের ব্যাপারে, হয়ত আল্লাহ্‌ তাকে হেদায়াতের পথে ফিরিয়ে আনবেন।
এই উপদেশ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, ‘দ্বীন হলো নসিহাত”। আমরা (সাহাবা) জিজ্ঞাস করলাম, “কার জন্য”। তিনি বললেন, “ আল্লাহ্‌ , তাঁর কিতাব, তাঁর রাসুল, মুসলিম নেতা এবং সকল মুসলিমের জন্য” – সহীহ মুসলিম ৫৫

অনুদিত
ফতোয়া (ইসলামকিউএ)
শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ