4:01 am, Monday, 6 October 2025

ফিৎনায়ে মওদূদী মতবাদ-জনাব মওদুদী সাহেবের একটি মৌলিক থিওরি

এম রাসেল সরকার

picsart 25 09 17 02 20 28 093

 

জনাব মওদুদী সাহেবের একটি মৌলিক থিওরি তিনি এভাবে প্রকাশ করেন,

رسول خدا کے سوا کسی انسان کو معیار حق نہ بنائے ، کسی کو تنقید سے بالاتر نہ سمجھے، کسی کی ذھنی غلامی میں مبتلاء نہ ہو-

অর্থঃ রাসূলে খোদা ছাড়া অন্য কাউকে সত্যের মাপকাঠি বানাবে না। কাউকে সমালোচনার ঊর্ধ্বে মনে করবে না। কারো মানুষিক গোলামীতে লিপ্ত হবে না। (দস্তুরে জামাআতে ইসলামী পৃঃ ১৪, সত্যের আলো পৃঃ ৩০)

এই থিওরির উপর ভিত্তি করে তিনি অন্যত্র লিখেনঃ

میں نے دین کو حال یا ماضی کے اشخاص سے سمجھنے کی بجائے ہمیشہ قران و سنت ہی سے سمجھنے کی کوشش کی ہے –

অর্থঃ আমি অতীত বা বর্তমান ব্যক্তিবর্গের নিকট হতে দ্বীন বুঝার পরিবর্তে সর্বদা কুরআন সুন্নাহ থেকেই বুঝতে চেষ্টা করেছি। এ কারণে, খোদার দ্বীন, আমার ও প্রত্যেক মুমীনের নিকট কি চায়, তা জানার জন্য এটা দেখতে চেষ্টা করিনি যে, অমুক-অমুক বুজুর্গ কি বলেন। বরং সর্বদা এটাই দেখতে চেষ্টা করেছি যে, কুরআন কি বলে ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেছেন। রুয়েদাদে জামা‘আত তৃতীয় খণ্ড পৃঃ ৩৭ সূত্র মওদুদী সাহেব আওর উনকী তাহরীরাত পৃঃ ৯০ প্রকাশঃ দারুল ইশাআত -করাচী।

সারকথা মওদুদী সাহেবের মতে সত্যকে জানার ও অনুসরণের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর আর কোন নির্ভরযোগ্য মাধ্যম নাই। এই থিওরির অন্তরালে তিনি কুরআন ও হাদীস থেকে দ্বীনকে বুঝার ও অনুসরণের ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরামের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করেছেন।

এছাড়া সাহাবায়ে কেরামের জীবনে বিভিন্ন ভাবে কালিমা লেপনের জন্য তিনি “খেলাফত ও মুলুকিয়্যাত” নামে স্বতন্ত্র কিতাবও লিখেছেন। সবগুলোরই সারকথা হল যে, সত্যকে জানা ও মানার জন্য সাহাবাদের জামা‘আত নির্ভরযোগ্য নয়, বরং জামা‘আতে সাহাবার উপর নির্ভর করা যাবে না। তাঁদের অনেকেই পাপী ছিলেন এজন্য তাঁরা পরবর্তীদের যাচাই বাছাইয়ের ঊর্ধ্বে নন।

অথচ ইসলামে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সব ক্ষেত্রেই তার ব্যাপ্তি, এসব ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল শুধু বিধান শুনিয়ে ক্ষান্ত হননি বরং বিধান সমূহ কার্যকর করে দুনিয়ার সামনে তার আমলী নমুনা রেখে গেছেন। আর আল্লাহ ও তার রাসূলের বিধানাবলীর কার্যক্ষেত্রই ছিল যে পরিবার, যে সমাজ, যে রাষ্ট্র তার নাম জামা‘আতে সাহাবা। শুধু বিধান বলে গেলে কার্যক্ষেত্রে তার রূপরেখাকে বিকৃত করে ফেলত পরবর্তী যুগের বক্র স্বভাবের লোকেরা। তার থেকে হেফাজতের জন্যই প্রয়োজন ছিল উক্ত জামা‘আতের। আর যেহেতু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধানাবলীর প্রাকটিক্যাল রূপই হচ্ছে সাহাবায়েকেরামের জীবনী, তাই মূল বিধানাবলীর অনুসরণের ক্ষেত্রে তাদের জীবনও হবে মাপকাঠি। এটাই স্বাভাবিক। এই কারণে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে সাহাবায়ে কেরামের ঈমান, আমল ও ইলমকে অন্যদের জন্য অনুসরণীয় হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে যথাঃ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেনঃ

فَاِنْ اٰمَنُوْا بِمِثْلِ مَاۤ اٰمَنْتُمْ بِهٖ فَقَدِ اهْتَدَوْا ۚ وَ اِنْ تَوَلَّوْا فَاِنَّمَا هُمْ فِیْ شِقَاقٍ ۚ فَسَیَكْفِیْکَهُمُ اللهُ ۚ وَهُوَ السَّمِیْعُ الْعَلِیْمُ

অর্থঃ (সাহাবাদের লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে) তারা যদি তোমাদের মত ঈমান আনয়ন করে তাহলে হেদায়াত পাবে আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তারাই হঠকারিতায় রয়েছে। সূরায়ে বাকারা আয়াত ১৩৭

অন্যত্র ইরশাদ করেনঃ

وَمَنْ یُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْۢ بَعْدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُ الْهُدٰی وَیَتَّبِعْ غَیْرَ سَبِیْلِ الْمُؤْمِنِیْنَ نُوَلِّهٖ مَا تَوَلّٰی وَنُصْلِهٖ جَهَنَّمَ ؕ وَسَآءَتْ مَصِیْرًا

অর্থঃ আর যে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমীনদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে আমি তাকে সেদিকেই ফিরাব এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা হল নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থান। (সূরায়ে নিসা -আয়াত ১১৫)

এই আয়াতে মুমীনদের পথ বলতে প্রথমতঃ যারা উদ্দেশ্য তারা হলেন জামা‘আতে সাহাবা।

অন্য আয়াতে কুরআনে পাক প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-

بَلْ هُوَ اٰیٰتٌۢ بَیِّنٰتٌ فِیْ صُدُوْرِ الَّذِیْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ ؕ وَمَا یَجْحَدُ بِاٰیٰتِنَاۤ اِلَّا الظّٰلِمُوْنَ

অর্থঃ বরং যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, তাদের অন্তরে ইহা তো স্পষ্ট আয়াত। সূরায়ে আনকাবূত ৪৯।

এই আয়াতেও যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তাদের দ্বারা প্রথম উদ্দেশ্য সাহাবায়েকেরাম।

পক্ষান্তরে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও বিভিন্ন হাদীসে সাহাবায়েকেরামের অনুসরণের তাকীদ করেছেন যথাঃ

قال رسول اللہ صلی اللہ علیھ وسلم سذفذرق امذی ثلاثا وسبعین فرقۃ کلھم فی النار الا واحدۃ ، قالوا من ھی یا رسول اللہ قال ما انا علیھ واصحابی –

অর্থঃ অতিশীঘ্র আমার উম্মত তেহাত্তর ফেরকায় বিভক্ত হয়ে পড়বে তন্মধ্যে একটি জামা‘আত হবে জান্নাতী আর বাকীগুলো হবে জাহান্নামী। উপস্থিত সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতী দল কারা হবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যারা আমার ও আমার সাহাবাদের তরীকার অনুসারী হবে। (তিরমিযী শরীফ ২য় খণ্ড পৃঃ ৯৩)

অন্য হাদীসে ইরশাদ ফরমানঃ

فعليكم بسنذي وسنذي الخلفاء الراشدين

অর্থঃ (উম্মতকে লক্ষ্য করে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন) তখন তোমাদের জন্য আমার ও খুলাফায়ে রাশেদীনের তরীকা মত চলা অত্যাবশ্যক। (আবু দাউদ শরীফ ২-৬৩৫)

এছাড়াও কুরআনের বহু আয়াত ও রাসূলের বহু হাদীস দ্বারা এ কথা সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত যে, কুরআন-হাদীস মুতাবিক ইলম ও আমলের ক্ষেত্রে সাহাবায়েকেরামের অনুসরণ জরুরী। এক্ষেত্রে সাহাবাদের পথ ও মতকে বর্জন করে কুরআন হাদীসের জ্ঞানার্জন ও তদানুযায়ী আমল সম্ভব নয়। লক্ষাধিক সাহাবীর মধ্যে সবাই অনুসরণেরযোগ্য। কুরআন হাদীসের কোথাও এ ক্ষেত্রে কোন সাহাবীকে বাদ দেওয়া হয় নাই। কোন সাহাবীর দ্বারা কখনো গুনাহ হয়ে গেলে তাও হয়েছে গুনাহের পরে তাওবার পদ্ধতির ক্ষেত্রে উম্মতের অনুসরণযোগ্য হওয়ার জন্যই। দ্বিতীয়তঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু সবকিছু বাস্তব নমুনা হিসাবে দেখিয়ে গেছেন তাই ইসলামী দণ্ডবিধির বাস্তব প্রয়োগবিধি শিক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে দু’একজন সাহাবী থেকে ভুল প্রকাশ পেয়েছে। একারণেই রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

قال رسول الله صلي الله عليه وسلم أوحي الله يا محمد ان اصحابك عندي كالنجوم بعضها اضوأ من بعض ولكل نور فمن اخذ بشي مماهم عليه من اخذلافهم فهو عندي علي الهدي – رواه الدارقطني-

অর্থঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ অহী পাঠিয়েছেন যে, হে মুহাম্মাদ! আপনার সাহাবীগণ আমার নিকট নক্ষত্রতুল্য, কেউ অতি উজ্জল, কেউ তার চেয়ে কম, তবে সকলেরই আলো আছে। অতএব, তাদের মতবিরোধের ক্ষেত্রেও যে কোন এক পক্ষকে অনুসরণ করলেই সে অনুসারী আমার নিকট হেদায়াত প্রাপ্ত বলে গণ্য হবে।

(কেননা, তাদের বিরোধ হবে ইজতেহাদী, আর সঠিক ইজতেহাদের কোন অংশকেই নিশ্চিত ভুল বলা যাবে না) হাদীসটির সনদে দুর্বলতা থাকলেও এমর্মে আরো অনেক হাদীস থাকায় এবং হাদীসটি বিষয় বস্তু কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও অপরাপর হাদীস সমর্থিত হওয়ায় হাদীসটি সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য (অবশ্য কারো মতে কুরআন-হাদীসের সমর্থন গ্রহণযোগ্য না হয়ে নিজের মনের সমর্থন গ্রহণ যোগ্য হলে তা ভিন্ন কথা) তাফসীরে মাযহারী ২য় খণ্ড পৃঃ ১১৬

মোটকথা সাহাবায়েকেরামের সত্যের মাপকাঠি হওয়ার বিষয়টি কুরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, সাথে সাথে যুক্তি সংগতও। অথচ মওদুদী সাহেব তাঁর দলের জন্য আইন প্রণয়ন করে গেলেন যে, রাসূলে খোদা ছাড়া আর কাউকে যেন সত্যের মাপকাঠি না বানানো হয়। কি দোষ করেছেন হযরত আবু বকর রা. ও উমর রা., যাদেরকে সত্যের মাপকাঠি বানানো যাবে না। হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রহ. এর রাষ্ট্র ব্যবস্থা, মুজাদ্দিদে আলফেসানী রহ. এর সংস্কার, আইম্মায়ে মুজতাহেদীনের ইজতেহাদ, হযরত আবদুল কাদের জিলানী রহ. এর তাযকিয়া ও মা’রিফাতকে অনুসরণ করে যদি কোটি কোটি মানুষ হিদায়াতের ও নাজাতের আশা করতে পারে তাহলে রাসূলে আকরামের মত পরশ পাথরের ছোয়ায় ধন্য ও তার হাতে গড়া জামা‘আতের জীবনী, কথা ও কাজ, কেন অনুসরনযোগ্য হবে না?

বস্তুতঃ রাসূল ছিলেন দ্বীন নামক দূর্গের নির্মাতা। সাহাবায়েকেরাম ছিলেন সে দুর্গের সুদৃঢ় প্রাচীর। তাদের উপর নির্ভর না করা হলে দ্বীনের ধ্বংস অনিবার্য। ইসলামের অতীত ইতিহাসের গোমরাহ দলগুলো সর্বদা এই প্রাচীরকেই ধ্বংস করতে চেষ্টা করেছে।

তাছাড়া মওদুদী সাহেব শুধু সাহাবাগণকে সত্যের মাপকাঠি স্বীকার করেননি তা নয় বরং বিভিন্নভাবে সাহাবায়েকেরামের কুৎসা রটিয়েছেন। সে সূত্রে তিনি বলেনঃ

بسا اوقات صحابہ پر بھی بشری کمزوریوں کا غلبہ ہو جاتا تھا

অর্থঃ সাহাবাদের উপর প্রায়ই মানবিক দুর্বলতা প্রভাব বিস্তার করত। -তাফ্হীমাত ৪র্থ সংস্করণ পৃঃ ২৯৬ সূত্রঃ মওদুদী সাহেব আওর উন্‌কী তাহরীরাত ৮৫

তাছাড়া উহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের পরাজয়ের (মওদুদীর ভাষায়) বড় বড় কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে জনাব মওদুদী লিখেনঃ যে সমাজে সুদের প্রচলন থাকে সেখানে সুদখোরের কারণে দুই ধরনের নৈতিক রোগ দেখা দেয়। সুদ গ্রহণকারীর মধ্যে লোভ-লালসা, কৃপণতা ও স্বার্থান্ধতা এবং সুদ প্রদানকারীদের মধ্যে ঘৃণা-ক্রোধ, হিংসা ও বিদ্বেষ জন্ম নেয়। উহুদের পরাজয় এ দুই ধরনের রোগের কিছু না কিছু অংশ ছিল।

(তাফহীমুল কুরআন বাংলা ৪র্থ পারা ২য় খণ্ড ৬৫ পৃঃ আধুনিক প্রকাশনী ৩য় সংস্করণ।)

চিন্তা করে দেখুন! উদ্ধৃত প্রথম বক্তব্য দ্বারা যে মানবিক দুর্বলতার কথা বলেছেন, তারই সম্ভবতঃ কিছুটা ব্যাখ্যা করেছেন উহুদের ঘটনায় গিয়ে। অর্থাৎ মানবিক দুর্বলতাগুলো ছিলঃ লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, কৃপণতা ও ঘৃণা ইত্যাদি। অথচ উহুদ যুদ্ধে যারা শরীক ছিলেন, তারা সকলেই ছিলেন নবীজীর প্রথম সারির সাহাবা। আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রশংসায় কত আয়াত নাযিল করেছেন। কিন্তু মওদুদী সাহেব নির্দ্বিধায় পাইকারী হারে তাদের দোষচর্চা করে গেলেন। শুধু তাই নয় আশারায়ে মুবাশশারাহ (জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজন) থেকে শুরু করে কাতেবে ওহী পর্যন্ত অনেকেই রেহাই পাননি মওদুদী সাহেবের কলমের আক্রমণ থেকে। যার জ্বলন্ত প্রমাণ পাবেন মওদুদী সাহেবের লিখিত “খেলাফত মূলুকিয়াত” ও তার পাশাপাশি জাষ্টিস তক্বী উসমানীর লিখা “ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুআবিয়” এবং হযরত শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. এর লেখা “ভুল সংশোধ” পড়ে দেখলে।

এসবের দ্বারা তিনি যেমন সাহাবাদের পবিত্র জামা‘আতকে উম্মতের সামনে কলঙ্কিত করতে চেয়েছেন। অপরদিকে রাসূলের হাতে গড়া স্বর্ণমানবদের দল, সাহাবাদেরকে কলঙ্কিত করে স্বয়ং রাসূলকেও চরম ব্যর্থ প্রমাণ করতে প্রয়াস পেয়েছেন। কেননা, কিয়ামত পর্যন্ত আগত মানুষের জন্য রূহানী চিকিৎসক যদি বছরকে বছর তার সংস্পর্শে থাকা রোগীদেরকেই পূর্ণ চিকিৎসা করতে না পারেন বরং তার সংস্পর্শীদের মাঝে “প্রায়ই সে রোগগুলো প্রভাব বিস্তার করে থাকে”। তাহলে এমন চিকিৎসককে সফল কে বলবে ?

অথচ স্বয়ং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবাদের সম্পর্কে কটূক্তি কিংবা সমালোচনা করতে উম্মতকে বার বার এবং কঠোর ভাষায় নিষেধ করে গেছেন। এ ব্যাপারে কয়েকটি হাদীস নিম্নে প্রদত্ত হল-

قال رسول الله صلي الله عليه وسلم لا ذسبوا اصحابي فان احدكم لو انفق مثل احد ذهبا ما بلغ مد احدهم ولانصيفه-

অর্থঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেন, তোমরা আমার সাহাবাদের মন্দ বলবেনা কেননা তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড়সম স্বর্ণ সদকা করলেও তাদের একসের বা আধাসেরের সমান হবে না। বুখারী মুসলিম – সূত্রঃমিশকাত পৃঃ ৫৫৩

عن عبد الله بن مغفل قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم الله الله في اصحابي لا ذذخذوهم غرضا من بعدي فمن احبهم فبحبي احبهم ومن ابغضهم

অর্থঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান, আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহকে ভয় কর আমার সাহাবাদের বিষয়ে। তাদেরকে সমালোচনার পাত্র বানাবে না। যারা তাদেরকে ভালবাসবে আমার মুহাব্বাতেই তা করবে। আর যারা তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করবে তারা আমার সাথেই শত্রুতাহেতু তাদের শত্রু হবে….. তিরমিযী ২-২২৫ মিশকাত – ৫৫৪

عن بن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا رأيذم الذين يسبون أصحابي فقولوا لعنة الله على شركم

অর্থঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান, তোমরা যখন ঐ সকল লোকদেরকে দেখবে যারা আমার সাহাবাদের মন্দ বলে, তখন তোমরা বলবে, তোমাদের অনিষ্টের প্রতি আল্লাহর লা‘নত হোক। (তিরমিযী ২-২৫৫ মিশকাত ৫৫৪)

মোটকথা সাহাবায়ে কেরাম- আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দৃষ্টিতে অনেক সম্মানী জামা‘আত। আল্লাহ তাদের সকলের প্রতি সন্তুষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সমালোচনার পাত্র বানাতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। বিস্তারিত জানতে হলে দেখেন মুফতী শফী রহ. প্রণীত “মাকামে সাহাবা” নামক কিতাবটি।

আর এ কারণেই আকাইদের বিখ্যাত কিতাব “মুছায়রাতে” উল্লেখ করা হয়েছে যেমন,

واعذقاد اهل السنة و الجماعة ذزكية جميع الصحابة وجوبا …….

অর্থঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদা হল যে, সকল সাহাবীকে নির্দোষ বলা ওয়াজিব। (মুসায়ারাহ পৃঃ ১৩২ দেওবন্দ। সূত্রঃ মাকামে সাহাবা – পৃঃ ৭৯)

তেমনিভাবে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. লিখেন,

ومن اصول اهل السنة و الجماعة سلامة قلوبهم و السنذهم لاصحاب رسول الله صلي الله عليه وسلم

অর্থঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মৌলিক বিশ্বাস হল যে, রাসূলের সাহাবাদের ব্যাপারে নিজ অন্তর ও জিহ্বাকে পরিষ্কার রাখবে। (শরহে আক্বীদায়ে ওয়াসিত্বিয়্যাহ পৃঃ ৪০৩ সূত্র মাকামে সাহাবা পৃঃ ৭৯)

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. আরো বলেন,

لا يجوز لاحد ان يذكر شيئا من مساويهم ولا ان يطعن علي أحد منهم بعيب و لا نقص فمن فعل ذلك وجب ذاديبه

অর্থঃ সাহাবাদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা কারো জন্যই জায়েয নাই। যে এমন করবে তাকে শাস্তি দেওয়া ওয়াজিব। (আসসারিমূল মাস্‌লুল। সূত্রঃ মাকামে সাহাবা – ৭৭)

ইমাম নববী রহ. বলেন,

الصحابة كلهم عدول من لابس الفذن وغيرهم باجماع من يعذد به-

অর্থঃ গ্রহণযোগ্য সকলের এ ব্যাপারে ইজমা যে, সকল সাহাবী নিরপরাধী, এমনকি যারা পরস্পর বিগ্রহে পতিত হয়েছেন তাঁরাও। (তাক্বরীব সূত্রঃ মাকামে সাহাবা – পৃঃ৭৭)

ইমাম মুসলিমের উস্তাদ ইমাম আবু যরআহ রহ. বলেন,

اذا رأيذ الرجل ينذقص أحدا من اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم فاعلم انه زنديق

অর্থঃ যখন কাউকে কোন সাহাবীর দোষ-বর্ণনা করতে দেখ, তাহলে জেনে নাও যে সে হল, যেন্দীক্ব (ধর্মদ্রোহী)। আদদুররাতুল মুযিয়্যাহ। (সূত্রঃ মাকামে সাহাবা – ৭৯)

তেমনি ভাবে প্রসিদ্ধ আকীদার কিতাব শরহে আকীদাতুত্বাহাবিয়্যাহ। উল্লেখ আছে…..

ونحب اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم……ولا نذكرهم إلا بخير وحبهم دين وايمان واحسان وبغضهم كفر ونفاق وطغيان.

অর্থঃ আমরা সকল সাহাবীকে ভালবাসি তাদের শুধুমাত্র ভালোর আলোচনাই করি। তাদের প্রতি ভালবাসা দ্বীন, ঈমান ও ইহসানের পরিচায়ক আর তাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ কুফর, মুনাফেক্বী ও অবাধ্যতার পরিচায়ক। আক্বীদা নং ৯৭-

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল যে সাহাবাদের সমালোচনাকারী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত বহির্ভূত ও গোমরাহ দলের অন্তর্ভুক্ত।

মওদুদীবাদ কাদিয়ানিবাদের চেয়েও জঘন্য: হাক্কানি আলেমগণ

ইসলাম, মানবতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, অসাম্প্রদায়িক, পরমতসহিষ্ণুতাসহ মানব কল্যাণে নিবেদিত শান্তির ধর্ম। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)—কে রাব্বুল আলামিন এই পৃথিবীতে মানবজাতির জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। একমাত্র তাঁর মতাদর্শ পৃথিবীতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, হানাহানি, হিংসা—বিদ্বেষ থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে পারে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা)—এর এই পবিত্র ধর্ম নিয়ে বিভিনড়ব মতবলবরাজ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী নানা অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে এই দেশের সহজসরল সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন। আর এই প্রেক্ষাপটে যারা পবিত্র ইসলাম ধর্ম, আল—কুরআন, আল—হাদিস, নবী—রাসূলগণ, খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবায়ে কিরামসহ ইসলামের প্রতিষ্ঠিত বিষয়গুলোতে নানাবিধভাবে ভুল ও অপব্যাখ্যা দিয়ে বিভিনড়ব স্বার্থসিদ্ধি হাসিল করতে চায় তাদের স্বরূপ উন্মোচন করা প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরই ইমানি দায়িত্ব ও কর্তব্য।
উপমহাদেশে আবুল আলা মওদুদীর ফেৎনা ও তার প্রতিষ্ঠিত দল জামাতে ইসলামীর অপতৎপরতা নিয়ে শুরু থেকেই হাক্কানি আলেম ওলামা, পীর মাশায়েখ, ইসলামী পণ্ডিত, বুদ্ধিজীবীগণ সহজসরল সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণকে সতর্ক করার জন্য বিবৃতি, ফতোয়া, ওয়াজ মাহফিল, বই—পুস্তক লিখেছেন। হাক্কানি আলেমগণ মওদুদীবাদকে কাদিয়ানিবাদের চেয়েও জঘন্য বলে মন্তব্য করেছেন।

আমার নাম আবুল আলা মওদুদী:

মওদুদী সাহেবের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা-দীক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না। কোথায় এবং কতটুকু লেখাপড়া করেছেন, তিনি নিজেও এ সম্পর্কে বিশেষ কিছু লিখেননি। এ সম্পর্কে যতুটুকু জানা যায়, মওদুদী সাহেবের পিতা হায়দরাবাদে নিজামের একজন কর্মচারী ছিলেন। সেখানে ১৯০৩ সালে মওদুদীর জন্ম হয়। অবসর গ্রহণের পর পিতা। সপরিবারে দিল্লী চলে আসেন। মওদুদী সাহেব প্রথমে ঘরে কিছু লেখাপড়া করেন। পরে তাকে দিল্লীতে একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। ছোটবেলায় পিতা মারা যান। মওদুদী সাহেবের প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। কেউ বলেছেন তিনি ফাজেল পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। আবার কারো কারো মতে তিনি মাধ্যমিক স্তরও অতিক্রম করেননি। জীবিকার অন্বেষণে তাকে বেরিয়ে পড়তে হয়। সম্ভবত ১৯১৮ সাল থেকে মওদুদী সাহেবকে রুজি-রোজগার শুরু করতে হয়। তিনি ‘মদীনা’, ‘তাজ’, ‘মুসলিম’, ‘আলজমিয়ত’ প্রভৃতি উর্দু সাময়িকী ও সংবাদপত্রে কাজ করেন।

১৯২৯ সালে মওদুদী সাহেবকে ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। তিনি দিল্লী থেকে হায়দরাবাদ চলে যান। সেখানে তিনি আট বছর অবস্থান করেন। উর্দুভাষী বিশিষ্ট লেখক ও চিন্তাবিদ রইস আহমদ জাফরী তাঁর দিদা ও শানীদ’ গ্রন্থে মওদুদী সাহেব সম্পর্কে লিখেছেন, “১৯৩৭ সালের এক হিমেল সন্ধ্যায় বোম্বাইয়ে খেলাফত হাউসের অতিথিশালায় একজন নবাগতকে দেখতে পেলাম। দাড়ি-গোঁফ কামানো এবং ইংলিশ কাটিংয়ের চুল। সুদর্শন ও ডাগর ডাগর চোখওয়ালা। কিছুটা একাকী ও চুপচাপ বসে ছিলেন। পরিচয় জিজ্ঞেস করতে বললেন “আমার নাম আাবল আলা মওদুদী।”

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 08:32:31 pm, Tuesday, 16 September 2025
126 Time View

ফিৎনায়ে মওদূদী মতবাদ-জনাব মওদুদী সাহেবের একটি মৌলিক থিওরি

Update Time : 08:32:31 pm, Tuesday, 16 September 2025

 

জনাব মওদুদী সাহেবের একটি মৌলিক থিওরি তিনি এভাবে প্রকাশ করেন,

رسول خدا کے سوا کسی انسان کو معیار حق نہ بنائے ، کسی کو تنقید سے بالاتر نہ سمجھے، کسی کی ذھنی غلامی میں مبتلاء نہ ہو-

অর্থঃ রাসূলে খোদা ছাড়া অন্য কাউকে সত্যের মাপকাঠি বানাবে না। কাউকে সমালোচনার ঊর্ধ্বে মনে করবে না। কারো মানুষিক গোলামীতে লিপ্ত হবে না। (দস্তুরে জামাআতে ইসলামী পৃঃ ১৪, সত্যের আলো পৃঃ ৩০)

এই থিওরির উপর ভিত্তি করে তিনি অন্যত্র লিখেনঃ

میں نے دین کو حال یا ماضی کے اشخاص سے سمجھنے کی بجائے ہمیشہ قران و سنت ہی سے سمجھنے کی کوشش کی ہے –

অর্থঃ আমি অতীত বা বর্তমান ব্যক্তিবর্গের নিকট হতে দ্বীন বুঝার পরিবর্তে সর্বদা কুরআন সুন্নাহ থেকেই বুঝতে চেষ্টা করেছি। এ কারণে, খোদার দ্বীন, আমার ও প্রত্যেক মুমীনের নিকট কি চায়, তা জানার জন্য এটা দেখতে চেষ্টা করিনি যে, অমুক-অমুক বুজুর্গ কি বলেন। বরং সর্বদা এটাই দেখতে চেষ্টা করেছি যে, কুরআন কি বলে ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেছেন। রুয়েদাদে জামা‘আত তৃতীয় খণ্ড পৃঃ ৩৭ সূত্র মওদুদী সাহেব আওর উনকী তাহরীরাত পৃঃ ৯০ প্রকাশঃ দারুল ইশাআত -করাচী।

সারকথা মওদুদী সাহেবের মতে সত্যকে জানার ও অনুসরণের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর আর কোন নির্ভরযোগ্য মাধ্যম নাই। এই থিওরির অন্তরালে তিনি কুরআন ও হাদীস থেকে দ্বীনকে বুঝার ও অনুসরণের ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরামের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করেছেন।

এছাড়া সাহাবায়ে কেরামের জীবনে বিভিন্ন ভাবে কালিমা লেপনের জন্য তিনি “খেলাফত ও মুলুকিয়্যাত” নামে স্বতন্ত্র কিতাবও লিখেছেন। সবগুলোরই সারকথা হল যে, সত্যকে জানা ও মানার জন্য সাহাবাদের জামা‘আত নির্ভরযোগ্য নয়, বরং জামা‘আতে সাহাবার উপর নির্ভর করা যাবে না। তাঁদের অনেকেই পাপী ছিলেন এজন্য তাঁরা পরবর্তীদের যাচাই বাছাইয়ের ঊর্ধ্বে নন।

অথচ ইসলামে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সব ক্ষেত্রেই তার ব্যাপ্তি, এসব ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল শুধু বিধান শুনিয়ে ক্ষান্ত হননি বরং বিধান সমূহ কার্যকর করে দুনিয়ার সামনে তার আমলী নমুনা রেখে গেছেন। আর আল্লাহ ও তার রাসূলের বিধানাবলীর কার্যক্ষেত্রই ছিল যে পরিবার, যে সমাজ, যে রাষ্ট্র তার নাম জামা‘আতে সাহাবা। শুধু বিধান বলে গেলে কার্যক্ষেত্রে তার রূপরেখাকে বিকৃত করে ফেলত পরবর্তী যুগের বক্র স্বভাবের লোকেরা। তার থেকে হেফাজতের জন্যই প্রয়োজন ছিল উক্ত জামা‘আতের। আর যেহেতু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধানাবলীর প্রাকটিক্যাল রূপই হচ্ছে সাহাবায়েকেরামের জীবনী, তাই মূল বিধানাবলীর অনুসরণের ক্ষেত্রে তাদের জীবনও হবে মাপকাঠি। এটাই স্বাভাবিক। এই কারণে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে সাহাবায়ে কেরামের ঈমান, আমল ও ইলমকে অন্যদের জন্য অনুসরণীয় হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে যথাঃ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেনঃ

فَاِنْ اٰمَنُوْا بِمِثْلِ مَاۤ اٰمَنْتُمْ بِهٖ فَقَدِ اهْتَدَوْا ۚ وَ اِنْ تَوَلَّوْا فَاِنَّمَا هُمْ فِیْ شِقَاقٍ ۚ فَسَیَكْفِیْکَهُمُ اللهُ ۚ وَهُوَ السَّمِیْعُ الْعَلِیْمُ

অর্থঃ (সাহাবাদের লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে) তারা যদি তোমাদের মত ঈমান আনয়ন করে তাহলে হেদায়াত পাবে আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তারাই হঠকারিতায় রয়েছে। সূরায়ে বাকারা আয়াত ১৩৭

অন্যত্র ইরশাদ করেনঃ

وَمَنْ یُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْۢ بَعْدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُ الْهُدٰی وَیَتَّبِعْ غَیْرَ سَبِیْلِ الْمُؤْمِنِیْنَ نُوَلِّهٖ مَا تَوَلّٰی وَنُصْلِهٖ جَهَنَّمَ ؕ وَسَآءَتْ مَصِیْرًا

অর্থঃ আর যে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমীনদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে আমি তাকে সেদিকেই ফিরাব এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা হল নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থান। (সূরায়ে নিসা -আয়াত ১১৫)

এই আয়াতে মুমীনদের পথ বলতে প্রথমতঃ যারা উদ্দেশ্য তারা হলেন জামা‘আতে সাহাবা।

অন্য আয়াতে কুরআনে পাক প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-

بَلْ هُوَ اٰیٰتٌۢ بَیِّنٰتٌ فِیْ صُدُوْرِ الَّذِیْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ ؕ وَمَا یَجْحَدُ بِاٰیٰتِنَاۤ اِلَّا الظّٰلِمُوْنَ

অর্থঃ বরং যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, তাদের অন্তরে ইহা তো স্পষ্ট আয়াত। সূরায়ে আনকাবূত ৪৯।

এই আয়াতেও যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তাদের দ্বারা প্রথম উদ্দেশ্য সাহাবায়েকেরাম।

পক্ষান্তরে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও বিভিন্ন হাদীসে সাহাবায়েকেরামের অনুসরণের তাকীদ করেছেন যথাঃ

قال رسول اللہ صلی اللہ علیھ وسلم سذفذرق امذی ثلاثا وسبعین فرقۃ کلھم فی النار الا واحدۃ ، قالوا من ھی یا رسول اللہ قال ما انا علیھ واصحابی –

অর্থঃ অতিশীঘ্র আমার উম্মত তেহাত্তর ফেরকায় বিভক্ত হয়ে পড়বে তন্মধ্যে একটি জামা‘আত হবে জান্নাতী আর বাকীগুলো হবে জাহান্নামী। উপস্থিত সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতী দল কারা হবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যারা আমার ও আমার সাহাবাদের তরীকার অনুসারী হবে। (তিরমিযী শরীফ ২য় খণ্ড পৃঃ ৯৩)

অন্য হাদীসে ইরশাদ ফরমানঃ

فعليكم بسنذي وسنذي الخلفاء الراشدين

অর্থঃ (উম্মতকে লক্ষ্য করে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন) তখন তোমাদের জন্য আমার ও খুলাফায়ে রাশেদীনের তরীকা মত চলা অত্যাবশ্যক। (আবু দাউদ শরীফ ২-৬৩৫)

এছাড়াও কুরআনের বহু আয়াত ও রাসূলের বহু হাদীস দ্বারা এ কথা সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত যে, কুরআন-হাদীস মুতাবিক ইলম ও আমলের ক্ষেত্রে সাহাবায়েকেরামের অনুসরণ জরুরী। এক্ষেত্রে সাহাবাদের পথ ও মতকে বর্জন করে কুরআন হাদীসের জ্ঞানার্জন ও তদানুযায়ী আমল সম্ভব নয়। লক্ষাধিক সাহাবীর মধ্যে সবাই অনুসরণেরযোগ্য। কুরআন হাদীসের কোথাও এ ক্ষেত্রে কোন সাহাবীকে বাদ দেওয়া হয় নাই। কোন সাহাবীর দ্বারা কখনো গুনাহ হয়ে গেলে তাও হয়েছে গুনাহের পরে তাওবার পদ্ধতির ক্ষেত্রে উম্মতের অনুসরণযোগ্য হওয়ার জন্যই। দ্বিতীয়তঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু সবকিছু বাস্তব নমুনা হিসাবে দেখিয়ে গেছেন তাই ইসলামী দণ্ডবিধির বাস্তব প্রয়োগবিধি শিক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে দু’একজন সাহাবী থেকে ভুল প্রকাশ পেয়েছে। একারণেই রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

قال رسول الله صلي الله عليه وسلم أوحي الله يا محمد ان اصحابك عندي كالنجوم بعضها اضوأ من بعض ولكل نور فمن اخذ بشي مماهم عليه من اخذلافهم فهو عندي علي الهدي – رواه الدارقطني-

অর্থঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ অহী পাঠিয়েছেন যে, হে মুহাম্মাদ! আপনার সাহাবীগণ আমার নিকট নক্ষত্রতুল্য, কেউ অতি উজ্জল, কেউ তার চেয়ে কম, তবে সকলেরই আলো আছে। অতএব, তাদের মতবিরোধের ক্ষেত্রেও যে কোন এক পক্ষকে অনুসরণ করলেই সে অনুসারী আমার নিকট হেদায়াত প্রাপ্ত বলে গণ্য হবে।

(কেননা, তাদের বিরোধ হবে ইজতেহাদী, আর সঠিক ইজতেহাদের কোন অংশকেই নিশ্চিত ভুল বলা যাবে না) হাদীসটির সনদে দুর্বলতা থাকলেও এমর্মে আরো অনেক হাদীস থাকায় এবং হাদীসটি বিষয় বস্তু কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও অপরাপর হাদীস সমর্থিত হওয়ায় হাদীসটি সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য (অবশ্য কারো মতে কুরআন-হাদীসের সমর্থন গ্রহণযোগ্য না হয়ে নিজের মনের সমর্থন গ্রহণ যোগ্য হলে তা ভিন্ন কথা) তাফসীরে মাযহারী ২য় খণ্ড পৃঃ ১১৬

মোটকথা সাহাবায়েকেরামের সত্যের মাপকাঠি হওয়ার বিষয়টি কুরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, সাথে সাথে যুক্তি সংগতও। অথচ মওদুদী সাহেব তাঁর দলের জন্য আইন প্রণয়ন করে গেলেন যে, রাসূলে খোদা ছাড়া আর কাউকে যেন সত্যের মাপকাঠি না বানানো হয়। কি দোষ করেছেন হযরত আবু বকর রা. ও উমর রা., যাদেরকে সত্যের মাপকাঠি বানানো যাবে না। হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রহ. এর রাষ্ট্র ব্যবস্থা, মুজাদ্দিদে আলফেসানী রহ. এর সংস্কার, আইম্মায়ে মুজতাহেদীনের ইজতেহাদ, হযরত আবদুল কাদের জিলানী রহ. এর তাযকিয়া ও মা’রিফাতকে অনুসরণ করে যদি কোটি কোটি মানুষ হিদায়াতের ও নাজাতের আশা করতে পারে তাহলে রাসূলে আকরামের মত পরশ পাথরের ছোয়ায় ধন্য ও তার হাতে গড়া জামা‘আতের জীবনী, কথা ও কাজ, কেন অনুসরনযোগ্য হবে না?

বস্তুতঃ রাসূল ছিলেন দ্বীন নামক দূর্গের নির্মাতা। সাহাবায়েকেরাম ছিলেন সে দুর্গের সুদৃঢ় প্রাচীর। তাদের উপর নির্ভর না করা হলে দ্বীনের ধ্বংস অনিবার্য। ইসলামের অতীত ইতিহাসের গোমরাহ দলগুলো সর্বদা এই প্রাচীরকেই ধ্বংস করতে চেষ্টা করেছে।

তাছাড়া মওদুদী সাহেব শুধু সাহাবাগণকে সত্যের মাপকাঠি স্বীকার করেননি তা নয় বরং বিভিন্নভাবে সাহাবায়েকেরামের কুৎসা রটিয়েছেন। সে সূত্রে তিনি বলেনঃ

بسا اوقات صحابہ پر بھی بشری کمزوریوں کا غلبہ ہو جاتا تھا

অর্থঃ সাহাবাদের উপর প্রায়ই মানবিক দুর্বলতা প্রভাব বিস্তার করত। -তাফ্হীমাত ৪র্থ সংস্করণ পৃঃ ২৯৬ সূত্রঃ মওদুদী সাহেব আওর উন্‌কী তাহরীরাত ৮৫

তাছাড়া উহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের পরাজয়ের (মওদুদীর ভাষায়) বড় বড় কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে জনাব মওদুদী লিখেনঃ যে সমাজে সুদের প্রচলন থাকে সেখানে সুদখোরের কারণে দুই ধরনের নৈতিক রোগ দেখা দেয়। সুদ গ্রহণকারীর মধ্যে লোভ-লালসা, কৃপণতা ও স্বার্থান্ধতা এবং সুদ প্রদানকারীদের মধ্যে ঘৃণা-ক্রোধ, হিংসা ও বিদ্বেষ জন্ম নেয়। উহুদের পরাজয় এ দুই ধরনের রোগের কিছু না কিছু অংশ ছিল।

(তাফহীমুল কুরআন বাংলা ৪র্থ পারা ২য় খণ্ড ৬৫ পৃঃ আধুনিক প্রকাশনী ৩য় সংস্করণ।)

চিন্তা করে দেখুন! উদ্ধৃত প্রথম বক্তব্য দ্বারা যে মানবিক দুর্বলতার কথা বলেছেন, তারই সম্ভবতঃ কিছুটা ব্যাখ্যা করেছেন উহুদের ঘটনায় গিয়ে। অর্থাৎ মানবিক দুর্বলতাগুলো ছিলঃ লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, কৃপণতা ও ঘৃণা ইত্যাদি। অথচ উহুদ যুদ্ধে যারা শরীক ছিলেন, তারা সকলেই ছিলেন নবীজীর প্রথম সারির সাহাবা। আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রশংসায় কত আয়াত নাযিল করেছেন। কিন্তু মওদুদী সাহেব নির্দ্বিধায় পাইকারী হারে তাদের দোষচর্চা করে গেলেন। শুধু তাই নয় আশারায়ে মুবাশশারাহ (জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজন) থেকে শুরু করে কাতেবে ওহী পর্যন্ত অনেকেই রেহাই পাননি মওদুদী সাহেবের কলমের আক্রমণ থেকে। যার জ্বলন্ত প্রমাণ পাবেন মওদুদী সাহেবের লিখিত “খেলাফত মূলুকিয়াত” ও তার পাশাপাশি জাষ্টিস তক্বী উসমানীর লিখা “ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুআবিয়” এবং হযরত শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. এর লেখা “ভুল সংশোধ” পড়ে দেখলে।

এসবের দ্বারা তিনি যেমন সাহাবাদের পবিত্র জামা‘আতকে উম্মতের সামনে কলঙ্কিত করতে চেয়েছেন। অপরদিকে রাসূলের হাতে গড়া স্বর্ণমানবদের দল, সাহাবাদেরকে কলঙ্কিত করে স্বয়ং রাসূলকেও চরম ব্যর্থ প্রমাণ করতে প্রয়াস পেয়েছেন। কেননা, কিয়ামত পর্যন্ত আগত মানুষের জন্য রূহানী চিকিৎসক যদি বছরকে বছর তার সংস্পর্শে থাকা রোগীদেরকেই পূর্ণ চিকিৎসা করতে না পারেন বরং তার সংস্পর্শীদের মাঝে “প্রায়ই সে রোগগুলো প্রভাব বিস্তার করে থাকে”। তাহলে এমন চিকিৎসককে সফল কে বলবে ?

অথচ স্বয়ং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবাদের সম্পর্কে কটূক্তি কিংবা সমালোচনা করতে উম্মতকে বার বার এবং কঠোর ভাষায় নিষেধ করে গেছেন। এ ব্যাপারে কয়েকটি হাদীস নিম্নে প্রদত্ত হল-

قال رسول الله صلي الله عليه وسلم لا ذسبوا اصحابي فان احدكم لو انفق مثل احد ذهبا ما بلغ مد احدهم ولانصيفه-

অর্থঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেন, তোমরা আমার সাহাবাদের মন্দ বলবেনা কেননা তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড়সম স্বর্ণ সদকা করলেও তাদের একসের বা আধাসেরের সমান হবে না। বুখারী মুসলিম – সূত্রঃমিশকাত পৃঃ ৫৫৩

عن عبد الله بن مغفل قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم الله الله في اصحابي لا ذذخذوهم غرضا من بعدي فمن احبهم فبحبي احبهم ومن ابغضهم

অর্থঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান, আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহকে ভয় কর আমার সাহাবাদের বিষয়ে। তাদেরকে সমালোচনার পাত্র বানাবে না। যারা তাদেরকে ভালবাসবে আমার মুহাব্বাতেই তা করবে। আর যারা তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করবে তারা আমার সাথেই শত্রুতাহেতু তাদের শত্রু হবে….. তিরমিযী ২-২২৫ মিশকাত – ৫৫৪

عن بن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا رأيذم الذين يسبون أصحابي فقولوا لعنة الله على شركم

অর্থঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান, তোমরা যখন ঐ সকল লোকদেরকে দেখবে যারা আমার সাহাবাদের মন্দ বলে, তখন তোমরা বলবে, তোমাদের অনিষ্টের প্রতি আল্লাহর লা‘নত হোক। (তিরমিযী ২-২৫৫ মিশকাত ৫৫৪)

মোটকথা সাহাবায়ে কেরাম- আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দৃষ্টিতে অনেক সম্মানী জামা‘আত। আল্লাহ তাদের সকলের প্রতি সন্তুষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সমালোচনার পাত্র বানাতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। বিস্তারিত জানতে হলে দেখেন মুফতী শফী রহ. প্রণীত “মাকামে সাহাবা” নামক কিতাবটি।

আর এ কারণেই আকাইদের বিখ্যাত কিতাব “মুছায়রাতে” উল্লেখ করা হয়েছে যেমন,

واعذقاد اهل السنة و الجماعة ذزكية جميع الصحابة وجوبا …….

অর্থঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদা হল যে, সকল সাহাবীকে নির্দোষ বলা ওয়াজিব। (মুসায়ারাহ পৃঃ ১৩২ দেওবন্দ। সূত্রঃ মাকামে সাহাবা – পৃঃ ৭৯)

তেমনিভাবে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. লিখেন,

ومن اصول اهل السنة و الجماعة سلامة قلوبهم و السنذهم لاصحاب رسول الله صلي الله عليه وسلم

অর্থঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মৌলিক বিশ্বাস হল যে, রাসূলের সাহাবাদের ব্যাপারে নিজ অন্তর ও জিহ্বাকে পরিষ্কার রাখবে। (শরহে আক্বীদায়ে ওয়াসিত্বিয়্যাহ পৃঃ ৪০৩ সূত্র মাকামে সাহাবা পৃঃ ৭৯)

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. আরো বলেন,

لا يجوز لاحد ان يذكر شيئا من مساويهم ولا ان يطعن علي أحد منهم بعيب و لا نقص فمن فعل ذلك وجب ذاديبه

অর্থঃ সাহাবাদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা কারো জন্যই জায়েয নাই। যে এমন করবে তাকে শাস্তি দেওয়া ওয়াজিব। (আসসারিমূল মাস্‌লুল। সূত্রঃ মাকামে সাহাবা – ৭৭)

ইমাম নববী রহ. বলেন,

الصحابة كلهم عدول من لابس الفذن وغيرهم باجماع من يعذد به-

অর্থঃ গ্রহণযোগ্য সকলের এ ব্যাপারে ইজমা যে, সকল সাহাবী নিরপরাধী, এমনকি যারা পরস্পর বিগ্রহে পতিত হয়েছেন তাঁরাও। (তাক্বরীব সূত্রঃ মাকামে সাহাবা – পৃঃ৭৭)

ইমাম মুসলিমের উস্তাদ ইমাম আবু যরআহ রহ. বলেন,

اذا رأيذ الرجل ينذقص أحدا من اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم فاعلم انه زنديق

অর্থঃ যখন কাউকে কোন সাহাবীর দোষ-বর্ণনা করতে দেখ, তাহলে জেনে নাও যে সে হল, যেন্দীক্ব (ধর্মদ্রোহী)। আদদুররাতুল মুযিয়্যাহ। (সূত্রঃ মাকামে সাহাবা – ৭৯)

তেমনি ভাবে প্রসিদ্ধ আকীদার কিতাব শরহে আকীদাতুত্বাহাবিয়্যাহ। উল্লেখ আছে…..

ونحب اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم……ولا نذكرهم إلا بخير وحبهم دين وايمان واحسان وبغضهم كفر ونفاق وطغيان.

অর্থঃ আমরা সকল সাহাবীকে ভালবাসি তাদের শুধুমাত্র ভালোর আলোচনাই করি। তাদের প্রতি ভালবাসা দ্বীন, ঈমান ও ইহসানের পরিচায়ক আর তাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ কুফর, মুনাফেক্বী ও অবাধ্যতার পরিচায়ক। আক্বীদা নং ৯৭-

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল যে সাহাবাদের সমালোচনাকারী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত বহির্ভূত ও গোমরাহ দলের অন্তর্ভুক্ত।

মওদুদীবাদ কাদিয়ানিবাদের চেয়েও জঘন্য: হাক্কানি আলেমগণ

ইসলাম, মানবতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, অসাম্প্রদায়িক, পরমতসহিষ্ণুতাসহ মানব কল্যাণে নিবেদিত শান্তির ধর্ম। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)—কে রাব্বুল আলামিন এই পৃথিবীতে মানবজাতির জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। একমাত্র তাঁর মতাদর্শ পৃথিবীতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, হানাহানি, হিংসা—বিদ্বেষ থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে পারে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা)—এর এই পবিত্র ধর্ম নিয়ে বিভিনড়ব মতবলবরাজ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী নানা অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে এই দেশের সহজসরল সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন। আর এই প্রেক্ষাপটে যারা পবিত্র ইসলাম ধর্ম, আল—কুরআন, আল—হাদিস, নবী—রাসূলগণ, খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবায়ে কিরামসহ ইসলামের প্রতিষ্ঠিত বিষয়গুলোতে নানাবিধভাবে ভুল ও অপব্যাখ্যা দিয়ে বিভিনড়ব স্বার্থসিদ্ধি হাসিল করতে চায় তাদের স্বরূপ উন্মোচন করা প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরই ইমানি দায়িত্ব ও কর্তব্য।
উপমহাদেশে আবুল আলা মওদুদীর ফেৎনা ও তার প্রতিষ্ঠিত দল জামাতে ইসলামীর অপতৎপরতা নিয়ে শুরু থেকেই হাক্কানি আলেম ওলামা, পীর মাশায়েখ, ইসলামী পণ্ডিত, বুদ্ধিজীবীগণ সহজসরল সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণকে সতর্ক করার জন্য বিবৃতি, ফতোয়া, ওয়াজ মাহফিল, বই—পুস্তক লিখেছেন। হাক্কানি আলেমগণ মওদুদীবাদকে কাদিয়ানিবাদের চেয়েও জঘন্য বলে মন্তব্য করেছেন।

আমার নাম আবুল আলা মওদুদী:

মওদুদী সাহেবের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা-দীক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না। কোথায় এবং কতটুকু লেখাপড়া করেছেন, তিনি নিজেও এ সম্পর্কে বিশেষ কিছু লিখেননি। এ সম্পর্কে যতুটুকু জানা যায়, মওদুদী সাহেবের পিতা হায়দরাবাদে নিজামের একজন কর্মচারী ছিলেন। সেখানে ১৯০৩ সালে মওদুদীর জন্ম হয়। অবসর গ্রহণের পর পিতা। সপরিবারে দিল্লী চলে আসেন। মওদুদী সাহেব প্রথমে ঘরে কিছু লেখাপড়া করেন। পরে তাকে দিল্লীতে একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। ছোটবেলায় পিতা মারা যান। মওদুদী সাহেবের প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। কেউ বলেছেন তিনি ফাজেল পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। আবার কারো কারো মতে তিনি মাধ্যমিক স্তরও অতিক্রম করেননি। জীবিকার অন্বেষণে তাকে বেরিয়ে পড়তে হয়। সম্ভবত ১৯১৮ সাল থেকে মওদুদী সাহেবকে রুজি-রোজগার শুরু করতে হয়। তিনি ‘মদীনা’, ‘তাজ’, ‘মুসলিম’, ‘আলজমিয়ত’ প্রভৃতি উর্দু সাময়িকী ও সংবাদপত্রে কাজ করেন।

১৯২৯ সালে মওদুদী সাহেবকে ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। তিনি দিল্লী থেকে হায়দরাবাদ চলে যান। সেখানে তিনি আট বছর অবস্থান করেন। উর্দুভাষী বিশিষ্ট লেখক ও চিন্তাবিদ রইস আহমদ জাফরী তাঁর দিদা ও শানীদ’ গ্রন্থে মওদুদী সাহেব সম্পর্কে লিখেছেন, “১৯৩৭ সালের এক হিমেল সন্ধ্যায় বোম্বাইয়ে খেলাফত হাউসের অতিথিশালায় একজন নবাগতকে দেখতে পেলাম। দাড়ি-গোঁফ কামানো এবং ইংলিশ কাটিংয়ের চুল। সুদর্শন ও ডাগর ডাগর চোখওয়ালা। কিছুটা একাকী ও চুপচাপ বসে ছিলেন। পরিচয় জিজ্ঞেস করতে বললেন “আমার নাম আাবল আলা মওদুদী।”