1:37 am, Tuesday, 9 September 2025

লৌহজংয়ে জাল দলিল ও ঘুষ কেলেঙ্কারি: দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ

1745256978764

 

নিজস্ব প্রতিবেক:
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে সাংবাদিকতার নামে দালালচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে—এমনই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছেন দৈনিক ইনকিলাবের লৌহজং প্রতিনিধি মোঃ শওকত হোসাইন এবং দৈনিক সমকাল থেকে দুইবার বহিস্কার হওয়া কথিত সাংবাদিক মোঃ মিজানুর রহমান ঝিলু।

তাদের বিরুদ্ধে একাধিক জাল দলিল দিয়ে জমির নামজারি, ঘুষ প্রদান এবং এসিল্যান্ড অফিসের  কর্মকর্তাদের হেনস্তার  অভিযোগ উঠেছে।

সূত্র মতে, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে চার দফায় গাওদিয়া ইউনিয়নের ‘আপর’ মৌজার আরএস দাগ নং ৫৮-৫৯ এর জমির নামজারি চেয়ে একটি পক্ষ আবেদন করে, যার পক্ষে কাজ করছিলেন এই দুই সাংবাদিক। প্রথম দফার দলিল (নং ২২১৮) এ দলিলে  জমির  পরিমান ছিলো  ৬০ শতাংশ, সমস্ত কাগজ যাচাই করে কম্পিউটার অপারেটর মোঃ ইমন হোসেন তা জাল হিসেবে শনাক্ত করে এসিল্যান্ডকে জানান। পরে ২০২৪ সালে করা আরও দুটি আবেদনের দলিল (নং ৩২৩৬)  এখানে  জমির পরিমান ছিলো ২৬ শতাংশ  এটাও একইভাবে জাল প্রমাণিত হয়।

জাল দলিলের মাধ্যমে বারবার নামজারি চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে সাংবাদিক শওকত ও ঝিলু ভুমি অফিসের কম্পিউটার অপারেটর ইমন হোসেনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা তাকে অফিস থেকে সরানোর জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন এবং একাধিক স্থানীয় পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও অপমানজনক সংবাদ প্রকাশ করতে থাকেন।এমনকি তাঁর ব্যক্তিগত আয়-ব্যয় সম্পর্কেও কুৎসা রটানো হয়।

এসব মিথ্যা প্রচারণার জেরে তৎকালীন এসিল্যান্ড মোঃ কায়েসুর রহমানকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,  এ বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি, তবে অভিযোগ পেলে তদন্তের আশ্বাস দেন।

এদিকে ছয় মাসেও কেউ অভিযোগ না করায় বিষয়টি অগ্রসর হয়নি। এর মাঝেই ইমন হোসেনকে ছয় মাসের জন্য অব্যাহতি নিতে বাধ্য করা হয়।

এদিকে সরকার পরিবর্তনের পর নতুন এসিল্যান্ড এসে তাঁকে পুনরায় দায়িত্বে ফেরত আনেন।
তবে অভিযুক্ত দুই সাংবাদিক এখানেই থেমে থাকেননি। ২০২৫ সালে একই জাল দলিল ব্যবহার করে পুনরায় আবেদন করেন এবং গাওদিয়া ইউনিয়ন ভুমি অফিসের নায়েবকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দেওয়ার চেষ্টার কথা ঝিলু তার নিজ মুখ শিকার করেন।

এদিকে ফাঁস হওয়া একটি কল রেকর্ডে শোনাযায়, সাংবাদিক ঝিলু বলছেন নায়েবকে দুই লাখ টাকা প্রস্তাব দিয়েছি, দরকার হলে তিন লাখও দেবো।

অন্যদিকে, শওকতের সঙ্গে কথোপকথনে ইমন জানিয়ে দেন দলিল জাল হওয়ায় এসিল্যান্ড স্যার আপনাদের আবেদন বাতিল করেছেন।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, এ জালিয়াতির ঘটনায় শওকত ও ঝিলু প্রায় ৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এদিকে ঘটনার পরপরই পূর্বে করা মিথ্যা সংবাদগুলোর কাটিং আবার ছড়িয়ে দিয়ে ইমনের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠেছে সাংবাদিকতার মতো একটি গৌরবময় পেশা কীভাবে এমন দালালচক্রের হাতে জিম্মি হতে পারে?

স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় প্রশাসন এবং দেশবাসীর কাছে জোর দাবি অপসাংবাদিকতা করে সৎ কর্মকর্তাদের হয়রানি করা এই চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। তা না হলে সমাজে ন্যায়বিচার ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে।

একাধিক সুত্রে জানাগেছে, শওকত হোসেন লৌহজং প্রেসক্লাবের সভাপতি পদে রয়েছেন এবং মিজানুর রহমান ঝিলু সাবেক সভাপতি ছিলেন এ প্রেসক্লাবে। তারা দুজনই সাংবাদিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদের অপব্যবহার করেছেন এবং সাংবাদিকতার মান নস্ট করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুতই আইনগৃত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 05:37:52 pm, Monday, 21 April 2025
253 Time View

লৌহজংয়ে জাল দলিল ও ঘুষ কেলেঙ্কারি: দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ

Update Time : 05:37:52 pm, Monday, 21 April 2025

 

নিজস্ব প্রতিবেক:
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে সাংবাদিকতার নামে দালালচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে—এমনই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছেন দৈনিক ইনকিলাবের লৌহজং প্রতিনিধি মোঃ শওকত হোসাইন এবং দৈনিক সমকাল থেকে দুইবার বহিস্কার হওয়া কথিত সাংবাদিক মোঃ মিজানুর রহমান ঝিলু।

তাদের বিরুদ্ধে একাধিক জাল দলিল দিয়ে জমির নামজারি, ঘুষ প্রদান এবং এসিল্যান্ড অফিসের  কর্মকর্তাদের হেনস্তার  অভিযোগ উঠেছে।

সূত্র মতে, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে চার দফায় গাওদিয়া ইউনিয়নের ‘আপর’ মৌজার আরএস দাগ নং ৫৮-৫৯ এর জমির নামজারি চেয়ে একটি পক্ষ আবেদন করে, যার পক্ষে কাজ করছিলেন এই দুই সাংবাদিক। প্রথম দফার দলিল (নং ২২১৮) এ দলিলে  জমির  পরিমান ছিলো  ৬০ শতাংশ, সমস্ত কাগজ যাচাই করে কম্পিউটার অপারেটর মোঃ ইমন হোসেন তা জাল হিসেবে শনাক্ত করে এসিল্যান্ডকে জানান। পরে ২০২৪ সালে করা আরও দুটি আবেদনের দলিল (নং ৩২৩৬)  এখানে  জমির পরিমান ছিলো ২৬ শতাংশ  এটাও একইভাবে জাল প্রমাণিত হয়।

জাল দলিলের মাধ্যমে বারবার নামজারি চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে সাংবাদিক শওকত ও ঝিলু ভুমি অফিসের কম্পিউটার অপারেটর ইমন হোসেনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা তাকে অফিস থেকে সরানোর জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন এবং একাধিক স্থানীয় পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও অপমানজনক সংবাদ প্রকাশ করতে থাকেন।এমনকি তাঁর ব্যক্তিগত আয়-ব্যয় সম্পর্কেও কুৎসা রটানো হয়।

এসব মিথ্যা প্রচারণার জেরে তৎকালীন এসিল্যান্ড মোঃ কায়েসুর রহমানকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,  এ বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি, তবে অভিযোগ পেলে তদন্তের আশ্বাস দেন।

এদিকে ছয় মাসেও কেউ অভিযোগ না করায় বিষয়টি অগ্রসর হয়নি। এর মাঝেই ইমন হোসেনকে ছয় মাসের জন্য অব্যাহতি নিতে বাধ্য করা হয়।

এদিকে সরকার পরিবর্তনের পর নতুন এসিল্যান্ড এসে তাঁকে পুনরায় দায়িত্বে ফেরত আনেন।
তবে অভিযুক্ত দুই সাংবাদিক এখানেই থেমে থাকেননি। ২০২৫ সালে একই জাল দলিল ব্যবহার করে পুনরায় আবেদন করেন এবং গাওদিয়া ইউনিয়ন ভুমি অফিসের নায়েবকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দেওয়ার চেষ্টার কথা ঝিলু তার নিজ মুখ শিকার করেন।

এদিকে ফাঁস হওয়া একটি কল রেকর্ডে শোনাযায়, সাংবাদিক ঝিলু বলছেন নায়েবকে দুই লাখ টাকা প্রস্তাব দিয়েছি, দরকার হলে তিন লাখও দেবো।

অন্যদিকে, শওকতের সঙ্গে কথোপকথনে ইমন জানিয়ে দেন দলিল জাল হওয়ায় এসিল্যান্ড স্যার আপনাদের আবেদন বাতিল করেছেন।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, এ জালিয়াতির ঘটনায় শওকত ও ঝিলু প্রায় ৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এদিকে ঘটনার পরপরই পূর্বে করা মিথ্যা সংবাদগুলোর কাটিং আবার ছড়িয়ে দিয়ে ইমনের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠেছে সাংবাদিকতার মতো একটি গৌরবময় পেশা কীভাবে এমন দালালচক্রের হাতে জিম্মি হতে পারে?

স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় প্রশাসন এবং দেশবাসীর কাছে জোর দাবি অপসাংবাদিকতা করে সৎ কর্মকর্তাদের হয়রানি করা এই চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। তা না হলে সমাজে ন্যায়বিচার ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে।

একাধিক সুত্রে জানাগেছে, শওকত হোসেন লৌহজং প্রেসক্লাবের সভাপতি পদে রয়েছেন এবং মিজানুর রহমান ঝিলু সাবেক সভাপতি ছিলেন এ প্রেসক্লাবে। তারা দুজনই সাংবাদিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদের অপব্যবহার করেছেন এবং সাংবাদিকতার মান নস্ট করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুতই আইনগৃত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।