1:42 am, Tuesday, 9 September 2025

দুদকের জালে সওজ প্রকৌশলী শামছ্উদ্দিন

img 20250710 wa0018

এম রাসেল সরকার:
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ডেভেলপমেন্ট এন্ড ডেপুটেশন) এবং ‘ময়মনসিংহে কেওয়াটখালী সেতু নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) জনাব এ,কে, শামছ্উদ্দিন আহাম্মদ (নান্নু)-এর বিরুদ্ধে সম্প্রতি গুরুতর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্বল্প বেতনের সরকারি চাকরিজীবী হয়েও তিনি ও তার পরিবারের নামে নামে-বেনামে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন এবং বিদেশে অর্থপাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

একনেকের নকশা পরিবর্তন থেকে অর্থ আত্মসাৎ সহ প্রকৌশলী শামছ্উদ্দিন আহাম্মদের বিরুদ্ধে যেসব সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ‘ময়মনসিংহে কেওয়াটখালী সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণের কোটি কোটি টাকা আত্মসাত।

এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তবে, তিনি একটি সিন্ডিকেটকে কাজে লাগিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।

পরবর্তীতে মহামান্য আদালতে রিট দায়ের করা হলে আদালত প্রকল্পের অনুমোদিত নকশার বাইরে সকল কাজ বন্ধের আদেশ দেন। মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে বেশ পুরনো। ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি একটি শক্তিশালী ঠিকাদার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে, যার মাধ্যমে তিনি প্রকল্পের কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন। কাজের গুণগত মান খারাপ হওয়া সত্ত্বেও ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে, যা তার দায়িত্বে অবহেলার স্পষ্ট ইঙ্গিত।

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচার: স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজনদের নামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং বিদেশে অর্থপাচারের গুরুত্বর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষাপটে অনুসন্ধান চালাইতে মানবকণ্ঠ। বেড়িয়ে আসে থলের ভেতর কালো বিড়াল। এ,কে, শামছ্উদ্দিন আহাম্মদ নান্নুর বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য ও প্রাথমিক প্রমান পাওয়া যায়, যা তার স্বল্প বেতনের সরকারি চাকরির আয়ের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ঢাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট: ধানমন্ডির ৫ নং সড়কে ৩৪/বি (ওরিয়েন্টাল হারমনি) হোল্ডিংয়ের ২য় তলায় ২৬০০ স্কয়ার ফিটের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। ধানমন্ডির ৯/এ সড়কের ৪৪/৪ নং হোল্ডিংয়ের ২য় তলায় একটি ফ্ল্যাট এবং পশ্চিম ধানমন্ডির (মধুবাজার) ১২/এ নং সড়কে ১১৬ (ওরিয়েন্টাল সাগরিকা) হোল্ডিংয়ে ২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট।

পেশায় গৃহিণী স্ত্রীর নামে বাড়ি ও ফ্ল্যাট: ঢাকার চন্দ্রিমা উদ্যানে তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর- 261342109815)-এর নামে একটি দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। মোহাম্মদপুর আদাবরের মনসুরাবাদ বি ব্লকের ৪নং সড়কে “ওরিয়েন্টাল ডি’মনোয়ারা” নামে একটি ছয়তলা বাড়ি। ঢাকা পেরিয়ে বরিশাল সদরের নিউ সার্কুলার রোডে ৪৯৩ নং হোল্ডিংয়ে ৫৪ শতক জায়গার উপর দোতলা বাড়ি ‘নেহার ভবন’। এই বাড়িটি তিনি ৫-৭ বছর পূর্বে তৈরি করেছেন। স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, তার পিতা আশ্রাব আলী সিকদার ১৯৬৫ সালে ৬০ হাজার টাকায় এই জমিটি ক্রয় করেছিলেন, যখন তার মাসিক আয় ছিল ৩০০-৪০০ টাকা। স্থানীয়রা বলেন
পরিবারটি পুরনো দুর্নীতিবাজ। শামছ উদ্দিন আহমেদ নান্নুর ভান্ডারে রয়েছে বিলাসবহুল গাড়ির সম্ভার, এতে স্ত্রীর নামে একটি দামি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৭-৬৭২৬, রেজিস্ট্রেশনের তারিখ: ২১-০৯-২০১৪) রয়েছে। ঢাকা, বরিশাল, সাভার, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।

পারিবারিক প্রেক্ষাপট ও জীবনযাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতীতে শামছ্উদ্দিন আহাম্মদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। কিন্তু ১৯৯৯ সালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদানের কয়েক বছরের মধ্যেই তার এবং তার আত্মীয়-স্বজনের সম্পদের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। এ যেন শামছ উদ্দিনের হাতে অলৌকিক আলাদিনের চেরাগ।

নিজ বেতন ভাতার চেয়ে বেশি অংকের টাকা খরচ করে সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ায় আত্নীয় স্বজনের চোখে পড়ে যায় শামছ উদ্দিন। তার বড় মেয়ে তাসনিম আহমেদ তাহসিন উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় রয়েছেন, এত তিনি খরচ করেছেন প্রায় এক কোটি টাকা। এবং ছোট মেয়ে তারান্নুম আহমেদ নওশিন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে সিএসই করছেন, যার জন্য প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা বেতন গুনতে হয়। তিনি এবং তার পরিবার বছরে একাধিকবার সিঙ্গাপুর-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে বিলাসী ভ্রমণ করে থাকেন। এই বিলাসী জীবনের ব্যয়ভার সওজের প্রকল্পের দুর্নীতির মাধ্যমেই আসে বলে অভিযোগ। বিভিন্ন সূত্রে জানাযায় তার ছোট বোন ফজিলত আহমেদ মুন্নি প্রাইম ব্যাংকে চাকরি করার সুবাদে খুব গোপনে ভাই শামছ উদ্দিনের অবৈধ টাকাগুলো এফডিআর করে রাখেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছেন সামছ উদ্দিনের অস্বাভাবিক আর্থিক লেনদেনের উপর কড়া নজরদারি রাখছে বিএফআইইউ।

আমেরিকায় থাকা বড় মেয়ে ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের কাছে অর্থ পাচার   ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার এলাকাবাসী ও বাড়ির কেয়ারটেকারদের মন্তব্য অনুযায়ী, শামছ্উদ্দিন আহাম্মদের শত শত কোটি টাকার মালিক। সরেজমিন অনুসন্ধানে কেয়ারটেকার আব্দুল করিম বলে উঠেন “নান্নু স্যারের কোটি কোটি টাকা, মোহাম্মদপুরে স্যারের বাড়ি ও একাধিক ফ্ল্যাট আছে।” কেয়ারটেকার সোলাইমান ও মোক্তারও মোহাম্মদপুরে তার দুটি বাড়ি এবং ধানমন্ডিতে একাধিক ফ্ল্যাটের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কর্মজীবনের পূর্ববর্তী অভিযোগ ও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ,কে, শামছ্উদ্দিন আহাম্মদের বিরুদ্ধে  ২০০৫ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০০৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঝালকাঠি সওজে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী থাকাবস্থায় তার বিরুদ্ধে দুদকে দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়েছিল। পরবর্তীতে তিনি কোটি টাকার বিনিময়ে সেই অভিযোগ ধামাচাপা দিতে সক্ষম হন বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়।
কট্টর আওয়ামী পন্থী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ,কে, শামছ্উদ্দিন আহাম্মদের স্বল্প বেতনের সরকারি চাকরি থেকে এমন বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়, যা সুস্পষ্টভাবে দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়। দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার স্বার্থে এবং জনগণের অর্থের অপচয় রোধে এ ধরনের দুর্নীতির দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এ.কে. শামছ্উদ্দিন আহাম্মদের এই অপকর্মের ফলে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে। এই অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে, তা দেশের দুর্নীতি দমনে সরকারের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।

এই বিষয়ে সওজ প্রকৌশলী (প্রশাসন) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যম  কে জানান “দুর্নীতিবাজ যেই হোক তারা দেশের শত্রু, আমারা বিভিন্ন মারেফতে অভিযোগটি পেয়েছি, এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থা নেওয়া হবে”

শামছউদ্দিন আহমেদ নান্নুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে গত বুধবার একটি লিখিত অভিযোগ দেয় মোতালেব হোসেন নামক এক ঠিকাদার। দুদক সূত্র জানায় তার বিষয়ে এর আগেও একাধিকবার অভিযোগ এসেছে, সওজ প্রকৌশলী শামছউদ্দিন আহমেদ নান্নুর বিষয়ে প্রাপ্ত অভিযো আমলে নিয়ে খুব দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে সওজ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শামছউদ্দিন আহমেদ নান্নুর বক্তব্য নেওয়ার জন্য তাকে একাধিকবার কল ও খুদেবার্তা পাঠানো হলেও তিনি ফোন ধড়েননি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 08:48:05 am, Thursday, 10 July 2025
229 Time View

দুদকের জালে সওজ প্রকৌশলী শামছ্উদ্দিন

Update Time : 08:48:05 am, Thursday, 10 July 2025

এম রাসেল সরকার:
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ডেভেলপমেন্ট এন্ড ডেপুটেশন) এবং ‘ময়মনসিংহে কেওয়াটখালী সেতু নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) জনাব এ,কে, শামছ্উদ্দিন আহাম্মদ (নান্নু)-এর বিরুদ্ধে সম্প্রতি গুরুতর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্বল্প বেতনের সরকারি চাকরিজীবী হয়েও তিনি ও তার পরিবারের নামে নামে-বেনামে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন এবং বিদেশে অর্থপাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

একনেকের নকশা পরিবর্তন থেকে অর্থ আত্মসাৎ সহ প্রকৌশলী শামছ্উদ্দিন আহাম্মদের বিরুদ্ধে যেসব সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ‘ময়মনসিংহে কেওয়াটখালী সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণের কোটি কোটি টাকা আত্মসাত।

এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তবে, তিনি একটি সিন্ডিকেটকে কাজে লাগিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।

পরবর্তীতে মহামান্য আদালতে রিট দায়ের করা হলে আদালত প্রকল্পের অনুমোদিত নকশার বাইরে সকল কাজ বন্ধের আদেশ দেন। মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে বেশ পুরনো। ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি একটি শক্তিশালী ঠিকাদার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে, যার মাধ্যমে তিনি প্রকল্পের কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন। কাজের গুণগত মান খারাপ হওয়া সত্ত্বেও ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে, যা তার দায়িত্বে অবহেলার স্পষ্ট ইঙ্গিত।

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচার: স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজনদের নামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং বিদেশে অর্থপাচারের গুরুত্বর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষাপটে অনুসন্ধান চালাইতে মানবকণ্ঠ। বেড়িয়ে আসে থলের ভেতর কালো বিড়াল। এ,কে, শামছ্উদ্দিন আহাম্মদ নান্নুর বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য ও প্রাথমিক প্রমান পাওয়া যায়, যা তার স্বল্প বেতনের সরকারি চাকরির আয়ের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ঢাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট: ধানমন্ডির ৫ নং সড়কে ৩৪/বি (ওরিয়েন্টাল হারমনি) হোল্ডিংয়ের ২য় তলায় ২৬০০ স্কয়ার ফিটের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। ধানমন্ডির ৯/এ সড়কের ৪৪/৪ নং হোল্ডিংয়ের ২য় তলায় একটি ফ্ল্যাট এবং পশ্চিম ধানমন্ডির (মধুবাজার) ১২/এ নং সড়কে ১১৬ (ওরিয়েন্টাল সাগরিকা) হোল্ডিংয়ে ২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট।

পেশায় গৃহিণী স্ত্রীর নামে বাড়ি ও ফ্ল্যাট: ঢাকার চন্দ্রিমা উদ্যানে তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর- 261342109815)-এর নামে একটি দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। মোহাম্মদপুর আদাবরের মনসুরাবাদ বি ব্লকের ৪নং সড়কে “ওরিয়েন্টাল ডি’মনোয়ারা” নামে একটি ছয়তলা বাড়ি। ঢাকা পেরিয়ে বরিশাল সদরের নিউ সার্কুলার রোডে ৪৯৩ নং হোল্ডিংয়ে ৫৪ শতক জায়গার উপর দোতলা বাড়ি ‘নেহার ভবন’। এই বাড়িটি তিনি ৫-৭ বছর পূর্বে তৈরি করেছেন। স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, তার পিতা আশ্রাব আলী সিকদার ১৯৬৫ সালে ৬০ হাজার টাকায় এই জমিটি ক্রয় করেছিলেন, যখন তার মাসিক আয় ছিল ৩০০-৪০০ টাকা। স্থানীয়রা বলেন
পরিবারটি পুরনো দুর্নীতিবাজ। শামছ উদ্দিন আহমেদ নান্নুর ভান্ডারে রয়েছে বিলাসবহুল গাড়ির সম্ভার, এতে স্ত্রীর নামে একটি দামি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৭-৬৭২৬, রেজিস্ট্রেশনের তারিখ: ২১-০৯-২০১৪) রয়েছে। ঢাকা, বরিশাল, সাভার, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।

পারিবারিক প্রেক্ষাপট ও জীবনযাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতীতে শামছ্উদ্দিন আহাম্মদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। কিন্তু ১৯৯৯ সালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদানের কয়েক বছরের মধ্যেই তার এবং তার আত্মীয়-স্বজনের সম্পদের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। এ যেন শামছ উদ্দিনের হাতে অলৌকিক আলাদিনের চেরাগ।

নিজ বেতন ভাতার চেয়ে বেশি অংকের টাকা খরচ করে সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ায় আত্নীয় স্বজনের চোখে পড়ে যায় শামছ উদ্দিন। তার বড় মেয়ে তাসনিম আহমেদ তাহসিন উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় রয়েছেন, এত তিনি খরচ করেছেন প্রায় এক কোটি টাকা। এবং ছোট মেয়ে তারান্নুম আহমেদ নওশিন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে সিএসই করছেন, যার জন্য প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা বেতন গুনতে হয়। তিনি এবং তার পরিবার বছরে একাধিকবার সিঙ্গাপুর-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে বিলাসী ভ্রমণ করে থাকেন। এই বিলাসী জীবনের ব্যয়ভার সওজের প্রকল্পের দুর্নীতির মাধ্যমেই আসে বলে অভিযোগ। বিভিন্ন সূত্রে জানাযায় তার ছোট বোন ফজিলত আহমেদ মুন্নি প্রাইম ব্যাংকে চাকরি করার সুবাদে খুব গোপনে ভাই শামছ উদ্দিনের অবৈধ টাকাগুলো এফডিআর করে রাখেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছেন সামছ উদ্দিনের অস্বাভাবিক আর্থিক লেনদেনের উপর কড়া নজরদারি রাখছে বিএফআইইউ।

আমেরিকায় থাকা বড় মেয়ে ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের কাছে অর্থ পাচার   ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার এলাকাবাসী ও বাড়ির কেয়ারটেকারদের মন্তব্য অনুযায়ী, শামছ্উদ্দিন আহাম্মদের শত শত কোটি টাকার মালিক। সরেজমিন অনুসন্ধানে কেয়ারটেকার আব্দুল করিম বলে উঠেন “নান্নু স্যারের কোটি কোটি টাকা, মোহাম্মদপুরে স্যারের বাড়ি ও একাধিক ফ্ল্যাট আছে।” কেয়ারটেকার সোলাইমান ও মোক্তারও মোহাম্মদপুরে তার দুটি বাড়ি এবং ধানমন্ডিতে একাধিক ফ্ল্যাটের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কর্মজীবনের পূর্ববর্তী অভিযোগ ও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ,কে, শামছ্উদ্দিন আহাম্মদের বিরুদ্ধে  ২০০৫ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০০৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঝালকাঠি সওজে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী থাকাবস্থায় তার বিরুদ্ধে দুদকে দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়েছিল। পরবর্তীতে তিনি কোটি টাকার বিনিময়ে সেই অভিযোগ ধামাচাপা দিতে সক্ষম হন বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়।
কট্টর আওয়ামী পন্থী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ,কে, শামছ্উদ্দিন আহাম্মদের স্বল্প বেতনের সরকারি চাকরি থেকে এমন বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়, যা সুস্পষ্টভাবে দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়। দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার স্বার্থে এবং জনগণের অর্থের অপচয় রোধে এ ধরনের দুর্নীতির দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এ.কে. শামছ্উদ্দিন আহাম্মদের এই অপকর্মের ফলে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে। এই অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে, তা দেশের দুর্নীতি দমনে সরকারের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।

এই বিষয়ে সওজ প্রকৌশলী (প্রশাসন) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যম  কে জানান “দুর্নীতিবাজ যেই হোক তারা দেশের শত্রু, আমারা বিভিন্ন মারেফতে অভিযোগটি পেয়েছি, এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থা নেওয়া হবে”

শামছউদ্দিন আহমেদ নান্নুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে গত বুধবার একটি লিখিত অভিযোগ দেয় মোতালেব হোসেন নামক এক ঠিকাদার। দুদক সূত্র জানায় তার বিষয়ে এর আগেও একাধিকবার অভিযোগ এসেছে, সওজ প্রকৌশলী শামছউদ্দিন আহমেদ নান্নুর বিষয়ে প্রাপ্ত অভিযো আমলে নিয়ে খুব দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে সওজ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শামছউদ্দিন আহমেদ নান্নুর বক্তব্য নেওয়ার জন্য তাকে একাধিকবার কল ও খুদেবার্তা পাঠানো হলেও তিনি ফোন ধড়েননি।