1:53 am, Tuesday, 9 September 2025

প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশের মারধরে চার সাংবাদিক আহত

screenshot 20250827 235357

 

স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশের মারধরের ঘটনায় তিন সাংবাদিক ও একজন ইউটিউবার আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন নিউ ন্যাশনের শিমুল পারভেজ ও নোমান মোশাররফ, বাংলাভিশনের কেফায়েত শাকিল এবং ইউটিউবার আলম শরীফ। এদের মধ্যে আহত শিমুল ও নোমানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের গেটের পাশে থাকা পুলিশ বক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

আহত কেফায়েত শাকিল জানান, শিমুল পারভেজ ও নোমান প্রেসক্লাব থেকে মোটরসাইকেলে বের হচ্ছিলেন। এ সময় একটি প্রাইভেটকার হালকা ধাক্কা দেয়। তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে শিমুল পারভেজকে এক ব্যক্তি ছুরি দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করেন। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।

শাকিল বলেন, আমি রাস্তার অন্য পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। ঝামেলা শুনে গাড়ির জানালা দিয়ে দেখছি, শিমুল ভাইকে পুলিশ বক্সের দিকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আমি দৌড়ে এগিয়ে যাই, কিন্তু তখন শিমুলকে খুঁজে পাইনি। পরে বক্সের ভেতরে আরও একজনকে মারধর হতে দেখেছি। তখনই মোবাইল বের করে ভিডিও ধারণ করার চেষ্টা করি। কিন্তু মোবাইল দেখার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ আমার ওপর চড়াও হয়।

তিনি বলেন, ৫-৬ জন পুলিশ আমাকে ধরে বক্সের ভেতরে টেনে আনে। তারা মোবাইল নিতে চেয়েছে, ভিডিও ডিলিট করতে বলেছে। আমি বারবার বলেছি, আমি টিভি সাংবাদিক, ভিডিও ধারণ আমার কাজ। তারপরও আমাকে মারধর করা হয়। এ সময় আলম নামে একজন মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিককেও পুলিশ মারধরের চেষ্টা করে। পরে উপস্থিত অন্য সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করলে পুলিশ কিছুটা পিছু হটে।

আহত সাংবাদিকদের হাসপাতালে দেখতে যাওয়া সহকর্মী সাংবাদিক ইয়াসির তন্ময় জানান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সড়ক ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনের দিকে যাওয়ার সময় একটি মাইক্রোবাস সাংবাদিকদের মোটরসাইকেলের সামনে দাঁড়ায়। এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা শিমুল পারভেজ সেই মাইক্রোবাস চালককে গাড়িটা একটু পিছিয়ে নিতে বলেন। কিন্তু গাড়ি না সরিয়ে উল্টো তার গাড়ির ভেতর চালক ও যাত্রীরা তাদের গালাগালি করতে থাকেন। একপর্যায়ে মাইক্রোবাসের চালক গাড়ি থেকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে এসে শিমুলকে আঘাত করার চেষ্টা করলে তিনি তার হাত দিয়ে ঠেকান। কিন্তু তবুও হাতে আঘাত লাগে এবং কেটে গিয়ে রক্তাক্ত হয়। পরে চালক ও প্রাইভেটকারে থাকা ব্যক্তিরা নেমে এসে তাদের বেধড়ক মারধর করতে থাকেন।

এ সময় জয়নাল নামের এক পুলিশ সদস্যের নেতৃত্বে অন্য পুলিশ সদস্যরা ছুটে যান। তারা গিয়ে অন্যদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। পরে তারা তিন সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন। পারভেজ, নোমান ও শাকিল সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর আরও করে মারধর করেন পুলিশ সদস্যরা। পরে তাদেরকে পুলিশ বক্সে নিয়ে আরও কয়েক দফা মারধর করা হয়।

আহত শিমুল পারভেজ জানান, মাইক্রোবাস চালক তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে। এরপর সেটির যাত্রীরা নেমেও আরেক দফা মারে। কিন্তু সেই দৃশ্য পুলিশ কাছ থেকে দেখলেও সাহায্যে এগিয়ে না এসে উল্টো আমাদের মারধর করেছে। পরিচয় দেওয়ার পরও তারা দফায় দফায় পুলিশ বক্সে নিয়ে মেরেছে। যা অন্যায় ও ইচ্ছাকৃত বলে আমি মনে করি।

এ ঘটনায় ডিএমপির রমনার ডিসি মাসুদ আলমকে দফায় দফায় ফোন করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনার পর পুলিশ বক্সের দায়িত্বরত কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে ডেকে নেওয়া হয়। পরে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আসেন। সাংবাদিকরা তাদের অপসারণ ও বহিষ্কার দাবি করেছে। তবে তারা আশ্বাস দিয়েছেন অভিযুক্তদের অপসারণ করা হবে।

এদিকে সামাজিক মাধ্যমে এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সাংবাদিক শিমুল পারভেজকে কয়েকজন ধরে মারধর করছে। তাদের মধ্যে একজন গোলাপী রঙের শার্ট পরিহিত ও পরনে কালো প্যান্ট ছিল। পাশে এক বয়স্ক ব্যক্তিও মারধর করছে। এ দৃশ্য দেশে পুলিশ সদস্যরা ছুটে আসেন। তারা কিছু না বুঝে উল্টো আহত নোমানকে বেধড়ক মারধর করে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 06:00:59 pm, Wednesday, 27 August 2025
80 Time View

প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশের মারধরে চার সাংবাদিক আহত

Update Time : 06:00:59 pm, Wednesday, 27 August 2025

 

স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশের মারধরের ঘটনায় তিন সাংবাদিক ও একজন ইউটিউবার আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন নিউ ন্যাশনের শিমুল পারভেজ ও নোমান মোশাররফ, বাংলাভিশনের কেফায়েত শাকিল এবং ইউটিউবার আলম শরীফ। এদের মধ্যে আহত শিমুল ও নোমানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের গেটের পাশে থাকা পুলিশ বক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

আহত কেফায়েত শাকিল জানান, শিমুল পারভেজ ও নোমান প্রেসক্লাব থেকে মোটরসাইকেলে বের হচ্ছিলেন। এ সময় একটি প্রাইভেটকার হালকা ধাক্কা দেয়। তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে শিমুল পারভেজকে এক ব্যক্তি ছুরি দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করেন। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।

শাকিল বলেন, আমি রাস্তার অন্য পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। ঝামেলা শুনে গাড়ির জানালা দিয়ে দেখছি, শিমুল ভাইকে পুলিশ বক্সের দিকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আমি দৌড়ে এগিয়ে যাই, কিন্তু তখন শিমুলকে খুঁজে পাইনি। পরে বক্সের ভেতরে আরও একজনকে মারধর হতে দেখেছি। তখনই মোবাইল বের করে ভিডিও ধারণ করার চেষ্টা করি। কিন্তু মোবাইল দেখার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ আমার ওপর চড়াও হয়।

তিনি বলেন, ৫-৬ জন পুলিশ আমাকে ধরে বক্সের ভেতরে টেনে আনে। তারা মোবাইল নিতে চেয়েছে, ভিডিও ডিলিট করতে বলেছে। আমি বারবার বলেছি, আমি টিভি সাংবাদিক, ভিডিও ধারণ আমার কাজ। তারপরও আমাকে মারধর করা হয়। এ সময় আলম নামে একজন মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিককেও পুলিশ মারধরের চেষ্টা করে। পরে উপস্থিত অন্য সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করলে পুলিশ কিছুটা পিছু হটে।

আহত সাংবাদিকদের হাসপাতালে দেখতে যাওয়া সহকর্মী সাংবাদিক ইয়াসির তন্ময় জানান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সড়ক ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনের দিকে যাওয়ার সময় একটি মাইক্রোবাস সাংবাদিকদের মোটরসাইকেলের সামনে দাঁড়ায়। এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা শিমুল পারভেজ সেই মাইক্রোবাস চালককে গাড়িটা একটু পিছিয়ে নিতে বলেন। কিন্তু গাড়ি না সরিয়ে উল্টো তার গাড়ির ভেতর চালক ও যাত্রীরা তাদের গালাগালি করতে থাকেন। একপর্যায়ে মাইক্রোবাসের চালক গাড়ি থেকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে এসে শিমুলকে আঘাত করার চেষ্টা করলে তিনি তার হাত দিয়ে ঠেকান। কিন্তু তবুও হাতে আঘাত লাগে এবং কেটে গিয়ে রক্তাক্ত হয়। পরে চালক ও প্রাইভেটকারে থাকা ব্যক্তিরা নেমে এসে তাদের বেধড়ক মারধর করতে থাকেন।

এ সময় জয়নাল নামের এক পুলিশ সদস্যের নেতৃত্বে অন্য পুলিশ সদস্যরা ছুটে যান। তারা গিয়ে অন্যদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। পরে তারা তিন সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন। পারভেজ, নোমান ও শাকিল সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর আরও করে মারধর করেন পুলিশ সদস্যরা। পরে তাদেরকে পুলিশ বক্সে নিয়ে আরও কয়েক দফা মারধর করা হয়।

আহত শিমুল পারভেজ জানান, মাইক্রোবাস চালক তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে। এরপর সেটির যাত্রীরা নেমেও আরেক দফা মারে। কিন্তু সেই দৃশ্য পুলিশ কাছ থেকে দেখলেও সাহায্যে এগিয়ে না এসে উল্টো আমাদের মারধর করেছে। পরিচয় দেওয়ার পরও তারা দফায় দফায় পুলিশ বক্সে নিয়ে মেরেছে। যা অন্যায় ও ইচ্ছাকৃত বলে আমি মনে করি।

এ ঘটনায় ডিএমপির রমনার ডিসি মাসুদ আলমকে দফায় দফায় ফোন করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনার পর পুলিশ বক্সের দায়িত্বরত কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে ডেকে নেওয়া হয়। পরে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আসেন। সাংবাদিকরা তাদের অপসারণ ও বহিষ্কার দাবি করেছে। তবে তারা আশ্বাস দিয়েছেন অভিযুক্তদের অপসারণ করা হবে।

এদিকে সামাজিক মাধ্যমে এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সাংবাদিক শিমুল পারভেজকে কয়েকজন ধরে মারধর করছে। তাদের মধ্যে একজন গোলাপী রঙের শার্ট পরিহিত ও পরনে কালো প্যান্ট ছিল। পাশে এক বয়স্ক ব্যক্তিও মারধর করছে। এ দৃশ্য দেশে পুলিশ সদস্যরা ছুটে আসেন। তারা কিছু না বুঝে উল্টো আহত নোমানকে বেধড়ক মারধর করে।