10:45 pm, Thursday, 11 September 2025

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য দরকার সাংবাদিকদের লড়াকু মন: কাদের গনি চৌধুরী

দিগন্ত প্রতিদিন

1757598313114

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ সাংবাদিক উন্নয়ন সংস্থার আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকতার তিনটি বড় শর্ত হচ্ছে সততা, নির্ভুলতা ও পক্ষপাতহীনতা। সততা মানে- সততার সঙ্গে সাংবাদিকতা চর্চা করতে হবে। নির্ভুলতা মানে- যে তথ্য দিচ্ছেন, সেটি সঠিক হতে হবে। আর ন্যায্যতা খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং পক্ষপাতমুক্ত হতে হবে সাংবাদিকতা।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ সাংবাদিক উন্নয়ন সংস্থার পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনের চেয়ারম্যান মানুনুর রশিদ সাইনের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মুহাম্মদ কামরুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর , আহ্বায়ক বিএনপি মিডিয়া সেল, মো: ওবায়দুর রহমান শাহিন, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, কাদের গনি চৌধুরী, মহাসচিব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, মো: বাছির জামাল, সহকারী মহাসচিব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, মোঃ শহিদুল ইসলাম, সভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, মোঃ খুরশীদ আলম, সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন। পেশাজীবী নেতা রফিকুল ইসলাম, আরাফাতুর রহমান আপেল, হাসান সরদার জুয়েল, কাজী মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকতা রাষ্ট্রের অন্যতম ইন্দ্রিয়। যার মাধ্যমে একটা রাষ্ট্রের সঠিক ধারণা পাওয়া যায়। সুশাসন নিশ্চিত করতে সংবাদমাধ্যম পাহারাদরের ভূমিকা পালন করে। এ জন্য সংবাদমাধ্যমকে সমাজের দর্পণ বলা হয়। সে দর্পনে প্রতিবিম্বিত হয় সমাজের চিত্র। সাংবাদিকদের কাজ হলো ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রতিবেদন তৈরি করা এবং তা গণমাধ্যমে পরিবেশন করা। এ কারণে সাংবাদিকদের বলা হয় সমাজের ‘ওয়াচডগ’। তাই সাংবাদিকতা হতে হবে পুরোটাই সত্য। আংশিক সত্য ও মিথ্যার সংমিশ্রণে সাংবাদিকতা হয় না। সাদাকে সাদা-কালোকে কালা বলাই সাংবাদিকতা। মনে রাখবেন যা বস্তুনিষ্ঠ তা সত্য, তাই সুন্দর। যা সুন্দর তা শান্তি ও কল্যাণের। সৎ সাংবাদিকতা সত্যের আরাধনা করে। সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, সকল ভয়-ভীতি, লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে সত্য তুলে ধরাই হচ্ছে প্রকৃত সাংবাদিকের কাজ। যারা এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সাহস রাখেন না তাদের জন্য অন্তত সাংবাদিকতা নয়।

তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকতায় প্রথম বাধ্যবাধকতা হচ্ছে সত্যের প্রতি। দেশ ও জনগণের প্রতি থাকতে হবে দায়বদ্ধতা। সাংবাদিকতার মূল মন্ত্র হচ্ছে কোনো ক্ষেত্রে মিথ্যা সাথে আপোস না। আপস শব্দটি সাংবাদিকতার ডিকশনারিতে নেই। সত্যের তরে দৈত্যের সাথে লড়াই করা সাংবাদিকতা। আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কথা বলি। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য দরকার সাংবাদিকদের লড়াকু মন, ‘গণমাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিকতা’ এবং ‘গণতান্ত্রিক শাসন’। বাংলাদেশে এ তিনটির বড্ড অভাব। এখনকার সাংবাদিকদের মধ্যে লড়াকু মন মানসিকতা মোটেও নেই। বরং দলদাস সাংবাদিকতা বড় স্থান দখল করে নিয়েছে। আগেকার সাংবাদিকদের সত্যের পেছনে ঘুরতো আর এখনকার সাংবাদিকরা অর্থের পেছনে ঘুরে। আগে সাংবাদিকরা সরকারকে তাদের ভুল ক্রুটি তুলে ধরতেন এখন তা না করে তৈল মর্দন করেন।

তিনি আরও বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে গোপনে চুক্তি করে আসলে সে নিয়ে প্রশ্ন করেন না। উল্টো বলেন আপনার তো নোভেল পাওয়া উচিত। সাংবাদিকদের এই নেতা বলেন, দু’টি একটি বাদ দিলে গণমাধ্যমে হাউজগুলোর কোনো প্রাতিষ্ঠানিকতা নেই। তাই তারা সাংবাদিকতা নিরপেক্ষ অবস্থান সমর্থন করতে পারে না। বরং অধিকার মালিক তাদের গণমাধ্যমকে তাদের ব্যবসা ও রাজনীতির ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। কিছু কিছু গণমাধ্যমের চরিত্র এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, সরকার আসলে তাদের গণমাধ্যমগুলো ওই সরকারকে উপঢৌকন দেন। এটা সাংবাদিকতার জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনেকে যেনতেনভাবে পত্রিকা বের করে সম্পাদক বনে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব সম্পাদকরা ৫০ কপি পত্রিকা বের করে বগলে চেপে সচিবালয়ে ঢুকেন। এসব বগল সম্পাদকদের দাপটে আসল সম্পাদকরা কোণঠাসা। এরা তথ্য সন্ত্রাসকে পুঁজি করে বিপুল অর্থের মালিক বনে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, হলুদ সাংবাদিকতা, অপসাংবাদিকতা ও তথ্যসন্ত্রাস সাংবাদিকতার মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করে দিচ্ছে। সাংবাদিকরা যদি ভাড়াটে লোকের মতো পেশাকে ব্যবহার করেন, তাহলে তা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। মনে রাখবেন, সাংবাদিকতা হচ্ছে সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠার প্রতীক। সাংবাদিকতা সমাজকে এগিয়ে নেয়, গণতন্ত্রকে বিকশিত করে।

কাদের গনি বলেন, বলতে আমরা দ্বিধা নেই, বাংলাদেশে এখন সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা বড্ডজোর দু’দিন চলছে। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা পত্রিকাগুলো হলুদ সাংবাদিক, অপসাংবাদিকতা ও তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে সমাজকে কলুষিত করছে। এসব পত্রিকার ধান্ধাবাজ সাংবাদিক ও বগল সম্পাদকদের উৎপাতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। বিভিন্ন অফিসে গিয়ে তারা কর্মকর্তাদের নানাভাবে হেনস্তা করছে। অর্থ দাবি করছে। এ সব বন্ধে আমাদের এগিয়ে আসবে হবে।

তিনি বলেন, মুক্ত সাংবাদিকতা নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের সাহসী হতে হয়। লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থাকতে হয়। বিবেককে জাগ্রত রাখতে হয়। আমাদের পূর্বসূরিরা যেটা পেরেছে আমরা আজ পারছি না। আমরা নিজ থেকেই যেন আত্মসমর্পণ করে বসে আছি।

তিনি আরেও বলেন, আপনারা তফজ্জাল হোসেন মানিক মিয়ার কথা শুনেছেন। তিনি একবার ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠার কিছু জায়গা খালি রেখে লিখলেন, ‘এ বিষয়ে আর কিছু ছাপানো গেল না সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে’। এ ধরনের প্রতিবাদ আজ নেই। কারণ এখন মিডিয়া হাউজগুলোর মুনাফামুখী সাংবাদিকতার নীতিগত অবস্থান অনেকের কাছে এখন আদর্শের বিষয় নয়। মানিক মিয়া মালিক সম্পাদক হলেও নিজের প্রতিষ্ঠানকে মুনাফামুখী করেন না। সাংবাদিকতার আদর্শকে বিসজর্ন দেননি। সত্য প্রকাশে কখনো দ্বিধা করেন নি। সাহস করে সামরিক শাসকের নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েছিলেন। যদিও তার উত্তরসূরিদের সে নীতি ধরে রাখতে হবে।

কাদের গনি চৈৗধুরী বলেন, একটু আগে বলেছিলাম সাংবাদিকদের বলা হয় সমাজের ‘ওয়াচ ডগ’। কিন্তু আমরা বিগত সময়ে সাংবাদিকতার ওয়াচ ডগের পরিবর্তে প্যাট ডট বা ম্যাব ডগে পরিণত হয়েছিলেন। নির্বাচনে মানুষ খুন হয়েছে, গুম হয়েছে, ভিন্নমতের লোকদের ধরে নিয়ে ক্রসফায়ার দিয়েছে, নীরব থাকতো সাংবাদিকরা। উপরন্তু টকশোতে গিয়ে এসব মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গাইত। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নির্বিচারে ছাত্রদের হত্যা করা হলো। কিছু কিছু সাংবাদিক নেতাদের তখন দেখা গেছে হত্যাকাণ্ডকে উৎসাহিত করতে। এছাড়া প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে। তখন তারা ছাত্রদের সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করতেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 01:46:59 pm, Thursday, 11 September 2025
38 Time View

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য দরকার সাংবাদিকদের লড়াকু মন: কাদের গনি চৌধুরী

Update Time : 01:46:59 pm, Thursday, 11 September 2025

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ সাংবাদিক উন্নয়ন সংস্থার আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকতার তিনটি বড় শর্ত হচ্ছে সততা, নির্ভুলতা ও পক্ষপাতহীনতা। সততা মানে- সততার সঙ্গে সাংবাদিকতা চর্চা করতে হবে। নির্ভুলতা মানে- যে তথ্য দিচ্ছেন, সেটি সঠিক হতে হবে। আর ন্যায্যতা খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং পক্ষপাতমুক্ত হতে হবে সাংবাদিকতা।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ সাংবাদিক উন্নয়ন সংস্থার পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনের চেয়ারম্যান মানুনুর রশিদ সাইনের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মুহাম্মদ কামরুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর , আহ্বায়ক বিএনপি মিডিয়া সেল, মো: ওবায়দুর রহমান শাহিন, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, কাদের গনি চৌধুরী, মহাসচিব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, মো: বাছির জামাল, সহকারী মহাসচিব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, মোঃ শহিদুল ইসলাম, সভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, মোঃ খুরশীদ আলম, সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন। পেশাজীবী নেতা রফিকুল ইসলাম, আরাফাতুর রহমান আপেল, হাসান সরদার জুয়েল, কাজী মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকতা রাষ্ট্রের অন্যতম ইন্দ্রিয়। যার মাধ্যমে একটা রাষ্ট্রের সঠিক ধারণা পাওয়া যায়। সুশাসন নিশ্চিত করতে সংবাদমাধ্যম পাহারাদরের ভূমিকা পালন করে। এ জন্য সংবাদমাধ্যমকে সমাজের দর্পণ বলা হয়। সে দর্পনে প্রতিবিম্বিত হয় সমাজের চিত্র। সাংবাদিকদের কাজ হলো ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রতিবেদন তৈরি করা এবং তা গণমাধ্যমে পরিবেশন করা। এ কারণে সাংবাদিকদের বলা হয় সমাজের ‘ওয়াচডগ’। তাই সাংবাদিকতা হতে হবে পুরোটাই সত্য। আংশিক সত্য ও মিথ্যার সংমিশ্রণে সাংবাদিকতা হয় না। সাদাকে সাদা-কালোকে কালা বলাই সাংবাদিকতা। মনে রাখবেন যা বস্তুনিষ্ঠ তা সত্য, তাই সুন্দর। যা সুন্দর তা শান্তি ও কল্যাণের। সৎ সাংবাদিকতা সত্যের আরাধনা করে। সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, সকল ভয়-ভীতি, লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে সত্য তুলে ধরাই হচ্ছে প্রকৃত সাংবাদিকের কাজ। যারা এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সাহস রাখেন না তাদের জন্য অন্তত সাংবাদিকতা নয়।

তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকতায় প্রথম বাধ্যবাধকতা হচ্ছে সত্যের প্রতি। দেশ ও জনগণের প্রতি থাকতে হবে দায়বদ্ধতা। সাংবাদিকতার মূল মন্ত্র হচ্ছে কোনো ক্ষেত্রে মিথ্যা সাথে আপোস না। আপস শব্দটি সাংবাদিকতার ডিকশনারিতে নেই। সত্যের তরে দৈত্যের সাথে লড়াই করা সাংবাদিকতা। আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কথা বলি। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য দরকার সাংবাদিকদের লড়াকু মন, ‘গণমাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিকতা’ এবং ‘গণতান্ত্রিক শাসন’। বাংলাদেশে এ তিনটির বড্ড অভাব। এখনকার সাংবাদিকদের মধ্যে লড়াকু মন মানসিকতা মোটেও নেই। বরং দলদাস সাংবাদিকতা বড় স্থান দখল করে নিয়েছে। আগেকার সাংবাদিকদের সত্যের পেছনে ঘুরতো আর এখনকার সাংবাদিকরা অর্থের পেছনে ঘুরে। আগে সাংবাদিকরা সরকারকে তাদের ভুল ক্রুটি তুলে ধরতেন এখন তা না করে তৈল মর্দন করেন।

তিনি আরও বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে গোপনে চুক্তি করে আসলে সে নিয়ে প্রশ্ন করেন না। উল্টো বলেন আপনার তো নোভেল পাওয়া উচিত। সাংবাদিকদের এই নেতা বলেন, দু’টি একটি বাদ দিলে গণমাধ্যমে হাউজগুলোর কোনো প্রাতিষ্ঠানিকতা নেই। তাই তারা সাংবাদিকতা নিরপেক্ষ অবস্থান সমর্থন করতে পারে না। বরং অধিকার মালিক তাদের গণমাধ্যমকে তাদের ব্যবসা ও রাজনীতির ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। কিছু কিছু গণমাধ্যমের চরিত্র এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, সরকার আসলে তাদের গণমাধ্যমগুলো ওই সরকারকে উপঢৌকন দেন। এটা সাংবাদিকতার জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনেকে যেনতেনভাবে পত্রিকা বের করে সম্পাদক বনে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব সম্পাদকরা ৫০ কপি পত্রিকা বের করে বগলে চেপে সচিবালয়ে ঢুকেন। এসব বগল সম্পাদকদের দাপটে আসল সম্পাদকরা কোণঠাসা। এরা তথ্য সন্ত্রাসকে পুঁজি করে বিপুল অর্থের মালিক বনে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, হলুদ সাংবাদিকতা, অপসাংবাদিকতা ও তথ্যসন্ত্রাস সাংবাদিকতার মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করে দিচ্ছে। সাংবাদিকরা যদি ভাড়াটে লোকের মতো পেশাকে ব্যবহার করেন, তাহলে তা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। মনে রাখবেন, সাংবাদিকতা হচ্ছে সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠার প্রতীক। সাংবাদিকতা সমাজকে এগিয়ে নেয়, গণতন্ত্রকে বিকশিত করে।

কাদের গনি বলেন, বলতে আমরা দ্বিধা নেই, বাংলাদেশে এখন সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা বড্ডজোর দু’দিন চলছে। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা পত্রিকাগুলো হলুদ সাংবাদিক, অপসাংবাদিকতা ও তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে সমাজকে কলুষিত করছে। এসব পত্রিকার ধান্ধাবাজ সাংবাদিক ও বগল সম্পাদকদের উৎপাতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। বিভিন্ন অফিসে গিয়ে তারা কর্মকর্তাদের নানাভাবে হেনস্তা করছে। অর্থ দাবি করছে। এ সব বন্ধে আমাদের এগিয়ে আসবে হবে।

তিনি বলেন, মুক্ত সাংবাদিকতা নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের সাহসী হতে হয়। লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থাকতে হয়। বিবেককে জাগ্রত রাখতে হয়। আমাদের পূর্বসূরিরা যেটা পেরেছে আমরা আজ পারছি না। আমরা নিজ থেকেই যেন আত্মসমর্পণ করে বসে আছি।

তিনি আরেও বলেন, আপনারা তফজ্জাল হোসেন মানিক মিয়ার কথা শুনেছেন। তিনি একবার ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠার কিছু জায়গা খালি রেখে লিখলেন, ‘এ বিষয়ে আর কিছু ছাপানো গেল না সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে’। এ ধরনের প্রতিবাদ আজ নেই। কারণ এখন মিডিয়া হাউজগুলোর মুনাফামুখী সাংবাদিকতার নীতিগত অবস্থান অনেকের কাছে এখন আদর্শের বিষয় নয়। মানিক মিয়া মালিক সম্পাদক হলেও নিজের প্রতিষ্ঠানকে মুনাফামুখী করেন না। সাংবাদিকতার আদর্শকে বিসজর্ন দেননি। সত্য প্রকাশে কখনো দ্বিধা করেন নি। সাহস করে সামরিক শাসকের নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েছিলেন। যদিও তার উত্তরসূরিদের সে নীতি ধরে রাখতে হবে।

কাদের গনি চৈৗধুরী বলেন, একটু আগে বলেছিলাম সাংবাদিকদের বলা হয় সমাজের ‘ওয়াচ ডগ’। কিন্তু আমরা বিগত সময়ে সাংবাদিকতার ওয়াচ ডগের পরিবর্তে প্যাট ডট বা ম্যাব ডগে পরিণত হয়েছিলেন। নির্বাচনে মানুষ খুন হয়েছে, গুম হয়েছে, ভিন্নমতের লোকদের ধরে নিয়ে ক্রসফায়ার দিয়েছে, নীরব থাকতো সাংবাদিকরা। উপরন্তু টকশোতে গিয়ে এসব মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গাইত। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নির্বিচারে ছাত্রদের হত্যা করা হলো। কিছু কিছু সাংবাদিক নেতাদের তখন দেখা গেছে হত্যাকাণ্ডকে উৎসাহিত করতে। এছাড়া প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে। তখন তারা ছাত্রদের সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করতেন।