1:39 am, Tuesday, 9 September 2025

নিউ মার্কেট এলাকায় স্বামী-স্ত্রী যৌথ দখল-চাঁদাবাজিতে দিশাহারা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা

picsart 25 07 31 13 04 54 769

 

বিশেষ প্রতিবেদক:
রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় মহিলা লীগের নেত্রী লুনা ও তার স্বামী শীর্ষ সন্ত্রাসী মকবুল এ-র যৌথ দখল-চাঁদাবাজিতে দিশাহারা নিউ মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীরা। এই স্বামী-স্ত্রী জুটির কাছে জিম্মি নিউ মার্কেটের হাজার হাজার ব্যবসায়ী। দোকান দখল, চাঁদা দিতে বাধ্য করা, কথা না শুনলে করা হয় মারধর—এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে এই জুটির বিরুদ্ধে। তাদের যৌথ চাঁদাবাজি ও দখলদারিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, বিগত ষোলবছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ক্ষমতার অপব্যবহার করে গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত নিউ মার্কেট ও তার আশপাশের এলাকায় একচ্ছত্র চাঁদবাজি করেছেন আওয়ামী লীগ নেত্রী জান্নাত জাহান চামেলি ওরফে লুনা হোসেন।

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এখন এসব এলাকা থেকে চাঁদা আদায় করছেন তার স্বামী নিউ মার্কেট এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী মকবুল হোসেন। তাদের ভয়ে এখন মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয়, ব্যবসায়ী নেতারাও তাদের ভয়ে তটস্থ। মকবুল চাঁদাবাজি করার ক্ষেত্রে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন বিদেশে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের। তবে ইমন এ চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই এবং ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজনৈতিক আধিপত্য ও পেশি শক্তি ব্যবহার করে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার শাসনামলে নিউ মার্কেট এলাকার ত্রাস ছিলেন যুব মহিলা লীগ নেত্রী লুনা। তিনি ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা (বর্তমানে কারাবন্দি) আমির হোসেন আমুকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতেন। তিনি নিউ মার্কেটের সমবায় শিল্প সমিতির মালিকানাধীন কমপক্ষে ৯টি দোকান দখলে রেখেছিলেন। এছাড়াও লুনা জাল চুক্তিনামা করে ২০১৪ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন ২৬১ ও ২৬২ (কিছু অংশ) নম্বর দোকান দখলে নেন। দোকানগুলো ফিরিয়ে দিতে সমবায় অধিদপ্তর ও আদালতের নির্দেশনা থাকলেও তা মানেননি লুনা। এছাড়া তার কথার অবাধ্য হলেই মারধর করা হতো ব্যবসায়ীদের।

লুনার মারধরের শিকার ব্যবসায়ী বিপ্লব কুমার দাস বলেন, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে আমাকে মারধর করে দোকান দখল নিয়ে নেয় লুনা। সিআইডি ঘটনার প্রমাণ পেয়ে আমাদের পক্ষে রিপোর্ট দিয়েছিল। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয় আমাদের দোকান বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সিটি করপোরশেনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগাসাজশে ওই দোকান আর বুঝিয়ে দেয়নি। এখন তো আর দোকান ফিরে পাওয়ার আশাই নেই। কারণ দোকানের বাকি অংশগুলো এখন দখলে নিয়েছেন লুনার স্বামী মকবুল।

গণঅভ্যুত্থানের পর লুনার স্বামী মকবুল ফ্যাসিবাদের সময়ের চাঁদাবাজ, একাধিক হত্যা মামলার আসামি, পলাতক নেতাদের বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে পুনর্বাসন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বিপ্লব সরকারের মালিকানাধীন ৫ আগস্টের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া ইসলামিয়া মার্কেটের ১২টি দোকান খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন আওয়ামী লীগ নেত্রী লুনার স্বামী মকবুল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এসব দোকান খোলার জন্য লুনা কয়েক কোটি টাকা নিয়েছেন।

নিউ মার্কেটের প্রায় ৭০ জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হত্যা মামলার আসামি বিপ্লব নীলক্ষেত ইসলামিয়া মার্কেটের দোকানগুলো থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশি মালামাল ও অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কিছু ব্যবসায়ী সমিতির কাছে তাদের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তুলে ধরে তা উদ্ধারের জন্য আবেদন করেন। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী ও সমিতির সমন্বয়ে বিপ্লবের ১২ দোকান বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু লুনা তার স্বামীর সহায়তায় বিপ্লবের সব দোকান খুলে দেয় ব্যবসায়ীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার শর্তে। কিন্তু দোকান খুলে দেওয়ার পরপরই কেউ অর্থ ফেরত চাইলে মকবুল হোসেন ব্যবসায়ীদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। কয়েকজনকে সামান্য কিছু টাকা দেওয়া হলেও বাকিদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। কখনো কখনো বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের কথা বলে ব্যবসায়ীদের মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই মকবুল। ফলে ব্যবসায়ীরা ভয়ে চুপ হয়ে আছেন।

ডলিফিন বুকস হাউসের স্বত্বাধিকারী রাফি বলেন, বিপ্লব সরকার আওয়ামী লীগ সরকার শাসনমলে ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ হিসাবে আড়াই লাখ টাকা নিয়ে আর ফেরত দেয়নি। এরপর বিভিন্ন সময় তার স্টাফদের দিয়ে বই, নগদ টাকা নিয়ে গেছে। এখন আমরা তা চাইতে গেলে মকবুল হোসেন ৫০ হাজার টাকা অফার করে বলেন, এটাই পাবা, নিলে নাও না নিলে যাও। এরপর আমরা সেনাবাহিনী ও পুলিশের কাছেও যাই। তাতে হুমকি-ধমকি ছাড়া কিছু পাইনি।

ব্যবসায়ীরা জানান, তারা সায়েন্সল্যাব এলাকার সেনাবাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডারের কাছে বিপ্লব, মকবুল ও লুনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল মেলেনি।

শীর্ষ সন্ত্রাসী মকবুল বাহিনীর বেপরোয় চাঁদাবাজি;

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নিউ মার্কেট এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী মকবুল ও তার বাহিনী চাঁদাবাজিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ওই এলাকাসহ বিভিন্ন মার্কেটের দোকান দখল, চাঁদাবাজি, অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মার্কেটে পুনর্বাসন এবং বিদ্যুৎ বিলের নামে চাদাঁবাজিসহ বিভিন্ন অজুহাতে হাজার হাজার ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে রেখেছে তার বাহিনী।

ব্যবসায়ীরা জানান, শুধু নিউ মার্কেটের ফুটপাত থেকেই দিনে কমপক্ষে ছয় লাখ টাকা চাঁদা তোলেন মকবুল। এজন্য তিনি চাঁদা তোলা বাহিনীও গড়ে তুলেছেন। মার্কেটের অভ্যন্তরেই ফুটপাতে প্রায় ৫০০ দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকান থেকে কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই বিদ্যুৎ বিল হিসেবে দুই হাজার ৫০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। এছাড়াও নিউ মার্কেটের ফুটপাতে পার্কিংয়ের জন্য প্রতিটি গাড়ি বাবদ ২০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। এসব চাঁদার রসিদে সিটি করপোরেশনের লোগো থাকলেও সেখানে তা জমা হয় না। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, চলাচলের রাস্তায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কাউকে পার্কিং ফি আদায়ের জন্য নিয়োজিত করা হয়নি। এমনকি ফি আদায়ের জন্য বরাদ্দও দেওয়া হয় না।

অভিযোগ রয়েছে, নিউ মার্কেটের অভ্যন্তরে ফুটপাতের ১৫০টি দোকান দখলে নিয়ে ভাড়া দিয়েছে মকবুল বাহিনী। প্রতিটি দোকানের মাসিক ভাড়া ২০ হাজার এবং অগ্রিম হিসাবে নেওয়া হয়েছে তিন লাখ টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন হকার জানান, পুরো নিউ মার্কেট এলাকায় ফুটপাতে ৮০০ থেকে ৮৫০ জন হকার রয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের কাছে থেকে মাসে ভাড়া বাবদ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা তুলে নিচ্ছে মকবুলের লোকজন। এ অর্থ কোথায় যায় এবং কী হয়, তা তারা জানেন না।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিউ মার্কেটে মূল দোকান রয়েছে ৪২৬টি। এসব দোকানের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিলের জন্য প্রতি মাসে আট হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা করে তোলা হয়। অর্থাৎ ফুটপাত ও মূল দোকান থেকে ৬০ লাখ টাকার মতো টাকা তোলে মকবুলের লোকজন। কিন্তু প্রকৃত বিদ্যুৎ বিল এত বেশি নয়, ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার মতো হতে পারে। এভাবে বাকি অর্থ মকবুল বাহিনী লুটে নিচ্ছে।

কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, তারা ধাপে ধাপে এত চাঁদা দিতে গিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। কয়েকজন প্রতিবাদ করলেও ওই সব ব্যবসায়ীর কাছে শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল হক ইমনের নামে কল আসে। ফলে ভয়ে কেউ আর মুখ খোলেন না। মকবুলের চাঁদা তোলা বাহিনীর প্রধান সহযোগী হিসেবে রয়েছে জাহাঙ্গীর মিঠু। এই বাহিনীর সদস্য ৭০ থেকে ৮০ জন। এদের বিভিন্নজন বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদা আদায় করে। নিউ মার্কেট ও চারপাশের এলাকায় আলমগীরের নেতৃত্বে চলে চাঁদাবাজি ও দখলবাজি। লালবাগ এবং নিউ মার্কেট এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে যুবলীগকর্মী জসিম। এছাড়া চাঁদা তোলা বাহিনীর উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলো—যুবলীগকর্মী মাসুদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগকর্মী মন্টি রহমান, ইউসুফ বাবুর্চি, লিটন ওরফে সিটন (বই মার্কেট নীলক্ষেত), রাজু (নীলক্ষেত বাবুপুরা), সোহাগ (গাউছিয়া মার্কেট এলাকার হকার), আওয়ামী লীগকর্মী স্বপন (জিলানী সুপার মার্কেট, নীলক্ষেত), সুমন ওরফে চায়না সুমন, আওয়ামী লীগ নেতা এনাম খান, খোকন ওরফে কালে খাঁ, পিন্টু (মাদক ব্যবসায়ী), কেএম চঞ্চল এবং তার নেতৃত্বে ২০ থেকে ৩০ জন, কাজীবাড়ির সুজন, কাঁটাবন এলাকার সোহেল রানা, সুনিয়াদ আহমেদ সুমন প্রমুখ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই চাঁদার ভাগ মকবুল পৌঁছে দেন আন্ডার কাউন্টে থাকা উপর মহলের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে। মূলত মকবুল তাদেরই সহযোগিতায় এবং চেন অফ কমান্ডে তার এই সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করেন।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির অফিস দখল করে নেন মকবুল। এরপর নিজেকে ঘোষণা করেন সমিতির আহ্বায়ক। সম্প্রতি কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশনের দুটি দোকান ঢাকা দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তাদের সহায়তায় নকল দলিল তৈরি করে বিক্রি করে দিয়েছেন।

ডিএসসিসির কাছে নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতি অভিযোগ করেন, নিউ মার্কেটে দখল ও চাঁদাবাজির সার্বিক বিষয় তুলে ধরে সমিতির সভাপতি লিপিকা দাসগুপ্তা চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল মকবুলের বিরুদ্ধে চিঠি দেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। লিপিকা ডিএসসিসি কাছে আবেদনে উল্লেখ করেন, যুব মহিলা লীগ নেত্রীর পক্ষে যা কিছু অবৈধ দখলে নেওয়া বাকি ছিল, জুলাই বিপ্লবের পর তার স্বামী মকবুল গত বছরের ৯ আগস্ট সমবায় শিল্প সমিতির ভাড়াটে শাহ আলমকে মারধর করে দোকান নম্বর ২৬২ ও ২৬৩ মালামালসহ দখল করে নেন। এ বিষয়ে শাহ আলম বলেন, আমাকে মারধর করে দোকানগুলো মকবুল দখল করে নিয়েছেন। এ বিষয় নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরশেনে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করেন ভুক্তভোগীরা। এ সময় তাদের দোকান উদ্ধার করে দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সিটি করপোরশেন এরপর আর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, লিপিকা ব্যবাসীয়দের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় কথা বলতে যাওয়ার কারণে তাকে নানা ধরনের হুমকি দেন মকবুল। দখলে নিয়ে নেন নিউ মার্কেট মালিক সমিতির অফিস। এরপর সমিতির মতিঝিলের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। লিপিকাকে সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করার হুমকিও দেওয়া হয়।

এতসব অভিযোগের বিষয়ে মকবুলের কাছে জানতে চাওয়া হলে চাঁদাবাজির বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। উল্টো তিনি বলেন, কেউ যদি চাদাঁবাজি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দোকান দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। যুবলীগ ও স্বোচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের দিয়ে চাঁদাবাজি করাচ্ছেন তিনি—এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে মকবুল বলেন, আমাকে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে চলতে হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা বিপ্লব সরকারের সঙ্গে তার যোগসাজশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তাকে চেনেন না বলে দাবি করেন।

মাঝেমধ্যে যে শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের নাম ব্যবহার করেন মকবুল, তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মকবুলের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই। আমি শুনেছি মকবুল আমার নামে চাঁদাবাজি করছে। কিন্তু এসবের সঙ্গে আমি জড়িত নই। মকবুলকে আইনের আওতায় আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

 

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 07:07:51 am, Thursday, 31 July 2025
162 Time View

নিউ মার্কেট এলাকায় স্বামী-স্ত্রী যৌথ দখল-চাঁদাবাজিতে দিশাহারা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা

Update Time : 07:07:51 am, Thursday, 31 July 2025

 

বিশেষ প্রতিবেদক:
রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় মহিলা লীগের নেত্রী লুনা ও তার স্বামী শীর্ষ সন্ত্রাসী মকবুল এ-র যৌথ দখল-চাঁদাবাজিতে দিশাহারা নিউ মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীরা। এই স্বামী-স্ত্রী জুটির কাছে জিম্মি নিউ মার্কেটের হাজার হাজার ব্যবসায়ী। দোকান দখল, চাঁদা দিতে বাধ্য করা, কথা না শুনলে করা হয় মারধর—এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে এই জুটির বিরুদ্ধে। তাদের যৌথ চাঁদাবাজি ও দখলদারিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, বিগত ষোলবছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ক্ষমতার অপব্যবহার করে গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত নিউ মার্কেট ও তার আশপাশের এলাকায় একচ্ছত্র চাঁদবাজি করেছেন আওয়ামী লীগ নেত্রী জান্নাত জাহান চামেলি ওরফে লুনা হোসেন।

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এখন এসব এলাকা থেকে চাঁদা আদায় করছেন তার স্বামী নিউ মার্কেট এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী মকবুল হোসেন। তাদের ভয়ে এখন মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয়, ব্যবসায়ী নেতারাও তাদের ভয়ে তটস্থ। মকবুল চাঁদাবাজি করার ক্ষেত্রে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন বিদেশে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের। তবে ইমন এ চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই এবং ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজনৈতিক আধিপত্য ও পেশি শক্তি ব্যবহার করে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার শাসনামলে নিউ মার্কেট এলাকার ত্রাস ছিলেন যুব মহিলা লীগ নেত্রী লুনা। তিনি ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা (বর্তমানে কারাবন্দি) আমির হোসেন আমুকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতেন। তিনি নিউ মার্কেটের সমবায় শিল্প সমিতির মালিকানাধীন কমপক্ষে ৯টি দোকান দখলে রেখেছিলেন। এছাড়াও লুনা জাল চুক্তিনামা করে ২০১৪ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন ২৬১ ও ২৬২ (কিছু অংশ) নম্বর দোকান দখলে নেন। দোকানগুলো ফিরিয়ে দিতে সমবায় অধিদপ্তর ও আদালতের নির্দেশনা থাকলেও তা মানেননি লুনা। এছাড়া তার কথার অবাধ্য হলেই মারধর করা হতো ব্যবসায়ীদের।

লুনার মারধরের শিকার ব্যবসায়ী বিপ্লব কুমার দাস বলেন, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে আমাকে মারধর করে দোকান দখল নিয়ে নেয় লুনা। সিআইডি ঘটনার প্রমাণ পেয়ে আমাদের পক্ষে রিপোর্ট দিয়েছিল। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয় আমাদের দোকান বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সিটি করপোরশেনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগাসাজশে ওই দোকান আর বুঝিয়ে দেয়নি। এখন তো আর দোকান ফিরে পাওয়ার আশাই নেই। কারণ দোকানের বাকি অংশগুলো এখন দখলে নিয়েছেন লুনার স্বামী মকবুল।

গণঅভ্যুত্থানের পর লুনার স্বামী মকবুল ফ্যাসিবাদের সময়ের চাঁদাবাজ, একাধিক হত্যা মামলার আসামি, পলাতক নেতাদের বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে পুনর্বাসন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বিপ্লব সরকারের মালিকানাধীন ৫ আগস্টের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া ইসলামিয়া মার্কেটের ১২টি দোকান খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন আওয়ামী লীগ নেত্রী লুনার স্বামী মকবুল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এসব দোকান খোলার জন্য লুনা কয়েক কোটি টাকা নিয়েছেন।

নিউ মার্কেটের প্রায় ৭০ জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হত্যা মামলার আসামি বিপ্লব নীলক্ষেত ইসলামিয়া মার্কেটের দোকানগুলো থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশি মালামাল ও অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কিছু ব্যবসায়ী সমিতির কাছে তাদের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তুলে ধরে তা উদ্ধারের জন্য আবেদন করেন। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী ও সমিতির সমন্বয়ে বিপ্লবের ১২ দোকান বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু লুনা তার স্বামীর সহায়তায় বিপ্লবের সব দোকান খুলে দেয় ব্যবসায়ীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার শর্তে। কিন্তু দোকান খুলে দেওয়ার পরপরই কেউ অর্থ ফেরত চাইলে মকবুল হোসেন ব্যবসায়ীদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। কয়েকজনকে সামান্য কিছু টাকা দেওয়া হলেও বাকিদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। কখনো কখনো বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের কথা বলে ব্যবসায়ীদের মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই মকবুল। ফলে ব্যবসায়ীরা ভয়ে চুপ হয়ে আছেন।

ডলিফিন বুকস হাউসের স্বত্বাধিকারী রাফি বলেন, বিপ্লব সরকার আওয়ামী লীগ সরকার শাসনমলে ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ হিসাবে আড়াই লাখ টাকা নিয়ে আর ফেরত দেয়নি। এরপর বিভিন্ন সময় তার স্টাফদের দিয়ে বই, নগদ টাকা নিয়ে গেছে। এখন আমরা তা চাইতে গেলে মকবুল হোসেন ৫০ হাজার টাকা অফার করে বলেন, এটাই পাবা, নিলে নাও না নিলে যাও। এরপর আমরা সেনাবাহিনী ও পুলিশের কাছেও যাই। তাতে হুমকি-ধমকি ছাড়া কিছু পাইনি।

ব্যবসায়ীরা জানান, তারা সায়েন্সল্যাব এলাকার সেনাবাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডারের কাছে বিপ্লব, মকবুল ও লুনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল মেলেনি।

শীর্ষ সন্ত্রাসী মকবুল বাহিনীর বেপরোয় চাঁদাবাজি;

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নিউ মার্কেট এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী মকবুল ও তার বাহিনী চাঁদাবাজিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ওই এলাকাসহ বিভিন্ন মার্কেটের দোকান দখল, চাঁদাবাজি, অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মার্কেটে পুনর্বাসন এবং বিদ্যুৎ বিলের নামে চাদাঁবাজিসহ বিভিন্ন অজুহাতে হাজার হাজার ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে রেখেছে তার বাহিনী।

ব্যবসায়ীরা জানান, শুধু নিউ মার্কেটের ফুটপাত থেকেই দিনে কমপক্ষে ছয় লাখ টাকা চাঁদা তোলেন মকবুল। এজন্য তিনি চাঁদা তোলা বাহিনীও গড়ে তুলেছেন। মার্কেটের অভ্যন্তরেই ফুটপাতে প্রায় ৫০০ দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকান থেকে কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই বিদ্যুৎ বিল হিসেবে দুই হাজার ৫০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। এছাড়াও নিউ মার্কেটের ফুটপাতে পার্কিংয়ের জন্য প্রতিটি গাড়ি বাবদ ২০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। এসব চাঁদার রসিদে সিটি করপোরেশনের লোগো থাকলেও সেখানে তা জমা হয় না। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, চলাচলের রাস্তায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কাউকে পার্কিং ফি আদায়ের জন্য নিয়োজিত করা হয়নি। এমনকি ফি আদায়ের জন্য বরাদ্দও দেওয়া হয় না।

অভিযোগ রয়েছে, নিউ মার্কেটের অভ্যন্তরে ফুটপাতের ১৫০টি দোকান দখলে নিয়ে ভাড়া দিয়েছে মকবুল বাহিনী। প্রতিটি দোকানের মাসিক ভাড়া ২০ হাজার এবং অগ্রিম হিসাবে নেওয়া হয়েছে তিন লাখ টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন হকার জানান, পুরো নিউ মার্কেট এলাকায় ফুটপাতে ৮০০ থেকে ৮৫০ জন হকার রয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের কাছে থেকে মাসে ভাড়া বাবদ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা তুলে নিচ্ছে মকবুলের লোকজন। এ অর্থ কোথায় যায় এবং কী হয়, তা তারা জানেন না।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিউ মার্কেটে মূল দোকান রয়েছে ৪২৬টি। এসব দোকানের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিলের জন্য প্রতি মাসে আট হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা করে তোলা হয়। অর্থাৎ ফুটপাত ও মূল দোকান থেকে ৬০ লাখ টাকার মতো টাকা তোলে মকবুলের লোকজন। কিন্তু প্রকৃত বিদ্যুৎ বিল এত বেশি নয়, ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার মতো হতে পারে। এভাবে বাকি অর্থ মকবুল বাহিনী লুটে নিচ্ছে।

কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, তারা ধাপে ধাপে এত চাঁদা দিতে গিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। কয়েকজন প্রতিবাদ করলেও ওই সব ব্যবসায়ীর কাছে শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল হক ইমনের নামে কল আসে। ফলে ভয়ে কেউ আর মুখ খোলেন না। মকবুলের চাঁদা তোলা বাহিনীর প্রধান সহযোগী হিসেবে রয়েছে জাহাঙ্গীর মিঠু। এই বাহিনীর সদস্য ৭০ থেকে ৮০ জন। এদের বিভিন্নজন বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদা আদায় করে। নিউ মার্কেট ও চারপাশের এলাকায় আলমগীরের নেতৃত্বে চলে চাঁদাবাজি ও দখলবাজি। লালবাগ এবং নিউ মার্কেট এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে যুবলীগকর্মী জসিম। এছাড়া চাঁদা তোলা বাহিনীর উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলো—যুবলীগকর্মী মাসুদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগকর্মী মন্টি রহমান, ইউসুফ বাবুর্চি, লিটন ওরফে সিটন (বই মার্কেট নীলক্ষেত), রাজু (নীলক্ষেত বাবুপুরা), সোহাগ (গাউছিয়া মার্কেট এলাকার হকার), আওয়ামী লীগকর্মী স্বপন (জিলানী সুপার মার্কেট, নীলক্ষেত), সুমন ওরফে চায়না সুমন, আওয়ামী লীগ নেতা এনাম খান, খোকন ওরফে কালে খাঁ, পিন্টু (মাদক ব্যবসায়ী), কেএম চঞ্চল এবং তার নেতৃত্বে ২০ থেকে ৩০ জন, কাজীবাড়ির সুজন, কাঁটাবন এলাকার সোহেল রানা, সুনিয়াদ আহমেদ সুমন প্রমুখ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই চাঁদার ভাগ মকবুল পৌঁছে দেন আন্ডার কাউন্টে থাকা উপর মহলের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে। মূলত মকবুল তাদেরই সহযোগিতায় এবং চেন অফ কমান্ডে তার এই সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করেন।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির অফিস দখল করে নেন মকবুল। এরপর নিজেকে ঘোষণা করেন সমিতির আহ্বায়ক। সম্প্রতি কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশনের দুটি দোকান ঢাকা দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তাদের সহায়তায় নকল দলিল তৈরি করে বিক্রি করে দিয়েছেন।

ডিএসসিসির কাছে নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতি অভিযোগ করেন, নিউ মার্কেটে দখল ও চাঁদাবাজির সার্বিক বিষয় তুলে ধরে সমিতির সভাপতি লিপিকা দাসগুপ্তা চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল মকবুলের বিরুদ্ধে চিঠি দেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। লিপিকা ডিএসসিসি কাছে আবেদনে উল্লেখ করেন, যুব মহিলা লীগ নেত্রীর পক্ষে যা কিছু অবৈধ দখলে নেওয়া বাকি ছিল, জুলাই বিপ্লবের পর তার স্বামী মকবুল গত বছরের ৯ আগস্ট সমবায় শিল্প সমিতির ভাড়াটে শাহ আলমকে মারধর করে দোকান নম্বর ২৬২ ও ২৬৩ মালামালসহ দখল করে নেন। এ বিষয়ে শাহ আলম বলেন, আমাকে মারধর করে দোকানগুলো মকবুল দখল করে নিয়েছেন। এ বিষয় নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরশেনে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করেন ভুক্তভোগীরা। এ সময় তাদের দোকান উদ্ধার করে দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সিটি করপোরশেন এরপর আর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, লিপিকা ব্যবাসীয়দের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় কথা বলতে যাওয়ার কারণে তাকে নানা ধরনের হুমকি দেন মকবুল। দখলে নিয়ে নেন নিউ মার্কেট মালিক সমিতির অফিস। এরপর সমিতির মতিঝিলের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। লিপিকাকে সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করার হুমকিও দেওয়া হয়।

এতসব অভিযোগের বিষয়ে মকবুলের কাছে জানতে চাওয়া হলে চাঁদাবাজির বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। উল্টো তিনি বলেন, কেউ যদি চাদাঁবাজি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দোকান দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। যুবলীগ ও স্বোচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের দিয়ে চাঁদাবাজি করাচ্ছেন তিনি—এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে মকবুল বলেন, আমাকে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে চলতে হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা বিপ্লব সরকারের সঙ্গে তার যোগসাজশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তাকে চেনেন না বলে দাবি করেন।

মাঝেমধ্যে যে শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের নাম ব্যবহার করেন মকবুল, তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মকবুলের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই। আমি শুনেছি মকবুল আমার নামে চাঁদাবাজি করছে। কিন্তু এসবের সঙ্গে আমি জড়িত নই। মকবুলকে আইনের আওতায় আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।