3:36 pm, Tuesday, 9 September 2025

পদ হারানোর পর দান করা অ্যাম্বুলেন্স ফেরত নিলেন আ.লীগ নেতা

image 159252 1738065991

 

জামালপুর প্রতিনিধি:
জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানুর বিরুদ্ধে। পৌর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে অ্যাম্বুলেন্সটির মাধ্যমে দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে সেবা দেওয়া হতো।

জামালপুর পৌরসভার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, সাড়ে তিন বছর আগে মহামারি করোনার সময় ঘটা করে সাবেক মেয়র ছানু অ্যাম্বুলেন্সটি মৌখিকভাবে দান করেছিলেন। কাগজপত্রের মাধ্যমে দান না করায় তার অ্যাম্বুলেন্স তিনি আবার নিয়ে গেছেন।

ছানোয়ার হোসেন ছানু ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে পালিয়ে আছেন। এর মধ্যে তিনি পৌর মেয়রের পদ থেকে অপসারিত হন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলাসহ নাশকতার একাধিক মামলার আসামি তিনি। আত্মগোপনে থেকে কীভাবে পৌরসভার তত্ত্বাবধানে থাকা অ্যাম্বুলেন্স লোকজন দিয়ে ফেরত নিলেন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে সেবা দিতে পৌরসভায় একটি অ্যাম্বুলেন্স দান করেন সাবেক মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু। পৌরসভার তত্ত্বাবধানে তখন হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করলেই ঘরে বসে ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স বা অক্সিজেন সেবা পাওয়া যেত। এ কার্যক্রমের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘হ্যালো মেয়র’। ২০২১ সালের ১৯ জুলাই পৌরসভা প্রাঙ্গণে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজম। রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর ওই অ্যাম্বুলেন্স ফেরত নিয়ে গেছেন ছানোয়ারের লোকজন।

জানা গেছে, ২০২১ সাল থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সের চালককে ৩ লাখ ১ হাজার ৮০০ টাকা বেতন দেওয়া হয়েছে পৌরসভার পক্ষ থেকে। অ্যাম্বুলেন্সের তেল খরচও পৌরসভা থেকে দেওয়া হতো। অ্যাম্বুলেন্সটি একদম নতুন থাকায় বড় ধরনের কোনো মেরামত খরচ লাগেনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি অ্যাম্বুলেন্সটি রোগী নিয়ে যাওয়ার পথে সদর উপজেলার নান্দিনা এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। পরে পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান লোকজন দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি উদ্ধার করেন। অ্যাম্বুলেন্সটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তার তত্ত্বাবধানে জামালপুর শহরের বাইপাস এলাকায় মিলন ওয়ার্কশপ নামের একটি যানবাহন মেরামত কারখানায় মেরামত করতে দেওয়া হয়। গত সপ্তাহে ওয়ার্কশপ থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ে যায় ছানুর লোকজন। অ্যাম্বুলেন্সের গায়ে লেখা ‘জামালপুর পৌরসভা’ পরিবর্তন করে ছানুর চাচাত ভাই মো. সিদ্দিকুর রহমানের নামে ‘সিদ্দিক অ্যাম্বুলেন্স’ লেখা হয়েছে। এরপর থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি ভাড়ায় পরিচালিত হচ্ছে।

জানতে চাইলে মিলন ওয়ার্কশপের স্বত্বাধিকারী মো. মিলন জানান, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর পৌরসভার লোকজন মেরামতের জন্য অ্যাম্বুলেন্সটি তার ওয়ার্কশপে রেখে যান। কিন্তু এরপর আর কেউ খোঁজ নিচ্ছিলেন না। হঠাৎ একদিন পৌরসভার প্রধান নির্বাহী হাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন অ্যাম্বুলেন্সটি দেখে যান এবং কাউকে দিতে নিষেধ করেন। এরপর সাবেক মেয়রের লোক আশরাফ আসেন। তিনি অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামতে ৫০ হাজার টাকা দিলে কাজ শুরু করেন মিলন। অ্যাম্বুলেন্সটি পুরোপুরি ঠিক হওয়ার পর আশরাফ নিতে এলে তিনি পৌর কর্মকর্তা হাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন ওই কর্মকর্তা সাবেক মেয়রের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানাবেন বলে জানান। কিন্তু তিনি পরে আর কিছুই জানাননি। গত সপ্তাহে অ্যাম্বুলেন্সটি তিনি আশরাফকে দিয়ে দেন। এরপর কী হয়েছে, তিনি জানেন না।

জামালপুর পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, সাবেক মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু অ্যাম্বুলেন্সটি দান করেছিলেন। তার তত্ত্বাবধানেই ওটা চলত। তার নির্দেশে অ্যাম্বুলেন্সের পরিচালনা ব্যয় নির্বাহ করা হয়েছে। এখন ওই অ্যাম্বুলেন্স কোথায় কীভাবে আছে সেটি জানি না।

গাড়িটির তত্ত্বাবধায়ক মো. ফারুক বলেন, অ্যাম্বুলেন্সের মালিক সিদ্দিকুর রহমান। তার (সিদ্দিকুর) নামেই গাড়ির সব কাগজপত্র। আগে কাগজপত্র ছিল না জানালে তিনি বলেন, ‘আগে অন-টেস্ট ছিল। সম্প্রতি সব কাগজপত্র করা হয়েছে। মাঝের কিছুদিন এটি কোথায় ছিল, কীভাবে ছিল জানি না।

জামালপুর পৌরসভার প্রশাসক মৌসুমী খানম বলেন, অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়টি আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। অ্যাম্বুলেন্সের কোনো কাগজপত্র পৌরসভার নামে নেই। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্সটি পাইনি। অ্যাম্বুলেন্সটি কখনো পৌর কার্যালয়ে দেখিনি। এ ঘটনায় সাবেক মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানুর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 08:22:55 pm, Tuesday, 28 January 2025
211 Time View

পদ হারানোর পর দান করা অ্যাম্বুলেন্স ফেরত নিলেন আ.লীগ নেতা

Update Time : 08:22:55 pm, Tuesday, 28 January 2025

 

জামালপুর প্রতিনিধি:
জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানুর বিরুদ্ধে। পৌর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে অ্যাম্বুলেন্সটির মাধ্যমে দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে সেবা দেওয়া হতো।

জামালপুর পৌরসভার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, সাড়ে তিন বছর আগে মহামারি করোনার সময় ঘটা করে সাবেক মেয়র ছানু অ্যাম্বুলেন্সটি মৌখিকভাবে দান করেছিলেন। কাগজপত্রের মাধ্যমে দান না করায় তার অ্যাম্বুলেন্স তিনি আবার নিয়ে গেছেন।

ছানোয়ার হোসেন ছানু ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে পালিয়ে আছেন। এর মধ্যে তিনি পৌর মেয়রের পদ থেকে অপসারিত হন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলাসহ নাশকতার একাধিক মামলার আসামি তিনি। আত্মগোপনে থেকে কীভাবে পৌরসভার তত্ত্বাবধানে থাকা অ্যাম্বুলেন্স লোকজন দিয়ে ফেরত নিলেন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে সেবা দিতে পৌরসভায় একটি অ্যাম্বুলেন্স দান করেন সাবেক মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু। পৌরসভার তত্ত্বাবধানে তখন হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করলেই ঘরে বসে ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স বা অক্সিজেন সেবা পাওয়া যেত। এ কার্যক্রমের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘হ্যালো মেয়র’। ২০২১ সালের ১৯ জুলাই পৌরসভা প্রাঙ্গণে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজম। রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর ওই অ্যাম্বুলেন্স ফেরত নিয়ে গেছেন ছানোয়ারের লোকজন।

জানা গেছে, ২০২১ সাল থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সের চালককে ৩ লাখ ১ হাজার ৮০০ টাকা বেতন দেওয়া হয়েছে পৌরসভার পক্ষ থেকে। অ্যাম্বুলেন্সের তেল খরচও পৌরসভা থেকে দেওয়া হতো। অ্যাম্বুলেন্সটি একদম নতুন থাকায় বড় ধরনের কোনো মেরামত খরচ লাগেনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি অ্যাম্বুলেন্সটি রোগী নিয়ে যাওয়ার পথে সদর উপজেলার নান্দিনা এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। পরে পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান লোকজন দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি উদ্ধার করেন। অ্যাম্বুলেন্সটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তার তত্ত্বাবধানে জামালপুর শহরের বাইপাস এলাকায় মিলন ওয়ার্কশপ নামের একটি যানবাহন মেরামত কারখানায় মেরামত করতে দেওয়া হয়। গত সপ্তাহে ওয়ার্কশপ থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ে যায় ছানুর লোকজন। অ্যাম্বুলেন্সের গায়ে লেখা ‘জামালপুর পৌরসভা’ পরিবর্তন করে ছানুর চাচাত ভাই মো. সিদ্দিকুর রহমানের নামে ‘সিদ্দিক অ্যাম্বুলেন্স’ লেখা হয়েছে। এরপর থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি ভাড়ায় পরিচালিত হচ্ছে।

জানতে চাইলে মিলন ওয়ার্কশপের স্বত্বাধিকারী মো. মিলন জানান, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর পৌরসভার লোকজন মেরামতের জন্য অ্যাম্বুলেন্সটি তার ওয়ার্কশপে রেখে যান। কিন্তু এরপর আর কেউ খোঁজ নিচ্ছিলেন না। হঠাৎ একদিন পৌরসভার প্রধান নির্বাহী হাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন অ্যাম্বুলেন্সটি দেখে যান এবং কাউকে দিতে নিষেধ করেন। এরপর সাবেক মেয়রের লোক আশরাফ আসেন। তিনি অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামতে ৫০ হাজার টাকা দিলে কাজ শুরু করেন মিলন। অ্যাম্বুলেন্সটি পুরোপুরি ঠিক হওয়ার পর আশরাফ নিতে এলে তিনি পৌর কর্মকর্তা হাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন ওই কর্মকর্তা সাবেক মেয়রের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানাবেন বলে জানান। কিন্তু তিনি পরে আর কিছুই জানাননি। গত সপ্তাহে অ্যাম্বুলেন্সটি তিনি আশরাফকে দিয়ে দেন। এরপর কী হয়েছে, তিনি জানেন না।

জামালপুর পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, সাবেক মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু অ্যাম্বুলেন্সটি দান করেছিলেন। তার তত্ত্বাবধানেই ওটা চলত। তার নির্দেশে অ্যাম্বুলেন্সের পরিচালনা ব্যয় নির্বাহ করা হয়েছে। এখন ওই অ্যাম্বুলেন্স কোথায় কীভাবে আছে সেটি জানি না।

গাড়িটির তত্ত্বাবধায়ক মো. ফারুক বলেন, অ্যাম্বুলেন্সের মালিক সিদ্দিকুর রহমান। তার (সিদ্দিকুর) নামেই গাড়ির সব কাগজপত্র। আগে কাগজপত্র ছিল না জানালে তিনি বলেন, ‘আগে অন-টেস্ট ছিল। সম্প্রতি সব কাগজপত্র করা হয়েছে। মাঝের কিছুদিন এটি কোথায় ছিল, কীভাবে ছিল জানি না।

জামালপুর পৌরসভার প্রশাসক মৌসুমী খানম বলেন, অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়টি আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। অ্যাম্বুলেন্সের কোনো কাগজপত্র পৌরসভার নামে নেই। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্সটি পাইনি। অ্যাম্বুলেন্সটি কখনো পৌর কার্যালয়ে দেখিনি। এ ঘটনায় সাবেক মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানুর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।