মতিঝিলের ফুতপাত এখন শীর্ষ চাঁদাবাজ ইসমাইল বাহিনীর হাতে জিম্মি.!

স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর প্রায় ফুটপাত-দখল করে চাঁদাবাজরা স্বীকৃত বেপোয়ারা ভাবে ছিল বহাল আর সর্বত্রই ছিল দখল চাঁদাবাজির রাজত্ব। এসব থেকে উঠতো হাজার হাজার কোটি টাকা। আর এসব টাকা ভাগাভাগি হতো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও তাদের পালিত সন্ত্রাসীদের মধ্যে। একটা অংশ যেত পুলিশের পকেটেও। মূলত এ কারণেই ফুটপাত দখল মুক্ত নিয়ে লুকোচুরি খেলেছিল ততকালীন সরকার।
ফুটপাত দখলমুক্ত নিয়ে বিগত ষোলবছরই লুকোচুরি খেলেছে ফ্যাসিস্ট পতিত আওয়ামী লীগ।
বিভিন্ন সময় চালিয়ে ছিল আইওয়াশের অভিযান। এতে দখলমুক্ত তো হয়নি, উল্টো প্রতিনিয়তই সম্প্রসারিত হয়েছিল ফুটপাত দখল। এতে চাঁদাবাজিও ছিল রমরমা। কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই চাঁদা হিসেবে হাতিয়ে নিত কাড়িকাড়ি টাকা। সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাবান ও সচেতন মহল সহ সবাই ভূক্তভোগী হয়েও নির্বীকার। যেন তারা বশিকরণের জালে আটকা অথবা চোখ রাঙানির ভয়ে বোবা।
কিন্তু গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এতে দলটির নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দিয়েছেন। রাজনৈতিক ক্ষমতার পট-পরিবর্তনের পর কিছুটা স্বস্তি দেখা দিলেও দ্রুত সময়ের মধ্যেই সে আশার প্রদীপ নিভিয়ে পুনরায় ফিরে এসেছে নীরব চাঁদাবাজির সেই ভয়াবহ পুরোনো চিত্র। ফুটপাত দখল ও চাঁদাবাজি সেই আগের মতোই চলছে। কোন কোন ক্ষেত্রে আগের চেয়েও বেড়েছে দখল-চাঁদাবাজির আওতা।
প্রশ্ন উঠছে তাহলে চাঁদাবাজির শূন্যস্থান পূরণ করল কারা? তেমনি একটি চিত্র দেখা মিলেছে রাজধানীর মেট্রোরেল থেকে দৈনিক বাংলার মোড় ও মতিঝিল সিটি কর্পোরেশন পার্কে! রাত এগারো টার পরবর্তী সময়ে নিয়মিত নির্ভয়ে চলে রমরমা জুয়ার আসার। এবং সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় নীরবে চলছে চাঁদাবাজি, নিয়মিত ফুটপাত দোকানীদের দিতে হয় ৩০০/৫০০ টাকা চাঁদা।
সূত্রে জানা যায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কুখ্যাত চাঁদাবাজ ইসমাইল মোল্লা ছিলেন একজন পুলিশের সোর্স! তৎকালীন বিএনপি’র মিছিল মিটিং বা কোনো নেতাকর্মী বের হলে অথবা দেখলেই তাদেরকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া যেনো তার ছিল একটা নেশা-এমনই একটি তার ভয়েস রেকর্ড রয়েছে আমাদের হাতে। স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার শাসনামলে এই ইসমাইল মোল্লা বিএনপি’র নেতাকর্মীদের কত বড় শত্রু ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। সেই পুলিশের সোর্স শীর্ষ চাঁদাবাজ ইসমাইল মোল্লা এখন রূপ বদল করে পুনরায় বিএনপি’র নাম ভাঙ্গিয়ে অহরহ চাঁদাবাজি করে বেড়াচ্ছেন এ যেন দেখার কেউ নেই।
গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতার পট-পরিবর্তন হলেও বন্ধ হয়নি চাঁদাবাজি উল্টো চাঁদার হার বেড়েছে চারগুণ! রেহাই মিলেনি হকারদের। প্রকাশ্যে চাাঁদার কথা স্বীকার করতেও ভয় পায় তারা। দিনের শেষ ভাগে বাদ আসর নয়া চাঁদাবাজ ইসমাইল মোল্লার প্রতিনিধিরা গোপনে এই চাঁদা সংগ্রহ করে থাকেন, সাংবাদিক বা সচেতন কোন মানুষের অবস্থান টের পেলেই সরে যায়। এদিকে হকার বা দোকানীরা চাঁদাবাজদের ভয়ে তটস্থ থাকেন। এই নব্য চাঁদাবাজ ইসমাইল মোল্লার বাহিনী হকারদের কে ভয় দেখিয়ে বলে মুখ বন্ধ রাখবি কেউ যেন চাঁদার বিষয়ে টেস না পায়।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন হকার বলেন, একটি বিশেষ দলের পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজ ইসমাইল মোল্লার বাহিনী হকারদের কে ভয় ভিত্তি দেখিয়ে প্রতিদিনই চাঁদাবাজি করেই যাচ্ছে। সাবেক শীর্ষ চাঁদাবাজ শহীদ মোল্লা যিনি চাঁদাবাজির টাকা নিয়ে ভাগাভাগির জেরে প্রতিপক্ষের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তারই ছোট ভাই এই ইসমাইল মোল্লা।
আরও জানা যায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এর মতিঝিল পার্কের অফিসটি দখল করে নিজ অফিস হিসেবে ব্যবহার করছেন ইসমাইল মোল্লা। এই অফিস থেকেই মতিঝিলের ফুটপাত চাঁদাবাজির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। অন্যের মাথায় কাঠাল রেখে চাঁদাবাজির টাকায় আলিশান জীবন লুফে মরিয়া রয়েছে নিরীহের রক্ত চোষায়। পথচারী ভোগান্তিকে রুপ দিচ্ছে চাঁদাবাজি ধান্ধাবাজিতে! ইসমাইল মোল্লার মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি গণমাধ্যমকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
সচেতন মহল বলেন, এ সমস্যার সমাধান করতে হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া যেভাবে আইনী নীতিমালার মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থান ও নিবন্ধনের মাধ্যমে ব্যবসা করার সুযোগ দিয়ে সেসব দেশের সরকার বিপুল রাজস্ব আদায় করছে। একইভাবে আমাদের দেশের হকারদের ব্যবসা করার সুযোগ দিলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেতে পারে। আমাদের দেশে এই সিস্টেম (নিবন্ধন) চালু না থাকায় সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে! আর লাভবান হচ্ছে চাঁদাবাজরা।
জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ফুটপাত দখলের বিরুদ্ধে আমাদের মোবাইল কোর্ট চলমান আছে। আবার উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা হবে, যাতে করে তাদের একটি পেরেশানি তৈরি হয়। পথচারীদের ফুটপাত দখলমুক্ত করা আমাদের অঙ্গীকার, জনস্বার্থেই আমরা ফুটপাত দখলমুক্ত করব।