1:59 am, Tuesday, 9 September 2025

সুস্থ হয়েই রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া

6a01b029d02aaa9bae792659b494adbf

 

বিশেষ প্রতিনিধি:
আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বর্তমানে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে রয়েছেন। লন্ডন ক্লিনিকে ১৭ দিনের চিকিৎসা শেষে বেগম খালেদা জিয়া তার বড় ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় উঠেছেন।

জানা গেছে, তারেক রহমানের বাসায় রেখেই ডাক্তারদের পরামর্শে আপাতত বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলবে। দীর্ঘদিন পর তিনি তার পরিবারের সদস্যদের সান্নিধ্যে থাকবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, লন্ডন ক্লিনিকে আসার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে বেগম খালেদা জিয়ার নানা ধরনের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এসব রিপোর্ট পর্যালোচনা করে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল টিম তার চিকিৎসা করছেন। আগের চেয়ে তিনি এখন ভালো আছেন। দীর্ঘদিন পর পরিবারের সদস্যদের কাছে পেয়ে উনি মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন।

ডা. জাহিদ জানান, যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ও লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকগণ বেগম খালেদা জিয়ার লিভার, হৃদরোগ, আথ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগের চিকিৎসা করছেন। তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চিকিৎসা চলছে। আশা করছি উনি দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন। তিনি তার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।

গত ৭ জানুয়ারি নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। পরদিন ৮ জানুয়ারি লন্ডনে পৌঁছে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তাকে নিয়ে যাওয়া হয় লন্ডন ক্লিনিকে। বিমানবন্দর থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে নিজেই গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বেগম খালেদা জিয়া দুই বছর কারাভোগ করেছেন। করোনা মহামারির সময় আওয়ামী লীগ সরকার তাকে শর্ত সাপেক্ষে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়। তবে বেগম খালেদা জিয়া নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেলেও বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন না, বিদেশ যেতে পারবেন না এমন কিছু শর্তের বেড়াজালে আটকে ছিলেন। ছিলেন রাজনীতি থেকে দূরে। এমনকি তাকে নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয়নি। তিনি ছিলেন নির্বাচনে অযোগ্য। অবশেষে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সব সাজা বাতিল হয়ে যায়। তিনি মুক্তি পান। চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন অবস্থান বারবার তাকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। রাজনৈতিক ও দলের নেতাকর্মীদের প্রশ্ন কবে নাগাদ বেগম খালেদা জিয়া আবারও বাংলাদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আবারও দেশের জনগণের জন্য রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। যত দ্রুত উনার চিকিৎসা শেষ হবে তত দ্রুত তিনি দেশে ফিরে আসবেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, উনি দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছেন। কারাগারে উনার যথাযথ চিকিৎসা করা হয়নি। যার কারণে উনার অসুখগুলো আরো বেড়েছে। অসুস্থ থাকা অবস্থায়ও বেগম খালেদা জিয়া দেশ ও দেশের মানুষের জন্য খোঁজ-খবর নিয়েছেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে বর্তমানে লন্ডনে বেগম খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছেন। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। তিনি সুস্থ হলেই দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন।

১৭ দিন চিকিৎসার পর তারেক রহমানের বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া: দীর্ঘ ১৭ দিন যুক্তরাজ্যের দ্য লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। উন্নত চিকিৎসায় তার স্বাস্থ্যের যথেষ্ট উন্নতি হওয়ায় ডাক্তাররা আপাতত তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। লন্ডনের স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৩টা) খালেদা জিয়াকে বাসায় নিয়ে যান তার বড় ছেলে তারেক রহমান। এর আগে, তারেক রহমান লন্ডনের স্থানীয় সময় বাদ এশা বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রিকলেন মসজিদে প্রয়াত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর জন্য অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন।

এদিকে আগের দিন বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন স্থানীয় সময় রাতে সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার ডাক্তাররা প্রতিদিনই নতুন করে কম-বেশি পরীক্ষা নিরীক্ষা দেন। সব রিপোর্ট শুক্রবার রাতের মধ্যে হাতে আসবে। সব ভালো থাকলে তখন উনার (খালেদা জিয়া) ছুটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি ডাক্তাররা তাকে ছুটি দেন তিনি সার্বক্ষণিকভাবে প্রফেসর পেট্রিক কেনেডি ও জেনিফার ক্রসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন থাকবেন।

খালেদা জিয়ার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, তার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। কারণ তার বয়সটা একটা বিবেচ্য বিষয়। তাছাড়া জেলে রেখে তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তখন বিদেশে নিয়ে আসা গেলে আরও হয়তো দ্রুত সুস্থ করা যেত। এখন আমাদের চিকিৎসকদের বক্তব্য হচ্ছে, আগে হলে হয়তো উনার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা যেত।

তিনি বলেন, ওষুধের মাধ্যমে তার যে চিকিৎসা চলছে তা অব্যাহত রাখার জন্য সব চিকিৎসক একমত এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা চলবে।

ডা. জাহিদ আরও জানান, বর্তমানে খালেদা জিয়ার লিভার, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, প্রেসার, রিউমাটয়েড আথ্রজ্ঞাইটিস- প্রতিটির জন্য ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা চলছে। আপাতত ওষুধের মাধ্যমেই তার চিকিৎসা চলবে। এর বাইরে আরও যদি কোনো চিকিৎসা করা যায়, সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স হসপিটালের মেডিকেল টিমের সদস্যরা এখানে মেডিকেল বোর্ডের সভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। যাতে আমরা এটাকে এক ছাদের নিচে চিকিৎসা বা ওয়ান আমব্রেলার (ছাতা) নিচে; অর্থাৎ ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের মতো, সেটা করার ব্যাপারে উনারা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

লন্ডন দ্য ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শে খালেদা জিয়াকে প্রতিদিন বাসা থেকে খাবার নিয়ে দেয়া হতো। ছেলে তারেক রহমান, পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান, নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি, দুই কন্যা জাফিয়া ও জাহিয়া রহমান তাকে নিয়মিত দেখাশোনা করতেন। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ প্রতিদিন হাসপাতালে উপস্থিত থাকতেন।

প্রসঙ্গত, গত ৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান। সেদিন লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তাকে বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতাল ‘দ্য ক্লিনিক’ এ নিয়ে ভর্তি করা হয়। ৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া লিভার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসহ নানা ধরনের রোগে ভুগছেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Update Time : 10:20:57 am, Sunday, 26 January 2025
151 Time View

সুস্থ হয়েই রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া

Update Time : 10:20:57 am, Sunday, 26 January 2025

 

বিশেষ প্রতিনিধি:
আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বর্তমানে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে রয়েছেন। লন্ডন ক্লিনিকে ১৭ দিনের চিকিৎসা শেষে বেগম খালেদা জিয়া তার বড় ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় উঠেছেন।

জানা গেছে, তারেক রহমানের বাসায় রেখেই ডাক্তারদের পরামর্শে আপাতত বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলবে। দীর্ঘদিন পর তিনি তার পরিবারের সদস্যদের সান্নিধ্যে থাকবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, লন্ডন ক্লিনিকে আসার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে বেগম খালেদা জিয়ার নানা ধরনের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এসব রিপোর্ট পর্যালোচনা করে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল টিম তার চিকিৎসা করছেন। আগের চেয়ে তিনি এখন ভালো আছেন। দীর্ঘদিন পর পরিবারের সদস্যদের কাছে পেয়ে উনি মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন।

ডা. জাহিদ জানান, যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ও লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকগণ বেগম খালেদা জিয়ার লিভার, হৃদরোগ, আথ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগের চিকিৎসা করছেন। তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চিকিৎসা চলছে। আশা করছি উনি দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন। তিনি তার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।

গত ৭ জানুয়ারি নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। পরদিন ৮ জানুয়ারি লন্ডনে পৌঁছে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তাকে নিয়ে যাওয়া হয় লন্ডন ক্লিনিকে। বিমানবন্দর থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে নিজেই গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বেগম খালেদা জিয়া দুই বছর কারাভোগ করেছেন। করোনা মহামারির সময় আওয়ামী লীগ সরকার তাকে শর্ত সাপেক্ষে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়। তবে বেগম খালেদা জিয়া নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেলেও বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন না, বিদেশ যেতে পারবেন না এমন কিছু শর্তের বেড়াজালে আটকে ছিলেন। ছিলেন রাজনীতি থেকে দূরে। এমনকি তাকে নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয়নি। তিনি ছিলেন নির্বাচনে অযোগ্য। অবশেষে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সব সাজা বাতিল হয়ে যায়। তিনি মুক্তি পান। চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন অবস্থান বারবার তাকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। রাজনৈতিক ও দলের নেতাকর্মীদের প্রশ্ন কবে নাগাদ বেগম খালেদা জিয়া আবারও বাংলাদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আবারও দেশের জনগণের জন্য রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। যত দ্রুত উনার চিকিৎসা শেষ হবে তত দ্রুত তিনি দেশে ফিরে আসবেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, উনি দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছেন। কারাগারে উনার যথাযথ চিকিৎসা করা হয়নি। যার কারণে উনার অসুখগুলো আরো বেড়েছে। অসুস্থ থাকা অবস্থায়ও বেগম খালেদা জিয়া দেশ ও দেশের মানুষের জন্য খোঁজ-খবর নিয়েছেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে বর্তমানে লন্ডনে বেগম খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছেন। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। তিনি সুস্থ হলেই দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন।

১৭ দিন চিকিৎসার পর তারেক রহমানের বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া: দীর্ঘ ১৭ দিন যুক্তরাজ্যের দ্য লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। উন্নত চিকিৎসায় তার স্বাস্থ্যের যথেষ্ট উন্নতি হওয়ায় ডাক্তাররা আপাতত তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। লন্ডনের স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৩টা) খালেদা জিয়াকে বাসায় নিয়ে যান তার বড় ছেলে তারেক রহমান। এর আগে, তারেক রহমান লন্ডনের স্থানীয় সময় বাদ এশা বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রিকলেন মসজিদে প্রয়াত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর জন্য অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন।

এদিকে আগের দিন বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন স্থানীয় সময় রাতে সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার ডাক্তাররা প্রতিদিনই নতুন করে কম-বেশি পরীক্ষা নিরীক্ষা দেন। সব রিপোর্ট শুক্রবার রাতের মধ্যে হাতে আসবে। সব ভালো থাকলে তখন উনার (খালেদা জিয়া) ছুটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি ডাক্তাররা তাকে ছুটি দেন তিনি সার্বক্ষণিকভাবে প্রফেসর পেট্রিক কেনেডি ও জেনিফার ক্রসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন থাকবেন।

খালেদা জিয়ার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, তার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। কারণ তার বয়সটা একটা বিবেচ্য বিষয়। তাছাড়া জেলে রেখে তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তখন বিদেশে নিয়ে আসা গেলে আরও হয়তো দ্রুত সুস্থ করা যেত। এখন আমাদের চিকিৎসকদের বক্তব্য হচ্ছে, আগে হলে হয়তো উনার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা যেত।

তিনি বলেন, ওষুধের মাধ্যমে তার যে চিকিৎসা চলছে তা অব্যাহত রাখার জন্য সব চিকিৎসক একমত এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা চলবে।

ডা. জাহিদ আরও জানান, বর্তমানে খালেদা জিয়ার লিভার, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, প্রেসার, রিউমাটয়েড আথ্রজ্ঞাইটিস- প্রতিটির জন্য ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা চলছে। আপাতত ওষুধের মাধ্যমেই তার চিকিৎসা চলবে। এর বাইরে আরও যদি কোনো চিকিৎসা করা যায়, সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স হসপিটালের মেডিকেল টিমের সদস্যরা এখানে মেডিকেল বোর্ডের সভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। যাতে আমরা এটাকে এক ছাদের নিচে চিকিৎসা বা ওয়ান আমব্রেলার (ছাতা) নিচে; অর্থাৎ ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের মতো, সেটা করার ব্যাপারে উনারা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

লন্ডন দ্য ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শে খালেদা জিয়াকে প্রতিদিন বাসা থেকে খাবার নিয়ে দেয়া হতো। ছেলে তারেক রহমান, পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান, নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি, দুই কন্যা জাফিয়া ও জাহিয়া রহমান তাকে নিয়মিত দেখাশোনা করতেন। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ প্রতিদিন হাসপাতালে উপস্থিত থাকতেন।

প্রসঙ্গত, গত ৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান। সেদিন লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তাকে বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতাল ‘দ্য ক্লিনিক’ এ নিয়ে ভর্তি করা হয়। ৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া লিভার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসহ নানা ধরনের রোগে ভুগছেন।