1:52 am, Tuesday, 9 September 2025

ছাত্রশিবিরের দলীয় প্রকাশনায় স্বাধীনতাবিরোধী বক্তব্য প্রকাশের ছাত্রদলের নিন্দা ও প্রতিবাদ

screenshot 20250129 165331

 

বিশেষ প্রতিনিধি:
ইসলামী ছাত্রশিবিরের দলীয় প্রকাশনা “ছাত্র সংবাদ” নামক মাসিক পত্রিকার মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত জনৈক আহমেদ আফঘানি কর্তৃক লিখিত “যুগে যুগে স্বৈরাচার ও তাদের করুণ পরিণতি” নামক প্রবন্ধে অত্যন্ত আপত্তিকরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘অনেক মুসলিম না বুঝে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল, এটা তাদের ব্যর্থতা ও অদূরদর্শিতা ছিল। আল্লাহ তায়ালা তাদের ক্ষমা করুন।’ উল্লেখ্য, ছাত্র সংবাদ পত্রিকাটি ছাত্রশিবির কর্তৃক প্রকাশিত ও শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি কর্তৃক সম্পাদিত একটি প্রকাশনা।

স্বাধীনতার দীর্ঘ পাঁচ দশক পেরিয়ে এসেও নিজেদের দলীয় প্রকাশনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করাকে ভুল ও অদূরদর্শিতা হিসেবে প্রচার করা এবং পাপকাজ মনে করে ক্ষমা প্রার্থনা করা একটি গর্হিত এবং ন্যক্কারজনক ঘটনা। প্রকৃতপক্ষে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ কোনো ধর্মযুদ্ধ ছিল না। এটি ছিল অত্যাচারী, জালিম, দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে মজলুম বাংলাদেশীদের প্রতিরোধের যুদ্ধ।

ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে আপামর জনসাধারণের অংশগ্রহণের কারণে মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি সত্যিকারের জনযুদ্ধ। দীর্ঘ চব্বিশ বছরের সীমাহীন অত্যাচার, অবিচার আর অপশাসনের চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রশিক্ষিত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী অত্যন্ত নির্মমভাবে রাতের আঁধারে এদেশের ঘুমন্ত নিরীহ জনগনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে নিরস্ত্র জনতা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এভাবেই শুরু হয়েছে আমাদের অস্তিত্বের সংগ্রাম, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ। কেউ ভুল করে কিংবা না বুঝে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে এই বক্তব্য একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসরদের ধৃষ্টতা ও নিজেদের পরাজয়ের গ্লানি চাপা দেওয়ার অপকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। ছাত্রশিবিরের এরূপ কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রচারণা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বুদ্ধিবৃত্তিক পুনর্বাসনের প্রেক্ষাপট তৈরি করবে।

ছাত্রশিবির একদিকে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে “স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখবো’ স্লোগান দিয়ে র‍্যালি করে, আবার অন্যদিকে নিজেদের দলীয় প্রকাশনায় মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়াকে ভুল ও অদূরদর্শিতা হিসেবে প্রচার করবে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, এটি সুস্পষ্ট দ্বিচারিতা। এই দ্বিচারিতার ফলে প্রমাণিত হয়, প্রকাশ্যে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করার কৌশল গ্রহণ করলেও প্রকৃতপক্ষে ছাত্রশিবিরের পূর্বসুরী ছাত্রসংঘের মতো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ মনোভাবই তারা ধারণ করে। লেখকের ব্যক্তিগত অভিমত বলে ছাত্রশিবির তাদের দলীয় প্রকাশনার মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধী ন্যারেটিভ প্রচারের দায় এড়িয়ে যেতে পারে না।

সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে, ছাত্রশিবিরের প্রকাশনার এডিটরিয়াল পলিসি স্বাধীনতাবিরোধী ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে। ছাত্রশিবিরকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী বয়ান প্রচার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করার দায়ে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির ছাত্রশিবির কর্তৃক নিজেদের দলীয় পত্রিকায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে আপত্তিকর বক্তব্য প্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা অবিলম্বে ছাত্রশিবিরকে ক্ষমা প্রার্থনা এবং মুক্তিযুদ্ধই আমাদের ভিত্তি ও অস্তিত্ব- এই সত্যকে মেনে নেয়া ও ধারণ করার আহবান জানান।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 10:54:40 am, Wednesday, 29 January 2025
313 Time View

ছাত্রশিবিরের দলীয় প্রকাশনায় স্বাধীনতাবিরোধী বক্তব্য প্রকাশের ছাত্রদলের নিন্দা ও প্রতিবাদ

Update Time : 10:54:40 am, Wednesday, 29 January 2025

 

বিশেষ প্রতিনিধি:
ইসলামী ছাত্রশিবিরের দলীয় প্রকাশনা “ছাত্র সংবাদ” নামক মাসিক পত্রিকার মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত জনৈক আহমেদ আফঘানি কর্তৃক লিখিত “যুগে যুগে স্বৈরাচার ও তাদের করুণ পরিণতি” নামক প্রবন্ধে অত্যন্ত আপত্তিকরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘অনেক মুসলিম না বুঝে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল, এটা তাদের ব্যর্থতা ও অদূরদর্শিতা ছিল। আল্লাহ তায়ালা তাদের ক্ষমা করুন।’ উল্লেখ্য, ছাত্র সংবাদ পত্রিকাটি ছাত্রশিবির কর্তৃক প্রকাশিত ও শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি কর্তৃক সম্পাদিত একটি প্রকাশনা।

স্বাধীনতার দীর্ঘ পাঁচ দশক পেরিয়ে এসেও নিজেদের দলীয় প্রকাশনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করাকে ভুল ও অদূরদর্শিতা হিসেবে প্রচার করা এবং পাপকাজ মনে করে ক্ষমা প্রার্থনা করা একটি গর্হিত এবং ন্যক্কারজনক ঘটনা। প্রকৃতপক্ষে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ কোনো ধর্মযুদ্ধ ছিল না। এটি ছিল অত্যাচারী, জালিম, দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে মজলুম বাংলাদেশীদের প্রতিরোধের যুদ্ধ।

ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে আপামর জনসাধারণের অংশগ্রহণের কারণে মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি সত্যিকারের জনযুদ্ধ। দীর্ঘ চব্বিশ বছরের সীমাহীন অত্যাচার, অবিচার আর অপশাসনের চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রশিক্ষিত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী অত্যন্ত নির্মমভাবে রাতের আঁধারে এদেশের ঘুমন্ত নিরীহ জনগনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে নিরস্ত্র জনতা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এভাবেই শুরু হয়েছে আমাদের অস্তিত্বের সংগ্রাম, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ। কেউ ভুল করে কিংবা না বুঝে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে এই বক্তব্য একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসরদের ধৃষ্টতা ও নিজেদের পরাজয়ের গ্লানি চাপা দেওয়ার অপকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। ছাত্রশিবিরের এরূপ কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রচারণা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বুদ্ধিবৃত্তিক পুনর্বাসনের প্রেক্ষাপট তৈরি করবে।

ছাত্রশিবির একদিকে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে “স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখবো’ স্লোগান দিয়ে র‍্যালি করে, আবার অন্যদিকে নিজেদের দলীয় প্রকাশনায় মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়াকে ভুল ও অদূরদর্শিতা হিসেবে প্রচার করবে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, এটি সুস্পষ্ট দ্বিচারিতা। এই দ্বিচারিতার ফলে প্রমাণিত হয়, প্রকাশ্যে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করার কৌশল গ্রহণ করলেও প্রকৃতপক্ষে ছাত্রশিবিরের পূর্বসুরী ছাত্রসংঘের মতো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ মনোভাবই তারা ধারণ করে। লেখকের ব্যক্তিগত অভিমত বলে ছাত্রশিবির তাদের দলীয় প্রকাশনার মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধী ন্যারেটিভ প্রচারের দায় এড়িয়ে যেতে পারে না।

সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে, ছাত্রশিবিরের প্রকাশনার এডিটরিয়াল পলিসি স্বাধীনতাবিরোধী ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে। ছাত্রশিবিরকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী বয়ান প্রচার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করার দায়ে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির ছাত্রশিবির কর্তৃক নিজেদের দলীয় পত্রিকায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে আপত্তিকর বক্তব্য প্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা অবিলম্বে ছাত্রশিবিরকে ক্ষমা প্রার্থনা এবং মুক্তিযুদ্ধই আমাদের ভিত্তি ও অস্তিত্ব- এই সত্যকে মেনে নেয়া ও ধারণ করার আহবান জানান।